You are currently viewing জন্মদিনের সাক্ষাৎকারে কামরুল হাসান শায়ক

জন্মদিনের সাক্ষাৎকারে কামরুল হাসান শায়ক

 

জন্মদিনের সাক্ষাৎকারে কামরুল হাসান শায়ক

কামরুল হাসান শায়ক বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত একটি নাম। আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি., দেশের প্রথম চেইন বুক স্টোর পিবিএস এবং বিশ্বমানের প্রিন্টিং প্যাকিজিং ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে প্রকাশনা শিল্পে তাঁর অবদান বিস্ময়কর এবং অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে সমষ্টিগতভাবে বিশ্বমানে উন্নীত করে আন্তর্জাতিক প্রকাশনাপ্রবাহে সংযুক্ত করার লক্ষে তিনি প্রায় তিন দশক ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স এসোসিয়েশনে ( আইপিএ) বাংলাদেশের স্থায়ী  সদস্যপদ অর্জন এবং এশিয়া প্যাসেফিক পাবলিশার্স এসোসিয়েশনে বাংলাদেশের প্রকাশকদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। আজ ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে ‘মনমানচিত্র’-এর পক্ষ থেকে নেয়া হলো তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। আশা করি পাঠক এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকাশনার বহুমাত্রিক অন্তর্গত দিক জানতে পারবেন । বই বিপণনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেছেন যা লেখক এবং প্রকাশকের জন্য অনিবার্য জানার বিষয়। জানতে পারবেন বইমেলার গুরুত্ব ও আসন্ন অমর একুশে বইমেলা নিয়ে প্রকাশকদের সংকটের বাস্তব চিত্র।

মনমানচিত্র: শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে মন্তব্য করুন।

কামরুল হাসান শায়ক: ধন্যবাদ। বই প্রকাশনা অত্যন্ত চ্যালেন্ঞ্জিং একটি পেশা যাকে সবসময়ই পরিবর্তিত উন্নত মানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলে সংকটের আবর্তে পড়ে যাবে অনিবার্যভাবে। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে প্রকাশনা কর্মযজ্ঞের আপডেটেড সম্পাদন জরুরি। কোভিড পূর্ববর্তী সময়ে মনে হয়েছিল খুব দ্রুত গতিতে ইলেক্ট্রনিক বইয়ের দিকে পাঠক চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপি প্রকাশকদের বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপে আলোচনাটা বেশ প্রবল হয়ে উঠছিল। বলা হচ্ছিল – প্রকাশকরা যার যার দেশের পাঠকের চাহিদার পরিবর্তনের দিকে নিবিড় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে। কোভিডকালীন সময়ে এ ধারনা এবং বিশ্বাস আরও প্রবল হয়ে উঠেছিল অনিবার্য বাস্তবতায়। কিন্তু না। ২০২২-এর মার্চে অনুষ্ঠিত লন্ডন বুক ফেয়ারের এক সেমিনারে ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স এসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি রিচার্ড চারকিনের বক্তব্য সে ধারনা পাল্টে দেয়। তিনি বললেন – আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোপি ডিক্সের মাধ্যমে কিছু রেফারেন্স বইয়ের ইলেকট্রনিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর এক দশক পরেই বিশ খন্ডের অক্সফোর্ড ডিকশনারি মাত্র দুটি সিডি রোমস- এ প্রকাশ হলো। ১৯৯৫-এ যাত্রা শুরু করলো Audible.com. কিন্ডল যাত্রা শুরু করলো ২০০৭-এ। এসব নতুন পরিস্থিতির সাথে প্রকাশকরা লেখক এবং পাঠকের সাথে সমন্বয় সাধন করে নিজেদের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কিন্তু অবাক হয়ে আমরা লক্ষ্য করলাম, পাঠক কিন্তু কিছুতেই মুদ্রিত বই ছাড়ছে না। মুদ্রিত বইয়ের পাশাপাশি তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে ইলেক্ট্রনিক বই পড়ছে। দুটো প্লাটফর্মেই পাঠকদের উল্লেখ যোগ্য একটি অংশ(৪০%) থাকছেন। ইলেক্ট্রনিক বইয়ের যাত্রার চল্লিশ বছর পরে এসে ডেমোগ্রাফিক্যালি বড়জোর শতকরা দশ থেকে পনের ভাগ মানুষ শুধুমাত্র ইলেক্ট্রনিক বই পড়ছে। বাকি সবাই মুদ্রিত বই পড়ছে। অর্থাৎ শতকরা চল্লিশ ভাগ মানুষ যখন একই সংগে একই বইয়ের ইলেক্ট্রনিক এবং মুদ্রিত ভার্সন কিনছেন, তখন বইয়ের বাজারটা কিন্তু আরও বেশি সম্প্রসারিত হলো। বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প কিন্তু সমস্যা সম্ভাবনায় এসব বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। আমাদের প্রকাশনা শিল্পে প্রকাশক, লেখক, বই বিক্রেতার পেশাদারিত্বটা খুব প্রয়োজন। দ্রুত পরিবর্তনশীল পাঠকের চিন্তা, চেতনা, চাহিদা ও রুচিবোধের সাথে পাল্লা দিয়ে লেখক – প্রকাশকদের নিবেদিতভাবে নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে – আমরা এখন গ্লোবাল ভিলেজে বাস করছি। প্রতিযোগিতাটা সেই উচ্চতায়, সেই প্রেক্ষাপটে জোরদার করেই আমাদের জয়ী হতে হবে।

