শিল্পী নাজনীন-এর কবিতা
আয়লান কুর্দি
—
কে বেশি ক্ষুধার্ত কিংবা দারিদ্র্য কোথায় বেশি আলগা করে মানবতার মাটি
অমিমাংসিত এসব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে সম্ভবত…
পৃথিবীর সাগরগুলো আরও বেশি নোনা হয়েছে…
ছোট্ট এক শিশুর চোখের জল, অভিশাপ
ঢেউয়ের ফেনায় গর্জে উঠছে অবিরাম
ডুবিয়ে দিতে চাইছে পৃথিবীর কঠিন মাটি, সীমান্ত!
আয়লান কুর্দি!
জীবন চেনার আগেই যে চিনে গেল সীমান্ত, অভিবাসী,
আইন ইত্যাদি অনেক কঠিন শব্দ…
অসভ্য হওয়ার তাবৎ চেষ্টায় ইতি টেনে
তুরস্ক থেকে উন্নত বিশ্ব, নাকি স্বর্গ কাছে? আয়লান জেনেছে!
বিশ্বমোড়লদের মুখ ভরে মুতে সে তাই পাড়ি জমিয়েছে স্বর্গে…
সৈকতের বালুময় তীর গিলেছে তার তাবৎ কান্না, ক্ষুধা, হাসি!
কাকতাড়ুয়া জাতিসংঘ নিয়মিত সেবন করে চলেছে ঘুমের পিল
উন্নতবিশ্বের দাওয়াই-বলে চলছে নিদ্রার মহড়া…
বিশ্বমোড়লেরা স্বস্তির ঢেকুর তুলে নাক ডাকাচ্ছে
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় ত্রুটি নেই সামান্যও…
শশশশ্
নিদ্রার অপর নাম বন্দেগি…
বাছা! তাদের ঘুমোতে দে
নরকের ভয় নেই তোর!?
মুখোশ
—
এতই যদি আলো জ্বাললে ঘরে
তবে কেন কালো পর্দায় বাঁধলে আমার চোখ!
হৃদয় যদি দিলে ভ’রে এমন হাহাকারে
মিথ্যে কেন জানাও তবে আমার জন্য শোক!
মুখোশধারী কপট শাসক তুমি
বুকে রেখে তীক্ষ্ণ ছুরি
মুখে ঝরাও ভালোবাসার শ্লোক!
স্বাধীনতা
—
মাননীয় ধর্মাবতার,
স্বাধীনতা সম্ভবত ক্ষুধামান্দ্য বিনাশী এক আশ্চর্য দাওয়াই!
যতই পান করছি, আমাদের ক্ষুধা
বিদ্যুদ্বেগে বাড়ছে
লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে
দেখুন না ধর্মাবতার,
এত স্বাধীনতা পান করাচ্ছেন
বিপরীতে চালের মূল্য শতক ছুঁই ছুঁই
তবু পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ক্ষুধা
পেট ভারি অসভ্য আমাদের
সস্তা স্বাধীনতায় নয়, মহার্ঘ্য ভাতে সে তুষ্ট হয়
ধর্মাবতার, ক্ষুধামান্দ্যনাশি এই স্বাধীনতা গেলাবেন না আর
বরং অনুমতি দিন
বুক ভ’রে শ্বাস নিই এবার
আমাদের ক্ষুধায় লাগাম পরান
দু মুঠো খেতে দিন দু বেলা
স্বাধীনতা পান করতে করতে, এই তো গেল হপ্তায়
আত্মহত্যা করেছে এক বেকুব পরিবার
বিশ্বাস করুন ধর্মাবতার,
ওদের দোষ নেই তেমন
অঢেল স্বাধীনতায় ক্ষুধামান্দ্য সেরে ভয়ানক রুচি ফিরেছিল মুখে
ধর্মাবতার, এবার লাগাম টানুন
আমাদেরও ক্ষুধা ক্রমশ বাড়ছে…
তনুরা কাঁদছে
—
স্বাধীনতা!
কার?
স্মৃতিসৌধ ছেয়ে যাচ্ছে ফুলে
চোখ ধাঁধানো আলোয় ভাসছে দেশ
তবু এত অন্ধকার কেন?
ও কার ফোঁপানির আওয়াজ শুনি কানে?
তনু কাঁদে কেন?
তনুদের কান্নায় কেন ভারী হয়ে ওঠে
স্বাধীনতার পবিত্র সকাল?
স্বাধীনতা তবে কার?
জোছনা লুটে নেয়া কতিপয় দুর্বৃত্তের?
তবে মিছে উল্লাস কেন?
কেন তবে উৎসবে মাতা?
আমি জানি এ স্বাধীনতা আমার নয়!
আমাদের নয়!
এমন-কি এদেশ-ও আমার নয়
তনুদের কোনো দেশ থাকে না
থাকে না স্বাধীনতাও!
তারা আজন্ম পরবাসী, পরাধীন!
লেখক পরিচিতি:
শিল্পী নাজনীন। বাবা: খন্দকার আবু ইউসুফ, মা: রোকেয়া খাতুন টুনু। জন্ম ১৪ জুলাই ১৯৮১, কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানায়। শৈশব, কৈশোর কেটেছে কুমারখালীর গোসাইডাঙ্গী নামক গ্রামের জল-কাদায়। স্কুল ও কলেজ জীবন কেটেছে কুষ্টিয়ায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষে পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে গ্রহণ। লেখালেখিতে হাতেখড়ি খুব ছোটবেলাতেই। বই-ই একমাত্র বন্ধু ছিল শৈশব থেকে। পড়তে পড়তেই একসময় লেখক হওয়ার স্বপ্ন উঁকি দেয় মনে। শৈশবের সেই স্বপ্নটাকে সত্যি করতেই পরবর্তীতে লেখালেখিতে মনোযোগী হওয়া আরো। প্রথম উপন্যাস ‘ছিন্নডানার ফড়িঙ’ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০২২ সালে প্রকাশিত ‘আদম গন্দম ও অন্যান্য’, ‘বিভ্রম’ এবং ‘মায়াফুল ও সাপের গল্প’ নামক গ্রন্থ তিনটি ছোটগল্পের। এছাড়া ২০১৮ তে প্রকাশিত হয় ‘তোতন ও ফড়িঙরাজা’ নামক একটি শিশুতোষ গল্পের বই। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘উলটপুরাণ’ প্রকাশিত হয়েছে বইমেলা ২০২৩-এ।
==================