You are currently viewing পিপুফিশু -১৫ || আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু -১৫ || আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু || আলী সিদ্দিকী

কিস্তি-১৫

ভাঙাগড়াই চিরন্তন 

সবকিছু কেমন যেন আউল বাউল লাগছে। মনে হচ্ছে আমার ভেতর সবকিছু উথাল পাথাল করছে। কিছুই ভালো লাগছে না, কিছুতেই মন বসছে না। কেন যে এমন লাগছে বুঝতে পারছি না। দেশ থেকেও তেমন কোন খারাপ খবর পাইনি। আমার পাঠানো টাকায় ভাইয়েরা বেশ ফুলবাবুর মতো চলতে পারছে। থানা সদরে করা মার্কেট, বাসা ভাড়ার টাকায় ওরা বেশ আরামেই আছে। সঞ্চয় খুব একটা না থাকলেও একেবারে ফতুর নই। তবুও কেন জানি খুব অস্থির লাগছে। আবিরকে এক বাঙালী যুবক অন্যায়ভাবে মেরেছে। শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আমি ওদের নিয়ে থিয়েটারে মুভি দেখে একটু সঙ্গ দিয়ে নিজের কষ্টটুকু লাঘবের চেষ্টা করেছি। আবির মুকুল ছেলেটাকে পুলিশে নেয়াতে মনে হলো তেমন খুশি হয় নি। সে থিয়েটারে বসে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, আঙ্কেল মুকুলকে পুলিশ মারবে না তো ?
কেন বলছো ? আমি অবাক হয়েছিলাম ওর কথা শুনে।
ও তো বাঙালী এ জন্যে – সে অন্যমনস্কভাবে বললো।
না মারবে না। শুনে খুব খুশী হয়েছি আমি। এ হলো আফসার ভাই আর বিশাখা ভাবীর সন্তান।
মা বলে বাংলাদেশের পুলিশ যাকে ধরে তাকে নাকি খুব মারে।
এটা তো বাংলাদেশ না আবির।
কিন্তু এসব চালচিত্র তো আমাকে অস্থির করছে না, তাহলে বুকের ভেতরটা এমন লাগছে কেন ? লিনোরার জন্যেও আমার তেমন টেনশন হচ্ছে না। সে গত এক সপ্তাহ ধরে ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটিতে একটা সেমিনারে ব্যস্ত। এমনিতে প্রায় প্রতিদিনই সে ফোন করে সব খবরাখবর নেয়। কাল সে ফিরে আসছে। জনদের ব্যাপারেও আমার কিছু করার নেই। অইদিন ছুটে বেরিয়ে যাবার পর সিন্ডি আর ফিরে আসে নি। জনও কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়ে এখন একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে। যদিও তার প্রাণময়তায় একটু ছেদ পড়েছে এবং কথা বার্তায় ধীরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু নিজের স্বকীয়তা সে হারায়নি। তবে গত পরশু হঠাৎ করে সে লেইড-অফ হওয়াতে তার মেজাজ খিঁচড়ে আছে। সারাক্ষণ গজ গজ করছে, হুঙ্কার দিচ্ছে, নিজের হাত নিজে কামড়াচ্ছে। কাল রাতে ফোন করে বলেছে সকালে আমার কাছে আসবে।
তাই কল-আউট করেছি। আমারও ওখানে কাজ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবে উপায় কি ! বিল তো পে করতে হবে। এদেশের মানুষ বেঁচে থাকে হাজার রকম বিল পে করার জন্যে। মানুষ এখানে বিগ বিগ কর্পোরেটগুলোর পাতানো ফাঁদে আটকে আছে। গত ক’বছর ধরে দেখছি, প্রাচুর্যের দেশ খ্যাত আমেরিকার মানুষকে বেঁচে থাকার জন্যে কি অমানুষিক পরিশ্রম করতে হয়। এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মানুষ কাজই খুঁজে পাচ্ছে না। তাই ক্ষোভ বেড়েছে মানুষের। কিন্তু করার কিছুই নেই। আমাদের দেশে হলে ক্ষমতাকামী রাজনৈতিক দলগুলো বিদ্যমান অসন্তোষকে পুঁজি করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়তো। কিন্তু এদেশের রাজনৈতিক কালচার ভিন্ন। ধনীদের দু’টি রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ইনকাম করা ছাড়া এদেশের মানুষের বেঁচে থাকাটা অচিন্তনীয় ব্যাপার। তাই সকলে কাজ, ঘর আর হইহুল্লোড় নিয়েই মত্ত আছে। মুষ্টিমেয় লোকই রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায়।