মনমানচিত্র: বাংলাদেশে বই প্রকাশনা ও বিপণন ব্যবস্থা নিয়ে মূল্যায়ন করুন।

কামরুল হাসান শায়ক : বই প্রকাশনায় দক্ষ ও নিপুণ পরিকল্পনা, পান্ডুলিপি প্রস্তুতকরণ, সম্পাদনা, বইয়ের সামগ্রিক নান্দনিক উপস্থাপন, টার্গেট পাঠকের উপযোগিতা বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রকাশক এবং লেখকের প্রচুর গবেষণা প্রয়োজন। প্রকাশক মোটা দাগে দুই রকম বই প্রকাশ করে। ক. নন-ফিকশন খ. ফিকশন। লন্ডনের Publisher’s Association এর এক জরিপে দেখানো হয়েছে প্রকাশনা শিল্পে ৯৭% বই হচ্ছে নন-ফিকশন, আর ৩% ফিকশন। ৯৭%-এর মধ্যে এডুকেশনাল এবং একাডেমিক বই-ই প্রধান। সব ধরনের পাঠকের চাহিদা গবেষণা করে তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিচিত্র রকমের বইয়ের উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। অগ্রসর পাঠকের জন্য যেমন অগ্রসর চিন্তার বই প্রকাশের পরিকল্পনা করতে হবে, তেমনই মধ্যম বা চিন্তায় অনেক পিছিয়ে পড়া মানুষকে ক্রমান্বয়ে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে এমন বইও প্রকাশ করতে হবে। সর্বোপরি মানব সম্পদ উন্নয়নে সামগ্রিক পরিকল্পনা করে পান্ডুলিপি প্রস্তুতি ও প্রকাশের জন্য লেখক-প্রকাশকের নিবিড় মেলবন্ধনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রকাশনা শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে বই বিপণন। এক্ষেত্রে প্রথমত প্রকাশক তার বিদ্যমান পাঠক ধরে রাখার জন্য দক্ষ কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। যেমন- যে সকল প্রকাশকের ই-কমার্স সাইট রয়েছে, তাদের পাঠককে বিচিত্র কৌশলে সেই সাইটে ধরে রাখতে হবে, তাদের সাথে যোগাযোগ নিবিড় রাখতে হবে। সাইটে প্রতিনিয়ত গুরুত্বপূর্ণ বইসহ প্রকাশিত সকল বইয়ের নানামুখী প্রচার, বিশেষ অফার নিশ্চিত করা। পাঠকের চাহিদা মতো তার দোরগোড়ায় বই প্রাপ্তি সহজ করে তোলা। পাঠকের পাঠ চাহিদা ও আচরণ পরিবর্তন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং অনলাইন সাপোর্টের মাধ্যমে সেগুলো সংগ্রহ করে নির্ভরযোগ্য লেখকদের সংগে মতবিনিময় করে আপডেট দেয়া। সাম্প্রতিক আমরা অনলাইন প্লাটফর্মে বইয়ের নানামুখী প্রচারনা লক্ষ্য করছি। এটা বই বিপণনে বেশ ভূমিকাও রাখছে। মানসম্মত ভালো বইয়ের বহুমুখী প্রচারনা ভীষণ প্রয়োজন। তবে প্রচারনা যেন পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য, বাস্তবমুখী বলে মনে হয়। তা না হলে উল্টোফলও ঘটে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে এরকম একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা বলা যেতে পারে। হিলারি ক্লিন্টনের আত্মকথন Hard Choices প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের ১০ জুন। প্রকাশক পৃথিবীর বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা Simon & Schuster. বিপননের দায়িত্বে Amazon.com. বইটি প্রকাশের ২৪ ঘন্টার মধ্যে অনলাইনে প্লাটফর্মে ১৫০০ -এর অধিক রিভিউ, যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর ফেক রিভিউ বলে প্রতীয়মান হয়। বইটির এই রিভিউ নিয়ে প্রচুর পাঠকের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সকলেরই নজর কাড়ে। Amazon.com পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যে রিভিউগুলো অতিরঞ্জিত ও ফেক বলে মনে হয়েছে এরকম ৯০০ রিভিউ মুছে ফেলে। সুতরাং, অনলাইন প্লাটফর্মে রিভিউ-এর ব্যাপারেও অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। পাঠকের কাছে বুক রিভিউ যদি অবিশ্বাসযোগ্য, ফেক, অতিরঞ্জিত বলে প্রতীয়মান হয়, তবে সেই প্রচারনাও বইয়ের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠবে। বই বিপণনে ডিরেক্ট মার্কেটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বইয়ের ফরমেট প্রিন্ট, অডিও, ভিডিও, পডকাস্ট, পিডিএফ যাই হোক না কেন বইয়ের ধরন ও টার্গেট পাঠক বিশ্লেষণ করে বই বিপননের বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। অনলাইনে বই বিক্রয়ের প্রসার কিছুটা বাড়লেও সারাদেশের বই বিক্রতাদের বই বিপণনের বিরাট সহযোগী শক্তি হিসেবে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঠাভ্যাস আন্দোলন ও পাঠাগার আন্দোলনের মতো সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে বইকে মানুষের জীবন যাপনের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত করতে হবে।মানুষের উপলব্ধিতে এই বোধ তৈরি করতে হবে- বই ছাড়া জীবন অন্ধকার। এই কর্মযজ্ঞের সংগে লেখক, প্রকাশক, বই বিক্রেতাসহ সকল শ্রেণিপেশার সৃজনশীল মানুষ এবং সরকারি-বেসরকারি সকল উদ্যোগকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।

