নীহার লিখনের তিনটি কবিতা
আমাকে ভেঙে ফেলে দাও
আমার ভেতরে একটা প্রাণ আছে, ওটা কথা বলে, ওটা চিন্তা-দুশ্চিন্তায় পড়ে, ওটার ডানার মতন কিছু একটা আছে, উড়ে যায় সীমানা চিঁড়ে, ওটা ঘ্যানঘ্যানায়, ওটা শিশুর ঝুনঝুনি আর বৃদ্ধের লাঠি, ওটা সপ্তম নাগ, ওটা বিশুদ্ধ মাইক, ওটা রেল লাইন, ওটা ইত্যকার সকল শুভ্র-সত্য অপেক্ষা, ওটা গাজীর গীতি, ওটা সর্বহারার দলে কাফেলা বাজায়, ওটা বুনো কবুতর
আমাকে ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো করে ফুঁ মেরে নিভিয়ে দাও, নইলে তোমাদের শরীরে সত্য কোনো আগুন লেগে পুড়ে যাবে সব, সইতে পারবে না
সিদ্ধার্থের শেলফ
পাখি খুব নিকটে উড়ে বলেই, কথায় কথায় আমি তার নাম নেই
জীবনে এমন ফ্রিকোয়েন্সী কোনো থাকেই, থাকলে ভালোই লাগে
নইলে প্রেমে পড়ার বয়স হতো কেবল কাছিমের
সময়ও অধিককাল নির্জনতাকে চায় না, তাই ঝড় হয়, উপুকূল নাচিয়ে, ফুলিয়ে
মানুষের সে বিভবশক্তি সে দেখে অন্যের নিদ্রিত চোখ অথবা গাছের পাতায়, তাই সে বাঁশি বাজাতে চায়, সুর করে বাঁশি বাজাতে পারলে সে মরমী গানের স্বরলিপি হতে পারে, যেহেতু সে নিজেও কোনো বাতাসের কল, বাঁশির কল, যাকে পাণ্ডুলিপি করলে মলাটবদ্ধ কোনো বই হয়, এমন একটা বই থাকে সিদ্ধার্থের শেলফে
সূচিপত্র
আয়না ও আকাশে যে প্রতিবিম্ব পড়ে সকাল সন্ধ্যায়,
সে এক ভুল পাঠ্যসূচীটি আমার;
পড়ে সুখি হই, দুখি হই; পুলকের মোহরটি বেজে উঠি উদ্বেল পতনে, ডুকরে দুলে উঠি, তুলার বিবাগ
অদেখা সত্য সে রূপ না দেখেই মাপি মেঘ আর রোদগুলো, পাখিগুলো, গভীরতম খাঁদ আর বাতাস এই পৃথিবীর, মানুষের ভারী ও পাতলা মুখশ্রীর সমস্ত রং
একটা কাঁচ ও শূন্যতা ব্যতিরেকে নিপুন কোনো গজ নেই আমার, অন্ধকারে, তবু এই জীবনে তোমার দিকেই চেয়ে থাকি
তোমার মুখটা আরেক আকাশ, আরেকটা আয়না;
ভাঙতে পারি না, আরেকটা পাঠ, পড়তে পড়তে উড়ি, যার কোনো সূচিপত্র নেই