দয়াময় পোদ্দারের কবিতা ফিদেল কাস্ত্রোকে লেখা একজন মানুষ অচেনা এক দ্বীপে আখের খেতে কাজ করেনএকজন মানুষ অচেনা এক দ্বীপে দিন এবং রাতের একাকার,জাল পেতে মাছ ধরেন। দুজন মানুষের কোনদিন দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি।আর সম্ভবও নয়।দুজনের একটাই পরিচয়- পিতা। দুজনের একটাই লক্ষ্য-শিকড় স্থাপন। অতঃপর ফিদেল কাস্ত্রো, তোমাকে দেখি- হেঁটে যাচ্ছঅন্ত্যজদের ধাপাড়িয়া পাড়ায়।সকলেই আলোর দিকে ধাবমান, মুক্তির দিকে পাখিরা যেমন উড়ে যায়!বাঁশবাগানে এক সন্ধ্যার গোপন মিটিং যেমন খুলে দেয় ডানা-উড়াল আর উড়াল।অন্ধকার চিড়ে নতুন রাস্তা, জল-কাদা ছুঁয়ে তুমি হেঁটে চলে গেলে।কলমি ফুলে এখনও লেগে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আরশ্রান্ত পাখিদের সঙ্গে আমিও কিউবায় জড়ো হই।প্রাণের উৎস খোঁজে উৎসব। এখনও এবং তারপরেওএই হেঁটে চলা বিরামহীন… ভারতবর্ষ থেকে কিউবা, খুব বেশি দূরে নয়! কালবোশেখি প্রতিবার চলে যাবার সঙ্গে লুকনো থাকে একমুঠো ধুলো, একটি শুকনো পাতা যতটুকু রং থাকলে ফুল দেখা যায় অস্তিত্বের সুতোয়,যতটুকু জল থাকলে পা ডুবিয়ে ধোয়া যায়… কোথায় পা রাখতে হবে আর কোথায় ফুল, পাতার শিরা-উপশিরায় মেঘের অববাহিকা… খাদে জমা যত ধুলো, যত্তসব এলোমেলো ফেরা… প্রবঞ্চক রাস্তাটি লালিত এগিয়ে বেঁকে গেছে। রাস্তাটি, যে জায়গা হতে বাঁক নিয়েছে- সেখানেএকটি বেঞ্চে আমাদের অতীত-রৌদ্র বসে আছে,ছায়ায় পুড়ছে তার পিঠ, বৃষ্টিতে ভিজছে জমানো ঢেউ! আমাদের ছাতা নিয়ে ফিরবার কথা ছিল… যেখানে, আমরা দাঁড়িয়ে আছি, দৃশ্যহীনমুখরিত আজনবী গলি, আরএভাবেই সকালের ঝুমঝুম-আলো ক্রীতদাস হয়ে যায়!যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি- আমাদেরচারিপাশে অক্টপাস পুষে কৃত্রিম জলাশয়,সাঁতারের কথা ভিন্ন আর কিছুই মনে নেই! ছাতাটি হাতেই রয়ে গেছে। একমুখী সরলরেখা মজ্জাগত স্বভাবে কোন বাঁক রাখা হবেনা ;সামাজিক পাতায় চরম হুশিয়ারি- বাঁকের অশত্থ গাছটিকাটা যাবেনা কোন ভাবেই,সভা ডাকা হল। সেই আমরা,সভায়রায় দিয়েছি- অশত্থ গাছটিকে রাখা যাবেনা! হলুদ-জোছনার বনে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছি- রোদ-ছায়াগোপন রেখেছি- তোমাকে শাড়ি কিনে দেবার বিষয়টিএতো কথা দিয়ে রাখতে পারিনিতার হিসেব রাখলে এই পাশাপাশি হাঁটা হতনা কিছুতেই!ভিড় রাস্তায় অটো-রিকশা বেপরোয়া বাঁক নিতেইকাদাজল ছলকে লাগলো দুজনের পায়ে।হাতটা ধরতে চাইছি যখনই- অদম্য বাস পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়।