You are currently viewing হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার >   খালেদ হামিদী

হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার >   খালেদ হামিদী

হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার

   খালেদ হামিদী

 

কিস্তি: তেরো

 

২৬

তাই বলে কি পশ্চিমা সমাজ নগ্নতাবাদী? আরবদের মতো ভোগবাদী? খোকনের মাথায় প্রশ্ন জাগে। নিজেই উত্তর দেয়:

না।

ভাবনা তার এগোয় নিজের ধরনে:

কই, একজন গার্ডেনার ভিলার পেছনে উঁকি দেয়ায় তাকে ওই কম্পাউন্ড থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। ওরা এখানকার লোকদের মতো উদর ও লিঙ্গসর্বস্ব হলে যোগাযোগ বিপ্লব কীভাবে সাধন করে? মঙ্গল গ্রহের ভিডিও চিত্র কীভাবে তুলে আনে? ইউরেনাসে হিরার আস্তরণ আছে বলে কীভাবে তাদের ধারণা হয়? কীভাবে ধারণ করে তেরো শত  কোটি বছর আগেকার গ্যালাক্সির ছবি? কী করে সম্ভব হয় ই-বুক? ভুলে যাই না, ওদের পররাষ্ট্র নীতি পুরোপুরিই আমাদের প্রতিক‚ল। বিস্ময়কর প্রযুক্তিও নতুন সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার। তবু এটা ঠিক, এখানকার মতো পশ্চিমের জনজীবনে ভোগই সার নয়। আর, জৈবপ্রবৃত্তি জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায়, প্রজ্ঞা অর্জনের প্রক্রিয়ায় নিতান্ত গৌণ একটা বিষয়। দৈনন্দিন মলমূত্র ত্যাগে অনিয়ম হলে কঠিন শারীরিক সমস্যা হতে পারে। কিন্তু জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য-শিল্প-সঙ্গীতের চর্চায় এবং সেসব আহরণ-পঠন-শ্রবণের ক্ষেত্রে উরুসন্ধির ক্ষুধা মেটানো মোটেও জরুরি নয়। ওই চাহিদা বা ব্যবহারিকতা অতিক্রম করার চেষ্টাই মহত্তর মানবিকতায় উত্তরণের সাধনা। এতে আগ্রহী কেউ কি এই আরবেও নেই? এই স্বগত প্রশ্নের উত্তরে খোকনের স্মৃতিকোষে, সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত চিত্রায়ণের ধরনে, একে একে ভেসে ওঠে ইতিহাস, এভাবে:

১৯০২ – ইবনে সৌদ রিয়াদের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

১৯১২ – ইখওয়ান (ব্র্রাদারহুড) কঠোর ওয়াহাবি সুন্নি ইসলামের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এবং ইবনে সৌদকে মূল সমর্থন প্রদান করে।

১৯২১-২৫ – উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর, ইবনে সৌদ মুসলিম পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনার আবাসস্থল নজদ ও হিজাজ দখল করেন।

১৯২৮-৩০ – ইবনে সৌদ এই অঞ্চলের আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংঘটিত একটি ইখওয়ান বিদ্রেহকে পরাজিত করেন। সৌদি আরব গঠিত হয়।

১৯৭৯ – চরমপন্থীরা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ দখল করে; সরকার ১০ দিন পরে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় এবং যারা বন্দি হয় তাদের মৃত্যুদÐ কার্যকর করা হয়।

১৯৮০ – সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরামকোর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়।

মে ১৯৮১ – সৌদি আরব এঈঈ (গাল্ফ কোঅপারেশন কাউন্সিল)-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাদশাহ খালিদ মারা যান।

জুন ১৯৮২ – রাজা খালিদ হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পর তার ভাই ক্রাউন প্রিন্স ফাহাদ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।

নভেম্বর ১৯৮৬ – বাদশাহ ফাহাদ তার নামের সাথে “দুটি পবিত্র মসজিদের কাস্টোডিয়ান” উপাধি যোগ করেন।

১৯৯০ – সৌদি আরব কুয়েতে ইরাকের আক্রমণের নিন্দা করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করতে বলে।  সৌদি আরব ইরাকে হামলা চালায়।

১৯৯১ – সৌদি আরব ইরাকের উপর যে বিমান হামলা হয় এবং কুয়েতকে মুক্ত করতে যে স্থলবাহিনী এগোয় তাদের উভয়ের সাথে জড়িত।

