You are currently viewing পাতি > উৎপল মান

পাতি > উৎপল মান

পাতি

উৎপল মান

 

এসকেলেটরে উঠতে উঠতে রবি ভাবে এটাই জীবন। জাংশন মলের পাঁচতলায় ওঠা একটা অভিজ্ঞতাআলো ঝলমলে গোটা একটা শহর যেন ঢুকে গেছে এই সামান্য পৃথিবীটায়। পৃথিবীই তো। কী নেই এখানে! উজ্জ্বল ছেলেমেয়েদের ভিড়। ঝাঁ চকচকে সব দোকান। বিজ্ঞাপনের আধুনিক বাহার দেখলে চোখ ঝলসে যায়। আহা, কী দ্রুত বদলে যাচ্ছে চারপাশ নিজেকেও বদলাতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই জীবন। তৃপ্তিও তাই বলে।

বছর-কয়েক হল এই শহরে এসেছে রবি। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এবং বউয়ের সাথে যুদ্ধে না পেরে উঠে এখানে বাধ্য হয়েছে আসতে। কিন্তু এসে কি খুব খারাপ করেছে সে। কে থাকবে পড়ে ওই পচা গ্রামে! আগে এই কথাটা বলত অহনা। এখন ওর নিজেরই তা মনে হয়! 

ওপর উঠতে উঠতে নীচের ফ্লোরে মানুষগুলোকে দেখতে বেশ ভালোই লাগে। উচ্চতার একটা মহিমা আছে। উপরে ওঠার একটা মজা আছে। প্রমোশন পেলে যেমন হয় আর-কী! ওঠার নেশা পেয়ে বসে। কিন্তু শেষ তো হয় কোথাও একটা।  

রবি এসে পড়ল পাঁচতলায়। এসকেলেটর থেকে ফ্লোরে নামার অনুভূতিটাও যেন পৃথিবী থেকে চাঁদে ল্যান্ডিংয়ের অভিজ্ঞতা। চন্দ্রযান ব্যর্থ হয়েছে তো কী হয়েছে। এ দেশের প্রযুক্তি একদিন পারবেই। রবি নিজের মধ্যেই পজিটিভ অ্যাপ্রোচ আনার চেষ্টা করে। চলন্ত সিঁড়ি থেকে নামার সময় নিজের ভেতর বেশ একটা চলমানতা বজায় রাখতে হয়। একবার তো অহনা পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছিলকিন্তু ও এটাতে বেশ রপ্ত হয়ে গেছে। অহনার হাঁটুতে ব্যথা। ও ভয় পায়। রবির মাঝে মাঝে মনে হয়, বেচারা শহরে আসতে চাইল বটে, কিন্তু শহরে আসার মজাটা সে-ই তো ঠারেঠুরে উপভোগ করছে। অন্যদিকে অহনা হয়ে গেল মেদামারা গৃহস্থ মহিলা। মেয়ে সোনাভাকে নিয়েই সে পড়ে আছে। মেয়ের টিউশন, কম্পিউটার, নাচ-গান-আবৃত্তি। সব দিকেই ওর সমান নজর। কিন্তু মায়ের জাল থেকে বেরিয়ে ওর ঘরে মাঝে মাঝে এসে ঢুকে পড়ে সোনাভা। ওর বইয়ের আলমারির পিছনে লুকিয়ে থাকে। অহনা তখন চিৎকার করে মরে।    

