You are currently viewing পিঁপড়ার টোপ || স্বপন বিশ্বাস

পিঁপড়ার টোপ || স্বপন বিশ্বাস

পিঁপড়ার টোপ

স্বপন বিশ্বাস

আলোকলতার সোনালী লতা বেয়ে একটা পিঁপড়া উঠে যাচ্ছে। লাল পিঁপড়া । পেছনে আরও দুটো। বটগাছের কচি চারাটা একটু মাথা না তুলতেই আলোকলতা ঝেঁপে ধরেছে। মাথা তুলেই বা কী হবে! খেজুরগাছের ওপর কি আর বট গাছ হবে? এই সব অনাচার দেখে পাখিগুলোর ওপর খুব রাগ হয় ভোম্বলের। বটের ফল খেয়ে ইয়ে করবি তো ভালো একটা জায়গা দেখে কর। একটা গাছ গজালে জায়গাটার নাম হবে বটতলা। তা না, খেজুর গাছের ওপর ইয়ে করে দিলি। শীতের সময় বট গাছটা এমনিতেই কাটা পড়ে যাবে। তখন রসের জন্য গাছ ঝুড়তে হবে। তার আগে গাছের গোড়ার ঝোপঝাড় আর লতাপাতা, পরগছা সব কেটে পরিস্কার করা হবে। এই সব ভাবতে ভাবতে ভোম্বলের চোখ এগিয়ে যায় পিঁপড়ার বাসার দিকে। আলোকলতার ঝোপের আড়ালে একটা পিঁপড়ার বাসা। বটের কচি পাতাগুলো মুড়িয়ে বাসা তৈরী করেছে। বেশ বড় বাসা। ভোম্বলের চোখ দুটো আনন্দে চিকচিক করে ওঠে। সকাল থেকে আমগাছ, জামগাছ খুঁজে মরছে। একটা বাসা নেই। যা দুয়েকটা খুঁজে পায় তা এখনও ভাঙার মত জমেনি। জমলে দইয়ের হাঁড়ির মতো ভাঙা যায়। সাদা ধবধবে আতপ চালের ভাতের মতো পিঁপড়ার ডিম। শহরের বাবুরা তাই দিয়ে মাছ ধরে। ডিমের সাথে পাউরুটি মেশায়, মশলা মেশায়। ওসব বাবুদের কাজ। ভোম্বলের কাজ পিঁপড়ার বাসা ভেঙে ডিম সংগ্রহ করা। ডিম থেকে পিঁপড়া ছাড়ানোর কাজটা খুব ঝামেলার। ভোম্বল একটা সাদা মার্কিনের কাপড় রাখে সাথে। কলার পাতার ওপর বাসা ভেঙে মার্কিনের কাপড় ডিমের ওপর দিয়ে টান দিলেই পিঁপড়াগুলো কাপড়ের সাথে চলে আসে। তারপর ঝাড়া দিয়ে পরিস্কার করতে হয়। ডিমের সাথে পিঁপড়া থাকলে কী নাকি ঝামেলা হয়। বাবুরা পছন্দ করে না। তারা টিকিট কেটে মাছ ধরে। বড় বড় পুকুরের সব বড় বড় মাছ। রুই কাতল মৃগেল।