মনমানচিত্র: বই বিপণনে বইমেলা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

কামরুল হাসান শায়ক : বই বিপণনে বইমেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মূলত ডিরেক্ট মার্কেটিং-এর একটি অন্যতম প্রধান কম্পোনেন্ট । সারা পৃথিবীতে যে সকল বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেগুলোকে তিনটি ধরনে ভাগ করা যায়। ক. প্রফেশনাল’স বুক ফেয়ার খ. পাবলিক বুক ফেয়ার গ. প্রফেশনাল এন্ড পাবলিক বুক ফেয়ার। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বইমেলা ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা। পাঁচদিন ব্যাপি এই বইমেলার প্রথম তিনদিন শুধুমাত্র প্রফেশনালরা অর্থাৎ প্রকাশক, রাইট এজেন্ট, লেখক, সাংবাদিক, কপিরাইট এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্টদের জন্য মেলা সংরক্ষিত থাকে। মেলার শেষের দুইদিন জনসাধারণ প্রবেশ করতে পারেন, বইও কিনতে পারেন। লন্ডন বুক ফেয়ারে প্রথম দিন থেকেই প্রফেশনাল এবং পাবলিকের প্রবেশ অবাধ থাকে। রাইট বিক্রয় এবং বই বিক্রয় দুটোই প্রথম থেকে শেষদিন অবধি চলে। বোলোগনা, বুক এক্সপো অ্যামেরিকা মূলত রাইট বিক্রয়ের বইমেলা। চীনের বাজারের জন্য বেইজিং, হংকং এবং তাইপেই বুক ফেয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রফেশনাল বুক ফেয়ার। মধ্যপ্রাচ্য, আবুধাবি, শারজাহ এবং দুবাই ক্রমশ রাইট বিক্রয়ের বইমেলার কেন্দ্র হয়ে উঠছে সাম্প্রতিককালে। অর্থাৎ সারা পৃথিবীতেই বইমেলার ইভেন্ট বই বিপণনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ভাষার মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ছাড়াও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে সারা বছর ব্যাপি সীমিত সংখ্যক বিভাগীয় ও জেলা শহরে বইমেলার আয়োজন করা হয়। তবে ইদানীং সমিতির উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেশি বেশি বইমেলার আয়োজন বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রকাশকরা সমিতি এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের আয়োজনে ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং কোলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলায় অংশগ্রহণ করছে।রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় কলকাতায় সিঙ্গেল কান্ট্রি বুক ফেয়ার ‘বাংলাদেশ বইমেলা’ হচ্ছে। – এ সবকিছুই অত্যন্ত ইতিবাচক দিক বাংলাদেশের বইয়ের বাজার সম্প্রসারণের জন্য। এখনও বাংলাদেশে বইয়ের যতটুকু জনপ্রিয়তা দেখছি, তা এসব কার্যক্রমেরই ফসল। তবে বাংলাদেশ এবং কলকাতাসহ অন্যান্য দেশে আমাদের আয়োজিত সকল বইমেলাই পাবলিক বইমেলা। বইয়ের রাইট বিক্রয়ের বিষয়টি এখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের বইয়ের রাইট বিক্রয়ের বিশাল সম্ভাবনা সংকুচিত হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় পাঠভ্যাস অান্দোলনের কোন বিকল্প নেই। এই সামাজিক আন্দোলনটিকে বেগবান করে লক্ষ্য অভিমুখে পৌঁছানোর বহুমাত্রিক কর্মসূচির একটি অন্যতম প্রধান হচ্ছে বইমেলা। বইমেলার আয়োজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক আরও অনেক বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক ক্যালেন্ডারে অন্তত একবার সপ্তাহব্যাপি বইমেলা আয়োজন বাধ্যতামূলকভাবে করা উচিত। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশাপাশি সকল শ্রেণিকক্ষে বয়স ভিত্তিক ছোট বুক কর্ণার থাকতে পারে। বছরে সপ্তাহব্যাপি বইমেলার আয়োজন থাকলে শিক্ষার্থীর উপর এর প্রভাব পড়বে সুদুরপ্রসারি। শিক্ষার্থী প্রতিবছর নতুন নতুন বইয়ের সাথে খুব সহজে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তাদের প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ক্লাসের বুক কর্ণার এমনকি বাসায় ব্যক্তিগত লাইব্রেরিও প্রতিবছর প্রয়োজনীয় নতুন নতুন বইয়ে সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করবে। সর্বোপরি বই সংগ্রহ ও পাঠের একটি প্রগতিমুখি সাংস্কৃতিক আবহ প্রজন্মের মননে গড়ে উঠতে থাকবে যা জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনে একটি সোনালী প্রজন্মের জন্ম দিবে। এই সোনালী প্রজন্মই মূলত বাঙালিকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ উপহার দেবে।

মনমানচিত্র:. পাবলিক লাইব্রেরি এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কার্যক্রম নিয়ে আপনি কতোটা সন্তুষ্ট?

কামরুল হাসান শায়ক : পাবলিক লাইব্রেরি এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র মূলত বাংলাদেশে পাঠভ্যাস আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। পাবলিক লাইব্রেরি প্রকাশকদের কাছ থেকে বই কিনে সরকারি ও বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোতে সরাসরি সরবরাহ করা ছাড়া অন্য কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বেশকিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ করে কবি মিনার মনসুর পরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে সৃজনশীল প্রকাশনাকে অধিকতর উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে বেশ প্রশংসনীয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের ভিত্তিতে। প্রকাশকদের সংগে যোগাযোগ নিবিড় করেছেন। দেশের গ্রন্থাগারগুলোর সেবার মান উন্নয়নে নিয়েছেন নানামুখী উদ্যোগ। দেশে-বিদেশে বইমেলা আয়োজন এবং অংশগ্রহণ সফল করার জন্য সচেষ্ট রয়েছেন। দেশের বেসরকারি গণগ্রন্থাগারসমূহের সক্ষমতা ও কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিয়েছেন অভূতপূর্ব উদ্যোগ। কবি মিনার মনসুরের মত মেধাবী উদ্যোমী সৎ কর্মনিষ্ঠ বইপ্রেমিক পরিচালক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে আমি ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।