মার্চ ১৯৯২ – বাদশাহ ফাহাদ একজন শাসকের কর্তব্য এবং দায়িত্বের উপর জোর দিয়ে “মূল সরকার ব্যবস্থা” ঘোষণা করেন। তিনি একটি পরামর্শক পরিষদ (মজলিস আল-শুরা) গঠনের প্রস্তাব করেন।

১৯৯৪ – ওসামা বিন লাদেনকে তার সৌদি নাগরিকত্ব থেকে বি ত করা হয়।

অক্টোবর ১৯৯৯ – বিশজন সৌদি মহিলা প্রথমবারের মতো পরামর্শমূলক কাউন্সিলের একটি অধিবেশনে যোগ  দেন।

১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ – নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে হামলায় জড়িত ১৯ ছিনতাইকারীর মধ্যে ১৫ জন সৌদি নাগরিক।

ডিসেম্বর ২০০১ – সরকার প্রথমবারের মতো মহিলাদের জন্য আইডি কার্ড ইস্যু করে।

ফেব্রুয়ারি ২০০৪ – হজ যাত্রায় পদদলিত হয়ে ২৫১ জন নিহত হয়।

জিহাদি হামলা ২০০৪ – গত দুই বছরে আল-কায়েদা জিহাদি গোষ্ঠীর বিক্ষিপ্ত আক্রমণগুলি একটি পদ্ধতিগত প্রকৃতি অর্জন করে, যার মধ্যে ইয়ানবু পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট এবং  আল-খোবার তেল কোম্পানি এবং জেদ্দায় মার্কিন কনস্যুলেটে মারাত্মক হামলা রয়েছে।

জানুয়ারি ২০০৬ – মক্কায় পাথর নিক্ষেপের অনুষ্ঠান চলাকালীন ৩৬৩ হজযাত্রী পিষ্ট হয়ে নিহত হন। একটি পৃথক ঘটনায় শহরের একটি হোস্টেল ধসে ৭০ জনেরও বেশি তীর্থযাত্রী নিহত হন।

২০০৯ – বাদশাহ আবদুল্লাহ বিরল সরকারি রদবদলে ধর্মীয় পুলিশের প্রধান, সবচেয়ে সিনিয়র বিচারক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে বরখাস্ত করেন। এছাড়াও দেশের প্রথম মহিলা মন্ত্রী নিয়োগ করেন।

জুলাই ২০০৯ – একটি আদালত আল-কায়েদা মিলের জন্য প্রথম সুস্পষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিচারে রায়  দেয়।

অক্টোবর ২০১০ – মার্কিন কর্মকর্তারা সৌদি আরবের কাছে ৬০ বিলিয়ন মূল্যের অস্ত্র বিক্রির পরিকল্পনা নিশ্চিত করে – মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে লাভজনক একক অস্ত্র চুক্তি।

ফেব্রুয়ারি ২০১১ – বাদশাহ আবদুল্লাহ কল্যাণমূলক ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণা দেন, কারণ এই অ লে ‘আরব বসন্ত নামের অশান্তি’ অব্যাহত।

মার্চ ২০১১ – সৌদি সৈন্যরা বাহরাইনে অস্থিরতার বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনে অংশগ্রহণ করে।

সেপ্টেম্বর ২০১১ – বাদশাহ আবদুল্লাহ মহিলাদের জন্য আরও অধিকার ঘোষণা করেন, যার মধ্যে ভোট দেওয়ার অধিকার এবং পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং পরামর্শমূলক শুরা কাউন্সিলে নিযুক্ত হওয়া উল্লেখযোগ্য। মহিলা চালকদের উপর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের জন্য প্রথম আইনি বিধান মোতাবেক গাড়ি চালানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে একজন মহিলাকে ১০টি বেত্রাঘাতের শাস্তি  দেওয়া হয়। বাদশাহ আবদুল্লাহ সাজা বাতিল করেন।

সেপ্টেম্বর ২০১৪ – সৌদি আরব এবং অন্যান্য চারটি আরব রাষ্ট্র সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের জঙ্গি ঘাঁটির বিরুদ্ধে বিমান হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একত্রে অংশ নেয়।

জানুয়ারি ২০১৫ – বাদশাহ আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর বাদশাহ সালমান সিংহাসনে আরোহণ করেন।

