You are currently viewing নববর্ষের কবিতার পাতা: নবায়িত শব্দপ্রহর

নববর্ষের কবিতার পাতা: নবায়িত শব্দপ্রহর

নববর্ষের কবিতার পাতা: নবায়িত শব্দপ্রহর

নতুন বছর বলতে কিছু নেই

অন্তর চন্দ্র

জেনাস ওদিকে-এদিকে একটা সময় বয়ে যায়
ধুতরা ফুলের তলে একদল পঙ্গু সমাজ
কাঁধে ক’রে দিন চালানো শিখছে;
সূর্যের ছায়া ভেঙ্গে যাচ্ছে হৃদয়ে আমার
দিনকে বলুন, ব্যাঙের লাল রক্তে স্নান করে পাতিহাঁস
ওদের বলুন, মাটিতে নামতে আকাশে হাতুড়ি মেরে
সে এসে দরজা বন্ধ করুক;
কুইন্টিলিস পার না হতেই একটা বাদামী বিকেলে হাঁটছি
একজন কবি-কেরাণীর ভাষা পুষে রাখে—
পকেটে বোতাম দিয়ে টিউন বাজিয়ে গভীর স্বপ্নে
থর দেবতার মন্দিরে গিয়ে—একটা আমাকে রেখে আসি
এতটুকু কাল যাপন পোহাতে সূর্য গিলতে হয়;
নতুন বছর বলতে জেনাস আমাদের কিছু নেই
তবুও তোমাকে, গোলাপ দিচ্ছি

২১.১২.২০২৪

——————————

রংধনু ও হৃত চিঠিরা

অনিন্দিতা মিত্র

মাতৃগন্ধের মতো স্নিগ্ধ লাগে আজকাল তোমাকে! চশমার আড়ালে ঢেকে রাখো অন্ধকারের কাব্যগাছা। পঞ্চাশটা বসন্ত পার করেও শুষ্ক পাতার ঝুলি থেকে তুলে নাও হলুদাভ সুখের বাহারি কুঁড়ি। আশ্বিনের কোনো এক আনমনা উড়ো মেঘ এসে ছুঁয়ে যায় তোমার ঠোটের উপত্যকার সব ঘরবাড়ি। সূর্যাস্তের লাল রোদ্দুরের ধ্বস্ত ডানায় রংধনুর রঙে ভেজা ঘুঙুরের রুনুঝনু ধ্বনি, পাখির বাসার আলোপথ ঘুরে হৃত চিঠিরা ফিরে আসে মনের নিবিড় বনশয্যায়। নিঃশ্বাসের প্রতিটা বিন্দুতে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অনুভূতির কারুকৃতি, ধোঁয়াশার আলগোছে গতিপথে ক্রমশ মিলিয়ে যেতে থাকে আমাদের যাপিত মুহূর্তরা। প্রেমিকের সহজাত বেদনা মর্মমূলে ধারণ করে তুমি এগিয়ে চলো নিরুদ্দেশের পথে…

———————————-

আমি মানুষ

অনিরুদ্ধ রনি

আমি মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব।
মুখোশের আড়ালে আমার মানবসত্বা
লোভী নেউঁড়ে কুকুরের মতই লালা ফেলে।
তবু আমি সৃষ্টির সেরা, আমি মানুষ!
আমি মানুষ বলেই, শিষ্টাচার ভুলে নিয়ম ভাঙি,

অনিয়মের প্রাসাদে নিশ্চিন্তে গড়ি আদর্শের সমাধী।
মানুষ বলেই, পৃথিবীর নাট্যমঞ্চে কখনো আমি সীতা,
কখনো মেডুসা স্থান, কাল, পাত্র ভেদে দ্বিচারিনী আমার বিচরন সর্বত্র।
আমি মানুষ বলেই,
মিথ্যের বুলিতে গড়েছি সুউচ্চো এভারেস্ট!
থরে থরে সিঁড়ির বাকে শ্বেত পাথরে খোদাই করা অনাচার।
মানুষ বলেই আমি অহংকারী,
আমি বিবেক হরন করে করি, পশুত্ব বরন
মানুষ বলেই আমি দুর্গন্দ্বময় পথের দ্বারে