এই যে ইরাকে সাদ্দামকে চ্যাংধোলাই করে জেলখানায় পুরে, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে, ইনসার্জেন্টদের নামে ইরাকীদের নির্বিচারে হত্যা করে, পাতানো নির্বাচন করে পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজের শক্তিমত্তায় উল্লসিত হয়ে বুশ প্রশাসন বুক চিতিয়ে কথা বলছে, তাতে তো মুষ্টিমেয় আমেরিকানরাই বাহবা দিচ্ছে। সবারই এক কথা, ওভারসীজে এতো টাকা খরচ না করে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান আর স্বাস্থ্যসেবার দিকেই আমাদের নজর দেয়া উচিত। কিন্তু তা শুধু বৈঠকী আলোচনা। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের মানসিক প্রাচীর ভেদ করে সংগঠিত হবার সুযোগ আমেরিকানদের, বিশেষতঃ শ্বেতাঙ্গদের নেই।
এসব আকাশ পাতাল ভাবছি আর একের পর এক চ্যানেল বদলে চলছি। সিবিএস নিউজে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে। বিষয় হলো, আমেরিকার মিডিয়াতে যৌনতার ছড়াছড়ি উঠতি বয়েসের কিশোর- কিশোরীদের জীবন বিনষ্ট করছে। বক্তরা পক্ষে বিপক্ষে নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরছে আর উপস্থাপক মিট মিট করে হাসছে।
কি দেখছো ? দরোজা খুলে জন মাথা ঢোকালো।
তেমন কিছু না, ট্র্যাশ- আমি বিয়ারের খালি ক্যানগুলো টেবিল থেকে সরিয়ে ট্র্যাশক্যানে ছুঁড়ে মারলাম।
লাইফটাই ট্র্যাশ হয়ে গেলো আতিক, সোফায় বসতে বসতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো জন। তার মুখাবয়বে বিষন্নতার ছাপ। বুঝতে পারছি দু’দু’টি ঝড়ে সে অনেকটা মুষড়ে পড়েছে। এখন আবার আনএপ্লয়মেন্টের ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই।
তা কিছু কি খাবে ? নুডলস্ করেছি, স্পাইসি, চলবে ? আমি হালকা করার জন্যে বললাম।
তা মন্দ না, হাসি ফোটানোর চেষ্টা করলো সে, অন্ততঃ মুখটার অস্তিত্ব তো টের পাওয়া যাবে, কি বলো ?
তা যা বলেছো। বুঝলাম, ওর কিছুই খাওয়া হয়নি। আমি ফ্রিজ থেকে নুডলস্ বের করে মাইক্রোওয়েভে দিলাম, অবশ্য সাথে পানির বদলে হ্যানিকেনও নিতে পারো, ফিলিংসটা ভালোই হবে।
রিয়েলি ? জন বুঝি বুকের চাপ কমিয়ে স্বাভাবিক হয়ে চোখটাকে নাচালো, সক্কালবেলায় ?
সকাল আর কোথায় ? আমি তুড়ি ফোটালাম আঙুলে, আমার তো তিনটা হয়ে গেছে।
তা হলে দাও, জন উঠে বাথরুমের দরোজায় গিয়ে দাঁড়ালো, তোমার সমান চাই, আছে তো, নাকি ?
ও চিন্তা না করলেও চলবে- মাইক্রোওয়েভ ক্রিং ক্রিং শব্দ করতেই আমি হাত বাড়ালাম।
বেশ বেশ ! জন হাসলো মুখ উজ্জল করে, তুমি বেশ রপ্ত করে ফেলেছো দেখছি।
তোমার মতো বন্ধু থাকলে না করে আর উপায় আছে ? আমি খোঁচা মারলাম।
আচ্ছা ? কপট ভঙ্গী করলো সে, তাহলে দোষ আমার ওপরই চাপানো হচ্ছে ?