ভোম্বলের বাঁধা বাবু আছে। লাটুবাবু। লাটিমের মতো চালু। লোকে বলে ট্যারা লাটু। সবসময় কালো চশমা পরে থাকে। তার চোখ কখনও কেউ দেখেনি। তবু সবাই জানে ট্যারা। ভোম্বল ভাবে, নিশ্চয় লক্ষ্মী টেরা। চারিদিকে যে ভাবে লক্ষ্মী উপচে পড়ে। ভোম্বলেরও মাঝে মাঝে ট্যারা হতে ইচ্ছে করে। মনে হয কাঠি দিয়ে একটা খোঁচা মেরে চোখ ট্যারা করে ফেলে। তাতে যদি সংসারে একটু আয় উন্নতি হয়। সংসারের কথা মনে হলেই ফুলির কথা মনে হয়। আর ফুলির কথা মনে হলেই ভোম্বলের সবকিছু গুলিয়ে যায়। ফুলি ছিল ভোম্বলের বউ। যেমন সুন্দরী তেমন বাহারি। যাত্রাদলের মেয়েদের মত নাচতে জানতো, গাইতে জানতো। পাড়ার লোকে বলত ভোম্বলের বউটা ঢঙ্গি। যার-তার সাথে ঢলাঢলি করে বেড়ায়। ভোম্বল সেসব কথায় পাত্তা দিত না। ভাবতো সে বোকাসোকা মানুষ। ফুলি একটু আনন্দ করে বেড়ায়। বেড়াক। পালিয়ে তো আর যাচ্ছে না। ভোম্বল ভাবতেই পারেনি ফুলি পালিয়ে যাবে। পালিয়ে যাওয়ার পরে বুঝেছে সে আসলেই বোকা। এতো বোকা মানুষের বউ না থাকাই ভালো। তাই আর বিয়ে করা হয়নি। শুধু কষ্ট হয় দুলিটার জন্য। পিঁপড়ার ডিমের মতো ছোট্ট মেয়েটাকে রেখে পালিয়ে গেল এক মনোহারী দোকানদারের সাথে। লোকটা চুরি, মালা, আলতা, স্নো, এই সব বাড়ী বাড়ী ফেরি করে বিক্রি করতো।ফুলি সংসার করতো ভোম্বলের আর ভালোবাসত মনোহারী দোকানদারকে। লাটু বাবু সব কিছু শুনে বলেছিল, তুই আমার কাছে একদিন নিয়ে আসতি। ভালো জায়গায় ফিট করে দিতাম। একটা রুই কাতলা ঠিক তুলে আনতে পারতো। তুই একটা ভালো মাল হাত ছাড়া করে ফেললি। ভোম্বল ভাবল, লাটু বাবু ঘোরের ভেতরে কি শুনতে কি শুনেছে। তাই একটু শুধরে দিয়ে বলল, বাবু পিঁপড়ার ডিম না, আমার বউডার কথা কচ্চিলাম। লাটুবাবু ধমক দিয়ে বলল, ওই একই হল। বড়শি গাঁথতে না পারলে ওই সুন্দরী বউ কোন কাজে লাগে। দিলি তো হাতছাড়া করে। আগের থেকে বলতে পারিসনি। এখন বউ বউ করছিস। পারবি একদিন তোর ভেগে যাওয়া বউটাকে আমার কাছে আনতে? সব ঠিক করে দিতাম। এমন ভাবে ফিট করে দিতাম। কোথাও পালানোর সুযোগ পেত না।

তা তো এখন সম্ভব নয় বাবু। সে এখন পরের বউ। সে তো এখন আর আমার কথা শুনবে না। আগে থাকতি না বলে ভুল করে ফেলিচি।

তাহলে আর কী করবি। আগামী সপ্তাহে জোড়-পুকুরে মাছ মারার টিকিট কাটা আছে। ভলো দেখে পিঁপড়ার ডিম নিয়ে আসিস।

সেদিন লাটুবাবুর কথা শুনে ভোম্বলের বেশ মন খারাপ হয়েছিল। মন খারাপ হলে সে শুকলালের দোকানে গিয়ে বসে। শুকলালের মুচির দোকান। রাস্তার ধারে বসে জুতা কালি করে। শহরে ভোম্বলের সেই একমাত্র বন্ধু মানুষ। একই গ্রামে বাড়ী। ছোটবেলায় একসাথে কয়েকমাস স্কুলে পড়েছিল। স্কুলটা তাদের কপালে টেকেনি। তাদের বন্ধুত্বটা বেশ টিকে আছে। শুকলাল চালাক চতুর মানুষ। প্রতিদিন ভোরে বাক্স কাঁধে ঝুলিয়ে শহরে এসে হাজির হয়। তারপর বড় রাস্তার এই মোড়টাতে এসে চট পেতে দোকান সাজায়। পথ চলতি মানুষের পায়ের দিকে তার নজর। মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখার তার সময় নেই। পায়ের জুতা আর তার চলন দেখেই বলে দিতে পারে মানুষটা কেমন। যেন জাত জ্যোতিষি। ভোম্বল এসে বসলে সে বুঝতে পারে তার আজ মন খারাপ। কিছু বলে না। একটা চট এগিয়ে দেয় বসার জন্য। ভোম্বল বসে বসে জুতা কালি করা দেখে। কত রকম মানুষের কত রকমের জুতা সেন্ডেল। সুযোগ পেলেই ভোম্বলের কাছে খরিদ্দারের চরিত্র বিশ্লেষন করে শুকলাল। কে কী ধরনের কাজ করে, আজ জুতা কালি করে কে কোথায় যাবে সবই যেন সে বুঝতে পারে। তারপর খরিদ্দারের ভিড় কমলে ভোম্বলের সুখ-দূঃখের কথা শোনে। 