অবহেলিত মানুষ গুলো দেখে নাক ছিঁটকাই,
যেতে যেতে সবুজ কচি ডালের পাতাটি ছিড়ে দেই।
মানুষ বলেই, আমি লোভী, আমি পাপিষ্ট!
পাপে পাপে আমার যুগ যুগান্তর পাড়ি।
অসৎ টাকায় উঠাই বহুতল কালো বাড়ি।।
আমি মানুষ বলেই,
সামান্য পেখম তুলে ময়ুরের নাচ দেখেও ঈর্ষাবোধ করি।
রাতের জ্বোনাকী পোকাও আমার প্রানে জ্বালা ধরায়।
মানুষ বলেই দিনের আলোয়,
কামনায় আমার লোভাতুর দৃস্টি ঝাপসা হয়ে আসে।
মুখোশের আড়ালে লুকানো আমার দ্বিচারী পশু জেগে উঠে মাঝ রাতে।
অদৃশ্য মানব দেহ নিয়ে লন্ডভন্ড তান্ডব চালাই রাতভর!
পাপে পাপে গায়ে পচন ধরে, আমি পরোয়া করিনা।
আমি মানুষ বলে, চাই আর চাই।
আমার ক্ষিদা নিবারন মানব দেহের ফুঁটা ফুঁটা ঘাম,
আমি রক্ত চোষা হায়ানা, আমি নিষ্ঠুর, আমি বর্বর,
আমি দুর্বলের বুকে চড়ে নিজেরে করি উর্বর।
স্বাধীনতার নামে ব্যাভিচারে আমার তৃপ্তি,
অবিশ্বাসের হাতে বিশ্বাসের গলা টিপে করি হত্যা!
বার বার ভুল করি, ভুলে ভুলে যায় মাস, যায় বছর,
যেনেও ভুল করি
আমি মানুষ বলেই, মৃত্যুকে আমার এত ভয়!
আমি সৃস্টির সেরা জীব নই,
আমি মানুষ! আমি সৃস্টির সেরা হতভাগ্য পশু!
আমি মানুষ! সভ্যতার নামে অসভ্যতাকে করি বরণ,
অর্থের লোভে মুনুষত্ব করি হরন,
মানুষ বলেই আমি নিজেকে মহৎ ভাবি,
অন্যের দালানে নিজেকে করি দাবি,
মানুষ হয়েও মানুষে মানুষে বাঁধাই দাঙা-জঞ্জাল,
আমি মানুষ নই, আমি অমানুষ, আমি পশু।
আমি মানুষ বলেই
বিশ্বাসের মুখোশে গড়ি অবিশ্বাসের পাহাড়,
অন্যের জমি লুটতরাজ করে নিজের জোগাই আহার,
মানুষ বলেই নিজেকে আমরন ভেবে রাখি,
কর্মের নামে প্রতিবার ধর্মের করি ফাঁকি,
আমি মানুষ, আমি বিশ্বাস ঘাতক, আমি পশু।
মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আজীবন করি বাঁচার প্রয়াস,
বেঁচে বেঁচে বোবা প্রাণীর মতো খাই অন্যের জমির ঘাস।
আমি মানুষ বলেই
আমার কোন ভয় নেই, কারো ভয় করিনা আমি,
আমি মূর্খের মতো জানিনা জান্নাত, কিসের জাহান্নাম, দুনিয়াকেই ভাবি দামি।
আমি পরোয়া করিনা কোন শক্তি আমার নিজের জো্রে,
গরিবের করি লুটপাট, নিজের রাস্তায় করি ধর্মঘট,
আমি বেহায়া বর্বর, আমি মূর্খ,
আমির সৃষ্টির সেরা জীব নই
আমি সৃষ্টির কলঙ্ক, আমি অসভ্য,
আজ লোভে লোভাতুর আমি বিক্রিত আমার মস্তিষ্ক,
লোভি আমার সত্ত্বা,
টাকার বিনিময়ে মানুষ হয়েও মানুষের করি হত্যা,
আজ নিচ আমার ব্যাক্তিত্ব,
আমি মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব নই,
আমি সৃষ্টির সেরা নিকৃষ্ট,
আমি মানুষ বলেই সৃষ্টি হয়েও, স্রষ্টার করিনা কৃতিত্ব।

