You are currently viewing বুনোমন/ জাকিয়া শিমু

বুনোমন/ জাকিয়া শিমু

জাকিয়া শিমু

বুনোমন

 

ঘড়ির মিনিটের কাটার সাথে মিল রেখে ঠিক দুপুর সারে- বারোটায় অজানা নম্বর থেকে ফোনকলটা আসছে আজ পর-পর পাঁচদিন। আমি সাধারণত অজানা নাম্বারের ফোনে মোটেও আগ্রহি না। খুব কাঁছের কেউ না হলে এই সময়ে ফোনালাপে যারপরান বিরক্ত-ই হই। ফোনকলে নিজদেশের কোড নম্বর নির্দেশ করে। পৃথিবীর ঘূর্ণনগতির কারণে সেপ্রান্তে এখন সময়- রাতের মাঝামাঝি। বেশি রাতের ফোনকলে সাধারণত আনন্দময় কোনো সংবাদ থাকে না। তারপরও অনিচ্ছুক হাতটা অযথাই এগিয়ে যায় ফোনটার দিকে। এপাশ থেকে ফোনটা ধরতে; অপরপ্রান্ত থেকে গম্ভীরগলার আওয়াজ – কতোকাল না- শুনা কিন্তু প্রতিক্ষণের কাঙ্ক্ষিত গলার স্বরে নিজের নামটা শুনে আচমকা হিম হয়ে যাই। হৃদপিণ্ডে আঁচড় কেটে যাওয়া মানুষটার কণ্ঠস্বরে, বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি।

তারপর থেকে অবশ্য এই আমার, আমির জীবনাচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন বলয়ে আবর্তিত হয়। আমি মানুষটা ক্রমেই বদলে যেতে থাকি। প্রতিদিন ঠিক সারে-বারোটার ফোনকলটার জন্য অবরুদ্ধ উচ্ছ্বাস নিয়ে অপেক্ষায় থাকি। হাতের কাজ চটজলদি শেষ করে ঘড়ির কাটায় চোখ রাখি। পয়ত্রিশ বছর বয়সী এই আমি আচমকা পনের বছরের খুকির মতো অপেক্ষায় ছটফট করি। একটা সময় পর ফোনটা ঠিক সময়ে বেজে উঠে। ঠিক আধঘণ্টা কথা বলি কাজের ব্রেক এর পুরোসময়টা জুড়ে। কিন্তু কথা প্রায় সব অ-বলাই থেকে যায়। কতকথা বলার ছিল! বলা হয়ে উঠে না। যদিও আমরা কথার ফুলঝুড়ি ছড়াই- গল্পের একডালা ধরতে অন্যডালায় লাফিয়ে বেড়াই। আমরা আমাদের আজন্ম লালিত স্বপ্নদের আত্নহ্ননের দহনের দিনযাপনের গল্প করি। সময়ের ঘণ্টা বেজে উঠে, আমাদের কোনো গল্পেরই শেষসিমানা ছুঁয়া হয়ে ওঠে না। যদিও আমরা পরের দিন আবার আগের দিনের গল্পের বাকি অংশ ধরে কথা শুরু করি। দিন যায়, দিন আসে, গল্পের মালা দীর্ঘ হয়। আমাদের কথার শেষ হয় না।