অহনার তাগাদায় আজ মেয়ের জন্য এসেছে এখানে। কিন্তু এই ফাঁকে সে তৃপ্তিকে ফোন করে দিয়েছিলতৃপ্তি অপেক্ষা করছে নিশ্চয়এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগল রবি। হঠাৎ ওর কাঁধে কার স্পর্শ। না, রবি চমকে ওঠেনি। এখন ওসব গ্রাম্য ব্যাপার-সেপার নেই ওর। পিছন ফিরে দেখল, তৃপ্তিই। দেখেই ওর চোখ বড় হয়ে গেল। কী ঝলমলে লাগছে তৃপ্তিকে। পার্টিওয়্যার পরে এসেছে নাকি! পুরো হাতটা খোলা। স্লিভলেস। বুক উথলে এসেছে ওপর দিকে। ঠোঁটে হালকা গোলাপি রেখায় টানা লিপগ্লস। জ্যোৎস্না চলকে চলকে পড়ছে ওর শরীরে। নাহ, এই তৃপ্তিকে চেনা যাচ্ছে না। কিন্তু খুব বেশি আশ্চর্য হওয়ার বহিঃপ্রকাশ দেখাল না। এতে সুন্দরী মেয়েরা অহংকারে ফেঁপে ওঠে। তবু বলল, ‘ইউ আর লুকিং নাইস।’   

ওরা একটা রেস্তোরাঁতে এসে বসল। কিছু খাবার অর্ডার দিল। তৃপ্তি সেলফোনে ঝটাঝট কিছু ছবি তুলে বলল, ‘ফেসবুকে দেব?’ 

  ‘সর্বনাশ হয়ে যাবে।’ রবি জানাল। 

  ‘কেন, প্রেম করতে পারবে আর ছবি দিলেই ভয়!’

  ‘ভয় নয়। আসলে…’

তৃপ্তি হো হো করে হেসে উঠল। রবির একটা বাহু টেনে নিয়ে নিজের বুকের কাছে জাপটে রাখল। রবি বুঝল ও যতই নিজেকে শহুরে আর স্মার্ট ভাবুক না কেন, তৃপ্তির কাছে ও নিতান্তই বাচ্চা। পকেটে হাত ঢোকাল। চারদিক তাকিয়ে দেখল কেউ মাস্ক পরে নেই। কিন্তু কিছু উপায় না পেয়ে খুলে রাখা মাস্কটা একটা হাত দিয়েই পরে নিল। সহজে কেউ চিনতে পারবে না। তৃপ্তির মতো যুবতীর সাথে চেনাজানা কেউ ওকে দেখে ফেললে মুশকিল। তাছাড়া দু’জনের বয়েসের ফারাকটাও তো কম নয়! দৃষ্টিকটু লাগবে যে কোনও লোকের কাছে। মনে মনে বলল, জয় মাস্কবাবার জয়।   

রবি রেস্তোরাঁর বাইরে চোখ রাখল। এই এক আজব মেলা। গ্রামে নানা উৎসবে মেলা বসত। দোল উৎসবে গ্রামের রাজবাড়ির বাইরে, চৈত্র মাসের গাজনমেলা ইত্যাদি। এখানে প্রতিদিন। এখানে কোনও ভিখিরি নেই, গরিব লোক নেই, ফুটপাত নেই, হকার নেই। আলোভরা পৃথিবীটার অধিবাসী সামান্য কিছু লোক হতে পারে মাত্র। সবার সবকিছুতে অধিকার না থাকাই ভাল। তবেই না প্রিভিলেজেড ক্লাশটা সুখ ভোগ করতে পারবে। আহা, কী দারুণ ব্যবস্থা! বৈভবের জগৎ। রবি নিজেকে ধন্যবাদ দিল এইরকম একটি সমাজের শ্রেণিভুক্ত মনে করে। 

খাবার এসে গেছে। এই নিয়ে অহনার সাথে ও তিনবার এল এখানে। ফ্রায়েড মোমো খেতে খেতে তৃপ্তি তাকাল ওর দিকে। এখন ওর হাত ছেড়ে দিয়েছে। রবি লক্ষ করল নিখুঁতভাবে গাঢ় আইলাইনার ওর চোখের পাতার ওপর ভেসে আছে। যেন দূরবর্তী নদীর জলে খুদ্র একটি নৌকা। 

 ‘কী দেখছ তুমি?’  

 রবি বলল, ‘যতটুকু দেখা যায়।’ 

আলতো ঠোঁট ফাঁক করে মোমোতে কামড় বসিয়ে তৃপ্তি ফিসফিস করে বলল, ‘আরও বেশি কিছু দেখতে চাও নাকি?’

