You are currently viewing পিপুফিশু || আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু || আলী সিদ্দিকী

পিপুফিশু

আলী সিদ্দিকী

বন্ধু মেলে বন্ধু হলে

আমার বন্ধু জন অরসিনি যেন এক ঝড়ো হাওয়া। তার কথা বলা আর চলার গতির মধ্যে পার্থক্য মেলা ভার। কথা বলার সময় তার মুখমন্ডলে উছলে ওঠে রক্তছাপ। লালচে ঠোঁটজোড়া যেমন হয়ে ওঠে রক্তাভ তেমনি সুঁচালো। ঈষৎ চঞ্চল বাদামী চোখজোড়া বেদমভাবে ঘুরপাক খায় আর পিটপিট করে। ক্রমশঃ চওড়া হতে থাকা মাথায় দ্রুত হাত বুলিয়ে অনর্গল কথা বলা তার স্বভাবগত। অনেককে দেখি সে কথা বলার সময় নিস্পৃহতা দেখায় কিংবা ’এক্সকিউজ মি’ বলে সরে যায়। তার অনর্গল কথার তোড়ে কেউ কেউ যে বিরক্ত হয় তা বুঝেও সে থামে না। বরং এমন ভাব দেখায় যেন ওতে তার কিছু আসে যায় না। অবশ্য অনর্থক কথা বলে না সে। যা বলে তার যথাযথ কারন থাকে অবশ্যই। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ কিংবা টিভি নিউজের সূত্রে হোক আলোড়িত ও বিতর্কিত বিষয় নিয়েই জন কথার অবতারনা করে থাকে। উদ্দিষ্ট সংবাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নিজের মতামতটুকু জানিয়ে অন্যদের প্রতিক্রিয়া দেখাটাই হচ্ছে তার মূল উদ্দেশ্য। তার মতামতের সাথে অন্যদের অভিমতের সামঞ্জস্য পেলেই আনন্দে কলবল করে ওঠে সে। তখন কথার তুবড়ি ফোটে।
এটাইতো সত্য, উচ্ছ্বসিত গলায় বলে ওঠে সে, এটাইতো হওয়া উচিত।
অবশ্য তার কথা বলার আর আমার শোনার অবকাশ খুবই কম। কারণ দু’জনই এমন এক কাজ করি যেখানে কাজের সময় কথা বলাটা এক ধরণের অপরাধ। ব্রেক টাইমে, ছুটির সময়ে কিংবা কাজে ঢোকার আগ মুহূর্তে দুদ’ন্ড কথা বলার ফুরসত মেলে। আর তার পুরোটাই দখল করে নেয় জন। তাতে অবশ্য আমার খারাপ লাগে না। বরং ওর কথা বলার অপূর্ব ভঙ্গীটা আমি উপভোগ করি।
জন অরসিনির জীবনের ঘটনা প্রবাহে প্রবেশের আগে ওর সাথে আমার পরিচয়ের সূত্রপাতটুকু আপনাদের জানানো দরকার।

