অনির্বাণ সিরিজ কবিতা
অনিরুদ্ধ রনি
অনির্বাণ- ১
অনির্বাণ!
আজ কতদিন হয়ে গেলো তোমাকে দেখি না,
কতদিন হয়ে গেলো তোমার মুখে আমার ডাক নামটি শুনি না,
স্পর্শ করিনা তোমার হাত…
গত ক’দিন তপ্ত রোদে সব শুঁকিয়ে যাচ্ছে,
অথচ, আমার চোখের কোন জল শুকোয়নি একবিন্দুও,
মানুষ কত কিছু কত সহজে ভুলে যায়,
আর আমি কিছুতেই তোমাকে ভুলতে পারছি না,
আচ্ছা অনির্বাণ!
এই কি বেঁচে থাকা? নাকী ইশ্বরের লীলাখেলা?
গত বর্ষায় তীব্র ইচ্ছে নিয়ে বলেছিলে;
আমায় নিয়ে ভিজতে চাও,
আমি ভিজিনি জ্বরের ভয়ে,
তোমাকে না দেখার তীব্র যন্ত্রণা ক্ষণে ক্ষণে আমার হৃদয় পুরাচ্ছে
তুমি কি তা বুঝ না! অনুভব করো কি?
কতটা দূরে আছো তুমি?
যতটা দূরত্ব মানুষকে আর ফেরায় না ততটা?
তবে তুমি অন্যায় করেছো,
আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে
লক্ষ্য কোটি আলোকবর্ষ দূরে দু’জন পাশাপাশি তারকার ন্যায় জ্বলতাম।
অনির্বাণ – ২
অনির্বাণের সাথে কথা হচ্ছে বহুদিন পর…
অনির্বাণ! তোমার মনে অনেক কষ্ট তাই না?
– কষ্ট কি আসলেই বুঝ!
এই যে বললে; ভেঙে পরা লোকটা তোমায় পেয়ে উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করছে।
অনির্বাণ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বললো
– কষ্ট একটা শিশু বুঝলে? শিশুর মতোই অবুঝ কাঁদে।
আমি তো আছি তোমার সব কষ্ট মুছে দিতে
– কষ্ট কি বিষম, অন্ধকার অথচ নীলাভ চোখ পিছু ছুটে৷ বুঝলে, মানুষ চাইলে নিজেকে মুছতে পারে পৃথিবী থেকে কষ্টকে নয়।
অনির্বাণ – ৩
অনির্বাণ ঠোঁট থেকে সিগারেট’টা নামিয়ে বললো –
আমার জীবনটা অনেকটা জ্বলতে থাকা সিগারেটের মতো , বুঝলে অনিন্দিতা । মানুষ মনের সুখে ব্যবহার করে , জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সবটা শেষ করে …তারপর রাস্তায় ফেলে শক্ত বুট দিয়ে পিষে মারে।
অনির্বাণ এর বুকে মাথা রেখে অনিন্দিতা বললো –
তুমি সিগারেট নয় অনির্বাণ । নিজেকে আগুন তৈরি করো । মৃত্যু নয় , বাঁচতে শেখো অনির্বাণ । বাঁচতে শেখো।
অনির্বাণ – ৪
অনির্বাণ!
আজ এ রাতে এমনভাবে নাড়াচ্ছিস কেন?
আমি কি তোকে ডেকেছি?
বুকের মধ্যে কি খুজচিস বল? কষ্ট?
অনির্বাণ!
তুই আজ চলে যা
আমি খুব ক্লান্ত, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা
কি চাস এ রাতে?
কবিতা, আমায়, নাকী মস্তিষ্ক?
কি চাই তোর?
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার
নির্দহীন আর কত রাখবি দুচোখ?
আঙুল বেয়ে কাব্যিকতার রস ঝড়ছে না
ক্লান্তি আমাকে দখলে নিয়েছে সন্ধ্যের পর থেকেই
অনির্বাণ!