শুকলালের দোকানের ঠিক উল্টো পাশে লাটু বাবুর পাঁচতলা অফিস বাড়ী। সেখানে বড় বড় গাড়ীর আসা যাওয়া চলে। বাড়ীর গেট খুলে দেয়া, গাড়ীর দরজা খুলে দেয়া, এই সব কাজের জন্য আট দশ জন তাগড়া জোয়ান দারোয়ান আছে। তারা সবাই ভোম্বলকে চেনে। যদিও তারা ভোম্বল নামটা জানে না। তারা ডাকে ‘পিঁপড়ে’ বলে ডাকে। প্রথম প্রথম শুনে খারাপ লাগতো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। শুকলাল বলে, তুই লাটু বাবুকে এবার ছাড়। লোকটা অনেক ধান্দাবাজ। আর তোর ওই পিঁপড়ের বাসা ভাঙা বন্ধ কর। ওইটা পাপ কাজ। কত মায়ের বুক থেকে ডিম কেড়ে আনিস। ওই সব ছেড়ে একটা ভালো কাজবাজ কর। আবার একটা বিয়ে কর। বিয়ে করে সংসারী হ।

কথাগুলো ভোম্বলের ঠিক পছন্দ হয় না। লাটুবাবু বকাঝকা যাই করুক ভালোও তো বাসে। এতো বড় একটা মানুষ তার সাথে কথা বলে, তাতেই সে ধন্য। লাটুবাবুর অফিসে বেশিরভাগই মেয়েরা কাজ করে। তারা একজন আরেকজনের থেকে সুন্দরী। পুরানো মেমসাহেবরা সবাই তাকে চেনে। তবে প্রতিবারই অনেক নতুন নতুন মেমসাহেবদর সাথে দেখা হয়। অল্প বয়সী। তারাও কীভাবে যেন জেনে যায়, সে পিঁপড়ে। তাকে দেখে হাসাহাসি করে। ভোম্বল এসে শুকলালের কাছে সেই সব গল্প করে। শুকলাল বলে তোর ওই মেমসাহেবরাও একেকটা পিঁপড়ের ডিম। দেখিস না পিঁপড়ের ডিমের মতো কেমন সব চকচকে চেহারা। তাই নিয়ে দুই বন্ধুতে হাসাহাসি করে। শুকলাল বলে, তোর পিঁপড়ের ডিমের টোপ গেলে বড় বড় রুই কাতলা। আর লাটুবাবুর ডিমের টোপ গেলে হাঙ্গর কুমির এই রকম সব বড় বড় জন্তু জানোয়ার। 

কথাটা শুনে ভোম্বলের বুকের ভেতর কেমন যেন একটা কষ্ট মোচর দিয়ে ওঠে। এমন সুন্দর সুন্দর মেমসাহেবদের হাঙর কুমিরে খাবে, এমন রসিকতা সে মেনে নিতে পারে না।

ভোম্বল বলে, চল লাটুবাবুকে ধরে বিদেশ চলে যাই। শুকলাল বলে দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়েও তো সেই জুতা কালি করেই খাবো। তাহলে নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার কী দরকার। আর তুই বিদেশে গিয়ে কী করবি? সেখানে তোর পিঁপড়ের ডিম কে কিনবে? তার থেকে এই পাপকাজটা বন্ধ করে একটা ভালো কোন কাজ শিখে নে। তারপর বিদেশ গিয়ে একটা সাদা মেম বিয়ে করিস। 

