You are currently viewing দশটি কবিতা> প্রসেনজিৎ আদিত্য

দশটি কবিতা> প্রসেনজিৎ আদিত্য

দশটি কবিতা <>প্রসেনজিৎ আদিত্য
 
 
জীবন
 
 
ফিরব বলে আসে না কেউ,
নদীও কি তাই!
এই খেলি চলি ভাসি, সেও ভেসে বেড়ায় ।
তারপর অলিগলি মাংস পিণ্ড কাঁটা লতা
সাপ লুডো পেরিয়ে অভিজ্ঞ হলে
তার সাথে আবার দেখা হয়,
দেখি সেও প্রস্তুত হয়ে আছে
তখন বুঝি, ফিরব বলেই এই আসা।
তবু দ্বিধাভরা লোভী মন প্রশ্ন করে চলে
জীবন কেন নদীর মত হয়?
আসলে জীবন নদী বই ত নয় !
 
 
 
বিমোচন 
 
 
এ কেমন ডাক শুধু ছুঁয়ে ছুঁয়ে  যাওয়া,
আলোয় আলোয় ভাসে সুর,
সুর দিয়ে সুর কেড়ে নেওয়া।
বিমোচনে প্রহার তবু আঁখিপটে
এ কিসের দৃশ্য ভেসে ওঠে !
বুঝিনা  এ কোন  সুরদাসী খেলা
অকুল পাথারে ভাসে মেঘবালক
আর পণ্ড হয় সব টুকু বেলা  ।
 
 
যখন শহর ভাসে
 
 
একটা আস্ত শহর ডুবে যায়
শ্রাবন মেঘের অতর্কিত চুম্বনে ;
যেন বিশ্রামিত্রের পা টলে
মেনকার যৌবন জোয়ারে।
টিপ টিপ টপ টপ কোন সে ছান্দসিক
সাজিয়েই চলে তার ছন্দ হাঁটন,
এ ভাসান যে কোন ছন্দে কেউ বোঝেনা
যে তলিয়ে যায় সেও বোঝেনা,
তাই যখন শহর ভাসে, হাসে ছন্দবদ্ধ পতন
এ পতনের শব্দ বোঝে রূপদর্শী মন।
 
 
চাঁদকে
 
 
জোছনা করিস মাখামাখি
ও রাত বেড়ুনি মেয়ে!
কাঁখ ভরা কি ও, সাদা জুঁই?
নাকি স্বপ্নের পসরা?
এগোবে না পিছোবে কি ভেবে সারারাত
থামতে চেয়েও যেন পা নড়ে চড়ে,
ঘুম কি আর আসে বলে কয়ে?
তাই ত আমি জানলা টাকে খুলি,
বুকের কাপড় সরলে, সেও বুঝি কার দোষ!
তবে কেন মাখিয়ে দিয়ে গেলি
কলঙ্কটা  একার ছিল বলে?
জবাব দিয়ে যাস।
 
 
 এভাবে ছুঁয়ে দাও
 
 
দুহাতে ছুঁয়োনা আর
আমার শরীর জুড়ে মহামারী
আগুনে কিছুটা স্বস্তি আছে।
 
দুরত্ব মেপে এগিয়ে এস
সময় বড় ছোঁয়াচে আজ
দুরত্ব পেরোনো মানা আছে।
 
বৃহন্নলা বেড়া ভেঙে এসো
আমাকে ছুঁয়ে দাও তোমার দুচোখে
দেখ আজো হয়ত অবশিষ্ট আছে।
 
নিশ্বাস গভীর কর
বুক ভরে টেনে আনো অক্সিজেন
আনো মানুষের কাছে।
 
ঘৃণা নয়, এস ভালবাসো
দেখ দুহাত বাড়িয়ে মিছিল মানুষ
মনের আলোয় ছুঁয়ে দাও।
 
ছুঁয়ে দাও এভাবে,
এভাবে ছুঁয়ে দাও ।
 
 
মাপ
 
 
গণিতের মাপ চশমার কাঁচে, মাঝে মাঝে মুছি
জ্যামিতিক উপকরণ আর চায়ের কাপে চুমুক,
এঁটো কাঁটা উচ্ছিষ্ট সব কিছুরই আদল আছে
বুঝে নিচ্ছি সব কিছুর চিত্রকাল্পনিক মাপ।
বাজারের ব্যাগেও জ্যামিতি মিশিয়ে  ফিরি
বেশ উপভোগ করি ব্যাগ উপুড় হলে,
বটি নিয়ে তুমি বসলে পিত্যেশে তাকিয়ে দেখি
কত নিখুঁত মাপে এক একটা ব্যঞ্জনের প্রস্তুতি,
সব ব্যঞ্জনাময় শব্দ আর কেরামতি,
মাছের মাথা থেকে সবজির সব মাপই আলাদা।
আমিও জ্যামিতি বাক্সে হাত চালাই
মা ভাই বোন সন্তান বন্ধু এসবের মাপ খুঁজে হন্যে,
নিয়মের খাতায় গেলে দেখি বিশেষ দ্র‍্যষ্টব্য
অংশে লেখা, সম্পর্কের কোন মাপ হয়না,
শুধু সময় আর পরিস্থিতি একে মাপে।
 
 
সময়ের নিগড়ে
 
 
পায়ে পায়ে মাপা নাব্যতা
অন্তরীন ছন্দ ধরে ধরে
কোন এক ছন্দের গভীরে সর্পিল এগোনো,
সময় কে ফাঁকি দিতে সময়কে চিরে
যেটুকু সময় থাকে পড়ে
নশ্বরতায় ঢাকে অতলান্ত ভবিষ্যৎ।
তবুও পা বাড়ানো হিসেব এঁকে মুখে
সীমাহীন পরিযায়ী ক্ষণ
মন থেকে মনের গভীরে ।
 
 
আজগুলো
 
 
নিসঙ্গ প্রাচীরে উদ্দালক মস্তিষ্ক হেলান দেয়
জিরোনো হলে বাগীশ পাত্রে ওঠে ইবলিশি তুফান
দীর্ঘশ্বাসে কুম্ভক -বর্তমান গতকালের চিন্তায়
ছেঁড়ে স্নায়ু সেতার,
খামতি আর কাটাছেঁড়া জমা হয়ে পর্বত হয়।
এদিকে আগামীর রূপকল্পে  ত্রস্ত  মন শরশয্যায়
 চিত হয়ে বালিশ পালটায়,
এভাবে দিন আনি  রাত খাই জীবনে
আজগুলো প্রেত হয় প্রতিদিন.।
 
 
সন্তাপ
 
 
আলোকমালার সে এক কোন কোণে,
তখনো জেগে
অছ্যুৎ এক গোপন অন্ধকার।
আলোর মাঝে সোহাগী জোনাক জ্বলে
হয়ত অবহেলে,
তবু বুকের গভীরে চকিত ও নাম কার!
একি জীবনজোড়া তাপ
নাকি কোমল অভিশাপ!
 
 
 
জীবন্ত চোখ
 
 
নীরবতা নিয়ে  বিস্তর অভিযোগ।
এই ত সাজলে,
মিষ্টি হাওয়ায় উড়িয়ে দিলে মন
ওই তো বাঁকা ধনুক আমার পানে
তারপর নিরবে অপেক্ষায়,
তবু আমি কিছু বললাম কই!
আসলে তুমি যে কথা বলে যাও
জীবন্ত ওই চোখ মেলে ,
সব ভুলে
আমি ত সেদিকেই চেয়ে রই !