তুই চলে যা
আমি আজ লিখবো না কোন কবিতা
লিখবো না কোন হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকাকে নিয়ে পঙক্তি
আমি সব ভুলে যেতে চাই
মুছে দিতে চাই
অনির্বাণ – ৫
অনির্বাণ!
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে এত করে কি দেখছিস?
– আমি মানুষের মুখোমুখি বসি, বসি এবং কথা বলি, কথা বলার ছলে চুপ হয়ে যাই, চুপ হতে হতে থেমে যাই, থেমে যায় আমার হাসি!
অদ্ভুত মানুষ! কেন এমন কেন করিস বল তো?
– কথা বলতে বলতে মানুষ কিছু একটা লুকায়, লুকিয়ে রাখে মুখে মুখে হাসে অথচ সে ভেতরে ভেতরে কাঁদে,
আমি মুখোমুখি বসি কথাগুলো শুনতে শুনতে কথার ভেতর ঢুকি, স্পর্শ করি হৃদয় কিন্তু সেখানে ক্ষত দেখি,
তারপর বাহিরে দেখি মানুষের অভিনয়…
আচ্ছা অনির্বাণ! অভিনয় মানে?
– হ্যা হাসি মাখা মুখে যে সুখের কথা ভাসে সেখানে আমার লক্ষ স্থীর থাকে না,
আমি চোখের ভেতর প্রবেশ করি, সেখানে প্রতিটা পর্দায় উপস্থিত থাকে চাপা কষ্ট,
কষ্টগুলো অভিনয়ে শুঁকিয়ে যায়, আবার জড়ো হয়,
মানুষের কষ্ট বাড়ে অথচ মানুষজন কষ্ট সয়।
আচ্ছা অনির্বাণ!
তুই কি আমার কষ্টও বুঝিস? আমি কি চাই, কি লুকাই সব বুঝিস?
আপনার জীবনে কি চলছে অনির্বাণ?
অনির্বাণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে…
এ-কি আপনি তো খুব ভালো কথা বলেন অথচ এখন একদম চুপচাপ হয়ে আছেন যে?
বিরক্ত হচ্ছেন? অনির্বাণ! আপনাকে বলছি!
মাথাটা মাটির দিকে হেলিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে অবশেষে মুখ খুললো অনির্বাণ
– আমার ভীষণ রকম বিষাদ হয়েছে, বিষাদ হয়েছে..
আমি দেখছি, অনির্বাণের চোখ থেকে পানি ঝরছে
আকাশের দিক থেকে মুখ নামিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলে চোখ মুছে নিয়ে বললো আমি এখন আসি। তারপরের লাইনটা তার কথার সত্যতা আমাকে বুঝিয়ে দিলো কতটা বিষাদ জমলে মনে মানুষ একাকী থাকতে চায় কথাটা ছিলো এরকম ‘হুবহু’
– আবার যদি কখনো আপনার সাথে দেখা হয় আমার তাহলে আমার সাথে কথা বলবেন না, মুক লুকিয়ে চলে যাবেন। আমি একাকী কাটাতে চাই যতটা একাকী থাকলে ছায়াসঙ্গীও থাকে না।
অনির্বাণ – ৮
অনির্বাণ!
তুই না বলেছিস তোর জীবনে বিষাদে ভরা
আজ এ রাতে কেন এত প্রেম কাব্য?
দেখেছিস হাহহাহাহাহ প্রেম ছাড়া কখনো হৃদয় হয় না
তোর যতই বিষাদ হোক না কেন
ভালোবাসার ছোঁয়ায় সব ভুলে যাওয়া যায়,
অনির্বাণ!
আচ্ছা ঠিক করে বলতো, তুই কি নতুন কারো প্রেমে পরেছিস?