মার্চ ২০১৫ – সৌদি আরব ইয়েমনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে।

মে ২০১৫ – পূর্ব প্রদেশের শিয়া মসজিদে দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়।

সেপ্টেম্বর ২০১৫ – বার্ষিক হজ যাত্রার সময় মক্কার কাছে পদদলিত হয়ে শতাধিক লোক মারা যায়, গ্র্যান্ড মসজিদে একটি ক্রেন ধসে ১০৯ জন মারা যাওয়ার কয়েক দিন পরে, এই গণঘটনাকালীন নিরাপত্তার মান সম্পর্কে আরও উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়।

নভেম্বর ২০১৫ – মহিলারা প্রমবারের মতো পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্তী হয় এবং ২০ জন নির্বাচিত হয়।

জানুয়ারি ২০১৬ – শিয়া ধর্মগুরু নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদÐের প্রতিবাদে তেহরানে জনতা সৌদি দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, যা ইরাক এবং লেবাননে শিয়া বিক্ষোভকেও প্ররোচিত করে। ইরানের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব।

এপ্রিল ২০১৬ – সরকার তেল থেকে দূরে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য সুদূরপ্রসারী সংস্কারের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে।

জুন ২০১৬ – জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত সৌদি নেতৃত্বাধীন  জোটকে শতাধিক শিশু হত্যা ও আহত করার অভিযোগ আনা হয়।

ফেব্রুয়ারি ২০১৭ – সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জ এবং একটি প্রধান ব্যাঙ্ক তাদের প্রধান নির্বাহী হিসাবে মহিলাদের নাম   ঘোষণা করে।

জুন ২০১৭ – সৌদি আরব কাতারকে সন্ত্রাসবাদের সাথে তার কথিত সংযোগ কাটাতে এবং ইরান থেকে নিজেকে দূরে রাখার প্রয়াসে, আরব দেশগুলির দ্বারা কাতারের বিরুদ্ধে আকাশ, স্থল এবং সমুদ্র অবরোধের নেতৃত্ব দেয়। বাদশাহ সালমান সিংহাসনে বসতে প্রথম তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম নেন।

সেপ্টেম্বর ২০১৭  – মহিলাদের গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়।

নভেম্বর ২০১৭ – রাজত্বের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতৃত্বের অপসারণের মাধ্যমে প্রিন্স মোহাম্মদ তাঁর ক্ষমতাকে সুসংহত করেন।

এপ্রিল ২০১৮ – পাবলিক সিনেমা ফিরে আসে, প্রায় ৪০ বছর আগে এটিকে অনৈসলামিক হিসাবে নিষিদ্ধ করার পরে।

অক্টোবর ২০১৮ – ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকান্ড আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার কারণ হয়।

সেপ্টেম্বর ২০১৯ – দুটি বড় তেল শোধনাগার বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ইয়েমেনি হুতি আন্দোলনকারীরা তাবি করে। এই ঘটনার জন্য সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্র্রাান্স ও জার্মানি ইরানকে দায়ী করে।

ডিসেম্বর ২০১৯ – জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের পাঁচ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং অন্য তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

