টুকরো কবিতা
ঋতো আহমেদ
[১]
পাখি যাচ্ছে পাখি যাচ্ছে পাখি যাচ্ছে।
বৃষ্টির ভেতর দিয়ে উড়ে।
পাখিদের বাড়ি নেই। কিন্তু আমার পাখিটার
আছে। অবশ্য—
এ কথা আমি ভাবলেও
পাখিটা হয়তো জানে
গরাদ।
[২]
তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে—
ঝমঝম করে ট্রেন ছোটে,
বুকের উপর দিয়ে দগদগে লাল
চাবুক মারতে মারতে
ভাঙাচোরা পুরো একটা শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়।
তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে—
কী রকম যেন ধক্ধক্ করে জগত্, মনে হয়
নিঃশব্দে ফেটে পড়বে,
এক কুচি আলোও বেরুতে পারবে না,
যে আলোয় দেখে ফেলবে আমার
বিষভাণ্ডের মুখ।
তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে—
বিশ্বাস করো,
এইসবই হয় আমার।
[৩]
আজ, সারাটা দিন ভূমণ্ডল আমার
জানালায় দাঁড়িয়ে কেঁদেছে। কিন্তু—
আমি সেই কান্নার ছিটেফোঁটাও
এড়িয়ে থেকেছি।
কে জানে এই বয়সে কী যেয়ে কী হয়!
[৪]
দেখতে দেখতে চারদিকে জঙ্গল হয়ে গেছে।
এরই মধ্যে মেয়েটা এলো, ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথতে।
খোঁপায় বেঁধে রাঁধা হতে। যদি কেউ আসে, কৃষ্ণ হয়!
মেয়েটি জানতো না, যে কাছেই
একটা বাঘ ঘাপটি মেরে আছে।
[৫]
ভোরের দিকে আমার বয়স লেখা ছিল জলের তলে।
আর এখন সমগ্র দিনের শেষে সমস্ত জল
উড়ে গেছে।
বয়সও কোথাও নেই।
[১০]
মাথাটা নুইয়ে রাখো ভূগর্ভে।
জোরে আরও জোরে ঢুকিয়ে দাও।
কী দেখতে পাচ্ছ? জ্বালা?
কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল।
চল্লিশ বছরের লালা।
[১১]
হাঁটতে হাঁটতে বয়স ধরে এলো।
এখন তো আকাশ ছাওয়া নাড়ি।
ক’টা গুনবে তুমি? ক’টাইবা গুনবার পর
মনে পড়বে তোমার
ব্রহ্মার-পুত্রের তীরে, পৃথিবীর বাড়ি।
[১২]
হাত থেকে সশব্দে পড়ে গেল প্রেম। এখন??—
কার সঙ্গে শুবে ও? কার বুকের রক্তে ফেলবে লালা?
কিচ্ছু বুঝি না, আমার তো চাই-ই-চাই, আজ না-হোক কাল, ভোরবেলা।
[১৩]
মাথার ডান দিকটায় আজকে নির্ঘাত স্টোন এজ চলছে।
হাতুড়ি বাটাল দিয়ে কাটা হচ্ছে একের পর এক পাথর।
সকাল থেকেই টুকটাক-ঠুকঠাক করে নির্মাণ হচ্ছে গুহা।
যার দেয়াল হবে ঘূর্ণায়মান লীলাক্ষেত্র। কারণ একটু পর
সেখানে ভ্যান গঘ আসবেন তাঁর স্টারি নাইট্স আঁকতে—
পিকাসো আসবেন তাঁর কিউবিজম নিয়ে, আর দালি? হ্যাঁ
দালি তো এখানেই খুঁজে পাবেন তাঁর পারসিস্ট্যান্স অব
মেমোরি। ততক্ষণে, সাত নম্বর শতাব্দী শেষ হয়ে গেলে
শুরু হবে জগত্সংসার,—নূহের প্লাবন,—শীতের আগুন—
আর তুমি মাথাটা তুলে গিলে নেবে একটা প্যারাসিটামল।
[১৪]
আগেরবার এইখানে ছিল জলমণ্ডল। জলের তলায় ছিল তোমাদের বাড়ি—
আমরা তখন মহাজগতের খোঁজে চোখ রাখতাম টেলিস্কোপে। রাত হলেই
দেখতাম ভারী নিতম্ব সুডৌল স্তন আর ওষ্ঠেরা পড়ে আছে এদিক-সেদিক
আশ্চর্য দুই জঙ্ঘা দুদিকে ঈষৎ প্রসারিত। মাঝ বরাবর ভয়ানক কৃষ্ণবিবর!
আসলে, ওই বয়সে তোমাদের বাড়িটাই ছিল আমাদের ঘূর্ণায়মান স্বর্গঙ্গা।
***********************************