You are currently viewing ভোকাট্টা || জাকিয়া শিমু

ভোকাট্টা || জাকিয়া শিমু

ভোকাট্টা

জাকিয়া শিমু

রমজান আলী দু’হাঁটুর চিপায় মাথা গুঁজে উঠোনের এককোণে জলচৌকির ওপর বসে আছে। নির্ঘুম চোখজোড়াতে ঘন কালিরেখা,চোখের মণিদুটোও মদ্যপের মতো টকটকে লাল!

এখন বর্ষাকাল। গত ক’দিনে আকাশে যত মেঘ জমা ছিল,সারারাত ধরে ঝরে, এই সাতসকালে আকাশ হয়ে উঠেছে ঝকমকে পরিষ্কার। তবে বাতাসে এখনো জলের তরতাজা ভেজাগন্ধ ছড়ানো আছে। হালকা শীতল হাওয়া বইছে এবং এ’কয়েকদিনের আষাঢ়ী কুটকুটে গরমটা একদম কেটে গেছে। উঠোনের দক্ষিণধারে কদমগাছে রাতের আকাশে ছেয়ে থাকা নক্ষত্রের মতো হাজারেবিজারে কদমফুল ফোটে আছে। হাওয়ার দাপটে ফুলেররেণু ঝুরঝুরিয়ে ঝরছে এবং বাতাসে তার সৌরভ ছড়াচ্ছে।

কিন্তু রমজান আলীর বিক্ষিপ্ত-মন এসব কিছুকেই স্পর্শ করতে পারছে না! উপরোন্ত তার মনঃপীড়া পুরোটাই শরীরের উপর ভর করেছে- চোখেমুখে তীব্র হতাশার ছাপ ! কপালে কচি ডালিমের দানার মতো স্বচ্ছ ঘাম জমেছে! তীব্র যন্ত্রণায় কাবু হওয়া মাথার ভেতর থেকে সমানে ধুঁয়া উড়ছে! মাথার ডানপাশের রগটা হাওয়ায়-উড়া ঘুড়ির সুতোর মতো টান হয়ে আছে, মনেহয় যেন যেকোন সময় ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে ! সকাল থেকে বেশ ক’বার মাথায় শীতলপানি ঢালা হলেও তাপমাত্রা নামার নাম নেই বরং ছাইচাপা আগুনের মতো তা হু হু করে বেড়ে চলেছে!

রমজান আলীর প্রথম স্ত্রী রাহেলা বেগমের ঘরে প্রায় আট বছর পর সন্তান এলো, তাও আবার পুত্রসন্তান। যদিও রাহেলার আজন্ম একটা মেয়ে সন্তানের শখ ছিল। সে তৃষ্ণা অবশ্য মিটল না! তারপরও সে যারপরনাই খুশি,মোটের ওপর বাঁজা রটনা ঘুচল তো! শুধু কী তাই ! কথাটা মনে পড়তেই রাহেলা নিজমনে সজোরে হেসে ওঠে। বউ’র হাসির শব্দে রমজান আলীর বুকে তীব্রভাবে কাঁপন ধরে-যেন শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হবার জোগাড়! এ হাসির ভেতর লুকিয়ে আছে রমজান আলীর জীবনের বিষমকষ্টের আখ্যান, যা গত দু’বছর ধরে তার মনটাকে ঝিঙ্গের খোলের মতো অসাড় করে দিয়েছে!

রাহেলার ছেলের বয়স আজ এক সপ্তাহ পূর্ণ হল। ছেলের গায়ের রং ধবধবে পরিষ্কার, নাক চোখ খাড়া-চোখা। সাতদিন বয়সের বাচ্চাকে মনেহয় যেন দু’তিন মাস বয়সের বাচ্চা- বয়স আন্দাজে বেশ বড়সড়, টনটনে। বাচ্চার আকিকা উপলক্ষে বাড়ি ভর্তি আমন্ত্রিত অতিথি। সন্তানের মা অর্থাৎ রাহেলা মানত করেছিল; তাঁর কোলে যদি সন্তান আসে তবে সে চার গাঁয়েরলোক জানিয়ে মহা হূলস্থুল বাঁধিয়ে বাহ্য-লৌকিকতা করবে- যাতে বংশপরম্পরায় এঘটনার ধকল বয়ে যায় বহুকাল ধরে!