এতে দোষ চাপানোর কিছু নেই জন, আমি সায় দিলাম, আমাদের উপভোগের ক্ষেত্র খুবই ছোট বলে এটাই এখন একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে।
তবে মাত্রা ছাড়ানো যাবে না আতিক, বাথরুম থেকে গলা বাড়ালো জন, আমাদের সময় তো একেবারে শেষ হয়ে যায় নি।
তা ঠিক।
কথাটা বলে চমকে উঠলাম। বুঝতে পারলাম কেন সকাল থেকে আমি এতো অস্থির বোধ করছি। আসলে ভোররাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে আমি একপ্রকার লাফ দিয়ে জেগে উঠেছিলাম। স্বপ্নটা এতো পরিষ্কার ছিলো যে, মনে হচ্ছিল খুবই বাস্তব। কিন্তু কোনভাবেই তা মনে করতে পারছিলাম না। যতোই মনে করার চেষ্টা করেছি ততোই মাথাটা আউলা বাউলা লাগছিলো। এখন হঠাৎ তা মনে পড়ে গেলো জনের কথার সূত্র ধরে।
স্বপ্নটা ছিলো একটি হেয়ার সেলুনের। আমি গেছি চুল কাটতে। দেখা গেলো নাপিত আমার চুল যতো কাটে ততোই আমার শরীর ছোট হয়ে আসছে। পা থেকে তা কমতে কমতে আমার ঘাড় ছুঁয়েছে। নাপিত হাসে দাঁত বের করে। তার চোখজোড়া হয়ে ওঠে দানবীয়, হাতজোড়া সুতীক্ষè ছুরি। আমি আতঙ্কিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, আর নাপিত বিশাল হা বাড়িয়ে আমার মাথাটায় কড়াৎ করে কামড় বসিয়ে দিলো। আমি চিৎকার করে জেগে উঠলাম।
কি হলো, অমন দাঁড়িয়ে আছো যে ? জন এসে কাছে দাঁড়ালো।
না, কিছু না। আমি নিজের ভাবান্তর লুকিয়ে টেবিলে ওকে খাওয়া দিলাম। জন প্রায় ঝটপট খেয়ে নিলো। ও যে ক্ষুধার্ত ছিলো তা আমি প্রথমেই টের পেয়েছিলাম। সে বেশ আগ্রহ নিয়ে বিয়ার তিনটি শেষ করলো। আমি চা-টা শেষ করে রেডি হয়ে নিলাম। যদিও জানি না জন কোথাও যাবে কিনা।
তোমার কি জরুরী কোন কাজ আছে ? টিভির চ্যানেল বদলে জন এনবিসি দিলো।
একটু ব্যাঙ্কে আর পোস্টাফিসে যাবো।
চলো একটু কিং অব প্রুশিয়া মল ঘুরে আসি -।
ওখানে গিয়ে কি হবে ?