————————

সাম্পান তলায়

আজিজ কাজল

সাম্পান তলায় কে? উকুন মেরে ডলা দিবো তোমার মগজে

চপল বানর লাফিয়ে-পালায় খায় না তারা ঘাসের মূলা

মাটির বোতাম খুলে বানাও রক্তনদী ঢেউয়ের নুপূর

ফল পাকুড়ের চালান দিতে রাজি, চলে যাব হরিণ খোলা

 

ফর্সা মুখে আমিও পারি খুলে দিতে নিজের দুয়ার

রঙিন করা মুখে বাজে গত দিনের শুন্য হিসাব কিতাব

মান কুড়াবো ইশারাতে ভঙ্গি ধরে চলছি সবুজ গুঁয়ার

লক্ষ রতন দেখাতে পারি গুপ্ত খুলে সুপ্ত কতো নেকাব

 

কাঠের লাঠি মাটির বাটি ধইঞ্চা খুলে তাকাই শুধু জ্বালা

দেখছি বসে দাঁড়িয়ে খসে কোন কিছুই যায় না ফেলা যেনো

একে একে যাচ্ছে খসে মায়ার বাঁশি কানে ধ্যানে লাগছে তালা

সাথে থাইকা গিয়ে দেখছি পচিম দুয়ার দিচ্ছে হানা শুনো

 

উজান দিকে আইসো নাগর ঢেউয়ে ভরা মাছের ঝুলা

সামলে রাখো ঘর-হরিণী দাও তারে ফিতা গোলাপ আঁতর

মহব্বতের টোটকা কথাও মনে ধরে ভজন করো খোলা

লগি বৈঠা মারো ঠেলা, অসীম পানে ফুটাও পরশপাথর

———————————————————-

অন্য জীবন

চন্দনকৃষ্ণ পাল

ঘাসের গন্ধ আজ হারিয়েছি সাড়ে তিন যুগ
ফড়িং এর হাঁটা চলা নিষিদ্ধ এই জনপদে
কী নিয়ে থাকি আমি?
উদ্ভট শব্দ আর বিচিত্র গন্ধ নিয়ে,
সাথে আছে উড়ন্ত ধূলো-
যে ধূলোতে মিশে আছে কফ কাশ থুথুর জীবন।

এ জীবন চাইনি তো!
পেয়ে গেছি ক্ষুধার জ্বালায়!

১১.১২.২০২৪

———————————

শপথ

চিরশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

শপথ না হল, না হোক —
মনের তারগুলো যে
বাঁধা রয়ে গেল
অজানা ক্ষণে,
তারই সুর ঝংকারে
যখনই থাকি একাকী
আনমনে অন্যমনে
মিষ্ট আলাপনে।

শপথই কি সব?
না বলা যে কথাগুলো
চলেছে নহর দিয়ে
মিশেছে তোমার নদীতে —
জানো তুমি সব,
তবু ভান করো না জানার
লুকাও নিজেকে শুধু নিজেরই কাছে
যেন রাখো না খবর।

শপথ জানে না চাঁদ
ধরা দেয় দিঘিটির বুকে,
পতঙ্গ জীবন দেয় আগুনের প্রেমে
ঝাঁপায় অক্লেশে, মরে সুখে,
তোমার এ অভিনয়
সাঙ্গ হবে যেদিন, আসবে সেদিন
তুমি শপথবিহীন হয়ে
দাঁড়াবে আমার পাশে শুধু হাসিমুখে!
——————————–

