You are currently viewing মুক্তির রক্তিম বর্ণচ্ছটা: কবিতার একপাতা

মুক্তির রক্তিম বর্ণচ্ছটা: কবিতার একপাতা

মুক্তির রক্তিম বর্ণচ্ছটা: কবিতার একপাতা

 

মতিভ্রম
ইউসুফ মুহম্মদ

পাগল এবার লিখিল পাথরে…
মা তুমি ঘুমাও, নিরবে ঘুমাও নাকে তেল দিয়ে।
ওরা দখলে নিয়েছে, নিক… তোমারই তো ছেলে-মেয়ে
পর তো না, পর তো না।
হাঁড়ির বরুনা তুলে নাও মাগো,
সুক্ষ্ম পরিকল্পক দখলে নিয়েছে বোধ ।
এই সবুজ ডাঙায় শিশুরাই বুঝি সবকিছু জানে
তারা সবকিছু খেয়ে নিক, কোটা খাক, ফোঁটা খাক,
আগা খাক, গোড়া খাক, লুঠেপুটে চেঁটে খাক…
ইতিহাসও খেয়ে দেয়ে দ্বীপ যত তুলে দিক মার্কিনী হাতে।
মা তুমি কিছুই বলো না, বলো না
হাজারে হাজার, লক্ষ-কোটি গুণে গুণে নিক পুঁজির বাজারে
খেয়ে নিক তারা বই-খাতা আর টিনেরচালাও
আমাদের চোখ বন্ধ রেখেছি ভেবেছে, না করে নালিশ।
মা তুই খুলে দে দরাজা-কপাট, যতটা জানালা
ঠোঁটে দিয়েছে সেলাই,
চলাতে বলাতে আছে ভয়, মনে তো দিই নি তালা।

পাগল লিখিল
তোমার জমিন মুক্ত করিতে ঝরেছে কত যে বুকের রক্ত,
সন্ত্রাসীও আজ মুখোশ পড়েছে হয়েছে তোমার ভক্ত।
বঙ্গবন্ধু নাম নিতে ওরা মরে করুণ লজ্জায়
প্রতি রাতে শোয় চক্রের শয্যায়;

বীরাঙ্গনা আর যুদ্ধশিশুর ক্রন্দন ওদের হিসাবে নেই।
যাদের মনেতে ঘুণের আবাস ওরা শুনবে না কিছু…
নীতি ও ইতিকে বনবাসে রেখে
ইতিহাসে আবারও মেখেছে লাল।
তোমার আঁচলে মা এখনো পড়ে দাগ…
যে আঁচলের বিষণ্ন ক্ষতে আলজিভ ফুঁড়ে রক্ত ঝরে,
সে আঁচল কী আমারও নয়!
ঘুমিয়ে পড়েছে সুন্দরের প্রতি অন্তর্গত অনুরাগ যত ।

মা তুমি বলো না, বলো না বলো না কিছুই বলো না
বোবা ও বধির হয়ে থেকো…
আগ্নেয় পর্বত জেগে একদিন সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেবে।

 

 

একজন পরিচারিকা
তূয়া নূর

এতো প্রতিবাদী মানুষকে খুন করেছিলো স্বৈরশাসক ফ্রাংকো
তার বাহিনী দিয়ে
যে ঐতিহাসিকরা বলে এটাকে স্প্যানিশ হলোকাষ্ট।

তার ঘরে এক পরিচারিকা ছিলেন, খুব বিশ্বস্ত ফ্রাংক ও ফার্স্ট লেডি
কারমেনের কাছে।

সেই পরিচারিকার একটা বাড়তি কাজ ছিলো
নিজ থেকেই বেছে নিয়েছিলো ভালবেসে।

জেনারেল শোবার আগে চিরকুট লিখতো পেন্সিলে
অফিস ঘরের ডেস্কে ল্যাম্পের আলোয়।
তারপর ভাঁজ করে রেখে দিতো উর্দি পোশাকের বুক পকেটে।

পরিচারিকা একদিন উৎসাহ নিয়ে পকেটের বোতাম ও ঢাকনা খুলে
দেখে কী লেখা তাতে!
কিছু মানুষের নাম।
ভাবলো হতে পারে, দরকারি কিছু কাজ এসব মানুষের সাথে।
দু’দিন পর দৈনিক পত্রিকায় দেখলো তাদের নাম—
কেউ খুন হয়েছে, কেউ গুম হয়েছে
কাউকে পাঠানো হয়েছে নির্যাতন করার ক্যাম্পে।

তারপর থেকে প্রতিরাতে জেনারেল ঘুমায়ে গেলে,
তার শোবার ঘরের আলো নিভে গেলে
তার নাক ডাকার শব্দ ভেসে এলে
পরিচারিকা উঠে এসে হাতড়াতো পকেট।
কোনদিন সরিয়ে ফেলতো।
কোনদিন নাম গুলো মুছে দিতো
বসিয়ে দিতো নামহীন মানুষের নাম।

জেনারেল একরাতে ঘুমের ভান করে থাকে।

সে রাতে এমন একটা পরিচিত নাম দেখে থমকে গিয়েছিলেন তিনি।
জেনারেল ফ্রাংক দেখে টর্চলাইট ও চিরকুট হাতে
হতভম্ব হয়ে দাঁড়ানো পরিচারিকা তার জামা ঝোলানোর
ক্লোজেটের সামনে।

পরদিন সকালে ধরে আনা হয় কবি গার্সিয়া লোরকাকে।

আর এই বাড়িতে এই পরিচারিকাকে কোন দিন দেখা যায় নি।

আর কোথাও তাকে দেখা যায় নি।

 

