একগুচ্ছ কবিতা
লায়লা ফারজানা
পালক
তোমাকে হাসতে দেখিনি কখনও
কিন্তু ঐরকম একটা মুখ
আমার চোখে ভাসে
তুমি যখন হাসো
পালকের মতো হাল্কা হয়ে যায় পৃথিবী-
ধীরে ধীরে স্পেসশিপের মতো
ভাসতে ভাসতে
হঠাৎ দু’টো পা বের করে,
দাঁড়িয়ে যায় দূরের কোনো গ্যালাক্সিতে।
আর তারপর ঐ পৃথিবীটার রং বদলাতে থাকে
গোলাপি থেকে গাঢ় গোলাপি
হাল্কা সবুজ আভার বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকে
কক্ষপথে!
কিছু তারা খসে, কিছু বাদামি চাঁদও-
আমি দূর থেকে দেখি-
অদ্ভুত এক মায়া কাজ করে!
তোমার মুখের উপর চুল-
কপাল থেকে গালে-
যেন সোনালি হরিণগুলো
বেগুনি ঘাসে মুখ ঘষে যায়,
আর আমার বুকের ভিতর শুরু হয়
কোষ বিভাজনের খেলা।
হৃৎপণ্ডি এক থেকে দুই-
দুই থেকে চার-চার থেকে আট-
সবগুলো হৃৎপণ্ডি
একসাথে কাঁপতে থাকে
তুমি যখন হাসো!
হিপোগ্রিফের ডানা
উপসংহারে তুমিও নগ্ন-খোলা-অবাধ-বোতাম,
দুপুরের সাদা রোদে পার্থিব সকাল ঝরে পড়ে
উন্মূল-উদ্বাস্তু অপবাদে, হলুদের ষড়যন্ত্র-
ক্রমভাঙনরে প্রতিরোধ-ঘাসপোকাদের-ঘরে,
লাল কলামের শেষে, শ্বেতাঙ্গ সিংহের দাপাদাপি,
তলোয়ারে মৃত-সাপখোলা-মরবিড প্রসত্যের।
বিভ্রান্ত পাণ্ডুলপিরি ত্রাস সংশোধনের পরেও –
পুনরুত্থানে বিমুক্ত মাতাল, ক্রোনাস-আবর্তের।
বিকালের লালাভায়, নকটার্ন নিম্ফের নীলাঁচে
ভায়োলেট প্রেমের নিষিদ্ধ অভিসার শুরু হোক।
আবার এসেছি আমি প্রত্যাবৃত্ত অজবীথি ঘুরে,
সড়কহীন শহরে ছড়াতে-গোলাপি বিস্ফোরক;
একাকী মেরুন আমি-দ্রবীভ‚ত পার্পেল-বৃষ্টিতে
হিপোগ্রিফ-ডানায় দেখেছি, তোমার ঈগল-চোখ।
সিসিফাস
শহরে কাঠবিড়ালী দেখেছো? যারা ছুটে পালিয়ে যায় মানুষের পায়ের শব্দে?-শব্দ না মিলানো পর্যন্ত যারা লুকিয়ে থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত কান পেতে? কিংবা গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের সেই মাছরাঙা-এদিক ওদিক তাকিয়ে, সময়ের জানান দিয়েই কেমন ক্ষিপ্রগতিতে লুকিয়ে পড়ে তার ঘরে। বন্ধ দরজার ওপাশে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে তার পরবর্তী টার্নের জন্য। অন্তরালে, কিন্তু সজাগ। ঠিক তেমনি ছিল সে। শাখার শেষ প্রান্তে। পৃথিবীর সমস্ত শক্তি নিয়ে। আপ্রাণ চেষ্টায়। একটি শিশুর মতো-যে তার মায়ের বুক শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে। সচকিত! যেন কার অপেক্ষায়! যে এলেই দ্রুত ডাল থেকে ঝুপ করে গড়িয়ে পড়ে যাবে ফুটপাতে!
আমিও বুঝি সেই জলদানার মতো! আতঙ্কিত, কম্পমান-তবুও নিজের অবস্থানে।