নতুন বছর
সাজ্জাদ সাঈফ

প্রতি রাতে স্বপ্ন মিথ্যা বলে, যে-রকম স্বল্প আলোয় জীবন পথ ঘুরতেই ছোবল খাচ্ছে সাপের, ও কি না বর্ণচোরা! ও সীমাহীন ঘৃণা বিভাময় কার্পাসতলে থেঁতলে যেতে দেখে তবু কেন যে পোষে বুকে এক ধানকল, স্বর্ণিল-

আর
যে শীতল
যে অভিমান সারে মুচকী হাসিতে
ডুমুর দানারা পড়ে আছে সেই দিকে
একদৃষ্টে, যেন তার চক্ষু বাইনোকুলার;
তার পাপ রক্তমুদ্রিত;
সিনাটানে হেঁটে চলে যাওয়া স্মৃতি
তাকে দিবে নাকি বিস্মৃতি ও গ্লানির পাথর?

সবশেষে আলো আর আন্তরিক অভিধা নিয়ে
নতুন বছর এলো ফের জানালায়; এরই সুদৃঢ় পরিক্রমায় ধানের চারার মত নিউবর্ন সবুজের বিস্তার, এক ফালি রৌদ্র ঝরিয়ে এসে, সব কথা শোনাবে তোমায় হেসে, সব গ্লানি ভেজাবে প্রেমের গ্লাসে!

——————————————-

মৃত্যু কোল
তীর্থঙ্কর সুমিত

একটা মৃত্যু চাই
সময় করে সব আবদার মেনে নেবো
উড়ন্ত পায়ারার ওঁম ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞারত।
আমার আমি এখন…

একটা মৃত্যু চাই

কথা ভোলানো পথ আজ সবুজ হারিয়ে
নিরুদ্দেশ পথযাত্রী।
সময়মত একটু রঙ ছিটিয়ো আমার বুকে।
নীল, সবুজ কিম্বা লাল নয়
একটু অন্ধকার দিও।

একটা মৃত্যু চাই

জীবন মানে তো একটা ধাঁধার সমীক্ষা
এর থেকে আর কিছু নয়
বিশ্বাস করো চোখ বুঝে
একটা নিশ্চিন্ত কোল চাই।

নরম কোল…

—————————————–

সোনা
হৃদয় লোহানী

কোথাও কি ছুঁতে চেয়েই অছ্যুত তুমি !
আগুনের ধোঁয়াটে কষ্ট ! যন্ত্রণা হচ্ছে !
মেন্টাল ট্রমার মধ্যে অনাস্থায়ী অস্তিত্ব !
একেকটা রক্তমাংসের শিরদাড়ায় ঠান্ডার ধ্যাত !
অলক্ষণে ঝাড় ঝাপটা ! ফাঁকা ক্যানভাস ! সুইসাইড নোট !
উৎকণ্ঠার উড়োপত্র ! পৌরাণিক প্রেতাত্মা !
ঘুরে ফিরে অপ্রেম ফিরে ফিরে আসে ! ডিপ্রেশন – ফ্রাষ্টেশন !

আদপে মধ্যবিত্তের প্রেম – নির্বিঘ্নে ঘুমের রজনী সাজাতে
বুকের পাঁটায় দম না নিয়ে রাত জাগা নিশাচর !

বিচ্ছিন্ন হওয়া – শূন্যে যাওয়া – একা একা হওয়া
সবই একই খেলা – বেঁচে থাকাটা বহুরুপের মেলা !

অসহায়ত্বের কাছে আত্মসমর্পণ –
নয়তো জীবন গেলেও নো কম্প্রোমাইজ !

কোথাও কি ছুঁতে চেয়েই অছ্যুত তুমি !

তৃপ্তির নজরানায় –
অনির্দিষ্ট কালের জন্য চাই তোমাকে
চাই ন্যূনতম প্রয়োজনে

অমন করে বিষের ছোবল মারতে নেই সোনা
মারতে নেই
মরতে নেই ……।

১০-১০-২৩

*********************************

Leave a Reply