রাহেলার মনেরআশ পূরণ হয়েছে এবং সেমতে মানতের আয়োজনও চলছে বেশ কদিন ধরে। আয়োজন বিশাল মাত্রার! জোড়া খাসি এবং ড্যাকরা সাইজের সাতটি গরু কেনা হয়ে গেছে। মোহনগঞ্জ হাট হতে দিনাজপুরের একনম্বর চিনিগুড়া চালের-বস্তা দাওয়ায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে। গতরাতে স্থানীয় গোয়াল এনে খাঁটিদুধের দই পাতার কাজও শেষ এবং নানানপদের মিষ্টি বিশেষ অর্ডারে বানানো হয়েছে। আয়োজনের শেষমুহূর্তে রাহেলার মনে হল- মাছের কথা। এমন আয়োজনে মাছ থাকবে না, তা মানা যায় না। লোক পাঠিয়ে পদ্মাপাড়ের বাজার থেকে তরতাজা ঢাউস সাইজের বেশকটা রুই মাছও আনা হল। এরপর মনে পড়ল আরেক কথা- মুরব্বীদের একটা হক আছে। এমনকথা মনে পড়ল তাও অনুষ্ঠানের দিন সকালবেলায়। তড়িঘড়ি করে শহরে লোক পাঠানো হলো-শাড়ি-লুঙ্গি আনতে। পুরোপাঁচটা নিখুঁত হতে হবে, ফাঁকফোকর চলবে না- রাহেলার মানত বলে কথা!

রমজান আলী উঠোন ছেড়ে ঘরে ফিরে এবং খাটের পরে চিত হয়ে শুয়ে থাকে। তার গা খালি, লুঙ্গিটা হাঁটুঅবধি বিস্রস্ত হয়ে আছে। নেশাখোরের গাঁজায় দম নেওয়ার মতো করে শরীরের সমস্তজোর ব্যয়ে সে নিঃশ্বাস টানছে। বুকেরপাঁজর দ্রুত উঠানামা করছে। গত দু’বছরে তার শরীরের ওজন একটু বেশিমাত্রায় ক্ষয়েছে, হাতের আঙ্গুলগুলো তার দিবাসাক্ষ্য- শুকিয়ে শীর্ণ শনের মতো দেখতে হয়েছে! কোটরে-ডুবা চোখে মড়ামানুষের চাহনি! খানিকক্ষণ যেতে কোনমতে হাতপা কুঁকড়ে বিছানার রেলিঙয়ে হেলান দিয়ে বসে। আজ শত শত লোক তার বাড়ির মেহমান। উঠোনজুরে সে মহাযজ্ঞ চলছে কিন্তু সে কিছুতেই বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। মনেরভার শরীরটাকে পরোপুরি কাহিল করে দিয়েছে। বিছানা বরাবর জানালাটা খোলা, সেদিকে তাকাকে চোখে পড়ে উঠোনে রাহেলা সন্তানকোলে তদারকিতে ব্যস্ত। এমন পবিত্রদৃশ্য দেখে সে ভীষণভাবে চমকে ওঠে! এমন নয় যে সে সন্তানের মুখ এই প্রথম দেখল! গত ক’দিনে বেশ কবার রাহেলা জোর করে তাকে দেখতে বাধ্য করেছে যদিও !

যেমন-সে কদমতলে বাঁশেরমাচানে (তার খুব পছন্দের জায়গা) বসে আছে, দেখা গেল রাহেলা বিড়ালপায়ে সেখানে এসে হাজির। কিছু বোঝার আগেই সন্তান তার কোলের উপর বসিয়ে দিয়ে উচ্চস্বরে হেসে খুন! ও-হাসির ব্যাখ্যা বড্ড কঠিন- বুকেরপাঁজর দুমড়েমুচড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার মতো যাতনাময়! রমজান আলী তখন ভয়আতঙ্কে চমকে ওঠে! অবুঝ শিশুটাকে আজরাইলের মতো ভয় হয়!

এখনো, এতদূর থেকে শিশুটাকে দেখে সে শঙ্কিত হলো এবং মুহূর্তে গায়ের লোমগুলো সূর্যালোকে দূর্বাঘাস যেমন মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে যায় তেমন করে খাড়া হয়ে গেল! এবং এসময়ে সে বিরবিরিয়ে অশ্রুত কিছু একটা বলে উঠল! তার দেহের সমস্ত শিরাউপশিরা বেঁয়ে একটা অশুভ ভাবনা দ্রুত ছুটে যেয়ে মাথারখোঁড়লে আটকে গেল।

এরপর খুন’ শব্দটা মাথার ভেতর চিড় মারতে থাকল। এবং একটা খুনের নেশায় আসক্ত হল- যেমন করে সে প্রতিরাতে বাংলামদ তাড়ি খেয়ে তীব্রভাবে মত্ত হয়! মনটা দৃঢ়ভাবে যেন বলে উঠল-খুনটা তাকে করতেই হবে! পরমুহূর্তে আবার শরীরমন দু’টোই থরথরিয়ে কেঁপে উঠে এবং মনোবল শূন্য হয়ে মিইয়ে যায়! এরপর তার কণ্ঠ থেকে লড়াইয়ে হেরে যাওয়া পশুর মতো গোঙানির আওয়াজ বের হয় এবং সে তার ফেলে আসা সময়ের দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে-

