এলিজা খাতুনের কবিতা
সময়ের কৃপায়
খুপড়ির অন্ধকারে ভোর আসার মতো
একদিন এসেছিলে
সেদিন বোঝা হয়নি
অন্ধকার এলাকায় আঁধার মরে না
ইদানিং তোমার ইচ্ছেয়
অনিচ্ছার বৈঠা টানছো যখন
অমনি দেখি ছিঁড়ছে আমার ইচ্ছের পাল
যদিও সময়ের কৃপায়
সেইসব ইচ্ছে অযথা মনে হয় এখন
অসম্ভব না-পাওয়া যে এতখানি সমুদ্র দেখায়
জানা হয়নি আগে
স্বপ্ন পাশে রেখে
সকাল দুপুর রাত বয়ে যায় যাক সময়-স্রোতে
প্রিয় অন্ধকার শিকেয় তুলে অপ্রাপ্তির সুড়ঙ্গে এসো
প্রবাহিত করি নিস্তেজ হয়ে পড়া কিছু স্বপ্ন
অপূরণযোগ্য হলেও স্বপ্ন তো স্বপ্নের মতোই
নক্ষত্র ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষা নিরর্থক জেনেও
মানুষ নক্ষত্রের দিকে চেয়ে থাকে বৈকি !
খসখসে তুষে সুপ্ত তেল আছে নিংড়ে দেবার মতো
আগুন জ্বলুক বা না জ্বলুক ভেজা কাঠ থেকে
নির্গত ধোঁয়াতেও থাকে জ্বলে ওঠার তৃষ্ণা
স্বপ্নরা থাকুক-না স্বপ্নের মতো !
ভালোবাসার মতো শ্রেয় স্বপ্ন আর কীই বা আছে !
স্বপ্ন পাশে রেখে, এসো বিরহের সতরঞ্চিতে বসে
নক্ষত্রের কাছে শিখে নেবো দূরের ভালোবাসা-বিস্ময়
শুভ্র’র দিন
দিনের আলোয় হারিয়ে যাচ্ছে দিন
হারিয়ে গেছে পৌষ-রোদে পিঠাপুলি-ঘ্রাণ
একদিন শুভ্র’র কবিতা শুনতে শুনতে
মাটির ফুলেরা আকাশের তারা হয়ে যেতো
রাত্রির চাঁদ নেমে ডুব দিতো নদী-জলে
একসময় শুভ্র’র সাথে পাল্লা দিয়ে
উনুনে হাঁড়ি ভরা ধান ফুটে সাদা সাদা খইফুল হতো
স্বদেশ-বিদেশ, নগরে, উৎসবে, জন-সমারোহে
হাতে হাতে অগণিত টিস্যু-রুমাল
তবু মুছে যায়না হৃৎপিন্ডের কালো কালো দাগ
তবু মুছে যায়না আবিসিনিয়ার নিষ্পাপ মুখেদের
অনাহার-চিহ্ন, শকুনের অবিরাম অপেক্ষা
পৃথিবীর আনাচে কানাচে দাঙ্গাকাতর আওয়াজ !
বহাল তবিয়তে নিশ্চিহ্ন হয়ে রয় শুভ্র’র চিহ্ন
শুভ্র নেই বলে পাখির কলরব, ঢেউয়ের উচ্চকিত সুর
ক্ষীণ হতে হতে ধুঁকে ধুঁকে মরে দিন
====================