জানিস তো, কোন প্রেমই স্থায়ী নয় সব প্রেম একদিন বিষাদ হয়।
অনির্বাণ কিছুই বলছে না, চেয়ারের হাতলের চাপটা শক্ত করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকালো
তারপর যা বললো ‘হুবুহু’
– তোমার অট্ট হাসিটা কি জানো তোমার জ্ঞানের স্ব্ল্পতা কারণ আমি জানি প্রেম ছাড়াও জীবন বাঁচে। তবে যে কোন দিন প্রেমেই পরেনি সে হৃদয়হীন।
হৃদয়হীন মানুষগুলো মানুষ ঠিকই কিন্তু তারা মূর্তির মতো বাঁচে।
নতুন প্রেম জীবনে প্রতিবার আসলেও প্রেম কখনো পুরনো হয় না। আর যে চাঁদে একবার কলঙ্ক লাগে সে চাঁদের একযুগ পরে পূর্ণতায়ও কলঙ্ক যায় না।
– বিষাদ খুবই নির্মম, বুঝলে। আমি প্রেম যা লিখি ওইসব প্রেমে পরে নয় পুরনো পৃষ্ঠা গুলো নাড়ছি। উড়িয়ে দিচ্ছি ধীরে ধীরে সব…।
অনির্বাণের কথাগুলো শুনছি, আগ্রহ বাড়ছে, অথচ সে আর বলছেই না।
অনির্বাণ – ৯
একটা জোৎস্না রাতের চিঠি ভুলে ফেলে গিয়েছে মাধবী চিঠিটায় লিখা ছিলো
অনির্বাণ!
তোমার সন্ধ্যে রাতের আকাশটা খুব পছন্দ
অথচ আমি প্রভাতের সূর্য হয়ে কিরণ দিতে এসেছিলাম
তুমি ভুলে গেলে ফুলের মতো আমার হাসিকে
শুধু তোমার জন্য যে হাসিকে সঙ্গী করেছিলাম
সে হাসিটা মেঘের আভায় ডুবিয়ে দিয়েছ।
তোমার সন্ধ্যে রাতের আকাশটা খুব পছন্দ
যে পূর্ণিমার আলোয় মুগ্ধ হয়ে আমায় ভুলেছ
ভুলেছ একটি গোটা সকাল, একদিন সে
পূর্ণিমার চাঁদ তোমায় আলো ছড়াবে না
জ্বলবে না মধ্য আকাশে, ডাকবে না তোমায়।
তখন সব আলো নিভে যাবে, অন্ধকারে আচ্ছন্ন হবে
তোমার গোটা রাত্রির, তুমি অপেক্ষা করবে আবারও একটি প্রানবন্ত ভোরের।
রক্তিম লাল বেনারসি জড়ানো উজ্জ্বল সূর্য দেখার অপেক্ষায় বসে থাকবে পুবের আকাশে তাকিয়ে।
অনির্বাণ!
ততদিনে তোমার আকাশে মেঘে ঢেকে দেবে কালো চাদর
তোমার দিন, রাত্রির প্রতিক্ষণে অন্ধকারে দম বন্ধ হয়ে আসবে
তুমি চোখ বন্ধ করে আমায় কল্পনা করো
আমার সঙ্গ অনুভব করো, আমি ঠিক চলে আসবো
তোমার ভালোবাসা আমার থেকে সময় কখনো কেড়ে নিতে পারবে না।
ইতি
মাধবী
অনির্বাণ – ১০
তোমার জ্বালাময়ী চোখের বার্তা আমি বুঝি
তোমার হেটে চলা পথ আমি স্পর্শ করতে চাই
স্পর্শ করতে চাই তোমার উর্নার সুগন্ধি
তোমার কোমরের ভাজে ঠিক কতটা লালসা আছে আমি ছুঁইতে চাই
ডুবতে চাই নোনা সমুদ্রে
হীরের টুকরোর মতো নোনা বরফ জমেছে শহরে
আমি শীতল হতে চাই তোমার আপত্তিকর শাড়ীর আচলে….
অনির্বাণ! অনির্বাণ!
আজ কি হয়েছে তোর?
ঘুম কেটেছে?
“ঘোর “
**********************