মনমানচিত্র: .অমর একুশে বইমেলার গুরুত্ব এবং আসন্ন একুশে বইমেলা নিয়ে আপনাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে বলুন।

কামরুল হাসান শায়ক : হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ইতিহাসে এক নতুন সংযোজন ‘অমর একুশে বইমেলা’। প্রকাশক হিসেবে আমি অত্যন্ত গর্বিত যে, এই বইমেলার গোড়াপত্তন করেছিলেন বাংলাদেশের প্রগতিশীল কয়েকজন প্রকাশক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি ভাষার মাসে  অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। সেই সময় ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে মুক্তধারা প্রকাশনির চিত্তরঞ্জন সাহা মুক্তিযুদ্ধকালীন কোলকাতায় শরনার্থী লেখকদের ( আবদুল গাফফার চৌধুরী,  আনিসুজ্জামান প্রমুখ) মুক্তধারা কর্তৃক  প্রকাশিত ৩২ টি বই, স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বই এবং বর্ণ মিছিল  প্রকাশনির তাজুল ইসলাম নিজেদের প্রকাশিত কিছু বই নিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে পাটের চট বিছিয়ে  তাতে থরে থরে বই সাজিয়ে সর্বপ্রথম অমর একুশে বইমেলার সূচনা করেন। ১৯৭৪ সালে অমর একুশেকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে দেশি-বিদেশি প্রখ্যাত লেখক-শিল্পীদের অংশগ্রহণে স্বাধীন দেশে প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি জাতির পিতা  বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান। এইবার চিত্তরঞ্জন সাহা, রুহুল আমিন নিজামী এবং তাজুল ইসলাম ছাড়াও আরও সাত আট প্রকাশক  বইমেলায় অংশগ্রহন করে। এই বইমেলা জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। ৭২ থেকে ৭৬ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হতে থাকে, ক্রমশ মেলায় প্রকাশক, লেখক এবং পাঠকের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক ড. আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে প্রকাশকদের এই বইমেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ সালে বইমেলা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য বাংলা একাডেমির সাথে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যুক্ত হয়। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মাওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহযোগিতায় প্রথম অানুষ্ঠানিক ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের দিন স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষাভবনের সামনে ছাত্রদের মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দু’জন ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় সে বছরের জন্য বইমেলা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমির অায়োজনে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সার্বিক সহযোগিতায় সাড়ম্বরে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ শুরু হয়। এ বছর প্রায় ৩৩ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এই বইমেলায় অংশগ্রহণ করে। ২০০২ সালে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতিও ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার সাথে সহযোগিতায় যুক্ত হয়। ১৯৮৪ থেকে ২০১৩ সালের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ‘অমর একুশে বইমেলা’ লেখক, প্রকাশক এবং পাঠকের আশ্চর্য রসায়নে বাঙালির প্রাণের সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের পদভারে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনের সীমিত পরিসরে বইমেলা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পরামর্শে ২০১৪ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলাকে সম্প্রসারিত করা হয়। ২০১৮ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার নাম পরিবর্তন করে বলেন- আজ থেকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র নাম আরও সহজতর হবে ‘অমর একুশে বইমেলা’। আজ অমর একুশে বইমেলা বাঙালি জাতির মাসব্যাপি সাংস্কৃতিক উৎসবের এক মহামহীরুহে পরিণত হয়েছে। এই বইমেলাকে কেন্দ্র করে লেখক-প্রকাশক-পাঠক যেন  ভাষার মাসে এক ঐক্যতানে জেগে ওঠে। বইকেনা এবং পড়ার সংস্কৃতি  শ্বাশত বাঙালির   গৌরবময় ঐতিহ্য- প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলা এই সাংস্কৃতিক বার্তাই যেন আমাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়। ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে যথার্থই বলেছেন – জ্ঞান চর্চা ও পাঠের বিস্তারে অমর একুশে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতির মনন গঠনে এই বইমেলা সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখে চলছে।