ভোম্বলের তখন দুলির কথা মনে পড়ে। মেয়েটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল। ষোল পেরিয়ে এবার সতেরোতে পা দিয়েছে। মায়ের মতো ধিঙ্গি হয়েছে। সারা পাড়া দাঁপিয়ে বেড়ায়। সেই দুলিও পছন্দ করে না পিঁপড়ার ডিম ভাঙা। তা নিয়ে ভোম্বলের মন খারাপ হয় না। কিন্তু শুকলাল যখন বলে, ‘পাপকাজ’ তখন ঠিক মানতে পারে না। বলে – কেন, মুরগীর ফার্মগুলো প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ডিম বিক্রি করছে। লক্ষ লক্ষ মাছের পোনা মেরে সাবাড় করে দিচ্ছে তাতে পাপ হয় না। আর আমি পিঁপড়ের ডিম ভাঙলে পাপ হয়। তোরা যে মরা গরুর চামড়া ছাড়াস। মানুষের জুতা পরিস্কার করিস সেটা বুঝি খুব ভালো কাজ? পুন্যের কাজ?

শুকলাল কোন উত্তর দেয় না। বুঝতে পারে ভোম্বল খুব ক্ষেপেছে। কথা বাড়ানো ঠিক হবে না। ভোম্বলও আর কথা বাড়ায় না। সেদিনের মতো উঠে পড়ে। তবে মনে মনে ঠিক করে ফেলে, এবার সুযোগ বুঝে লাটুবাবুকে দুলির কথাটা বলবে। লাটুবাবু ইচ্ছে করলেই মেয়েটাকে যে কোন একটা কাজে ঢুকিয়ে দিতে পারবে। লাটুবাবু ইচ্ছে করলে মেয়ের একটা বিয়ের ব্যবস্থাও করে দিতে পারে। শহরে জামাই বাড়ী হবে। ভোম্বল তখন ঝাড়া হাত-পা। মাঝে মাঝে জামাই বাড়ী বেড়াতে আসবে। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ভোম্বল বাড়ী ফেরে। 

পরের বার ডিমের চালান নিয়ে যাওয়ার সময় দুলিকেও সাথে নিয়ে নেয়। লাটুবাবু দুলিকে দেখে তো মহাখুশি। বলে, তোর এতো সুন্দরী একটা মেয়ে আছে আর তুই এই মেয়েটাকে ছাই চাপা দিয়ে রেখেছিস। ওকে আমি সিনেমার নায়িকা বানাবো। 

ভোম্বল বলে, ও মেয়ে ওর মায়ের মতো হয়েছে। সারা গাঁ নেচে গেয়ে বেড়ায়। ওসব লাইকা টাইকা কিছু লাগবে না। একটা চাকরানীর কাজটাজ কিছু একটা দিলেই হবে। মা-হারা মেয়েটা একা একা বড় হয়েছে। এখন একটা ছেলে দেখে চার হাত এক করে দিতে পারলেই আমার শান্তি। 

লাটুবাবু ধমক দিয়ে বলে, ও কেন চাকরানির কাজ করবে। ওকে আমি নায়িকাই বানাবো। তোর মেয়ে মানে আমারও মেয়ে। আমার অফিসের মেয়েরা আছে ওদেরকে বললেই গ্রুমিং করে দেবে। কয়েকদিন পরে দেখবি তোর নিজের মেয়েকে তুই নিজেই চিনতে পারবি না। তবে মেয়েকে দেখার নাম করে ঘন ঘন অফিসে আসবি না। ওর এখন অনেক ব্যস্ততা থাকবে। তাছাড়া সাংবাদিকরা যদি জানতে পারে ও তোর মেয়ে, তাহলে ওর ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে। ডিমের দরকার হলে আমি তোকে খবর পাঠাব। এখন কিছু টাকা নিয়ে যা। তারপর মেয়ে ভালো কাজ করলে তোর আর টাকার অভাব থাকবে না। 

লাটুবাবুর কথা শুনে দুলি খুব খুশি। লাটুবাবু দুলির গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বুকের কাছে টেনে নিয়ে আদর করে। খুশিতে দুলির চোখ চিক চিক করে ওঠে। সেই চোখের ভেতরে কত স্বপ্ন যে খেলা করে তা ভোম্বল ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। শুধু বুকের ভেতর কেমন যেন একটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মেয়েটাকে রেখে একা বাড়ী ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না। তবু মেয়ের সুখের কথা ভেবে ভোম্বল বাড়ির পথে পা বাড়ায়।