এক সময়ে তার সংসার এখনকার মতো জৌলুসাবৃত ছিল না ঠিকই তবে তীব্র শীতে গরীবের বিছানার খড়েরওমের মতো যেসুখ, সেরূপ সুখের কমতি ছিল না এতটুকু। মা বাবা আর দু’বোনের একমাত্র ভাই রমজান আলীকে নিয়ে গৃহস্থসংসার। নিজেদের জমিজমা ছিল না, বাপের সাথে অন্যের জমি বর্গাচাষ করে সংসার চলত। রাহেলা রমজান আলীর লতায়পাতায় জড়ানো আত্নীয় এবং প্রতিবেশী। তাদের অবস্থা গ্রাম আন্দাজে মন্দ নয়। তবে সে দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী, এমনকথা বললে বিকোবে না। কানা খোঁড়ারও উঠতি বয়সকালের একটা সৌন্দর্য থাকে। তো বয়সকালের-রূপটা সবে তখন ফুটতে শুরু করেছে তখন রমযান আলী রাহেলার প্রেমে পড়ে যায়। এরপর উভয় পরিবারের অমতে বিয়ে হয় ! এবং রাহেলার অধঃপাতের পথ চলার শুরুটা সেই থেকে! বিয়ের আগে কল্পনায় আঁকা স্বপ্নগুলো আকাশের তারার মতো একটা একটা করে খসে ক্ষয়ে উধাও হয়!

সেসময়ে গাঁয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার হিরিক পড়ে যায়। গাঁয়েরলোকের সম্পদ বলতে, আছেই বা কী! বেশিরভাগের পৈতিকসুত্রে পাওয়া ভিটেমাটিটুকু। অনেকে তা বিক্রি কিংবা বন্ধক রেখে ভিসা পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। রমজান আলীর বিদেশ যাওয়ার বড় শখ, টাকার অভাবে যেতে পারল না’- এমন আক্ষেপ বাসররাতেই প্রকাশ ঘটে ! রাহেলা সে ইঙ্গিত সেদিন বুঝতে পারলে, চুপ করে থাকে। অবশ্য রমজান আলী হাঁটুগেঁড়ে বসে থাকার পাত্র নয়! বিয়ের বছর না ঘুরতে রাহেলাকে বাপের সম্পত্তির অংশ বিক্রি করাতে বাধ্য করে। এবং জমি বিক্রির এতগুলো কড়কড়ে নোট হাতে পেয়ে রমজান আলী কামকাজ বাদ দিয়ে ফুর্তি নিয়ে মেতে থাকে! বিদেশের নাম নিজে তো বটেই এবাড়ির কেউও মুখে আনে না! রমজান আলী বংশের একমাত্র চেরাগদাতা, ভবিষ্যৎ বংশরক্ষার মালিক এমন প্রভুকে মরুদেশে পাঠিয়ে জানে মারার মতো বোকা তার পরিবার নয়!

একবেলা নুনপান্তার যার যোগার ছিল না, তার হাতে এখন প্রচুর নগদ – এসব ছেড়েছুড়ে বিদেশের মাটিতে পচে মরার মতো বোকা সে নয়। সে উল্টোরথে পা ফেলে। রাহেলাকে বিদেশ যেতে জোর করে।

মরুদেশে মেয়েদের চাহিদা বেশি আর অল্পবয়সী হলে তো কথাই নাই। কিন্তু রাহেলা এপ্রস্তাবে রাজি হয় না। রমজান আলী ফরমাস জারি করে- বিদেশ যেতে রাজি না হলে রাহেলাকে তালাক দিয়ে বেশি টাকায় যৌতুক নিয়ে সে দেশে ব্যবসা করবে। রাহেলার বাবা-মা নেই। নিজের অংশ বিক্রি করায় ভাইদের সাথে তাঁর সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। শেষে,নিদেনপক্ষে সংসারটা বাঁচাতে হলেও সে মধ্যপ্রাচ্যে যাবার উড়োজাহাজে চেপে বসে।