রবির এ সময় মনে পড়ল অহনার রং-চটা মুখ। ঘামে ভেজা কপাল। কেটে ফেলা চুল- যাতে ওকে ভাল দেখায় না একদম। সেক্স করার সময় কেমন একটা বিকৃত আওয়াজ করে মুখে। একবার চোখ বুজল রবি। আগে ভেসে ওঠা সব রাবিশ দৃশ্য এক নিমেষে ডিলিট করে দিল। আবার তৃপ্তির দিকে মনোনিবেশ করল। এখানে এসি-তে ঘাম হওয়ার কোনও চান্স নেই। একেবারে ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা কুল-কুল। এবার মাস্ক খুলে মুখে অদ্ভুত রকমের আকাঙ্ক্ষা ফুটিয়ে রবি জানতে চাইল শেষমেশ, ‘সত্যিই দেবে?’

 ‘শুধুই দেখবে?’ তৃপ্তির চোখে অপার্থিব কামনা। চোখেমুখে ধারালো কৌতুক।

এমনও হয়! খুব ভাগ্যবান মনে করল নিজেকে তৃপ্তির মতো মানবীর সাথে সম্পর্ক হওয়াতে। রবি কী বলবে বুঝতে পারল না। শুধু হাঁ করে তাকিয়ে থাকল ওর দিকে। তৃপ্তি খাওয়া শেষ করল খুব চটপট। রবি ওকে টাকা মেটাতে দেবে না। এমন মেয়ের স্পর্শ পাওয়া ওর মতো বিবাহিত লোকের কাছে যে কী সম্পদ! টাকাটা ও-ই মেটাবে। আজ ওকে কিছু কিনেও দিতে চায় সে।   

কাউন্টারে গিয়ে টাকা মিটিয়ে ফ্লোরে এসে দেখল তৃপ্তি নেই। চোখ চালিয়ে চারদিক দেখে নিল। এমন তো কখনও হয় না! হয়তো সামনেই কোনও স্টলে ঢুকেছে। ফোন করল। আশ্চর্য, এই তো একটু আগে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ওর ফোন খোলা ছিল, আর এখন বলছে সুইচড অফ! 

রবি নির্দিষ্ট স্টলে গিয়ে মেয়ের জন্য নাচের দামি পোশাক কিনল। ভেবেছিল তৃপ্তিকে দেখিয়ে কিনবে। তাছাড়া ওকেও কিছু দেওয়ার আছে। কিন্তু ওর যে পাত্তা নেই! সে কি চলে যাবে? আবার একবার পাঁচতলার রেস্তোরাঁতে গেল। না, নেই। ওর দুটো নম্বরেই ফোন করল। একই সেটে দুটো সিম। একই কথা বলছে- সুইচড অফ। রবি এসেকেলেটর বেয়ে নীচে নেমে এল। ওঠার সময় যে জোস ছিল মনে, নামার সময় তার সিকি ভাগও নেই। চলমান সিঁড়ি থেকে নেমে গেটের দিকে হাঁটতে যাবে আর দেখতে পেয়ে গেল তৃপ্তিকে একটা জামাকাপড়ের হাইফাই শো-রুমের কাছে দাঁড়িয়ে। হনহন করে এগোতে গিয়েই দেখল ওর সাথে একজন যুবক। আরও একটু কাছে যেতেই শুনতে পেল- তৃপ্তি বলছে যুবকটিকে, ‘আরে ওটা একটা পাতি লোক। একটু সুরকি ছেড়ে দেখছি। যারা খেলতে চায়, তাদের এমনই খেলাতে হয় বস। কেমন কেটে পড়লাম দেখলে তো!’ 