আমাদের সম্পর্কটা ছিলো অদভূত গোছের ! শুরুটা না বললে সম্পর্ক নিয়ে একটা ধোঁয়াশা থেকে যাওয়ার সুযোগ রয়েই যাবে। আমাদের নিজেদের মধ্যে প্রথম পরিচয়ের শুরুটা আমাদের কারোরই মনে নেই। আমরা একই স্কুলে পড়তাম। মানুষটা আমার থেকে দু ক্লাশ উপরের ক্লাশে পড়ত। পড়াশুনায় আমরা দুজনে ভয়াবহ রকমের ভালো ছিলাম। স্কুলের সবার দৃষ্টির কেন্দ্রে থাকতাম আমরা দুজন। কেন্দ্রীয় মানুষগুলোর চলতিপথ সাধারনের মতো হতে নেই, আমরা সে বয়সেই তা ঠাহর করতে পারি। অচিরেই কলার থোরের মতন গাম্ভীর্যের আবরণের ভাঁজ পড়ে আমাদের ব্যক্তিত্বজুড়ে। একই স্কুলে পড়ার সুবাদে মাঝেমধ্যে আমাদের দেখা হবার সুযোগ ছিল, দেখা হতোও বটে। আমরা কেউ কারো দিকে সহজ করে তাকাতে অভ্যস্ত ছিলাম না, অথচ আমাদের মন চাইত নিজেদের মধ্যে একঝোঁক কথাবার্তার বিনিময় হোক। অবশ্য দফতরি কথাবার্তা মাঝেমধ্যেই হতো। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একত্রে কাজ করার নিয়ম ছিল। যতটুকু না বললেই নয় ততটুকু চালিয়ে নেয়ায় অভ্যস্ত ছিলাম।

একটা সময় পর মানুষটা স্কুলের গণ্ডি পেড়িয়ে শহরের বিখ্যাত কলেজে চলে যায়। তখন থেকে আমি আমার ভেতরের ভিন্ন এবং সম্পূর্ণ নতুন একজগতের মুখোমুখি হই। আমার অতলস্পর্শী মনের আকাশে দিকশূন্য চিল ডানা মেলে উড়ে বেড়াঁয়। খাঁ খাঁ করে মনের জমিন। বুকের গভীরের অচিনবোধ এই আমাকে ভিন্ন মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি জীবনের প্রথম কারো জন্য খুব একলাবোধ করি।   দ্বিপ্রহরের ঢলে পড়া চাঁদের আলোতে পুকুরঘাটে চুপচাপ বসে থাকি। পুকুরের বুক থেকে ছুটে আসা বিরহী জলতরঙ্গের আলোকচ্ছটা আমাকে উদাস করে। জোসনা- ঝরা নারিকেল শাখের মৃদু কম্পনে আমি আমাকে হারাই। এক- আধ রাত্রি প্রায়ই আমি জেগে কাটাই। কতশত ভাবনার অনুরণে আমি বুঁদ হয়ে বসে থাকি,অহোরাত্রি। দিনগুলো কাটে রথের চাকার মতন ঢিলেঢুলে টেনে- হেঁচড়ে । নিজের সাথে নিজে বোঝাপড়া করি। আমাদের একসাথে- একপথে চলার প্রতিজ্ঞা ছিলো না কোনোকালেই। আমাদের দ্বিধাহীনতার খুঁটির জোর ছিলো অত্যন্ত নড়বড়ে। পরিচয়ের শুরু থেকে আমরা সমান্তরালে হেঁটেছি। তারপরও মন বুঝতে সাঁয় দেয় না।

সময় গড়ায় তাঁর চাকায় ভর করে কিছু দীর্ঘশ্বাস জমে থাকে বুকের গভীরে খুব সঙ্গোপনে। তারপর একসময় ধীরে ধীরে স্মৃতির দেয়ালে ছায়া পড়ে। অবশস্মৃতিগুলো অনুভূতির চৌকাঠ পেড়িয়ে শূন্যতায় মিশে যায় তবে হারিয়ে যেতে পারে না। কিছুটা আঁচ ধূসর রঙের অস্তিত্ব হয়ে হৃদপিণ্ডে লেপটে থাকে। সুতীব্র দহনে অন্তঃপুরে পুড়ে যাওয়া বাল্যকালের সেই না- বোঝে উঠা অপূর্ণ স্বপ্নের কষ্টটা আজীবন আমাদের বয়ে বেড়াতে হয়।