একবন্ধুর পারফিউমের দোকান আছে, যেতে বলেছে -।
আজকের দিনটা তোমার জন্য বরাদ্দ করেছি জন -।
থ্যাঙ্ক ইউ আতিক, আন্তরিকতা মাখা গলায় বললো সে, দেখো কি দেখাচ্ছে -।
সে টিভির দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষন করলো। টিভিতে তখন আল-জাজিরা থেকে নেয়া লাদেনের দীর্ঘ নীরবতা ভঙ্গকারী অডিও টেপ প্রচার করা হচ্ছে। বুশের দ্বিতীয় বারের নির্বাচনের প্রাক্কালে দেয়া লাদেনের বক্তব্য বুশের নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার কৌশল ছিলো বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেছিলো। এরপর লাদেনের মার্কিন বাহিনীর হাতে অথবা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগে মারা গেছে বলে প্রচার করা হয়েছিলো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে লাদেন বহাল তবিয়তে আছে এবং আমেরিকা ও ইউরোপে জীবানু অস্ত্রের হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছে। সে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তার আহবান প্রত্যাখান করায় ইংল্যান্ডে হামলা করা হয়েছিলো, এখনো যদি তা করা হয় তাহলে আবার হামলা চালানো হবে, তা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আমি টিভি অফ করে দিলাম, লোকটা বদ্ধ উম্মাদ।
তবে তুমি যা-ই বলো আতিক, জন উঠে দাঁড়ালো, লোকটা খুবই ব্রিলিয়ান্ট। ও যদি একটি রাষ্ট্র দখল করে শক্তি অর্জনের পর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতো তাহলে কিন্তু বিপদ আরো ভয়ানক হতো।
আমরা গাড়ীতে গিয়ে উঠলাম। গাড়ী স্টার্ট দিয়ে নেমে এলাম সড়কে। জনের সাথে কোথাও যেতে হলে আমার গাড়ীটাই সবসময় আমি নিয়ে যাই। কারন ওকে সারাক্ষণ খরচের হিসাব করতে হয়। পেট্রোলের খরচ যোগানো এদেশের অনেকের কষ্টের কারন হতে দেখেছি আমি। তাছাড়া তেলের দাম প্রতিদিন যেভাবে বাড়ছে সত্যিই সকলের মাথা খারাপ হবার মতো অবস্থা। গত ক’দিন আগে ফক্স নিউজে ও’র‌্যালী ফ্যাক্টরে মি. ও’র‌্যালী পেট্রোলিয়াম মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের এক কর্তাব্যক্তিকে পর্দায় হাজির করে মুনাফা একটু কম করে তেলের মূল্য মানুষের সহনশীলতার মধ্যে রাখার অনুরোধ করেছিলেন। তাতে কর্তাব্যক্তিটি রেগে মেগে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুক্তবাজার অর্থনীতির সাফাই গাওয়া শুরু করেন। আসলে তো মুক্তরাজারের দোহাই দিয়ে পুঁজিপতিরাই সারা বিশ্বকে চুষে খাচ্ছে। আমার মনে হয় আমেরিকানদের মতো করে তা আর কেউ উপলব্ধি করে না।
আরেকটা খবর শুনেছো ? এক্সপ্রেস ওয়েতে পড়ার পর জন বললো।
কিসের খবর ?
সাদ্দামের বিচারক পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে।
তাতে কি ? আমি হাসলাম, আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হবে। তবে মজা কি জানো ?
কি ?
নিজেদের পালা কুত্তাদের সামাল দিতে আমেরিকাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।
এটাই ইতিহাসের প্রতিশোধ আতিক, জন মুখে চুইংগাম পুরলো, দেখো এখন ইরানকে নিয়ে নতুন খেলা শুরু হচ্ছে। উত্তর কোরিয়াকে দমাতে পারলো না, ইরানের ওপর যতো চোটপাট। আরে বাবা, সৌদি যুবরাজ তো যথার্থই বলেছে- ইসরাইলকে পারমানবিক শক্তিধর দেশ বানাবে আর তার প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে তা হতে দেবে না- এটা কোন ধরনের যুক্তি। বিশ্বের মুষ্টিমেয় দেশ শুধু পারমানবিক শক্তির অধিকারী হতে পারবে, অন্যরা নয়- এটা তো সম্পূর্ণ জবরদস্তি। আমার মতে বিশ্বের সকল দেশকেই পারমানবিক শক্তির অধিকারী হওয়া উচিত।