শোনা তথ্য ও দেখা ঘটনার ভিত্তিতে খোকনের মাথায় নানা কিছু খেলে যায়। যেমনঃ কিং খালিদের কালে নামাজের সময় হলে গাড়ি থামিয়ে রাস্তার পাশে নামাজ পড়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। ফাহাদের সময় তা রহিত করা হলেও মোথাওয়া সক্রিয়ই থাকে। এখন সেই বাহিনী নেই। পুরুষ চালক এবং নর-নারী যাত্রীর সমান্তরালে নারী চালকেরাও এখন চলন্ত, নামাজের সময়েও উড়ন্ত। সরকারের যুগপৎ অনড়তা ও উদারতার ধারাবাহিকতায় এখানকার জনজীবনে এটিই উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি। যদিও, বোরকা এখনও বলবৎ রয়েছে কেবল নয়, এমেরিকান-ইয়োরোপিয়ান নারীদের জন্যেও, মাথা ঢাকা জরুরি না হলেও, অন্তত বোতামহীন অ্যাপ্রন- সদৃশ আবরণ বাধ্যতামূলক। তবুও ডিজিটাল যুগের সুবিধার মোহ ক’জন কাটাতে পারে? মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে অবিবাহিত তরুণ-তরুণী, আপাত পর্দার আড়ালে, যৌবনোৎসবে মাতে। সেই অর্থে বিবাহিত না হয়েও অনেকে এখন অতিবাহিত। অভিন্ন ও ভিন্ন দৈহিক সম্পর্ক উদ্যাপনের সহায়ক হিসেবে এখন মোবাইল ফোন সেটও লাভ করে ছেলেমেয়েদের চুম্বন। কিন্তু রাস্তাঘাটে খুনখারাবি তেমন না হলেও ছিনতাই কীভাবে শুরু হয়? পরশু সন্ধ্যায়, ফিলিপিনো মার্কেটের সামনে, ফুটপাতে বিপরীত দিক থেকে আসা একজন ত্রিশোর্ধ্ব ফিলিপিনো যুবককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় কুড়ি-বাইশ বছরের এক আরব তরুণ। হেঁটে ক্রস করার সময় নিজের ডান কাঁধ দিয়ে জোরে ধাক্কা দেয় সে। সাথে সাথে মুঠোর ভেতর থেকে এন্টিকাটার বের করে দেখিয়ে পড়ে-যাওয়া জনের টাকা-পয়সা আর ঘড়ি নিয়ে নেয়। আমি ও কয়েকজন ঘটনা বুঝে ওঠার আগেই ছিনতাইকারী ভিড়ে মিশে যায়। এ কেমন রীতি, দেশে-দেশে একই সাথে চলে উন্নতি ও অবনতি!

 

২৭

শেষবার দেশে ছুটিতে গেলে পড়–য়া বন্ধু তরুর সাথে অনেক বিষয়ে আলাপ হয় খোকনের। তরু সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও দর্শনের বইয়ের পাশাপাশি একাধিক পত্রিকাও বাসায় রাখে। সে খোকনকে প্রবাসে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেয়। বিশেষ করে ইয়েমেন প্রসঙ্গে তরু বেশি বিচলিত। নিষ্পাপ শিশুদের নিহত হবার ঘটনা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। এক আড্ডায় খোকনকে সে একটা ছোট প্রতিবেদন (২২ মে ২০১৯-এ প্রকাশিত) হুবহু পড়ে শোনায়:

“মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্র দেশগুলোর একটি ইয়েমেন।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানায় প্রবেশ করে। শিয়া মতাদর্শের হুতিদের অস্ত্র-অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে ইরান। পরের বছর জানুয়ারির মধ্যেই পুরো সানার নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় তারা। ইয়েমেন সংকটের সূচনা অবশ্য আরো আগে। হুতিরা সানা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বেশ কয়েক বছর আগেই আরব বসন্তের ঢেউ আছড়ে পড়ে ইয়েমেনে। ওই ধাক্কায় ইয়েমেনের দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ব¡পরায়ণ নেতা আলী আবদুল্লাহ সালেহ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ২০১১ সালে তিনি তাঁর সহযোগী আব্দরাব্বুহ মানসুর হাদির কাছে দায়িত্ব ছেড়ে  দেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংকটের এক পাহাড়ের সামনে এসে দাঁড়ান হাদি। দেশের সাধারণ সমস্যাগুলোর পাশাপাশি মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়ায় জিহাদি ও দক্ষিণা লীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। সেনাবাহিনীতে তখনও বিপুলসংখ্যায় সালেহর অনুসারী। নতুন প্রেসিডেন্টের এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় ইয়েমেনের জাইদি শিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। এরা হুতি বিদ্রোহী নামেই বেশি পরিচিত। তারা সাদা প্রদেশ এবং এর আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এদের সঙ্গে অবশ্য সালেহর সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। দুই পক্ষের মধ্যে বহুবার লড়াই হয়েছে।

নতুন ত্রিধাবিভক্ত পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে বহু সুন্নিসহ সাধারণ ইয়েমেনি হুতিদের সমর্থন দেয়।