তীব্র তুষারপাতের দু’দিন পর সকালবেলায় আমি হাজির হলাম এক চাকুরীদাতা সংস্থার অফিসে। অফিসটি আমার বাসা থেকে খুব একটা দূরে নয়। তারপরও বরফে আচ্ছাদিত পিচ্ছিল সড়ক পেরিয়ে পার্কিং লটে গাড়ী পার্ক করে অফিসের দরোজায় পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হলো। বাতাসের প্রচন্ড হাঁড়কাপুনে ঝাপটা সামলে একপ্রকার ছুটে এসে দাঁড়ালাম লিফটের সামনে। লিফটের ভেতরে ঢোকার পর আরামবোধ করলাম। সেন্ট্রাল হিটিং সিস্টেমের সুবাদে আমার কাতর আঙুলগুলো সতেজ হয়ে উঠলো। পাঁচতলায় চাকুরীদাতা সংস্থাটির অফিসের রিসেপশন কক্ষে ঢুকে একটু অপ্র¯ত্তত হলাম। দেখি রিসেপশনের সামনে মানুষের দীর্ঘ সারি। আফ্রিকান, আমেরিকান, হিস্পানীজ আর এশিয়ান নারী পুরুষেরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে সুশৃঙ্খলভাবে। সবাই চাকুরীপ্রার্থী। এন্ট্রি লিস্টে নাম লিখে আমিও সে লাইনে এসে দাঁড়ালাম। রিসেপশনিস্টের কাছ থেকে ফরম নিয়ে তা পূরণের জন্যে একে একে সবাই গিয়ে ঢুকছে পাশের একটা ঘরে। আমার সামনে এখনো সাত আটজন দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাত বাড়িয়ে সংস্থাটির একটি বুকলেট টেনে নিলাম। কারন শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে একপ্রকার অস্বস্তিবোধ করছি। বুকলেটটা উল্টেপাল্টে দেখছি। ওতে শুধু সংস্থার কার্যক্রমের ব্যাপক ফিরিস্তি দেয়া আছে। আছে নানান কন্ডিশনের দীর্ঘ ব্যাখ্যা। এমন সময় পেছন থেকে মৃদু একটা ধাক্কা খেলাম। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি এক শ্বেতাঙ্গ ভদ্রলোক মুখে দুঃখিত ভাব ফুটিয়ে তাকিয়ে আছে।
সরি, চোখাচোখি হতেই বললো।
ইটস্ ওকে, আমি তাকে আশ্বস্ত করি। আমি আবার বুকলেটে মনোনিবেশের চেষ্টা করি।
তুমি কি এখানে এই প্রথম এসেছো? পেছন থেকে ভদ্রলোক প্রশ্ন করলেন।
নো, একটু অযাচিত মনে হলো তার প্রশ্নটি, শ্বেতাঙ্গরা সহজে আগ বাড়িয়ে কথা বলে কদাচিত, ওর কথা শুনে অমায়িক মনে হলো। তাই সহজ কন্ঠে বললাম, সেকেন্ড টাইম।
আজকেসহ আমাকে প্রায় আটদশবার আসতে হলো, সে হাতেধরা পলিথিন ব্যাগটা পাশের একটা খালি টেবিলে রাখলো বিরস মুখে, আমার জীবনটা বরবাদ হয়ে গেলো, টেম্পরারী কাজ করতে করতে ঘেন্না ধরে গেছে। একটু থেমে পকেট থেকে চিরুনী বের করে মাথায় পাতলা হয়ে আসা সোনালী চুলগুলো বিন্যস্ত করলো সে ।
আমার সামনে দাঁড়ানো আফ্রিকান আমেরিকান মহিলার ডাক পড়াতে আমাকে এগোতে হলো। ভদ্রলোক ত্রস্ত হাতে ব্যাগটা তুলে নিয়ে এগিয়ে আসে। ওর আপন মনে কথা বলার ভঙ্গীটা আমার কাছে অদ্ভূত মনে হলো। আক্ষেপের স্বরে বলে যাওয়া তার কথামালায় মিশে আছে বেদনাবোধ আর এক ধরনের অসহায়ত্ব। অবশ্য বেশভূষায়ও ফুটে উঠছে তার দীনতা। রঙচটা খাকি প্যান্টের ওপর পরেছে ততোধিক রঙচটা একটা টি-শার্ট, সাথে পুরনো হয়ে ওঠা একটা কলাম্বিয়া জ্যাকেট। আর পায়ে কিছুটা চাল চামড়া উঠে যাওয়া স্নিকার। কিন্তু মুখমন্ডল একেবারে চকচকে, ঝকঝকে। তার গা থেকে কোলনের সুবাস এসে নাকে লাগলো।