মাছের শোক
জিন্নাহ চৌধুরী

জাল থেকে ফসকে যাওয়া মাছ আকারে বড়ো হলে,
জেলের ক্রন্দন ভাসে হাওয়া বাতাসের জালে।
ভাবনা আক্রান্ত হলে স্বপ্নরা কী সুখে থাকে!
ভুলে যেওনা মানুষেরা সব নাটক মনে রাখে।
মানুষ চায় চাল -ডাল, তেল আটা, লবন,
মানবিক এই চাওয়া মানুষের খুব সাধারণ।
ভুলে যেওনা মানুষেরা নাটক ফাটক মনে রাখে।
মাছ যেন না যায় ঢেকে অমায়িক ভাষনে শোকে।

 

সূর্যোদয়
অনন্ত পৃথ্বীরাজ

আমাদের সময়টা, একটু উল্টো করে চিন্তা করুন।
আসুন না কটেজে বসে, চা খেতে খেতে কথা বলি।
একদা আমরা পরাধীন ছিলাম।
১৭৫৭, ১৯৪৭, ১৯৭১, ২০২৪ কত শত বছর তবুও
আমরা পরাধীনই থাকবো।
ক্ষমতার হাত বদলে আমাদের কী এমন আসে যায়।

আমরা কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ।
আমরা কাজ করি ক্ষেত-খামারে, কলে কারখানায়।
আমাদের চাল-ডাল, আলু, পেয়াজ, ডিমের দাম কেবল বাড়ে।
আমরা পরাধীন ছিলাম, আমাদের পূর্বপুরুষ পরাধীন ছিল।
আমরা পরাধীন আছি, আমরা পরাধীনই থাকব।

 

টানছে কে পথের ঠিকানায়
জারিফ আলম

হাঁপিয়ে উঠছে বাড়ন্ত হাাঁড়িতে চড়ানো দুঃখেরা
তাপ আর উত্তাপের এই সময়ে নিঃস্ব হতে হতে
দেবার মতো কিছু নেই আপাতত।

ফলবতী শস্যের মওসুমে ডুকরে ওঠে প্রত্যহ
গ্লানির খাতা, যা এখন ভীষণ ব্যক্তিগত।
চড়কিবাজির মতো হাপর টেনে টেনে অকস্মাৎ
ভুলে যাই কাদের পাড়ায় আমাদের ঠিকানা!
যখন জানা হলো না প্রিয় কারো মুখ মনে করে-
ফানুসে জ্বলে ওঠে তোমার রক্তিম মুখের ছায়াছবি।
শিল্পীর তুলির আঁচড়ে অমন ক্ষত-বিক্ষত হতে
কে বলেছে তোমাকে; এমন রক্তিম আল্পনায়!

বায়ান্ন আর একাত্তরে বয়ে যায়নি কি
রক্তের নদী! হিংস্রতার চিহ্ন দেখে যাই অহরহ।
তবে সেখানে আজ কীসের আপোস
যখন আপন ঠিকানায় ফিরে এলে বাংলাদেশ!

 

তুমি কোনটা নেবে…?
আকিব শিকদার

আমার হাতে বন্দুক, আমার কপালে রক্ত
তুমি কোনটা নেবে…?
যদি বন্দুক নাওÑ তুমি হিংস্র ঘাতক।
যদি রক্ত নাওÑ তুমি অপরিণামদর্শী কাতিল।

আমার চোখে অশ্রু, আমার ঠোঁটে হাসি
তুমি কোনটা নেবে…?
যদি অশ্রু নাও, তবে তুমি
দুঃখ বিলাসীÑ মানে আমার প্রকৃত বন্ধু।
যদি হাসি নাও, তবে তুমি
দুধের মাছিÑ মানে সুসময়ের ধাপ্পাবাজ।

আমার কপালে ঘাম, আমার দু’চোখ লাল
তুমি কোনটা নেবে…?
যদি কপালের ঘাম মুছে দাও শুষ্ক আঁচলেÑ
তুমি আমার প্রকৃত ঘরণী, আমার অর্ধ-অঙ্গ।
যদি রক্তিম চোখে বোলাও হাতের শীতল আঙুলÑ
তুমি আমার স্নেহশীল প্রেমিকা, রমণযোগ্য ভালোবাসা।

 

আজ ষোলোই ডিসেম্বর
মহসিন খোন্দকার

ব্রাশফায়ারে ঝুলে আছে নক্ষত্র!
ফোটা ফোটা ঝরছে অনিরুদ্ধ অহংকার-
গুলিবিদ্ধ চেতনায় দাঁড়িয়ে আছে একিলিস-
তার দৃঢ়তার নিচে নতুন নাগরিক ভোর

জবাইকৃত সূর্যের চোখে
উঠানামা করছে ইতিহাস-একটি চিৎকার
প্রসব করবে বিমুগ্ধ ভোর-তার আগে ঠোঁট দিয়ে সাহস মাপছে
প্রচেষ্টার পানকৌড়ি

অনেক ঈগল উড়ছে আজ আগুনডানায়!
চেতনার চাতালে দাঁড়িয়ে আছেন জহর সেন,
তাঁর ম্যাগজিন আজ ভীষণ খালি,
শূন্য ম্যাগজিনে জমা করছেন খুশির খোসা-
উড়ন্ত জহর আজ এসবই ছুঁড়ে দিবেন পরাজিত প্রেতাত্মার পাঁজরে-
আজ ষোলোই ডিসেম্বর।

****************************