পিছিয়ে পড়ছি ইচ্ছাকৃত ভাবে, হাওয়ায়রেখে যাওয়া তোমার পারফিউমের ঘ্রাণবুক ভরে নেব বলে।এভাবে পাশে হাঁটার জন্য কথা দিয়ে না রাখতে পারলেও তোমাকে প্রতিদিনই কথা দিতে চাই,হলুদ-জোছনার বনে পার্থিব এই মুহূর্তগুলোকেপেয়েছি তোমার জন্য,সবুজের বুকে তারকা চিহ্নিত তাঁত শাড়িঘোমটা টেনে লাজুক ফিরে তাকাও কুমড়ো লতাটি! একটি প্রণাম মাকে প্রণাম করার সময় দেখি- মায়ের শ্রীপায়ে লেগে রয়েছেআমারই প্রথম জন্মদিনের রক্তজলধুলো।চরাই-উতরাই হাঁটা পা : দীর্ঘ আলোকবর্ষের ছায়াপথ আবর্তিত হয়েএসেছি- সেই পায়ে একটি প্রণাম রাখব বলে!যতবার হাঁটু মুড়ে বসে নত হয়েছি- ঘুর্নাবর্ত আর মরুভুমি মাঝেএকচিলতে চন্দন-উঠোন, তাকে প্রাণ দিতে গোবরজল মেখে মেখেসেই পা হয়ে গেছে মৃন্ময়ী।বিহানের নরম আলোতে স্নানস্নিগ্ধ মুখ, খোঁপায় ভেজাগামছা জড়ানো, মনে হয়েছে- বাবা-মায়ের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী,লতা-পাতায় মাখা নদীরঙা শাড়ি পরে মা স্রোতস্বীনি ;আমিযত ভুল করি, যত পাপ…যেন পা নয়, মাটির কবচ ছুঁয়ে প্রতিবারই জন্ম চেয়েছি, ধুলো চেয়েছিধুলোয় রক্তজল! মা, পরম স্মিত হেসে মাথায় হাত রেখেছে,কুন্ডলী পাকিয়ে গেছি স্নেহ-করপুটে। আর আমাকে ঘিরে দুর্ভেদ্য-বলয়চিরন্তন আতুরের ঘ্রাণ! বাবা চাতক পাখির ঠোঁট তৃষ্ণা ঠোঁকরায়সমুদ্রতলের পাতাল ও কেঁপে ওঠে |প্রতি কম্পনে ভেসে যায় কাগজ ফুলের পাপডি় |ক্ষযি়ষ্ণু উঠোনময় হাঁস-মুরগীর শুকনো মলশূন্য জনপদের শেষে নেভা উনুনগ্রীষ্মের বিদীর্ণতায় শুধু ধু-ধু অবকাশ,তুমি একলা কাঁধে বইছো গোটা একটা দেশকে |তবু ডাকোনা পাডা়র দরোজা-জানলা খুলে যাবে বলে …রুদ্ধ-সঙ্গীতের এস্রাজে নীরব দিনাতিপাতকালোচুল সাদা হও-ভয় করে বুঝি ?ভয় পেযো়না বাবা, দেখো,আমিতো বৃষ্টিকে খুঁজি খডি় ওঠা তটভূমি,লাঙলের ফলায় দুপাযে় প্রাপ্ত আঘাত;রাত শান্ত হলে চুপি চুপি পাযে়র সামনে গিযে় দাঁডা়ইবুঝতে পারি চাতক উডে় গিযে়- ফিরে আসবে কোন শ্রাবণে… হিংসা যতটা আগুন দিলে সে পুড়তে পারে তুমি , তাকে তাই দিলে | যেভাবে অরণ্য পুডে় যায় দাবানলে… সে ফিরে এসে তবু পেতেছে বিনম্র হাত,উপর্যুপরি দিযে়ছো আগুন- হাত উপচে ওঠাতোমার কার্পন্যহীন…আর,প্রতিবারনীরব থেকেছে ভেবেছো- পুডে় গেছে… আসলে ফিরে এসে বন্ধু সম্বোধনে,সে তোমাকে ফিরিযে় দিযে়ছে সমস্ত দহন ! কুশল নদীর তোমাতে চলন বেঁধেইডেকেছো কুশল পতন! বিচ্ছেদ পালকে গাঁথা- উড়াল…. সে তোমার ঠোঁটের বিষাদ… মরীচিকা স্বপ্ন বালুতট, যত জল দাও শুষে নেবে! দূরত্ব নদীতীরে মেঘবতী তুমি, আমি উদাস বৃষ্টিতে ভিজি! গাধা আজ্ঞাবাহী হাওয়া দূরে যায়, তোমাতেই ফেরে পুনরায়… মুখর-বৃষ্টি জানো? এইযে তুমি যাকে ঘর বলছো,এ আমার দেহ সমিধ!