আসন্ন ‘অমর একুশে বইমেলা-২০২৩’ নিয়ে আমরা প্রকাশকরা আছি মহাসংকটে। নতুন বই প্রকাশের অাগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অধিকাংশ প্রকাশকই। নতুন বই প্রকাশের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না তারা। কারণ – পর পর দুবছর  করোনার ছোবলে প্রকাশনা শিল্পের ভয়াবহ ভঙ্গুর পরিস্থিতির মধ্যে কোনরকম প্রনোদনা পায়নি তারা। উপরন্তু এ বছর প্রকাশনার সকল কাঁচামালের দাম বেড়েছে প্রায় শতকরা পয়তাল্লিশ ভাগ। এমনতেই বইয়ের বিক্রয় সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, তার উপর বাড়তি দাম আরোপ হলে পাঠক তো আরও বি বিমুখ হবেন। পুরাতন বই রিপ্রিন্ট করলেও বইয়ের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। নিচে কিছু কাঁচামালের ২০২২ সালের জানুয়ারি এবং বর্তমান মূল্য তুলনা করলেই বিষয়টি খুব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যেমন-

৩২” হোয়াইট প্রিন্ট ৭০ জিএসএম কাগজ জানুয়ারি’২২ এ প্রতি কেজির মূল্য ছিল ৯০ টাকা, বর্তমানে মূল্য ১৩০ টাকা।

৩০” হোয়াইট প্রিন্ট ৭০ জিএসএম কাগজ জানুয়ারি ‘২২ এ প্রতি কেজির মূল্য ছিল ৯০টাকা, বর্তমানে মূল্য ১৩০ টাকা।

১০০গ্রাম অফসেট ডিডি কাগজ( লোকাল) এর জানুয়ারি ‘২২ এ প্রতি রীমের মূল্য ছিল ২৫৩০ টাকা, বর্তমানে মূল্য ৩৫২৫ টাকা।

প্রিন্টিং কালি ওয়েব জানুয়ারি ‘২২ এ প্রতি পাউন্ডের মূল্য ছিল ৭০ টাকা, বর্তমান মূল্য ১০৫ টাকা।

প্রিন্টিং কালি শীট জানুয়ারি ‘২২ এ প্রতি পাউন্ডের মূল্য ছিল ২৭৫ টাকা, বর্তমান মূল্য ৩১৫ টাকা।

প্রিন্টিং প্লেট ওয়েব ৮২০” ×৫৯০” জানুয়ারি ‘২২ এ প্রতিটির মূল্য ছিল ২৫২ টাকা, বর্তমান মূল্য ২৯৫ টাকা।

প্রিন্টিং প্লেট শীট ৬০৫” ×৭৬০” জানুয়ারি ২২ এ প্রতিটির মূল্য ছিল ১৬২ টাকা, বর্তমান মূল্য ২৩০ টাকা।

বাইন্ডিং গ্লু জানুয়ারি ‘২২ এ প্রতিকেজির দাম ছিল ৪২৫ টাকা, বর্তমান মূল্য ৪৫০ টাকা।

এছাড়াও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে। কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সামগ্রিক বিবেচনায় প্রকাশকদের পাশে এই মূহুর্তে সরকার যদি সদয় হয়ে বিশেষ বরাদ্দ ও অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে না আসে তাহলে আসন্ন ‘অমর একুশে বইমেলা’র মতো এমন একটি জাতীয় আয়োজনে নতুন বইয়ের প্রকাশ অত্যন্ত সংকুচিত পড়বে, পুরাতন রিপ্রিন্ট বইয়ের দাম বাড়বে ; ফলশ্রুতিতে আসন্ন বইমেলায় বিপর্যয়ের আশংকা ঘনীভূত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ জরুরি।

সামগ্রিক বর্তমান চিত্র উপস্থাপনের পর নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন প্রস্তুতিটা প্রকাশকদের কেমন চলছে! তারপরও সফল ‘অমর একুশে বইমেলা’র জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

মনমানচিত্র: বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বইমেলা হচ্ছে না কেন?