মোহাম্মেদ!
সঙ্গে সঙ্গে লাইনে দাঁড়ানো এবং আশপাশের চেয়ারে বসা ও দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো ঝট করে আমার দিকে তাকালো। গা সিরসিরে দৃষ্টিবাণে আমি বুঝি কুকঁড়ে গেলাম। আমি কারো দিকে তাকাতে পারলাম না। আমার প্রথম কিংবা লাস্ট নাম মোহাম্মদ না হওয়া সত্ত্বেও রিসেপশনিষ্ট যে ইচ্ছাকৃতভাবে মিডল নাম ধরে ডেকেছে তা তার চাহনিতেই প্রকাশ পাচ্ছে। কারন এখানে কখনো মিডল নাম ধরে ডাকার রেওয়াজ নেই। আর এটা ভেবেই আমার রাগ চড়ে গেল। আমি রিসেপশনে এগিয়ে গিয়ে সরাসরি তাকাই হাঁড়গিলা টাইপের মহিলার দিকে।
– মাই ফার্স্ট এন্ড লাস্ট নেম ইজ নট মোহাম্মদ ম্যাম, হোয়াই য়্যু কল মাই মিডল নেম? আমার গলায় ক্ষোভের ছোঁয়া।
– হোয়াটস্ রং উয়িদ দ্যাট?
– য়্যু ডিড ইট অন পারপাস, মাই নেম ইজ আতিক হোসেন, য়্যু হ্যাভ টু কল মি আতিক অর হোসেন-
– হোয়াট ডু য়্যু মীন? খনখনে গলায় একপ্রকার খেঁিকয়ে ওঠে সে।
– ইটস ক্লিয়ার, আমার পেছনে দাঁড়ানো লোকটা এগিয়ে এসে জবাব দিলেন। তিনি বুঝিয়ে দিলেন মহিলার ইচ্ছাকৃত কাজটি আমাকে বিব্রত করেছে। এবং এরকম করা তার মোটেও উচিত হয়নি।
– সরি মি. আতিক, এ সময় ভেতর থেকে আমার পূর্ব পরিচিত মি. শন রায়েলি এগিয়ে এসে ফরম ধরিয়ে দিলেন হাতে।
– থ্যাঙ্কু মি. – এগিয়ে আসা ভদ্রলোকের দিকে আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম
– জন অরসিনি – অমায়িক হেসে আমার হাতটা পুরে নিলো তার চওড়া হাতে, আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি -।
– ঠিক আছে।

ফরম নিয়ে আমি একটা বড়োসড়ো কনফারেন্স রুমে ঢুকে খুঁজে পেতে চেয়ার নিয়ে বসি। মনটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল। সেপ্টেম্বর ইলেভেন-এর পর থেকে আমেরিকার সর্বত্র এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে চলেছে। পত্রিকার পাতায় এ ব্যাপারে যথেষ্ট লেখালেখি হচ্ছে এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। খুবই নীরবে, অঘোষিতভাবে ’মোহাম্মদ’ নামধারীদের নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। উগ্র মৌলবাদীদের বালখিল্যতার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আমেরিকার সমাজজীবনে মুসলিম নামধারীদের জন্যে সৃষ্টি হয়েছে ঘৃণামিশ্রিত এক সন্দেহপ্রবণতা। যে কারণে ‘মোহাম্মদ’ নামটি উচ্চারিত হবার সাথে সাথে সকলে ভ্রূকুঞ্চিত  করে তাকায়। যেমন এ মুহূর্তে সকলে তাকালো আমার দিকে। যা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। কিন্তু কি আর করা ! আগামী কয়েকটি প্রজন্মকেই এ ধরনের ভ্রূকুটি সহ্য করে যেতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