২০১৪ সালের শেষ দিক এবং ২০১৫ সালের গোড়ার দিকে সানার নিয়ন্ত্রণ নেয় হুতি বিদ্রোহীরা। সৌদি আরব সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশকে নিয়ে জোট গঠন করে ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু করে। হুতি বিদ্র্রোহীরা  প্রেসিডেন্ট হাদির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করার পর থেকেই সালেহর সঙ্গে হুতিদের এক ধরনের সমঝোতা তৈরি হয়। যদিও দুই পক্ষ এর আগ পর্যন্ত চরম বৈরী ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ  থেকে এদের সঙ্গে মিত্রতা করেন সালেহ। হুতি বিদ্রোহী এবং সালেহ সমর্থিত বাহিনী এই দিনগুলোতে আক্রমণ  জোরদার করে। পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে তারা। তাদের জোরালো আক্রমণের মুখে ২০১৫ সালের মার্চে বিদেশে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট হাদি। মূলত হুতিদের এই উত্থানেই ভয় পেয়ে যায় সৌদি আরব। ধারণা করা হয়, হুতি প্রতিবেশী শিয়া শক্তি ইরানের কাছ থেকে সামরিক সহায়তা ও সমর্থন পায়। ইরান উপসাগরের আ লিক রাজনীতির শক্তিশালী খেলোয়াড়। নানাভাবেই ওই অ লে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়ছে। মূলত ইরান আতঙ্কের কারণেই আরো আটটি সুন্নি দেশকে সঙ্গে নিয়ে ইয়েমেনে বিমান হামলা শুরু করে রিয়াদ। ওই সময় তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, হাদি সরকারকে আবার সানায় প্রতিষ্ঠিত করা। এই জোটকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স। গোড়ার দিকে সৌদি কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে এই যুদ্ধ। কিন্তু চার বছরেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়েছে এই লড়াই। এখনো চলছে।

এই যুদ্ধে সৌদি আরবের জড়িয়ে যাওয়া যেমন ইরান ইস্যুর কারণে, ঠিক তেমনি পশ্চিমা কয়েকটি দেশ জড়িয়েছে  তেলস্বার্থ এবং নিরাপত্তার কারণে। লোহিত সাগর ও আদেন উপসাগর দিয়ে বিশ্বের তেল বাণিজ্য অনেকটাই পরিবাহিত হয়। এই অংশটি নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়লে তেল পরিবহনও হুমকির মুখে পড়বে। আদেন বন্দরনগরীতে  জোটের সেনারা পদার্পণ করে ২০১৫ সালের আগস্টে। পরের কয়েক মাসে তারা হুতি বিদ্রোহী ও তাদের সহযোগীদের দক্ষিণা লের বেশির ভাগ এলাকা থেকে বের করে দেয়। আদেনে হাদি সরকারের একটি অস্থায়ী কার্যালয় ছিল। কিন্তু তাদের পক্ষে মৌলিক সেবাগুলো নিশ্চিত করা বা জনসাধারণকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। সানা থেকে হুতিদের বের করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া তারা তৃতীয় শহর তায়েজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল। এখান থেকেই তারা সৌদি আরবের দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে থাকে। এই নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির সুযোগ নেয় আরব উপদ্বীপের আল-কায়েদা (একিউএপি) এবং স্থানীয় ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী (আইএস)। এরা দক্ষিণের বেশ কিছু অ ল দখল করে নিয়ে আদেনের ওপর হামলা চালাতে শুরু করে।

এদিকে রিয়াদের ওপর হুতি বিদ্রোহীদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত থাকে। এই হামলা বাড়তে থাকলে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ইয়েমেনের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। তাদের যুক্তি, হুতি বিদ্রোহীরা ইরান থেকে যে অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে পাচ্ছে, তা বন্ধ করতে এই অবরোধ জরুরি। যদিও ইরান কখনোই হুতিদের অস্ত্র দেওয়ার কথা স্বীকার করেনি। কিন্তু এই অবরোধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়তে থাকে। বহু লোক খাদ্য সংকটে পড়ে যায়। এক ধরনের অচলাবস্থা চলতে থাকে ইয়েমেনে। এই অচলাবস্থাকে ভেঙে দিতেই ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে বিদ্রেহী নিয়ন্ত্রিত লোহিত সাগর তীরবর্তী হুদাইদাহ বন্দরনগরীতে বড় ধরনের অভিযান শুরু করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। এই বন্দরটি ইয়েমেনের দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীর পণ্য সরবরাহের মূল পথ। ওই সময়ই জাতিসংঘ সতর্ক করে জানায়, এই বন্দর যদি ক্ষতিগ্রস্ত বা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে। সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই যুদ্ধ বন্ধে আলোচনায় বসতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কয়েক মাস পার হয়ে যায়। অবশেষে সুইডেনে বসে তারা। ডিসেম্বরে সরকার ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ওই চুক্তি অনুসারে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা কার্যকর করা যায়নি। ফলে চুক্তি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, ইয়েমেন বিশ্বের সবচেয়ে বিপর্যয়কর মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মুখে পড়েছে।

জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইয়েমেনে অন্তত ৭ হাজার ২৫ জন  বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১১ হাজার ১৪০ জন। নিহতদের ৬৫ শতাংশই সৌদি আরব  নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিমান হামলায় প্রাণ হারায়। তবে এই গৃহযুদ্ধের ওপর নজর রাখা একটি আন্তর্জাতিক গ্রæপ জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যে পরিসংখ্যান তৈরি করেছে, তাতে দেখা যায়, ২০১৬ সাল  থেকে বেসামরিক ও যোদ্ধা মিলে ৬৭ হাজার ৬৫০ জন নিহত হয়েছে। আরো কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছে অপুষ্টি, রোগ আর খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে। এই সমস্যাগুলো খুব সহজেই সমাধান করা যেত। দেশটির মোট  জনসংখ্যা দুই কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষেরই মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষার প্রয়োজন। অন্তত দুই কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার প্রয়োজন। এর মধ্যে এক কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে এক কদম দূরে রয়েছে। অন্তত দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২০ লাখ। এসব শিশু চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। দেশটির সাড়ে তিন হাজার স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেকের মতো এখন চালু আছে। ফলে দুই কোটি মানুষ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। খাবার পানি বা পয়োনিষ্কাশনের সুবন্দোবস্ত নেই এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের। এর মধ্যেই মহামারি আকারে কলেরা ছড়িয়ে গিয়ে ২০১৭ সাল থেকে মারা গেছে প্রায় তিন হাজারজন।”

সেই সাথে খোকনের মাথায় প্রশ্ন জাগে:

গেলো শতকের শেষের দিকে গঠিত আল কায়েদাও কি এখানে ফের হামলা চালাতে পারে না?

ও নিজের মনেই কথা বলে:

যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় আফগানিস্তানে সোভিয়েতবিরোধী যুদ্ধে সক্রিয় থাকা আল কায়েদা পরে সহযোগীর বিরুদ্ধেই ফণা তোলে। অরুন্ধতী রায় তখন ঠিকই বলেন যে বুশ ও লাদেন দুই সৎ ভাই, যারা লাঠি নিয়ে খেলছে।

কেউ কেউ নিহত লাদেন এবং বাদশা সৌদের পূর্বপুরুষদের ইয়েমেনি মনে করে কেন? ওরা সবাই তো এখানকারই। তরু আমার আগেই পড়ে ফেলে পুরো ইতিহাস যার কিছু অংশ হঠাৎ কৌত‚হল জাগায়। যেমন:

“মানী’ ইবনে রাবিয়া আল মুরাইদিই সৌদ পরিবারের পুরনোতম পূর্বপুরুষ। তাদের নিজস্ব বংশতালিকা অনুযায়ী, ইসমাইল (আঃ)-এর বংশধর আদনান-এর মাধ্যমে যে বংশগুলো গড়ে ওঠে তাদেরই মাঝে একটি ছিল বনু বকর ইবনে ওয়াইল বংশ। এদের বনু হানিফা বংশের সদস্য ছিলেন মানী’ ইবনে রাবিয়া। তিনি থাকতেন পূর্ব আরব তীরের কাতিফ নামের শহরের কাছের এক গ্রামে, সে গ্রামের নাম ছিল আল-দুরু। তাঁর গোত্রের নাম সুদাহ।  সেটা ছিল ১৪৪৬-১৪৪৭ সাল। তাঁর এক আত্মীয় ইবনে দীর তাঁকে আমন্ত্রণ জানান তাঁরই সাথে গিয়ে থাকতে। ইবনে দীর ছিলেন তখন অনেকগুলো গ্রাম আর ভ‚সম্পত্তির (এস্টেট) মালিক বা শাসক, এবং, সেরকম চলে বহুদিন ধরেই। আর এ অ লটাই আজকের রিয়াদ!

