You are currently viewing নুসরাত সুলতানা > তিনটি অণুগল্প

নুসরাত সুলতানা > তিনটি অণুগল্প

নুসরাত সুলতানা
তিনটি অণুগল্প
 
মুক্তি
 
উদার মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা স্বাধীনচেতা, মেধাবী  মালিহা নিজের পছন্দে বিয়ে করে স্বচ্ছল পুরুষতান্ত্রিক পরিবারে বেড়ে ওঠা সহপাঠী আদিবকে। প্রতিদিন একটু একটু করে প্রকট হতে থাকে সংস্কৃতির ফারাক। তারপর প্রেমের স্থলাভিষিক্ত হয় দ্বন্দ্ব, সমোঝোতা। ১০ বছরের দাম্পত্য জীবনে আছে ৭ বছরের কন্যা সন্তান দিব্যি।
 
মুখবইয়ে পরিচয় হয় চিত্রশিল্পী ফাহিমের সাথে। মালিহার জীবনে যেমন ধর্ম, সমাজ আর রাষ্ট্র সবদিক থেকে আদিবের সাথে জড়ানো। তেমনি আবেগ,উপলব্ধি, আনন্দ সব জড়িত ফাহিমের সাথে।
 
কি করে বাঁঁচবে মালিহা। মুক্তি যখন মরিচীকা তখন এগিয়ে আসে শৈশবের নদী কীর্তনখোলা। শুধু ৭ বছরের দিব্যিকে রপ্ত করতে হবে নতুন একজন কে মা ডেকে তার সাথে মিলেমিশে চলার কলাকৌশল।
 
গতি, প্রেম আর জীবন
 
মহুয়া আর নির্ভীক ছোট্ট দুটি নদ আর নদী। দুজনের বেশ ভাব আর বন্ধুত্ব। মহুয়ার ছলবলিয়ে চলা, গতিময়তা নির্ভীককে খুব আকর্ষণ করে। নির্ভীকের  স্থিরতা, ধীর চলা, আর স্বল্পভাষী বৈশিষ্ট্যে মহুয়া বেশ মুগ্ধ।  দুজনের বেশ ভাব বন্ধুত্ব, প্রেম আর অতঃপর পরিণয়।
বেশ চলছিলো দুজনের জীবন। মহুয়া কেবলই ছুটে চলে অভিনব চিন্তায়, ভাবনায় আর বৈচিত্র্যে। নির্ভীক যেন আর তাকে ছুঁতে পারে না! হাঁপিয়ে ওঠে নির্ভীক। মহুয়া একদিন দেখা পেয়ে যায় এক সমুদ্রের। মহুয়া কেবলই মগ্ন হয় সমুদ্রে! আর নির্ভীক মগ্ন হয় স্মৃতিতে!
 
পাঠক
 
একবিংশ শতাব্দীর এক আধুনিক কবি খুব অসুস্থ। ডাক্তার, কবিরাজ, ওঝা কেউই কিছু করতে পারছে না। শেষমেষ একজন পীর সাহেবই ভরসা। পীর বল্লেন ওনার জন্য একজন নিখাদ পাঠকের জামা লাগবে। সেই জামা গায়ে দিয়ে ঘুমালে উনি সুস্থ হয়ে যাবেন। কবি পত্নী হন্যে হয়ে ছুটলেন বইমেলায়। সমস্ত স্টলে স্টলে ঘুরলেন যাকেই জিজ্ঞেস করেন, সবাই কবি বা লেখক। পরিশেষে কবিপত্নী ব্যার্থ মনোরথে ফিরে চলছেন। গেলেন নীলক্ষেত দেখেন এক লোক বই কিনছেন। বল্লেন ভাই আপনি লেখক? ভদ্রলোক হেসে বল্লেন না আমি নিয়মিত সেবা প্রকাশনীর পাঠক। কবি পত্নী মিনতি করে বললেন, ভাই আপনার গায়ের জামাটা আমি পাঁচ হাজার টাকা দিয়া কিনবো। ভদ্রলোকের চোখ কপালে। কবিপত্নী সব খুলে বল্লেন। ভদ্রলোক  বিনয়াবনত হয়ে দিয়ে দিলেন জামা। কবিপত্নী রাজ্য জয়ের আনন্দ নিয়ে ফিরলেন। এসে সংবাদ দিলেন পীরসাহেবকে। পীরসাহেব জামা পরিষ্কার করে ফু-টু দিয়ে জামা পরালেন কবিকে। রাতে ঘুমালেন কবি। সকালে উঠে দেখা গেল কবির গায়ে ফোস্কা পরে গেছে। সংবাদ দেয়া হল পীরসাহেবকে। পীর সাহেব বল্লেন পাঠকে ভ্যাজাল আছে! উনি কি পাঠক? কবিপত্নী জানালেন; উনি সেবা প্রকাশনী নিয়মিত পড়েন। আর রহস্য  পত্রিকা পড়েন। পীর সাহেব বল্লেন সর্বনাশ!  ওনার তো জীবনবাদী পাঠকের জামা লাগবে! অসুস্থ লেখক ও কবি এখন কোমায়। কবিপত্নী মঙ্গল গ্রহে রওয়ানা দিয়েছেন জীবনবাদী বই পড়া পাঠকের খোঁজে!
 
 
কবি ও কথাসাহিত্যিক