You are currently viewing বিনয় ঘোষঃ প্রয়াণ দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিনয় ঘোষঃ প্রয়াণ দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিনয় ঘোষঃ প্রয়াণ দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি

 

বিনয় ঘোষ (১৯১৭-১৯৮০)  সাংবাদিক, সমাজতাত্ত্বিক, লেখক, সাহিত্যসমালোচক,  বাংলা ভাষা ও লোকসংস্কৃতির গবেষক। তাঁর ছদ্মনাম ছিল ‘কালপেঁচা’। ১৯১৭ সালের ১৪ জুন কলকাতায় তাঁর জন্ম, পৈতৃক নিবাস ছিল যশোরে। তিনি আশুতোষ কলেজ থেকে বিএ এবং  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও নৃতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর সাংবাদিকতার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাপ্তাহিক ফরোয়ার্ড (১৯৩৯-১৯৪১),  যুগান্তর (১৯৪৩-১৯৪৫), দৈনিক বসুমতী (১৯৪৬-১৯৪৭) ও সাপ্তাহিক অরণি পত্রিকায় সাংবাদিকতার বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।র (১৯৪৩-১৯৪৫), দৈনিক বসুমতী (১৯৪৬-১৯৪৭) ও সাপ্তাহিক অরণি পত্রিকায় সাংবাদিকতার বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

বিশ্বেশ্বর ঘোষ ছিলেন নির্ভীক ও স্পষ্টবাদী মানুষ। তাই সামান্য কেরানিগিরি থেকে শুরু করে কর্মকুশল ও সততার পথে উন্নীত হন উচ্চতর পদে। মা ছিলেন স্নেহময়ী যা ছেলেকেই ঘিরে থাকতো। পিতার শাসন ও মায়ের স্নেহে বড় হয়ে উঠেছেন বিনয় ঘোষ।

বিনয়ের বিদ্যারম্ভ মনোহরপুকুরে নীরদ মাস্টারের পাঠশালায়। পরে ক্যাথিড্রাল স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং আশুতোষ কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাশ করেন। তাঁর ছিল অর্থনীতিতে অনার্স। অনেকটা পরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি (নৃতত্ত্ব) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান। তাঁকে নৃতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে উৎসাহ দেন প্রখ্যাত অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায়। বিনয় ঘোষ নিজেও চেয়েছিলেন নীহারবাবুর অধীনে গবেষণা করে পিএইচ ডি করতে। কিন্তু নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি।শেষ পর্যন্ত অ্যাকাডেমিয়ার রাজসিক জীবিকার বদলে চলে গেলেন সমাজ-সংস্কৃতি-নৃতত্ত্বের ব্রতে।

ছাত্রজীবন থেকেই তিনি মার্কসবাদী বিশ্বাসী ছিলেন। দীর্ঘকাল ধরে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করেছেন।নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাপ্তাহিক ফরোয়ার্ড (১৯৩৯-১৯৪১), যুগান্তর (১৯৪৩-১৯৪৫), দৈনিক বসুমতী (১৯৪৬-১৯৪৭) ও সাপ্তাহিক অরণি পত্রিকায় সাংবাদিকতার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর বক্তৃতামালার প্রথম বক্তা ছিলেন। ১৯৫৮-১৯৬০ পর্যন্ত রকফেলার রিসার্চ স্কলার হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গবেষণা করেন। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি(১৯৫৭) গ্রন্থের জন্য ১৯৫৯-এ রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।

ভারতীয় গণনাট্য সংঘ :
বিনয় ঘোষ ভারতীয় ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সক্রিয় সদস্য কর্মী ছিলেন। তার রচিত ‘ল্যাবরেটরি’ নাটক এক সময়ে এই সঙ্ঘের দ্বারা অভিনীত হয়। তিনি এই সংঘের গানের দলের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, পাহাড়প্রমাণ অন্যায়-দুর্নীতি, মৃত্যুস্রোত ইত্যাদির প্রেক্ষাপটে বিনয় ঘোষ ল্যাবরেটরী নাটকটি লেখেন। নাটকটি ফ্যাসিস্ট বিরোধী চলচ্চিত্র প্রফেসর
ম্যামলকের আদর্শ অনুসরণের রচনা করেন।