এরপর প্রায় বছর সাতেক পর তাঁর সাথে আমার দেখা হয়- ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গুমোট লাগা কোনো এক ধূসর সন্ধ্যাবেলায়। ঢাকার নীলক্ষেতের বইয়ের খুপরিঘরের মোরে। মাথার উপর বিছিয়ে থাকা আকাশ জুড়ে ছাইরঙা মেঘের ছড়াছড়ি। ধুলোবালিতে মুড়ানো বাতাসের সাথে মেঘের কণায় ভারী হয়ে আসে চারিধার। যে কোনো সময় বৃষ্টি নামবে। সেরকম একটা সময়ে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মিলার সাথে প্রায় ঘণ্টা দুই নীলক্ষেতে সস্তাদরে প্রয়োজনীয় বই দরকষাকষিতে কিনে ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মিলা, রিকশা ভাড়ার দরদামে ব্যস্ত। চারপাশের হাঁকাহাঁকি ঠেলাঠেলি, রিকশার অতিরিক্ত টুংটাং আওয়াজ, গাড়ি বাসের অযাচিত বেহুদা হর্নের শব্দকে পাশ কাটিয়ে বুকচিরে বসে যাওয়া মানুষটার গম্ভীরকণ্ঠে আমার নামটা কানে ভেসে আসে বাতাসে ভর করে।

আমি  হন্যে হয়ে তাঁকে খুঁজতে চারপাশে চোখ ফেরাই। মানুষটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি সহসা স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি। লোকটা নিজেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে কিছুটা সময়। যেন আমাদের এভাবে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকবার কথা ছিল। এবারও আমাদের কথাগুলো না- বলা কথা হয়ে রয়ে যায় এবং বরাবরের মতো আমাদের অনুভূতিগুলো অদৃশ্য দেয়ালের ওপাশটায় চাপা পড়ে যায়। আকাশ চুয়ে ঝরঝরিয়ে মেঘেরা বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। আমরা চারপাশের প্রচণ্ড ভিড়বাট্টা কাটিয়ে বলাকা সিনেমা হলের পাশটায় ছোট্ট এক ঘড়ির ঘরে আশ্রয় নিই। মিলা, লোকটার সাথে নানান বিষয়ে কথা বলে যায়। আমি নিরব হয়ে শুনি। মানুষটা উচ্চশিক্ষা নিতে সামনের মাসে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। ভাদ্র মাসের বৃষ্টি, খানেকক্ষণ ক্ষান্ত দেয় আবার সুরসুরিয়ে নামে। আমরা রিকসা নিয়ে যে যার পথে ফিরে আসি। রিকসার পেছনের ছোট্ট জানালা দিয়ে বিপরীত পথে চলে যাওয়া রিকসার দিনে চোখ রাখি, লোকটা জগতসংসারের সমস্ত মায়া দুচোখে ভরে আমাদের রিকসার দিকে তাকিয়ে থাকে। ও-চাহনি হাজার না- বলা কথা একমুহূর্তে বলে কয়ে যায়।

সেই দেখা আমার সাথে তার শেষ দেখা। কিন্তু শেষমুহূর্তে মানুষটার সেই এক মহাসমুদ্র মায়াদৃষ্টি আমাকে বিস্তর নাড়িয়ে দিয়ে ভেঙ্গেচূরে আমার মধ্যে রীতিমত একটা জমাট ঢিলেঢালা বিষাদের জনপদ তৈরি করে দিয়ে যায়। আমি সেই নিঃসঙ্গ পথে অসীম বিষণ্ণতায় একাকী হেঁটে চলি। বিষাদী রাতগুলো জেগে জেগে ভোর হয়। উদ্ভট ছেলেমানুষী গ্রাস করে আমাকে। আমি ভরদুপুরে আনমনে বলাকা সিনেমা হলের পাঁশে সেই ঘড়ির দোকান ঘেঁষে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। কতশত লোক পারাপার হয়, কিন্তু সেই মানুষটার এ পথে ফিরে আসার সময় হয় না। শহর ঘুমিয়ে পড়ে আমি মাথার ওপর খানিক ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের সাথে কথা কয়ে রাত্রি ভোর করি।