ফরমটা উল্টেপাল্টে দেখি। একগাদা ইনফরমেশন দিতে হবে। আর তা করতে কমপক্ষে এক ঘন্টা লেগে যাবে। এরপর ডাকা হবে ইন্টারভিউয়ের জন্যে। তাতেও হয়তো লেগে যাবে আরো একঘন্টা। যা হোক কাজের যখন দরকার তখন সময় তো দিতেই হবে। সেপ্টেম্বর ইলেভেন-এর পর থেকে একের পর একচাকুরী বদলাতে হচ্ছে। কোম্পানীগুলো সহজে স্থায়ী করে না। মূলতঃ এজেন্সীর মাধ্যমে চাকুরীতে ঢোকা ছাড়া উপায় নেই। আবার এসব টেম্পরারী চাকুরীর কোন ভবিষ্যতও নেই। যখন তখন ছাটাঁই হতে হবে ধরে নিয়ে শুধু বর্তমানে বেঁচে থাকার জন্যে কাজ করতে হচ্ছে। লং টার্ম, শর্ট টার্ম টেম্পরারী শর্তের জোয়াল কাঁধে নিয়ে কোন রকম বেনিফিট ছাড়াই দু’ তিনটা কাজ করেছি এতোদিন। শেষ চাকুরী থেকে লে-অফ হবার পর গত মাস তিনেক ক্যাশে কাজ করছি আর আনএমপ্লয়মেন্ট তুলছি। বাধ সেঁধেছে এসাইলামের এপ্লিকেশন। তাই আজকে আবার ধর্ণা দিয়েছি এই অফিসে। কারন ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে হলে একটা নিয়মিত (অস্থায়ী হলেও আপত্তি নেই) চাকুরী থাকা দরকার। এদেশের সরকার ফরেনারদের তো আর জামাই আদরে খাওয়ানোর জন্যে আনছে না, আনছে ট্যাক্স কামানোর জন্যে। ট্যাক্স না দিয়ে ক্যাশে চাকুরী করে, আনএপ্লয়মেন্ট খেয়ে তো আর নাগরিকত্ব চাইতে পারো না। অতএব ট্যাক্স ডিডাক্টএবল পে- চেকঅলা চাকুরী খুঁজে তোমাকে নিতে হবে। চাকুরীর বাজার মন্দা হলেও এজেন্সীগুলো তোমাকে চাকুরী পাইয়ে দেবার জন্যে চৌকষ অফিস খুলে বসে আছে। কোন রকম বেনিফিটবিহীন এসব চাকুরীর কোন ভবিষ্যত না থাকলেও বর্তমান তো আছে। অগত্যা এখানেই ধর্ণা দিতে হয়, দিতে যে হবে তাও ওদের জানা, সবকিছুই তো ছকে বাঁধা। অবশ্য শুধু ইমিগ্রান্ট নয়, এখন আমেরিকান নাগরিকদেরও দলে দলে ধর্ণা দিতে হচ্ছে এজন্সীতে।
জন অরসিনি তাদেরই একজন।
ওর কথা মনে হতেই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালাম দরোজার ওপারে। জন এখনো দাঁড়িয়ে আছে রিসেপশনে। সে হাত নেড়ে কথা বলছে বেদম। কি জানি কি কথা। আমি ফরম পুরণে মনযোগ দিলাম। গত কয়েক বছরে একই তথ্য এতোবার লিখেছি যে, এখন তা লিখতে বিরক্তবোধ করছি। কিন্তু সকল অসহনীয়তাকে সয়ে নেয়ার অপর নামই বেঁচে থাকা।
ফরমটা পূরণ করে ফিরে এলাম রিসেপশনে। আগের সেই মহিলা, নেম ট্যাগে লেখা, র‌্যাচেল, আমাকে দেখে গম্ভীর হয়ে হাত বাড়িয়ে এপ্লিকেশনটা নিলো। তারপর কোনরকম অভিব্যাক্তি প্রকাশ না করে জানিয়ে দিলো, ইন্টারভিউয়ের জন্যে অপেক্ষা করো।
’থ্যাঙ্ক য়্যু’ বলে আমি আবার ফিরে এলাম কনফারেন্স রুমে। দেখি জন এসে আলাপ জুড়ে দিয়েছে চকচকে যৌবনা এক আফ্রিকান আমেরিকান যুবতীর সাথে। চোখাচোখি হতেই ইশারায় কাছে ডাকলো। আমি এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে নিলাম।
আতিক, ও হলো সিন্ডি – জন পরিচয় করে দিলো।
হাই, কালো সুন্দরী হাত বাড়িয়ে দিলো।
নাইস টু মীট য়্যু – আমিও হাত বাড়িয়ে সৌজন্য প্রকাশ করলাম।