এসব ওর সম্পর্কে বলল! রবি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল মুহূর্তক্ষণ। তারপর যখন ওরা শো-রুমের ভিতরে ঢুকে গেল, সে খুব পরাজিত একটা পাতি লোকের মতো বাইরে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল। নামতে নামতে সে ভাবতে লাগল অহনার কথা। আজ সকালে বলেছিল ইলিশ মাছ আনতে বাজার থেকে। ষোলশোর নীচে ছিল নাএকজন তো বলেই দিল, ‘রোজ রোজ দাম জিগ্যেস করে কোনও দিন তো কিনতে দেখলাম না মশাই!’ কী লজ্জা, কী লজ্জা! অথচ সে কিনতে কি পারত না। কিন্তু কেন যেন মনে হয়েছিল, টাকাগুলো ওর পকেটে এঁটে বসে আছেহাত দিয়ে কিছুতেই ভিতর থেকে টেনে বের করতে পারছিল না। অথচ তৃপ্তির পিছনে সে তো দুশো টাকা হলেও খরচা করল। নিজের মেয়ের নাচের পোশাক বেশ দাম দিয়েই কিনতে হল। তবে কেন ইলিশ কিনতে ওর এমন দিশেহারা অবস্থা হয় সে বুঝতে পারে না।  

তৃপ্তি কত জলদি ওর নিজের শ্রেণিচরিত্রটাকে চিনতে সাহায্য করল! এক মুহূর্তেই ওর নিজের ওপর যাবতীয় কনফিডেন্স ভেঙে চৌচির! সিঁড়ির একেবারে নীচের দিকে এসে বসল রবি। এখানেও প্রচুর মানুষজন বসে রয়েছে। গোটা এলাকাটাই একটা বাজার যেন। সিঁড়ির নীচে সামনের ফ্লোরটা বাদ দিয়ে দু’পাশে বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য ছোট পুল। নীল জলে হাওয়াভরা গোলাকার নৌকোরিমোট-চালিত গাড়ি। ওদের ছোটবেলায় এসব কিছুই ছিল নামাটির কোঠাঘরে পাওয়া বাচ্চাদের পুরনো রিক্সা মেরামত করে চালিয়েছে বছরের পর বছর। এতসব সে ভুলে গিয়েছিল! তৃপ্তি জাদু জানে নিশ্চয়। তা না হলে ওর একটা মন্তব্যেই কেন সে নিজের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে ধীরে ধীরে! নাকি মিথ্যে ফানুসে চড়ে উড়তে-চাওয়া একটা শ্রেণির স্বপ্নভঙ্গের প্রতীকী একজন সে?     

হাতের প্যাকেটে মেয়ের পোশাক নিয়ে সে দেখতে লাগল এক অপূর্ব পৃথিবীকে। আর মুহূর্তেই বদলে যাওয়া একটা মানুষকে। সে ছোটবেলায় হেঁটে মাঠ পেরিয়ে খাল পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে পাশের গ্রামে। সন্ধেবেলায় সে অপেক্ষা করছে কারখানা-ফেরত বাবার জন্য। শীতের রাত্তিরে জ্বলন্ত উনোনের ধারে বসে ঠাকুরমার কাছে রামায়নের গল্প শুনছে। আর মায়ের ডাক পেলেই হইহই করে ছুটে যাচ্ছে একান্নবর্তী পরিবারের ভাইবোনেরা। ওদের জন্য অপেক্ষা করছে ডাল আর রুটি।    

পাতি একটা জীবন থেকে আজ অনেক দূর সে চলে এসেছে। চাকরি, শহর। নিজের অতীত ভুলে যাওয়া মিথ্যে এক বর্ণবলয়ের অংশ হিসেবে নিজেকে দেখতে চায়। এতে অন্যায় কোথায়? মানুষ তো সবসময় সবকিছুই টপ ক্লাস পেতে চায়। বাড়ি, গাড়ি, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান। এটাই তো আসল দৌড় জীবনের। নাকি অন্য কিছু?

‘রবি না?’

রবি চমকে ওঠে। মুহূর্তেই নিজেকে সমে ফেরায়। দেখে মিঠু। ওর কলেজের বন্ধু। এখন এই শহরেই থাকে। চারপাশের এত আলোতেও একফোঁটা লাবণ্য খুঁজে পেল না মিঠুর মুখমণ্ডলে। বলল, ‘কী ব্যাপার, তুই হঠাৎ!’