লাটুবাবুর কাছ থেকে টাকাগুলো গুনে নেয়া হয়নি। বাড়ি ফিরে গুণে দেখে দশ হাজার। এতো টাকা একসাথে ভোম্বল এর আগে কখনও দেখেনি। বালিশের ভেতরে টাকাগুলো ঢুকিয়ে দিয়ে ভোম্বল ঘুমিয়ে পড়ে। বাইরে তখন টিপ বৃষ্টি। ঘরের চাল দিয়ে, জানালার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি ঢুকছে ঘরে। তারপর কোথা থেকে যেন একটা নদীর স্রোত এসে ঢুকে পড়ে ঘরের ভেতর। একটা দমকা বাতাসে জানালা দরজা সব খুলে যায়। ভোম্বল টাকার বালিশটা বুকের সাথে চেপে ধরে স্রোতের ভেতর ভাসতে থাকে। সামনে একটা কুমির। দুলিকে কামড়ে ধরেছে। দুলি চিৎকার করে বাবাকে ডাকছে। ভোম্বল স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে। দুলির কাছে যেতে পারছে না। এমন সময় একটা বিশাল হাঙর লাফ দিয়ে উঠল। কুমিরের মুখ থেকে তখন দুলি হাঙরের মুখে। কুমিরটা চেষ্টা করছে দুলিকে ফিরে পেতে। তবে হাঙরের কাছে ভিড়তে পারছে না। হাঙরটা আবার একটা লাফ দেয়। মনে হয় যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। ভোম্বলের ঘুম ভেঙে যায়। 

ভোম্বল বালিশের ভেতর থেকে টাকাগুলো বের করে। তারপর সেগুলো সাথে নিয়ে ছুটতে থাকে শহরের দিকে। সকালের বাসে দেখা হয়ে যায় শুকলালের সাথে। বন্ধুকে সব কিছু খুলে বলে। শুকলাল শুনে আঁতকে ওঠে। তুই টাকার লোভে মেয়েটাকে বিক্রি করে দিলি। একবার আমাকে জানালি না। 

আমি তো বিক্রি করিনি। শুধু একটা কোন কাজে ঢুকিয়ে দিতে বলেছিলাম। এখন আমি টাকা ফেরত দিয়ে ঠিকই দুলিকে ফিরিয়ে আনবো। 

ভোম্বল বাস থেকে নেমে লাটুবাবুর অফিসের দিকে হাঁটা দেয়। শুকলাল চট বিছিয়ে দোকান সাজায়। ওপারে লাটুবাবুর অফিস থেকে একটা শোরগোল ভেসে আসে। ভোম্বলের গলা শোনা যায়। তাকিয়ে দেখে দুজন ষন্ডা মার্কা দারোয়ান ভোম্বলকে টেনে-হিচড়ে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। শুকলাল অপেক্ষা করতে থাকে ভোম্বলের ফিরে আসার। ভোম্বল ফেরে না। দুলিও ফেরে না। শুকলাল অপেক্ষা করতে করতে দিন ফুরিয়ে আসে। দোকান গুছিয়ে বাড়ী ফেরার পথে লাটুবাবুর অফিসের সামনে একটু থামে। একজন দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল, তুমি পিঁপড়ের কোন খবর জানো? লোকটা কী বুঝলো কে জানে। দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলল, বাবু শুধু পিঁপড়ের ডিম কেনে। ডিমের সাথে পিঁপড়ে দেখলে ভিষন ক্ষেপে যায়। তুমি যদি ডিম বিক্রি করতে চাও তবে ভালো করে পিঁপড়ে ছাড়িয়ে আনবে। ডিম কেনার পর পিঁপড়ে ছাড়ানো অনেক ঝামেলার কাজ। 

শুকলাল বলল, ওসব পাপকাজ আমি করি না। আমি ওই রাস্তার ওপারে জুতো সেলাই করি। 

রাস্তার ওপর তখন একটা সাদা মার্কিন কাপড় ধুলো-ময়লায় লুটোপুটি খাচ্ছে। শুকলালের মনে পড়ে, ভোম্বল এমন একটা সাদা কাপড় সব সময় সাথে রাখতো ডিম থেকে পিঁপড়ে ছাড়ানোর জন্য। রাস্তায় এমন ছেঁড়া কাগজ, কাপড়ের টুকরো, কতকিছুই গড়াগড়ি খায়। তবু শুকলাল ঠিক চিনে ফেলে ওটা ভোম্বলের কাপড়।

*************************************