আতিক, সিন্ডি ওর এক্স বসের ব্যাপারে বলছিলো, জন আকর্ণ হাসি ছড়িয়ে বলতে লাগলো, বসের ম্যানিয়া হলো মেয়েদের ব্রেস্ট লাইনারের দিকে তাকিয়ে থাকা আর যখন তখন নিতম্বে হাত বুলানো। আর তাতে একদিন বিপত্তি ঘটে গেলো, সেটাই মজার – বলে সিন্ডির দিকে তাকালো, হ্যাঁ বাকীটা শেষ করো।
সিন্ডি ঝিলিক দিয়ে হাসলো। তখন বাদামী চোখজোড়া নেচে উঠলো। লিপ গ্লসে টসটসে ঠোঁটজোড়ায় মৃদু তরঙ্গ তুলে বললো, ওর অবস্থা দেখে আমরা ঠিক করলাম একটু নাকানি দেই। প্ল্যান মত একদিন লাঞ্চ আওয়ারে আমি তার চেম্বারে ঢুকি কাজের উছিলায়। সে আমার আঁটসাাঁট পোষাক দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো আধখোলা বুকের দিকে। আমি কাছে এগিয়ে গেলে সে উঠে আমার নিতম্বে হাত দেয়। আর আমি এক টানে কাপড় ছিঁড়ে ওকে টেনে আমার ওপর ফেলি। সে প্রথমে ভড়কে গেলেও পরক্ষণে আমাকে ঝাপটে ধরে। এ সময় আমি চিৎকার করতে থাকি। অমনি ঘাপটি মেরে থাকা বন্ধুরা ছুটে আসে। একজন ঝটপট ছবিও তুলে ফেলে।
তারপর? জন সাগ্রহে বলে।
কিছুদিন ব্ল্যাকমেল করলাম, পরে দেউলিয়া হয়ে অফিস গুটিয়ে হাওয়া হয়ে গেলো, বলে ঘনকালো পাপড়ি নাচিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাসলো সিন্ডি।
জিনিসটা কি ভালো করেছো? জন একটু যেন আহত হলো, ওতো তোমাকে জোর করেনি।
আসলে মজা করতে চেয়েছিলাম, জনের ভাবান্তর দেখে সিন্ডির গলায় অনুশোচনা ফোটে।
একজনকে ফতুর করে দেবার মজা! আমি অস্ফুটে বললাম, তোমরা পারোও বটে! মানুষের বলিহারি আনন্দ বিলাস!
তা তোমার বয়ফ্রেন্ড এখন কোথায়? জন প্রসঙ্গ পাল্টায়।
তুমি স্ট্যানলির কথা বলছো? সিন্ডি জনের দিকে তাকায়।
হ্যাঁ -।
হি ইজ নট মাই রয়ফ্রেন্ড এনি মোর – চোখ নামিয়ে বিষন্নতা ফোটায় সিন্ডি।
কি হলো আবার? অবাক কন্ঠে বলে জন, লাস্ট ইয়ারে না তোমাদের মিটমাট করে দিলাম?
ও বদলাবে না জন, গলায় উষ্মা প্রকাশ করে সিন্ডি, ক’দিন ভালো ছিলো, তারপর যে কে সেই। তাছাড়া প্রতিদিন টর্চার –
সিন্ডি মাথা তুলে পেছনের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। আমরা মাথা ঘুরিয়ে দেখি মি. শন রায়েলি এগিয়ে আসছেন। আমি সোজা হয়ে বসলাম।
মি. আতিক এন্ড মি. জন কাম উইদ মি – মি. রায়েলি এবাউট টার্ণ করার সাথে সাথে হাত ইশারায় সিন্ডির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা পিছু নিলাম। সিন্ডি হাসিমুখে ’গুডলাক’ বললো। ততক্ষণে আমরা রায়েলির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছি।
মুখোমুখি বসে মি. রায়েলি ইন্টারভিউয়ের বদলে আমাদের দু’জনকে কাজের বর্ণনা দিলেন। একটি মাল্টিমিলিওনার ইলেকট্রনিক ম্যানুফেকচারিং কোম্পানীতে লং টার্ম টেম্পরারী প্রোডাকশন এসোসিয়েটস। মর্ণিং শিফট, আর্লি মর্ণিং থেকে তিনটা। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারনে ওরা আমাদের রিজ্যুমি একসেপ্ট করেছে। আগামী কালই জয়েন করতে হবে। তবে ম্যানেজমেন্ট খুবই কড়া। কাজের সময় কথাবার্তা একেবারে বন্ধ। কোম্পানীর হিউম্যান রিসোর্স পারসোন্যাল কাল সকালে ব্রিফিং দেবে। ঠিক আটটায় কনফারেন্স রুমে হাজির থাকতে হবে। সবশেষে বললেন, অলরাইট ?
কিছু পেপারে সাইন করে আমরা বেরিয়ে এলাম।
কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকে দেখা গেলো না। লিফট বেয়ে নিচে নামতেই কনকনে ঠান্ডা প্রচন্ড কামড় দিলো। তার তোয়াক্কা না করে জন গজগজ করে বললো, স্টুপিড লাইফ! লং টার্ম টেম্পরারী লাইফ!
টেক ইট ইজি জন, আমি সাত্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করি, আমরা যে কাজ করতে পারছি এটাই বা মন্দ কি? কত জনেই তো এখন জব পাচ্ছে না।
তা ঠিক, নিজের গাড়ীর দিকে যেতে যেতে বললো জন, কাল আটটায় দেখা হচ্ছে।
ঠিক আছে কাল কথা হবে জন, আমি আমার গাড়ীর দিকে এগোলাম। বাতাস তখন তীব্র শব্দে শিস বাজালো, সাঁ সাঁ সাঁ।  

(চলবে)

*********************