রাহেলাসহ সাতজন মেয়ে তীব্র গরমের মধ্যে আবুধাবী এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। এদের বয়স পনের থেকে কুড়ির মধ্যে- একান্ত কাঁচাবয়স ! সকলের পরনে ভারি কালো কুচকুচে বোরকা। এরা এ-কাপড়ে অনভ্যস্ত- মাথা থেকে ঘোমটা সরে গিয়ে অগোছালো চুলেরগাছি ঘর্মাক্ত কপালে লেপটে আছে। কেউবা বোরকার হাতা টেনে কনুই অবধি তুলে রেখেছে- হাতগুলো নবীন, সবেমাত্র কচিদূর্বাঘাসের মতো লোম গজাতে শুরু করেছে। মুখখোলা-সতেজ,ভিরু চেহারার ভেতর হরিণশাবকের মতো উৎসুক চোখগুলো অদেখা পৃথিবীটার দিকে মুমূর্ষুদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! মনটা ছটফট করছে দেশ এবং প্রিয়জনদের জন্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে এদের যার যার মালিক এসে বাসাবাড়িতে নিয়ে যাবে। দেশি দালাল করিম মিয়াঁ, মক্তবের মৌল্ভির মতো এদেশিয় চালচলন আদবকায়দা বিষয়ে ভারি বয়ান দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাদের কান বধির,ভয়আতঙ্কে এরা এ-ওর দিকে অনড় সজলচোখে তাকিয়ে আছে- বর্ষার বাড়তিজলে টইটুম্বুর দিঘির মতো চোখগুলো-একটু টোকাতেই যেন ঝুরঝুরিয়ে ঝরে পড়বে !

মেয়েগুলো এয়ারপোর্ট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরা যদিও কেউ কারো পূর্বপরিচিত ছিল না কিন্তু একই দুঃখনদী সাঁতরে বেরানো সূত্রে এবং গতদু’দিনে সহযাত্রী থাকায় আত্নার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তো বটেই।

রাহেলার মালিকের পরিবারে দু’জন মহিলা এবং চারজন ছেলে। ছেলেদের দু’জনের বয়স ছোট হলেও বাকি দু’জন দেখতে ত্যাগড়া যুবক। তাদের সম্পর্ক আঁচ করা দুরূহ তবে মালিকের পেতলরঙের সাপের মতো ঠাণ্ডা চোখজোড়ার সাথে ছেলেগুলোর বিস্তর সাদৃশ্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাহেলা ধরে নেয় এরা মালিকের ছেলে। এয়ারপোর্টে মালিকের দিকে তাকাতে রাহেলার গা কেমন গুলিয়ে উঠে! জগতের মানুষ ভিন্ন জাতগোত্রের হলেও তাদের হাসি এবং চোখের ভাষা বোধহয় একই হয়,ভাষা না জেনেও ঠাস করে তার চরিত্র বলে দেওয়া যায়। মহিলাদের মধ্যে একজন মালিকের বউ এবং বয়স্কজন মা কিংবা শাশুড়ি হবে হয়তো। রাহেলাকে মালিকের বউ তাঁর ঘরেরকাজ বুঝিয়ে দেয়।

বিষণ্ণসময়ে প্রিয়জনের কথা মনে পড়লে মনটা শান্ত হয়। কল্পনায় তাকে পাশে বসিয়ে মনেরশরীরকে উজাড় করে খোলে ধরতে মন চায়- তাতে স্থিত হওয়া সহজ হয়। রাহেলা সারাদিনের ধকল শেষে প্রায় মধ্যরাতে রান্নাঘরের শেষদিকের কোণাঘেঁষা সারভেন্ট-রুমের বিছানায় শুয়ে ছটফট করে। শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত হলেও ঘুম আসে না। কতো কী মনে পড়ে!

আপনজন বলতে হাতেগুনা ক’জন মাত্র- বাবাই খুব কাছের ছিলেন। বাবা তো নেই-ই, মা-ও সেই কবে দুনিয়া ছেড়েছেন। ভাইয়েরা যে যার সংসারে। বাকি থাকে- রমজান আলী! নামটা মনে পড়তে ভেতরটা নড়ে উঠে ! নিজেকে খুব হীন,উচ্ছিষ্ট মনে হয়। প্রচণ্ড ঝড়ের চোটে গাছের আলগা-পাতারা যেমন উড়েঘুরে কোন নোংরা ভাগাড়ে যেয়ে পড়ে, নিজেকে পরিচয়হীন সেই ঝরাপাতার মতো মনে হয় আজকাল!