কামরুল হাসান শায়ক : বাংলাদেশে  একটি অান্তর্জাতিক বইমেলা হওয়া খুব প্রয়োজন। উদ্যোগ নেয়া হযেছিল একবার ২০১৪ সালে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির তৎকালীন সভাপতি ওসমান গনি সমিতির উদ্যোগে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজনের জন্য মোস্তফা জব্বারকে ( বর্তমানে টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রী) আহ্বায়ক এবং কামরুল হাসান শায়ককে সদস্য  সচিব করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘আন্তর্জাতিক বইমেলা কমিটি’ গঠন করেছিলেন। এই কমিটি প্রায় ছয়মাস নিরলস পরিশ্রম করে একটি আন্তর্জাতিক মানের  ‘আন্তর্জাতিক বইমেলা’র রূপরেখা চুড়ান্ত করে। সংগে সংগে আন্তর্জাতিক প্রকাশক সমিতিগুলোর সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে থাকে। ‘আন্তর্জাতিক বইমেলা’ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতা চাওয়া হলে মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বইমেলা কমিটিকে বইমেলার প্রস্তুতি নিয়ে একটি ডিটেইল প্রস্তাবনাসহ আবেদন করতে বলে। আমরা প্রস্তাবনাসহ আবেদন এবং সেই সংগে সামগ্রিক রূপরেখার একটি ডিজিটাল প্রজেন্টেশন মন্ত্রনালয়ের সভাকক্ষে মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মাননীয় সচিব, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তৎকালীন পরিচালক অসীম সাহার উপস্থিতিতে উপস্থাপন করি। প্রকাশক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওসমান গনি, মাজহারুল ইসলাম, মনিরুল হক,  খন্দকার সোহেল, শিহাব উদ্দিন ভূইয়া,  গফুর হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ডিজিটাল প্রজেন্টেশনটি দেখে মাননীয় মন্ত্রী, সচিব এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক ভূয়সী প্রশংসা করেন। এক পর্যায়ে মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয় – মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রকাশক সমিতির সহযোগিতায় ‘আন্তর্জাতিক বইমেলা’ আয়োজন করা হবে।

আমরা প্রকাশকদের পক্ষ থেকে যাবতীয় সবকিছু মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর করি এবং প্রতিশ্রুতি দেই – যখনই আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে, আমাদের জানাবেন। আমরা আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।’ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মন্ত্রনালয় দায়িত্ব নেয়ার পর আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজনের কার্যক্রম আর এগোয়নি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক  ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন আমাকে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজনের ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন। বিষয়টি নিয়ে আমি ইতিমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশার্স এসোসিয়েশনের সাথে যোগাযোগ করেছি। প্রকাশকদের আরও নেতৃবৃন্দের সাথে এ নিয়ে আরও ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন রযেছে। সকলের মতামত ও পরামর্শের আলোকে অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই একটি আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন আমরা করবো।

মনমানচিত্র: নতুন প্রজন্মের প্রকাশক, লেখক এবং পাঠক সম্পর্কে মন্তব্য করুন।

কামরুল হাসান শায়ক : নতুন প্রজন্মের পাঠকদের আমার কাছে অনেক বেশি স্মার্ট মনে হয়। লেখক এবং প্রকাশকরা যদি পাঠকের চিন্তা চেতনা এবং মনোজাগতিক স্তর বুঝতে ভুল করে, সেই অনুযায়ী কনটেন্ট চিন্তা  করা না হয় ; অাবার উপযোগিতা সম্পন্ন খুব ভালো  কনটেন্ট মান সম্মত প্রকাশনা ও দক্ষ বিপণনের মাধ্যমে কার্যকরভাবে পাঠককে মুগ্ধ করতে না পারে তাহলে পাঠকও কখনোই আপোষ করবে না। মুহূর্তেই সটকে পড়বে, চলে যাবে তার পছন্দের অন্য কোন পাঠে।  মনে রাখতে হবে, হাতের মুঠোয় এখন পাঠকের পড়ার পৃথিবী। পড়ার আনন্দের মধ্যে পাঠককে ধরে রাখার সকল ম্যাকানিজম লেখক-প্রকাশকের যৌথ প্রয়াসে করা সম্ভব হলে ফলাফল চমৎকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আজকের আধুনিক পৃথিবীর চিন্তা চেতনা বা গতিপ্রবাহের সংগে পাল্লা দিয়েই লেখককে যেমন এগিয়ে থাকতে হবে, একইভাবে প্রকাশককেও।

মনমানচিত্র: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

কামরুল হাসান শায়ক : মনমানচিত্রকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।