এভাবে সময় বেশ গড়িয়ে যায়, মনের গায়ে ধোঁয়াশার প্রলেপ লাগে। অদৃশ্য বাঁধন ছিঁড়ে একসময়ে আবার বের হয়ে আসি বৈকি কিন্তু হৃদয়ের গভীরে ক্ষতের যে আঁচড়- সে তো রয়েই যায়। একটা সময় পর-পড়াশুনা শেষ করে বিদেশে পাড়ি জমাই। বিদেশে এসে পড়াশুনা করে ভাল চাকুরীও জুটে যায়। সংসার,চাকুরী সবকিছু নিয়ে ভালোয় মন্দে দিন চলে যায়। সবকিছুর মাঝেও হুটহাট ছলে-কৌশলে সেই ক্ষত তাঁর অস্তিত্ব খুব গোপনে জানিয়ে যায়। প্রশান্ত জলাশয়ের অসীম শূন্যতায় কিংবা আকাশ ছুঁয়ে যাওয়া পাহাড়ের নির্জনে বসে সে ক্ষত খুব টের পাই। মনের সাথে দরকষাকষি চলে অবিরত, মুহূর্তে তা ধরাছুঁয়ার বাইরের শূন্যতায় আবার মিশেও যায়।

এতকাল পর আবার মানুষটা আমাকে শূন্যে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমরা কেউ কারো কাছে আজও কিছু চাইনা। আমাদের কোনোকিছু চাইবার থাকে না, ঠিক যেমন কখনও কিছু চাইবার ছিলো না। আমরা আমাদের সেইসময়ের অ- বলা কথাগুলো অযথা বলে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাই। অসমাপ্ত কথাগুলোর শুরুটা আমরা এতবছর পরও কেউ ভুলে যাই নাই। এতটা সময় পরও মানুষটার আমাদের সাধারণ স্মৃতিগুলো আদ্যোপান্ত মনে রাখার ক্ষমতায় চমকে উঠি। আমার একান্ত মনের কথাগুলো এমনকি আমার লুকায়িত অনুভূতিসব তার কথামালায় ভেসে আসে। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি।

একদিনের ঘটনা না বললেই নয়…  মানুষটা স্কুল থেকে চলে যাওয়ার বছর দুয়েক পর, আমার সাথে অযাচিতভাবে একদিন তাঁর দেখা হয়। আমি ভেবেছিলাম এদ্দিন পর আমাকে সে হয়তো স্মরণে রাখতে পারেনি। তারপরও কেনো যেন সেদিন আমার মনে খুব অভিমান জমেছিল। অন্যদের আড়ালে দুফোটা জল যে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়েছিল তা ও ঢের মনে আছে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সেদিনের সেই ঘটনার একমুহূর্ত সে ফাঁকি না দিয়ে আজ সে বলে যায়—

সেদিন শরতের সেই মধ্যাহ্নবেলায় শারদ নীলে বুঁদ হয়ে ছিল পুরোআকাশ। যেন নীল শাড়ির বিস্তর আঁচল উড়ে গিয়ে আঁকাশে ভেলা হয়ে ভাসছে। আঁকাশের নীল চুইয়ে পড়ছে ঝিলের পানিতে। লাল – সাদা শাপলারা নীল জলে মনের সুখে ভেসে বেড়াঁয়। তাঁদের ঘিরে রঙিন প্রজাপতি আর ঘাসফড়িংদের মেলা বসেছে ঝিলজুড়ে। সবে বর্ষা বিদায় নিয়েছে তাঁর রেশটুকু খানিকটা এখনও জড়িয়ে আছে প্রকৃতিমাঝে। নীলাকাশের বুক জুড়ে শরতের আহ্লাদি মেঘ,সূর্যকে ক্ষণে ক্ষণে আড়াল করে। রোদহীন নরম প্রকৃতির আঁচ নিতে আমরা কবন্ধু স্কুল ফাঁকি দিয়ে নৌকো চড়ে ঝিলের জলে ভেসে বেড়াই। আমাদের পরনে ছিলো নীল- সাদা স্কুল ড্রেস। মানুষটা সে পথে নৌকোয় শহর থেকে গ্রামের বাড়ির পথে ফিরছিলো। আমি দূর থেকে দেখেছিলাম বটে যদিও সে বরাবরের মত আমাদের দিকে ফিরে দেখেনি। না তাকিয়েও এত বিস্তর দেখা যায়, তাঁর মুখে না শুনলে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। সেদিন থেকে মানুষটার নাকি নীল রঙটা পছন্দের তালিকায় প্রথম হয়ে তা আজ অবধি রয়ে গেছে !

