আজিজুল রমিজের কবিতা
কিছু ঘাসফুল
দেখুন-
ছেলেমেয়ে দু’টি জঙ্গলে কী করছে
ছেলেটি লবণ মরিচ মাখিয়ে খাচ্ছে
স্বাস্থবতী জাম্বুরা
মেয়েটির অমল হাতে নরসিংদীর
আদিম সাগর কলা
ঠোঁটে তৃপ্তির ঢেঁকুর,চোখে চকচকে ধারালো ছুড়ি!
গল্পটি হাজার বছর আগের রুপকথা যেন
আমাদের খুব লোভ হলেও টাইম মেশিনে ফিরে যেতে পারবো না।
নদী ফিরে গেছে সেই কবে
ফিরে গেছে উদ্বেল ঘূর্ণি ঢেউ
এখন বিবর্ণ ডাঙায় পড়ে আছে
কিছু গুল্মলতা,কিছু ঘাসফুল!
পৃথিবীটা মানুষের হোক
কেউ আসে ঠকতে,কেউ আসে ঠকাতে
পৃথিবী শেখেনি কাউকেই ঠকাতে।
যতটুকু করেছো লুট
করেছো শোষন
সময় একদিন সব
করে দেবে শোধবোধ।
আস্তিক নাস্তিক সবাই জানে
মৃত্যু অনিবার্য সত্য
তবুও ; ফেরে না মানুষের বোধ!
আমি চাই ফুলের জন্ম বারবার হোক
পরাজিত ‘মানুষের’ ভাগ্যে অমরত্ব না জুটুক
জন্মে চাইনি কিছু
মৃত্যুতে চাই না ফুলের শোক
শুধু এই প্রার্থনা –
পৃথিবীটা মানুষের হোক।
টিপ
আমি তোমার একটি টিপের কাছে
সমস্ত কবিতা বিক্রি করে দিতে পারি
যেমন একজন কয়লা খনির শ্রমিক,
চায়ের দোকানদার,
আগুন থেকে তুলে আনা
এক একটি পয়সা
তোমার পায়ের কাছে ঢেলে দেয়
আমি কবি,আমিও পারি।
যদি আগুন দিয়ে নরক তৈরি করো
মাঝখানে বসিয়ে রাখো আমাকে
তোমার দিকে চেয়ে
গোলাপের মতো হাসবো আমি।
তুমি টিপ পরো বলেই আমি কবিতা লিখি
তোমার একটি টিপের কাছে
বিক্রি করে দিতে পারি যেকোনো
সাম্রাজ্য।
তুমি সুন্দর, তাই ঈশ্বর সুন্দর
তোমাকে গড়েছেন বলেই
ঈশ্বরকে সুন্দর বলি।
স্বাধীনতা
সারুদার দিন কেটে যায় চা বেচে
একজীবনে কখনোই সে জানতে চায়নি
ক্ষমতায় কে এলো,কে গ্যাছে,
স্বাধীনতা শব্দটি কেমন করে আমাদের হলো?
সারুদার জীবন গ্যাছে চা বেচে,আগুন জ্বেলে!
সারুদার ছোট্ট ছেলে স্কুলে যায় না
আগুন ঠেলে
সারুদার রঙিন জীবন-সাদাকালো
জীবন গ্যাছে আগুন জ্বেলে।
বাংলাদেশের চিঠি
ভাতফুলের কাছে আজন্ম নতজানু
ক্ষুধার্ত এক শিশু তার নাম বাংলাদেশ!
খোদার কাছে নয়,ক্ষুধার কাছে জানতে চাই
কে লিখে মানুষের ভাগ্য লিখন
মানুষ না ঈশ্বর?
আমরা দরিদ্র বঞ্চিত প্রতিবাদহীন
মেরুদণ্ডহীন মানুষ
আমাদের ঈশ্বর নেই,স্বজন নেই
বন্ধু নেই,রাজনীতিক নেই
কেউ নেই,কিচ্ছু নেই।
সুন্দরবনের পাখি, এই চিঠি নিয়ে যাও
সুইসব্যাংকের কাছে
আমরা গণতন্ত্র চাই না,মানবতা চাই না
শুধু তিনবেলা ভাত খেতে চাই।
গণতন্ত্র
সমাজ,রাষ্ট্র,মানবতা
গণতন্ত্র,প্রেম,দ্রোহ
সবকিছু আজ তৃতীয় বিশ্বের মুঠোফোনে!
একটি মেয়ে একটি ছেলের
মন ফুসলানো কথায় এক বিকেলে
সবুজ ও নির্জন এক মাঠে দেখা করতে গেলো
ছেলেটি ও তার বন্ধুরা বললো-
‘এবার লক্ষ্মীটি ঘাসের বুকে শুয়ে পড়ো’।
মেয়েটি প্রতিবাদ করলো
ছেলেগুলো ‘মেরিকা ও ন্যাটোর বলিষ্ঠ
কণ্ঠে ফুল ও ভ্রমরের ইতিবৃত্ত শুনালো।
মেয়েটি একা ও দুর্বল
তাই হেরে গেলো
গণতন্ত্র বিজয়ী হলো!
**********************