তোমার কথা সংযত করা উচিত জন, মলের পার্কিং লটে গাড়ী পার্ক করে ওর দিকে তাকালাম আমি, শুধু টেলিফোনে কিংবা ইন্টারনেটে আড়িপাতা নয় এখন সর্বত্র সব মানুষের ওপর নজরদারী চলছে। যেকোন সময় তুমি ফেঁসে যেতে পারো।
আমি কেয়ার করি না, দৃঢ়কন্ঠে বললো জন।
আমার তো সমস্যা হতে পারে, আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম।
একজন যুক্তিবাদী মানুষের ভীতু হলে চলে না আতিক, গাড়ী থেকে বেরিয়ে আমরা মলে ঢুকলাম, তাছাড়া তোমার কোন অসুবিধা আমি হতে দেবো না।
ক্রিসমাসের শপিংয়ে আসা মানুষের ঢলে পুরো মল থই থই করছে। আমাদের ঈদের বাজারের মতো। ব্যতিক্রম হলো আমাদের ঈদের বাজারে থাকে পুরুষাধিক্য, এখানে নারী। উর্বশীদের কল-কাকলি আর পদচারণায় পুরো মল গম গম করছে। উঠতি বয়েসের তরুণীদের প্রকট উপস্থিতি পুরো মলের দৃশ্যপটই বদলে দিয়েছে। তাদের কেয়ারলেস পোষাক আষাক,চালচলন, বয়ফ্রেন্ডদের কোমর জড়িয়ে ধরে উদ্দাম চুমোচুমি, উচ্ছ্বাস এক স্বৈর্গিক আবহ তৈরী করেছে। তারুণ্যের এই উচ্ছলতায় ভ্রƒ-কুটি করছে এমন কাউকে দেখতে পেলাম না। এটি এখানকার সংস্কৃতি, এশিয়ার নয়। এই প্রাণবন্ত কৈশোরিক আবেগ প্রকাশে কাউকে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকতেও দেখা গেলো না। কারণ তা অশোভন। বরং সবাই মুচকি হেসে যার যার কাজে চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে।
আমরাও জুয়েলারী সেকশন পেরিয়ে পারফিউম সেকশনে পা রাখলাম। অমনি জন থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। তার চোখে অবিশ্বাসী দৃষ্টি। সেই দৃষ্টি অনুসরন করে আমিও চমকে উঠলাম। এ যেন অকল্পনীয়। এতো দ্রুত এমন দৃশ্যপটের অবতারণা হবে তা ভাবতেও পারিনি। এদেশে জামা বদলানোর মতো সঙ্গী বদলানোর নিয়ম থাকলেও সবাই তা করে সমঝোতার মাধ্যমে। ছেলেপুলে হবার পর ছাড়াছাড়ি হলেও এদের বন্ধুত্ব সহজে নষ্ট হয় না। এমন ঘটনা আকচার ঘটছে এখানে। তাই বলে সিন্ডি এতো দ্রুত জনকে এ রকম আঘাত দেবে কল্পনাও করিনি। তা-ও আবার স্ট্যানলির সাথে ! যে জন তার জন্যে এমন রক্তাক্ত হলো স্ট্যানলির হাতে ? পারফিউম সেকশনের বিপরীত লবিতে সিন্ডি আর স্ট্যানলি দাঁড়িয়ে, পরস্পর চুম্বনরত। এ দৃশ্য সহজে সহ্য করা সম্ভব নয়।
আতিক, প্লিজ হোল্ড মি -।
জনের অস্ফুট গলার কাতরতায় আমি যেন সম্বিত ফিরে পেলাম। দ্রুত তাকে ধরে একপাশে সরে এসে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করালাম।
টেক ইট ইজি জন, সে তখন ঘেমে উঠেছে, তুমি টিন এজার নও-
আয়্যাম ওকে, ধাতস্থ হবার চেষ্টা করে জন, টেক মি হোম-
এখুনি যাবে ?
হ্যাঁ।
তোমার জন্যে কিছু কিনতে চেয়েছিলাম-।
বাই লিকার অর বিয়ার ।
ফেরার পথে তা-ই কিনলাম। একটা বার থেকে এক ডজন লাগার লাইট কিনে বাসায় ফিরে এলাম।
পলকে ফোনে জানিয়ে দিলাম কাজ থেকে সোজা আমার বাসায় চলে আসতে।
এখুনি খুলে ফেললে ?
অসুবিধা হলে রেখে দেই -।
ওর মুখ দেখে খুব মায়া হলো, বললাম, দ্যাটস্ ও কে।
থ্যাঙ্কস আতিক, গল গল করে মুখে ঢেলে দিলো সে, য়্যু আর দ্য গ্রেট।
*************************************

Leave a Reply