ঘরের নিশানডিহি-ফ্রিজে রোদ্দুর জমিয়ে রাখি;এই ভরা ‘ভাদর মাহে’ শাপলা ফোটে, শালুক হাসে, আরআমার চায়ের কাপে, বইয়ের পাতায়, ভাতের হাঁড়ি ভর্তিমেঘ আর মেঘ, বিদ্যুচ্চমকায়। বজ্রপাত অহরহ।ভিতরে কুঁকড়ে থাকা আগল ভেঙেবৃষ্টিতে ভেসে যায় বন-বাদাড়দিনের দুকুল।মুখর-বৃষ্টি মুছে প্রতিটি গাছ, পুঁতি, দেশলাইটেবিলে গুছিয়ে রাখি।ভেজা ভেজামন, জামার কলার সমাধিতে এ আমার শবদেহসন্ধ্যায় তুমি মনে এসে মনেতে পিদিম জ্বালিয়ে দিও, আরফিরে যাবার কালে সেই পিদিমের আলোতেতোমার মুখখানি তবু রেখেতো যাও! আদর-বিড়াল মাঝরাতে যখন চাঁদের আধখানা লতায় আর পাতায় ঢেকে যায়,তুমি জেগে ওঠো রেশম-কাতর বিছানায়। দরোজার পর্দা নড়ে ওঠে।সর্পিনী-উদোম শরীর হাওয়ায় দুলতে থাকে নেশাতুর। হিসহিসনিশ্বাসের শব্দে চাঁদ-শরীর রাঙা তখন। চোখে মায়াবি কাজল টানা!আমাকে, তুমি দুষ্টু নেরু বলে ডাক আর তুমি আমার আদরের মেনি,উলের গোল্লা ছুড়ে দাও আমার দিকে, পাল্টা আমিও তোমার দিকে,ডিভান থেকে বালিশ উড়ে যায়। বিছানার চাদরের ফুল, আঁকিবুঁকিথেকে রঙ উড়ে গিয়ে ছাদে মাখে। উলের গোল্লায় তোমার স্পর্শকে আমিআর আমার স্পর্শকে ছোঁও তুমি। ঠোঁটের পরাগ কাঙালপনাকে খেয়েনিসপিসে- আমার বুকের ভিতরে কুন্ডলি পাকিয়ে ঘুমিয়ে থাক দ্রোহ! হলুদ পাতা কখনও কখনও তোমার বিষোদ্গার, আরত্যাগ করে যাওয়া একান্তই জরুরি-আমার পূনর্জন্মের জন্য! আবহমন্ডলে ফোটে রজনীগন্ধার বন,সুপবন আসে ভোমরের ঠোঁটে, আরমেদের নিচে উষ্ণতা ঝরেছে সখেদতারপরে তুমি ভীনগ্রহের জীব,তারপরে আমিও নাবাল ভূমির জাতক রোদমুখো উঠোন পেরিয়ে- দুধমুড়ি,চামচবাটি কলতলায় রেখে ঘুমোতে যাওচাঁদঘরে, আরসেইসব ছায়া এসে পড়ে তুমুল ঝড়-জলেরনাবাল মাটিতে,আমি ভেসে যেতে থাকি ধুয়ে যেতে থাকিহলুদ পাতায়! গীতিকার হলদেটে চরাচরে সুতোকাঁটা ঘুড়িরোজ উড়ে যাই। ঝাউপাতায় ঠোকর খেয়েফিরে আসি- অনিশ্চিত হাওয়ায়।এই যে স্থবির ঘাম, আর ভাঙাচোরাবিবর্ণ-খিলান। চারকোনা সাদাপাতা ।তুমি এসব তোমার জয় ভাবো- আরস্থায়ী শুরু করো কোমল-মধ্যমে ;যত শৈবাল জন্মায়, ফুল ফোটে ছোট ছোটরুপ খুলে সুন্দর করে দেয়- নিশিডাক।তাকে রবার ঘঁষে মুছি ; অন্তরায় চাঁদছুঁয়ে যায় তোমার কপাল, আড়াল খুঁজে আমি শুধুজলজ-শরীরে লিখি শৈবালের গান! =====================
দয়াময় পোদ্দারের কবিতা
- Post author:monmanchitra
- Post published:November 26, 2022
- Post category:কবিতা / চলতি সংখ্যা
- Post comments:0 Comments
Tags: দয়াময় পোদ্দার