এসময় রান্নাঘরের ওপাশ থেকে শিয়ালের ছপছপ পায়ে চলার আওয়াজে কোন মানুষের হেঁটেচলা শব্দ কানে আসে রাহেলার। কিছুক্ষণ পর দরজায় পর পর ক’টা টোকা পড়ে। রাহেলা কান উঁচিয়ে থাকে-এতরাতে এদিকে কারো আসার কথা নয়। গত দু’দিনে এমন ঘটনা ঘটেনি। নিচতলায় সে রাতে একাই থাকে আর বাবুর্চি মনসুর সে-তো রাতের কাজ সেরে নিজবাড়ি চলে যায়। এই ভাবনার ফাঁকে দরজায় জোরে জোরে কড়া নাড়ার শব্দ হলে রাহেলা হতবুদ্ধ হয়ে ধরমড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে সোজা দরজা খোলে দেয়। ঘরে ড্রিম লাইটের মৃদু আলো ছিল। ওটুকু আবছায়া আলোতে রাহেলার চোখে পড়ে মালিকের ক্ষুধার্ত ধূর্ত শিয়ালের মতো চকচকে চোখদুটোতে। সে ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে।

পাহাড়ের মতো লম্বাচওড়া মানুষটা জোব্বা পাগড়ির খোলস ছেড়ে, খুব সাবলিলভাবে প্রাত্যহিক আর দশটা কাজের মতো কাজ সারতে যেন তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাহেলা টুঁ শব্দটি করতে সুযোগ পায় না। ওটুকু শরীরে এমন অসুরের মতো শক্তি নিয়ে পশুটা চেপে বসলে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে। ওর চোখে কেবল একটাই দৃশ্য সেমুহূর্তে ভেসে ওঠে-ভাদ্রমাসে গাঁয়ের মর্দ কুকুরগুলোর লালাযুক্ত জিহবা ঈষৎ ঝুলে থাকে, এরা বেজায় উন্মাদ হয়ে মনেরখায়েশ মেটাতে গ্রামের এপ্রান্ত ওপ্রান্ত মাদি কুকুরের খোঁজে ছুটে বেড়ায়। তাঁর শরীর অসার হয়, চোখদুটো অনড় এবং বিস্মিত হয়ে সেই কুকুরের মতো অবিকল তাঁর মালিকের চেহারায় সে তাকিয়ে রয়!

রাতের ঘটনার পর বাকিরাত রাহেলা নগ্নশরীরে কোনমতে চাদরে শরীরটা ঢেকে লুলা,মাজাভাঙ্গা পশুর মতো উপুর হয়ে পড়ে ছিল। রাতের শেষে ভোর হয়েছে এরপর অনেকটা বেলা গড়িয়েছে এসবই সে ঘোরের মধ্যে টের পেয়েছে। রান্নাঘরে বাবুর্চি মনসুরের হাড়িপাতিলের টুংটাং আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তার কাজের সময় হয়েছে এখন কাজে হাত না লাগালে কঠিন শাস্তি অবধারিত জেনে শরীর নিংড়ে শেষ শক্তিটুকু সম্বল করে উঠে দাঁড়াতে মাথাটা প্রচণ্ডভাবে চক্কর দিয়ে উঠে, চারদিকের সমস্তকিছু অন্ধকারে ঢেকে যায়। সে কোনমতে অন্ধের মতো হাত হাতড়ে বিছানার এককোণে বসে পড়ে।

রমজান আলীকে যে করেই হোক আজকের মধ্যে বিস্তারিত জানাতে হবে। নিজের দেশ হলে রাতেই সে পালাত। কিন্তু এদেশের রাস্তাঘাট জানা নেই, ভাষা সে-ও তো অজানা। কোন পরিচিতজন নেই। মরুভূমির বিশাল শুন্যতা ভর করে বুকের তাঁর বুকে। সেসময় তাঁর নাম ধরে কেউ একজন হাঁক দেয়,বোধহয় বুড়ি। ইশারা ইঙ্গিত ছাড়া কারো সাথে কথা বলার জো নেই। বুড়ি খুব খিটখিটে, রাহেলা তার কথা বুঝতে না পারলে সে হাতের কাছে যা পায় ছুড়ে মারে তাঁকে!

এবাসায় একমাত্র মনসুর বাবুর্চির সাথে তাও আড়ালে আবডালে যা একটু কথা হয়। রাহেলা একসময় হিন্দি মুভির পাগল ছিল। গাঁয়ের বিভিন্ন বাড়িতে সারারাত ধরে ভিসিআর ভাড়া করে এনে হিন্দি ছবি দেখা হত। দেখে দেখে এ ভাষায় সে বলতে বুঝতে শিখেছে।