ইবনে সৌদের সময় নাজদ অটোম্যান সা¤্র্রাজ্যের অধীনে ছিল না। মুহাম্মাদ ইবনে সৌদের পর তার পুত্র আব্দুল আজিজ শাসক হয় ১৭৬৫ সালে। ১৮০২ সালের ২১ এপ্রিল আব্দুল আজিজ কারবালা আক্রমণ করে নাজদ থেকে বারো হাজার ওয়াহাবি সেনা নিয়ে। আট ঘণ্টা স্থায়ী এ আক্রমণে তারা হুসাইন (রাঃ)-এর কবরের উপরের গম্বুজ  ভেঙে ফেলে এবং সেখানে দান করা প্রচুর সম্পদ নিয়ে আসে উট বোঝাই করে। এ আক্রমণে নিহত হন ২,০০০ কিংবা মতান্তরে ৫,০০০ মানুষ। পোড়ানো হয় চল্লিশ হাজার বাড়ি। তৎকালীন ১৮৭২ সালের উসমান ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বিশর-এর ওয়াহাবি বর্ণনায় এই আক্রমণকে শিয়াদের ওপর ‘মুসলিম’ আক্রমণ হিসেবে ডাকা হয়। ১৮২৪ সালে সৌদিরা আবার দীরিয়া এলাকার দখল নিতে সক্ষম হয়। শুরু হয় দ্বিতীয় সৌদি স্টেট। এটা  টেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত। এ ঘটনার পর অটোম্যান খেলাফত সৌদিদেরকে শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করে। ১৮০৩ সালে এক গুপ্তঘাতকের হাতে মারা যায় আব্দুল আজিজ। এরপর তাঁর পুত্র সৌদের শাসনামলে  সৌদি সা¤্রাজ্য সবচেয়ে বিস্তৃত হয়। ১৮১৪ সালে সৌদের মৃত্যুর পর তার পুত্র আব্দুল্লাহ ইবনে সৌদ মুখোমুখি হন অটোম্যান আক্রমণের। অটোম্যানদের হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয় এ অটোম্যান-ওয়াহাবি যুদ্ধ। মিসরীয় বাহিনী আব্দুল্লাহর বাহিনীকে পরাজিত করে। দীরিয়ার রাজধানীর পতন হয় ১৮১৮ সালে মিসরীয়দের কাছে। আব্দুল্লাহকে আটক করা হয় এবং শীঘ্রই কনস্টান্টিনোপলে (ইস্তানবুলে) অটোম্যানরা তার শিরচ্ছেদ করে। শেষ হয়ে যায় প্রথম সৌদি স্টেট। মিসরীয় বাহিনী দীরিয়া ধ্বংস করে দেয়। আল সৌদ পরিবারের অনেককে বন্দি হিসেবে মিসরে পাঠানো হয়।

দ্বিতীয় সৌদি স্টেটের রাজধানী ছিল রিয়াদ। হেজাজ পুনরুদ্ধার করতে পারেনি এ সময় সৌদিরা। আগেরবার ধর্ম নিয়ে অনেক কঠোরতা প্রদর্শন করলেও, এবার ধর্ম নিয়ে তেমন কিছু করেনি তারা। অবশ্য, তখনও তাদের শাসকদের উপাধি ছিল ইমাম। এবং, তাদের উপদেশপ্রদানকারী ছিল সালাফি ধর্মীয় স্কলাররা। এ সময় সৌদি পরিবারের নিজেদের মাঝে শুরু হয় কলহ, অর্ন্তদ্বন্দ্ব। ফলে তাড়াতাড়ি পতন ঘটে দ্বিতীয় সৌদি স্টেটের। একজন বাদে (ফয়সাল ইবনে তুর্কি) সকলেই হয় গৃহযুদ্ধ না হয় গুপ্তহত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা হারান। নাজদ আমিরাতের  শেষ শাসক আব্দুল রহমান ইবনে ফয়সাল আল সৌদ ছিলেন ফয়সাল বিন তুর্কির ছোট ছেলে। মুলায়দার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি পূর্ব আরবের আলমুররা বেদুইনদের মাঝে সপরিবার নির্বাসনে যান। কিন্তু শীঘ্রই কুয়েতি আমির মুবারাক আল সাবাহের অতিথি হিসেবে তিনি সে-দেশে আশ্রিত হন। ১৯০২ সালে তাঁর পুত্র আব্দুল আজিজ রিয়াদে সৌদি শাসন ফিরিয়ে আনার মিশনে নামেন। তিনি রিয়াদের মাস্মাক দুর্গ দখল করে সেখানকার গভর্নরকে হত্যা করেন। তখন মাত্র ২০ বছর বয়সে রিয়াদের শাসক হিসেবে আবির্ভূত হন আব্দুল আজিজ। সৌদ পরিবারের নতুন নেতা হিসেবে তার পরিচয় তখন থেকে হয় ‘ইবনে সৌদ’। পরের তিন দশক তিনি নাজদ থেকে শুরু করে আশপাশের অ লে সৌদি সাম্রাজ্যের প্রভাব বিস্তৃত করতে শুরু করেন।”

