সুমন শামসুদ্দিনের কবিতা
স্বপ্নমোহন গ্রাম
শহর খুঁজে পাইনি কোথাও কচি ঘাসের ঘ্রাণ;
গ্রামের পথেই গাথা আমার এই হৃদয়ের তান।
বৃষ্টিভেজা স্নিগ্ধ বাতাস সোঁদামাটির গন্ধ;
এই শহরে বৃষ্টি যেন অন্ধকূপে বন্ধ।
পদ্মপুকুর আমের বন আর মেঠোপথের ধার-
গ্রাম ছেড়ে ওই শহরে তার জুড়ি মেলাই ভার।
চাঁদের ছায়া পুকুরজলে কাব্যে ঝরা ফুল;
শহরতলে হারায় যে চাঁদ যান্ত্রিকতাই মূল!
পল্লীগাঁয়ের পূরয়িতা নেই শহরের ঘটে-
পল্লীমায়ের আঁচল ওড়ে সৃষ্টিমূলের পটে!
ঝিলের মায়ায় আলোছায়ায়, জোছনামাখা জল;
শহর আলোয় ঢাকে চাঁদের মোহনরূপের পল।
পল্লীবালার উচ্ছলতা শহর থেকে দূর-
বাঁশেরঝাড়ে ঝিঁঝিঁর ডাক আর বউ কথা কও সুর!
শহরপানে নীরবসুরের তাল খুঁজে না পাই
গ্রাম-নিশীথে নিরবতায় মুগ্ধ হয়ে যাই!
কাশফুলের ওই শুভ্রবন আর ছোট্ট-নদীর তীর
ফড়িং ওড়া ঘাসের বনে ফুল-পাখিদের ভীড়;
গাঁয়ের কোলে দোলে আমার অনন্ত সেই সুখ
কুহক-হৃদের স্বপ্নে ভাসে বাংলামায়ের মুখ।
হিরন্ময় কবির অধ্যেতা
কবি চলে গেছেন-
অনপনেয় কালির মুদ্রণে
রেখে গেছেন কাব্যনির্যাসটুকু,
ঋদ্ধপাঠকের গ্রন্থিত প্রাণপুস্তকে!
কবির সাথে হৃদমিলনের অন্তরায়
এখন শুধু একটি অদৃশ্য কাচের দেয়াল;
ইচ্ছে হয় ভেঙে ফেলি, কিন্তু তা যে অস্পৃশ্য!
অধ্যেতা গৃহে-
বসে আছে কবিতা
পাঠকের হৃদয় কুটিরে
কবিতা গুনগুনিয়ে সুর তোলে
সুচয়িত লিপিকাতে প্রসাধিত গ্রন্থমালা!
সংগীতগৃহ গীতিকবিতার সুরে আমোদিত!
ইচ্ছে হয় কবিকে ফিরিয়ে এনে বসাই পদ্মভূষণে!
নিমিলীত পথে-
কবির পদচিহ্ন ম্রিয়মান
পাঠকের হৃদয়ানুভবের গভীরে
কবির প্রস্থানের সুরভিত স্পর্শানুরাগ!
মুহুর্মুহু অভিনব আলিঙ্গনে কাব্যভূষণ রাগে
রিনিঝিনি সুরের লিলুয়া বাতাসে ঘোর লাগায়;
ঋদ্ধপাঠকের অনুভূতির আবরণে মিশে থাকে চির-হিরন্ময়!
কাব্যরমণী
সুচয়িত কথার মালা গাঁথবো তোমার জন্য।
শব্দে শব্দে এঁকে দেবো তোমার মোহন-মুখ।
তোমায় পেয়ে হবে আমার হৃদয়-আকাশ ধন্য;
তুমি আমার এই জীবনের অনন্ত এক সুখ।
শব্দে শব্দে এঁকে দেবো তোমার মোহন মুখ।
তোমার একজন কবি আছে- গর্ব রেখো মনে;
তুমি আমার এই জীবনের অনন্ত এক সুখ।
তোমাকে চাই এই জীবনের মৌন সঙ্গোপনে।
তোমার একজন কবি আছে গর্ব রেখো মনে;
উপমাতে তুমি যে তার কাব্যগন্ধা নারী।
তোমাকে চাই এই জীবনের মৌন সঙ্গোপনে;
আমাদের যে ভালোবাসা দাম রেখো ঠিক তারই।
উপমাতে তুমি যে তার কাব্যগন্ধা নারী;
তোমার নেশায় শব্দেরা সব হয়ে আছে বন্য।
আমাদের যে ভালোবাসা দাম রেখো ঠিক তারই।
সুচয়িত কথার মালা গাঁথবো তোমার জন্য।
রূপের রূপকথা
রূপের কথা রূপকথা নয় রূপেই ঝরে তারা;
রূপবতীর রূপের মোহে কাব্যগীতি ধারা।
অরূপ রূপে রঙবাহারী প্রজাপতির পাখা;
রুপার সাজে অঙ্কিত সে রুপাল অঙ্গশাখা।
অঙ্গে রুপার প্রণয়দেহে রূপসী নদী বাঁকা;
রুপালী তার আঁখির মায়া আমার চোখে আঁকা।
কুহকতালে নূপুর বাজে রৌপ্যবতী যায়-
রুপালী সেই রূপকথারা রূপকতালে ধায়।
ঝলকতানে রুপার হাসি নাকে রজত ফুল;
রূপলাবণী অপ্সরা সে কানে রুপার দুল।
পদ্মশোভা রুপার গালে লজ্জারাঙা হাসি;
নিটোলপায়ে নটরঙিলা হাতে শঙ্খবাঁশি।
অঙ্গরূহে রূপমোহিনী কুসুমপ্রভা নারী;
স্বপ্নপুরে রচি রুপার সাতমহলা বাড়ি।
যাপন-প্রেম
কল্পনাতে বাস্তব আমার- বাস্তব দেখি কল্পনায়;
বৈঠা-মাতাল বিরহস্বর, ঢেউ উঠেছে গল্প নায়!
দৃশ্যলোকে জগৎরঙিন চন্দ্রসুধা রাত্রিতে-
জীবনবিহার জটিলপন্থা সময়বাহন যাত্রীতে।
বৃষ্টিভেজা সকাল যেন চায়ের কাপে ঠোঁটচুমে
পানসে-নিশি বিষণ্ণতায় প্রহর কাটে নির্ঘুমে।
অন্নবিহীন দারিদ্রদিন নিঃস্বপ্রাণের জীর্ণতা-
অভাব-বিহীন মহৎসমাজ ভাবছে না তার শীর্ণতা।
সূর্য ওঠে উচ্চনীড়ে পানশালাতে দিন কাটে-
তুচ্ছঘরে ক্ষুধা কাঁদে বারোমাসই রাত হাঁটে।
অহংভাবের আভিজাত্যে বাস্তবতাই রঙিন-ফ্রেম;
হাভাতে-প্রাণ পথের পাশে অস্তিমানই যাপন-প্রেম।
***************************