বাবুর্চির সাথে সে হিন্দিতে কথা বলে। বাবুর্চি মনসুর, এবাড়ির অবস্থা জানে। রাহেলার জন্যে তার মায়া হয়, নিজের বোন কিংবা মেয়ের কথা মনে পড়ে। তার ফোন দিয়ে গোপনে রাহেলা রমজান আলিকে ফোন করে। তাদের গাঁয়ের বাজারে ফোনদোকানে কথা বলার ব্যবস্থা আছে। ফোনের এপ্রান্তে রাহেলা অঝোরে আষাঢ়ীবৃষ্টির মতো কাঁদে, ওপাশে রমজান আলী দাঁতকেলিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। যেন রাহেলা রঙ্গ করছে! রাহেলা এই দোজখ থেকে দেশে ফিরতে আকুতি মিনতি করে, এমন কী বাবার শেষসম্বল ভিটের অংশটা বিক্রি করে টাকা এনে দেওয়ায় প্রতিজ্ঞাও সে রমজান আলীর কাছে করে। কিন্তু কোন অজুহাতেই তাকে টলানো যায় না। বরং রমজান আলীর রাগ ধরে- অতি সাধারণ বিষয়ে রেহালার উতলা হবার কারণ সে ধরতে পারে না! সে নিজে নিয়মিত মাগিপাড়ায় যায়, মেয়েদের নিয়ে রাতভর ফুর্তি করে!, কই কোন মাগিকে সে রাহেলার মতো এমনহারে কাঁদতে দেখেনি তো! তাছাড়া সে সব জেনেবুঝে তাঁকে মরুদেশে পাঠিয়েছে ! তবে দালালের সাথে চুক্তির বিষয়টা সে রাহেলার কাছে গোপন রেখেছে। আজ ফোনে অবশ্য চুক্তির কথা রাহেলাকে জানিয়ে দেয় রমজান আলী।

রাহেলা তাঁর স্বামীর কথায় বিশ্বাস করতে পারে না! সে ধপাস করে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে ঘরের মেঝেতে বসে পড়ে! এসময় বুড়ির ঘর থেকে শিয়ালের মতো কর্কশ কণ্ঠে রাহেলার আবারও ডাক পড়ে। বহুকষ্টে ভগ্নশরীরের ভেতর মৃতমনটাকে কোনমতে গুঁজে নিয়ে ওপরের তালায় পা বাড়ায়। বিশাল বাড়ি-অনেকগুলো কামরা, কে কোথায় থাকে এখনো সে ঠিকঠাক চিনে উঠতে পারেনি। সকালবেলায় এমনকী রাত পর্যন্ত বাড়িটা পোড়োবাড়ির মতো পড়ে থাকে। দিনে একমাত্র বুড়ি ছাড়া কাউকে বাড়ি দেখা যায় না। দ্রুত কাজে হাত লাগাতে হবে কিন্তু শরীর নড়ানো যাচ্ছে না,যমধরা কব্জার মতো হয়ে আছে- যেন একটু ঠেস লাগলে ঝুরঝুরিয়ে ভেঙ্গে পড়বে। তারপরও বহুককষ্টে একে একে বেশ ক’টা ঘরেরকাজ শেষ করে ও।

একটা বেশ বড় রুম,কার, কে জানে! এর ভেতর প্রবেশ করতে একটা বিদঘুটে ঝাঁঝাল দুর্গন্ধ নাকমুখে ভুরভুরিয়ে এমন হারে ঢুকল যে পেটের ভেতরের সমস্তটা উগড়ে বেরিয়ে আসার দশা! রাহেলা ওড়নায় নাক চেপে দাঁড়িয়ে দেখে; নানান রঙের বোতল, কাগজ, আধখাওয়া সিগারেট, বোতলের ঢাকনা, কলমের খাপ এরকম হাজারো জিনিসপত্র ঘরটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এমনসময় পেছন থেকে কেউ একজন বেশ সমর্থহাতে তাঁকে ঝাঁপতে ধরল ! সাপ যেমন খপ করে ব্যাঙকে ধরে ভক্ষণ করার আগে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে অপেক্ষা করে সেরূপে পশুটা তাঁকে ধরে সামান্য সময় অনড় হয়ে রইল ! রাহেলা সহায়শক্তিহীন হরিণশাবকের মতো শিকারের বাহুতে বন্দি থেকে পাথরচোখে স্পষ্ট যেন পরবর্তী ঘটনা দেখতে পেল এবং হুবহু মিলেও গেল! মালিকের ছেলে ক্ষুধার্তপশুর কায়দায় ওকে বিছানায় চিত করে ফেলে দিল। রাহেলার দেহটা পক্ষঘাটগ্রস্তরোগীর মতো বিছানায় লেপটে থাকলেও চোখদুটোতে বার বার করে ফিরে আসছিল- ভাদ্রমাসের সেই লালায়িত কুকুরের ছবি।

শুরুটা সেদিন থেকে এরপর একবার কিংবা একদিন নয়, বাবা এবং ছেলেদের এমন অসহনীয়,পাশবিক অত্যাচার চলছিল প্রতিদিন ! ওদিকে রাহেলা বেশ্যা হয়ে গেছে- এমনতরো রসালো খবর গাঁয়ের প্রতিটিকোণায় ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য রমজান আলীর তাতে কোন দোষ নেই; এসব কথা লোহারসিন্দুকে সোনাদানা গচ্ছিত রাখার আদলে সে নিজমনে ধরে রেখেছিল। যদিও রাহেলা কাজ না করে দেশে ফিরে এলে তাঁর নামে কুৎসা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি সে দিয়েছিল!