এদিকে কেবল খোকন আর তরু নয়, অনেকেই জানতে পারে যে, সম্প্রতি এ-দেশে পাবলিক কনসার্টে নারী শিল্পী সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তা ছাড়াও নারী-প্রবেশাধিকার সংবলিত প্রথম স্টেডিয়াম ও কর্মক্ষেত্রে নারীর সংখ্যাবৃদ্ধি হয়ে চলেছে। পাশাপাশি নানা সালাফি আলেমগণ গ্রেফতার হন। আল কায়েদা সালাফিবাদী সংগঠন বলেই কি? খোকনের মাথায় প্রশ্ন জাগে। ওয়াহাবি ও সালাফির পার্থক্য এবং উভয়ের ইতিহাস জেনেও এসব প্রসঙ্গে সেবার তরুর সাথে আলাপে সে আগ্রহী হয়নি। কিন্তু বিষয়গুলো মাথায় আসা মাত্র তার কানে, বহুকাল পর, বেজে ওঠে আলম কাকার বাড়ির সেই ঢোল। সাথে সাথে ওর সামনে এসে, গলা থেকে ঝোলানো ঢোল বাজিয়ে, ভান্ডারি গান গেয়ে ওঠেন বাবরি চুলের সেই ভিক্ষুক। খোকনদের বাড়ির উঠানের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে তিনি মারেফতি গান গেয়ে চলেন। এ-কথা জানিয়ে খোকন তরুকে হোয়াটস্অ্যাপে লেখে:

ওয়াহাবিপন্থিদের বংশধরেরা রাজক্ষমতায় আসীন। সালাহিবাদী লাদেন ও জাওয়াহিরি নিহত আর আমার শৈশব থেকে দশকের পর দশক ধরে দেখি সেই গাইয়ে ভিখিরি অপরিবর্তিত।

এ ক্ষেত্রে খোকন ভাবে আর নিজেকেই বলে:

তরু ও তন্ময়কে তো লিকোভিকের সেই প্রসঙ্গ গোপন রাখতে বলা দরকার ছিলো! লিকোভিকের দায়িত্বটি সফলভাবে পালিত হয় গত শতাব্দির সত্তরের দশকে। কিন্তু আমি তো এ-দেশে আসি এরও একুশ বছর পরে। একুশ? সংখ্যাটি আমার প্রিয়। কেননা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য একুশ বছর বয়সে প্রয়াত হন। কিন্তু তাই বলে গল্প বানাই কেন? তরু ও তন্ময় তো আগেই বই পড়ে জেনে নেয় সেই ইতিহাস। তাহলে এখানে পাওয়া ভয় দেশেও কেন পাই? বন্ধুদের মধ্যে তো কোনও গুপ্তচর নেই। তবু তাদের পরিচিতদের মধ্যে তো থাকতে পারে! তাছাড়া অতীতকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান রূপে তুলে ধরতে কি মজা পাই আমি? নাকি আমিও মানবেতিহাসের অংশ? না, না, শুধু আমি কেন! আমরা সবাই তো তা-ই। যদিও, বন্ধুরা জানতে চায় আমি লেখক হইনি কেন। হলে অবশ্য দেশের সাহিত্যে নতুন অভিজ্ঞতা সংযোজিত হতো। কিন্তু এতো দেরিতে কি লেখালেখি শুরু করা যায়? জানি, বন্ধুরা বলবে:

আমরা আমাদের শহর থেকেই দুজন লেখককে পেয়েছি যাদের একজন পঞ্চাশ এবং অপরজন ষাট বছর বয়সের পরে লিখতে শুরু করেন।

==**==**==**==**==**==