এভাবে এতকাল পরে আমাদের পুরনো গল্পগুলো আবার নতুন করে ফিরে ফিরে আসে। আমাদের অতীত স্মৃতিরা আমাদের হারানো দিনে উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমরা বিহঙ্গের মতো মনের সুখে সুখের আঁকাশে উড়ে বেড়াই। সময়গুলো স্বপ্নের মতো কাটছিল। ঠিক সে সময় একদিন ঘটে তার চরম বিপত্তি !   দেশ থেকে এক স্কুলবন্ধুর ফোন আসে। স্কুল ছেড়ে আসার পর তাঁর সাথে আর দেখা হওয়ার সুযোগ হয়নি। একসময়ে এমনকি আমার সামসময়িক সময়েও গ্রামের স্কুলের মেয়েদের বেশীরভাগ বিয়ের পিঁড়িতে জোর করে কিংবা স্বেচ্ছায় বসানো হত হাইস্কুলের চৌকাঠ পেরোবার আগেই। সেরকম এক বন্ধু বহুকাল পরে আমাকে মনে পড়ার অজুহাতে মাঝরাতে ফোন দেয়। ফোনটা ধরতে ওপাশের উচ্ছ্বাস আমার বাকি রাতের ঘুম শুষে নেয়। বহুবছর পর বন্ধুর গলার আওয়াজে আমিও আবেগি হয়ে উঠি। একসময়ে একদিন দেখা না হলে ছটফট করতাম অথচ মাঝে বয়ে গেছে কতগুলো বছর ! আমাদের শত সহস্র গল্প জমে আছে, আমরা দুজনেই অনবরত কথা বলেই যাই। বন্ধুর মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের কতশত অজানা খবর পাই। রাত শেষ হয় আমাদের কথা চলতেই থাকে।

গল্পে -গল্পে প্রসঙ্গের নড়চড়ে মানুষটার কথায় চলে আসি। যদ্দুর জানতাম, আমার এ বন্ধুর গাঁয়ে মানুষটার গ্রামেরবাড়ি এবং এরা পরস্পর লতায় পাতায় জড়ানো ধরনের আত্নীয়ও বটে। প্রসঙ্গ উঠতে-  আমার বন্ধুর ওপাশটায় পিনপতন নিস্তব্ধতা টের পাই। খানিকবাদে আমি তাঁর কান্নার শব্দে স্তব্ধ হয়ে কারণ জানতে উন্মূখ হয়ে অপেক্ষা করি। একসময় বন্ধু নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে শুরু করে…।

বন্ধুর শুধানো কথা-আমার স্বপ্নেরও অগোচর ছিলো। আমি তাজ্জব বনে যাই। নিজেকে শূন্যে হারিয়ে ফেলি। মানুষটা নাকি গত তিন বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে অন্যআলয়ে পাড়ি জমিয়েছেন ! এরপর থেকে সেই আগের মতো- ই  প্রতিদিন ঠিক বেলা সাড়ে বারোটায় ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষায় বসে থাকি কিন্তু সেদিনের পর থেকে ফোনকলটা আজ অবধি আর আসেনি !

আমার ডা. মি. জো গোল্ডস্টেইন আমার মানসিক স্বাস্থ্যের আশাতীত উন্নতিতে ভীষণ উচ্ছশিত। মাত্র চারমাসে আন্টিডিপরেস্যান্ট মেডিকেশনে আমি নাকি অনেকটাই সেরে ওঠেছি। তাই জটিল থেরাপি থেকে এ যাত্রায় আমাকে মুক্তি দেয়া হোল। আমি আমার ডা.মি. গোল্ডস্টেইনের দিকে চড়ুকে হাসি ছুঁড়ে তাঁর চেম্বার থেকে বের হয়ে আসি। ইদানীং আমার সেই মানুষটার জন্যে মনের একখোলা আসমান জুড়ে জমে থাকা কষ্টগুলো আমাকে বড্ডবেশি জ্বালাতন করে !