রাহেলার আলাভোলা বড় ভাইটা এসব কথা চাউর করেছে। বোকাসোকা মানুষ; দিনদুনিয়ার বাওবাতাস বোঝার ক্ষমতা তার নেই। এতিম বোনটা ফোনে এমন অঝোরা-কান্না করছিল যে তাঁর হৃদয় বিষম উদ্বেলিত হয় ! এবং বয়সে-সম্পর্কে বয়োজ্যেষ্ঠ হলেও সে রমজান আলীর পা ধরে বসে থাকে, বোনটাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু রমজান আলীর তাতে মন গলে না উপরন্ত তাকে বাড়ি থেকে দূরদূর করে তাড়িয়ে দেয়। উপায়ন্ত না পেয়ে গাঁয়ের মাতাব্বরদের শরণাপন্ন হয় সে কিন্তু তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। তারা তাঁকে গাঁয়ের সম্মান রাখতে ঘটনা চেপে যেতে বলে! তাতে সে বেজায় কষ্ট পায়।

মগজহীন মানুষ বলে কথা, থানার বড় সাহেবকে মূলআশ্রয় ভাবে সে। বড়সাহেব পানখাওয়া দাঁতে খিলখিলিয়ে হাসে! সারাদিন চোর-বদমাশ সামলে নেওয়া মানুষটা ভরসন্ধ্যায় এমন রসালো অভিযোগ পেয়ে নিজের মনের খাসলত মেটাতে রাহেলাকে নিয়ে অসভ্য নোংরা ইঙ্গিত করে।

সারাদিনে উপর্যুপরি অপমান অবহেলা সইতে না পেরে বাড়ি ফিরে দাওয়ায় বসে রাহেলার ভাই বুক চাপড়ে উচ্চস্বরে বিলাপ করে। এবং সকলে রাহেলা বেশ্যা বনে যাওয়ার বিষয় জেনে যায়!

ওদিকে রেহালার বেশ্যা বনে যাওয়ার উছিলায় রমজান আলীর মা ছেলের জন্যে ঘরে দ্বিতীয় বউ আনে! রেহালা দু’হাতে টাকা কামায়- আরবদেশের মালিক তাঁকে বেতনের দশগুণ বখসিস দেয়! পুরো টাকা সে স্বামীর নামে পাঠাতে বাধ্য থাকে। কাজেই রমজান আলীর হাতে নগদের অভাব নাই। দু’হাত উজাড় করে মদ-জুয়া-মাগিপাড়ায় টাকা উড়ায়- এসব থেকে ছেলেকে দূরে সরাতে ঘরসংসারের বিকল্প নাই। তাছাড়া রাহেলার মতো নাপাক- বউকে নিয়ে সংসার করা হবে হারামের কাজ। এবং তাঁর পেটের সন্তান এ বংশে এলে বংশপরম্পরায় মহাপাপ ভোগ করতে হবে! এসব ভেবেচিন্তে সতী মেয়েকে দ্বিতীয় বউ করে ঘরে তোলা হয়।

রাহেলা দু’বছর পর মাস দুয়েকের ছুটিতে দেশে আসে। এ দু’বছরে চেনাজানা সবকিছু বদলে গেছে। তাঁর নিজেরঘরে সতীন বাস করে। রমজান আলী আর তাঁর একা নেই, ভাগ হয়ে শুধুমাত্র কাগজপত্রে এখনো তাঁর রয়ে গেছে। সতীনের ঘরে ফুটফুটে সন্তান এসেছে। সে উঠোনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পায়ে গুড়গুড়িয়ে হেঁটে বেড়ায়। রাহেলা মুগ্ধ হয়ে সেদৃশ্য দেখে-খুশিতে তাঁর চোখে জল আসে।

ওর সারাজীবনের এমন একটা স্বপ্ন ছিল- সন্তান এবং পরিবার। রাহেলা সতিনকে ছোটবোনের মতো মেনে নিয়ে একত্রে সংসার করতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসে। তাঁর নিজগর্ভে একটা সন্তানের বড় সাধ। সেই তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে সবকিছু মেনে নিয়ে ভিখারির মতো রমজান আলীর পায়ের কাছে এনে দাঁড় করায়! রমজান আলী রাহেলার মনোবাসনা বুঝতে পারে কিন্তু ধূর্ত শেয়ালের মতো সে ধরা দেয় না!