ছোটগল্প সংকলন-
ডাস্টবিন : প্রথম জীবনে বিনয় ঘোষ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনেেক গল্প লিখেছিলেন। সমস্তত গল্পগুলিকে সংকলিত করে পৃথকভাবে গ্রন্থবন্ধ করার সময় তিনি পাননি।
১৯৪৩ এ ‘বোধন’ নামে তার একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। দীর্ঘকাল পরে গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ ডাস্টবিন (১৯৮০) নামে প্রকাশিত হয়। গল্পগুলি 1930 এর দশকের শেষ দিক থেকে ১৯৪০ এর প্রথমদিকে রচনা। গ্রন্থটি বিনয় ঘোষ ‘প্রিয় ডাশহুড কুকুর ভিটে’র’ উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত।

বিনয় ঘোষের প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোঃ

শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ(১৯৪০)
নতুন সাহিত্য সমালোচনা(১৯৪০
আন্তর্জাতিক রাজনীতি(১৯৪১)
ফ্যাসিজম ও জনযুদ্ধ(১৯৪২)
সংস্কৃতির দুর্দিন(১৯৪৫)
বাংলার নবজাগৃতি(১৯৪৮)
বরণীয় বাঙালি(১৯৫০)
কাল পেঁচার নকশা(১৯৫১)
কলকাতার কালচার(১৯৫৩)
জনসভার সাহিত্য(১৯৫৫)
কাল পেঁচার বৈঠকে(১৯৫৭)
পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি(১৯৫৭)
বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ(১ম ও২য় খন্ড১৯৫৭, ৩য় খন্ড১৯৫৯)
টাউন কলিকাতার কড়চা (১৯৬০)
বিদ্রোহী ডিরোজিও(১৯৬১)
বাংলার বিদ্বৎসমাজ(১৯৭৩)
অটোমেটিক জীবন ও সমাজ(১৯৭৮)
মেহনত ও প্রতিভা(১৯৭৮)
নববাবু চরিত(১৯৭৯)

বিনয় ঘোষের প্রবন্ধ গ্রন্থ

ক) ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলন পর্বের রাজনৈতিক আলোচনা-
আন্তর্জাতিক রাজনীতি(১৯৪১)
সোভিয়েত সভ্যতা
ফ্যাসিজম ও জনযুদ্ধ(১৯৪২)
ভারত ও সোভিয়েত মধ্য এশিয়া
খ)সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজ বিষয়ক বস্তুবাদী বিশ্লেষণ-
শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ(১৯৪০)
নতুন সাহিত্য সমালোচনা(১৯৪০)
মেহনত ও প্রতিভা(১৯৭৮)
গ)পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও তার তাত্ত্বিক আলোচনা-
পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি(১৯৫৭)
বাংলার লোকসংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব (১৯৭৯)
ট্রাডিশনাল আর্টস এন্ড ক্রাফট্স অব ওয়েস্ট বেঙ্গল
ঘ)কলকাতা শহরের ইতিহাস পর্যালোচনা –
কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত (দ্বিতীয় খন্ড)
ঙ)বাংলার উনিশ শতকের পটভূমিকায় জীবনী আলোচনা-
বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ(১ম ও২য় খন্ড১৯৫৭, ৩য় খন্ড১৯৫৯)
বিদ্রোহী ডিরোজিও(১৯৬১)
চ) আধুনিক বাঙালি জীবন ও সাংস্কৃতিক সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা-
বিদ্রোহী ডিরোজিও(১৯৬১)
বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা
বাংলার বিদ্বৎসমাজ(১৯৭৩)
মেট্রোপলিটন মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ (১৯৭৩)
ছ)আধুনিক বাঙালি জীবন ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক লঘু-গুরু রচনা-
নববাবু চরিত (১৯৭৯)
কাল পেঁচার নকশা(১৯৫১)
কালপেঁচার দু’কলম(১৯৫২)
কাল পেঁচার বৈঠকে(১৯৫৭)
জ)অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থ-
জনসভার সাহিত্য (১৮৫৫)
অটোমেটিক জীবন ও সমাজ(১৯৭৮)
যুব কল্যাণ
গরিব গণবিদ্রোহ ও ভগবান