রাহেলা অচ্ছুত, নষ্টা-ভ্রষ্টা মেয়েমানুষ। তাঁকে চৌদ্দপুরুষ ছিঁড়েচিরে খেয়েছে। তাঁর পেটে শুধু অবৈধ সন্তান আসবে! একথা সত্য তাঁর পেটে বহুবার অবৈধ সন্তান এসেছে এবং অন্ধকার গর্ভে তাদের কবর দেওয়া হয়েছে। এমন মেয়েমানুষের সাথে বিছানা ভাগ করা যায় না। বার বার পেট-খসানো রাহেলার থলিতে বাচ্চা পয়দা করলে সে বাচ্চা হালাল হবে না। রমজান আলীর পরিবার, সমাজ, দেশ তাঁকে ধিক্কার জানাবে- এমন সন্তান সমাজে অপাংক্তেয়!

দু’মাস চলে গেলে ছুটিও ফুরিয়ে যায়। রাহেলা আরবদেশের-নরকে আর ফিরতে চায় না। রমজান আলীর হাতপা ধরে কান্নাকাটি করে। কিন্তু তাঁর শত অনুনয়,বুক বিদীর্ণকরা আহাজারি রমজান আলীকে স্পর্শ করতে পারে না। বরং সে হিরকখণ্ডের মতো দুরূহ-কঠোর হয়ে তাঁকে সোজা জানিয়ে দেয়–স্বেচ্ছায় সে ফিরে না গেলে,তালাকনামা ধরিয়ে বাড়ি থেকে চিরতরে বের করে দেওয়া হবে! রাহেলার গত দু’বছরের গতরখাটা টাকার সবটাই স্বামীর অধিকারে। নিজের বলতে আছে শুধু হারাম দেহখানা! এরপর সে চুপ হয়ে যায়-তীব্রঝড়ের পরে প্রকৃতি যেমন শান্তস্নিগ্ধশীতল হয়ে যায় অনেকটা সেরকম!

গাঁয়েরলোক অবশ্য জানল ভিন্নকথা- রাহেলা বেশ্যা,সে কখনো মা হতে পারবে না! মরুদেশের শেখেরা তাঁর মা হওয়ার ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়েছে ! এবং এই বাঁজা মহিলা তাঁর নিদান দশা বুঝতে পেরে নিজগরজে মরুদেশে ফিরে যেতে উদগ্রীব হয়ে আছে ! গাঁয়ে তাঁকে নিয়ে রি রি পড়ে যায়। এতদিন লোকের মুখে আড়ালে এসব রটনা শোনা গেলেও এবারের অভিযোগ হাওয়া বাতাসে উড়ে নয়, রমজান আলী এবং তার পরিবার রাহেলার সম্মুখে ছড়াতে লাগল! রাহেলা প্রতিবাদহীন থাকায় অভিযোগ আরও পাকাপোক্ত হয়। এরপর রাহেলা প্রচণ্ড একটা অপ্রাপ্তি, আকাঙ্ক্ষা এবং গোপন একটা জেদ চেপে নিয়ে মরুদেশের উদ্দেশ্যে আবারও উড়ালজাহাজে চেপে বসে।

তারও পাঁচ বছর পরে রাহেলা মরুদেশের পাঠ চুকিয়ে পাকাপাকি দেশে ফিরে আসে। এবার সে বীর্যবতী হয়ে স্বদেশে ফিরেছে! তাঁর তলপেটে শেখদের সন্তান! বাঁজা অপবাদের মুখে ঝাঁটা মেরে শেখদের ভ্রুন,স্বজ্ঞানে নিজের জঠরে বয়ে নিয়ে হাসিমুখে দেশের মাটিতে ফেরে সে। পেটে তাঁর স্বপ্নের-সন্তান, দু’হাত ভরা বিষয় সম্পদ। গত একসপ্তাহ আগে সে সন্তানের জন্ম হলে জীবনের সকল অভিলাষে পরিপূর্ণ এক মানুষ হয়ে ওঠে রাহেলা। ঘটনার ধকল সইতে না পেরে রমজান আলীর মরার বড় সাধ জাগে কিন্তু মরতেও যে স্পর্ধা লাগে, তাও তার নেই! ফাঁদে-পড়া বাঘের মতো কুঁকড়ে বসে মুমূর্ষুদৃষ্টিতে সারাক্ষণ সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে! বিষিয়ে-ওঠা মনে চরম ক্রোধ-ঘৃণা জমে থাকলেও রাহেলাকে তালাক দেওয়ার মরদ তার নেই! নিদেনপক্ষে তার বিশাল সংসারটি টিকে আছে রাহেলা বেগমের করুণা-দাক্ষিণ্যে।

*****************************