‘এসেছি, কাজ আছে একটু। কিন্তু তুই এমন একলাটি হয়ে চ্যাংড়া ছেলেদের মতো প্রেমিক খুঁজতে এসেছিস নাকি!’ মিঠুর কথায় শান্ত কৌতুক।

 রবি কথার উত্তর খুঁজে পেল না। হাতের প্যাকেট দেখিয়ে বলল, ‘এই যে। সংসারের কাজ। তোর?’

 মিঠু রবির পাশে সিঁড়িতে বসে পড়ল। খুব ধীরে জানাল, ‘আমার সংসার নেই। আমি প্রেমিক ধরতে এসেছি। তুই আজ খদ্দের হবি, প্লিজ…?’

 রবি চমকে উঠল। মিঠু নিশ্চয়ই মজা করছে। বলল, ‘ধুর, পরে ইয়ার্কি করিস। এখন বল তোর বর দীপক কেমন আছে? আর মেয়ে?’

মিঠু মুখ নিচু করে বসে থাকল। ‘বিশ্বাস হল না, না রে? ও নেই। বছর-খানেক হল আমার সাথে নেই। কলেজের এক ছাত্রীর সাথে লিভ-ইন করে। বাচ্চাদের সামান্য একটা প্রাইভেট স্কুলে পড়াতাম। সেই চাকরিটাও ছাড়তে বাধ্য করেছিল।’

‘তাহলে…’

 মিঠু মলিন হাসল।

ওর চুলে কি পাক ধরেছে? চেহারায় উজ্জ্বলতা নেই কোনও। কিন্তু ঠাণ্ডা মৃত্তিকার মতো একরকমের সরল শান্ত মুখচকিতে অহনার মুখ ভেসে উঠল তৃপ্তির মুখও। রবি কাউকেই দৃশ্যপট থেকে ডিলিট করতে পারল না। শুধু কয়েকটা শব্দ ওর মাথার পাশে বোঁ বোঁ করছে- ‘পাতি একটা লোক।’ 

  ‘কী ভাবছিস, রবি?’ মিঠু বলল, ‘আমি কিন্তু ঠিক কথাই বললাম।’ 

  ‘কোন কথাটা?’  

 ‘আমার ঘরে যাবি? চাহিদা নেই? বউ সব মেটাতে পারে? দীপক বলত, আমি নাকি কিছুই পারি না। তুই একবার পরখ করে দেখবি নাকি?’

 ‘কী যা তা বকছিস তুই! তোর মাথা খারাপ হয়ে যায়নি তো?’  

মিঠু এবার খিলখিল করে হেসে উঠল। বলল, ‘পেটে খিদে মুখে লাজ! তবে কিছু ঝাড় না, প্লিজ। আমার মেয়েটার জন্য…’

রবির মাথা বোঁ বোঁ করতে লাগল। ও আর কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। মিঠু আরও কী-সব বলে যাচ্ছে। কিন্তু রবির চোখে হঠাৎ ভেসে উঠল গ্রামের উঠতি ব্যবসায়ী খোকনদার আড্ডাখানা। দামি মদের বোতল নামানো। মুখে গুচ্ছের খিস্তি উড়িয়ে খোকনদা বলছে- ‘শালা এত টাকা রোজগার করছি কী জন্যে মাইরি, যদি লাইফটাকে এনজয় করতে না পারি! জীবনে দু’চারটা মেয়েকে…’ রবি যেন মুহূর্তেই স্পর্শ পেল তৃপ্তির নরম উষ্ণ স্তনেরমিঠুর মৃত্তিকার শান্ত বিষণ্ণ স্পর্শ। অহনার ঘেমো শরীর। রবির ছুটে পালিয়ে যেতে করল দূরে, অনেক দূরে। নিজের প্রতি চরম এক ঘৃণাবোধ জেগে উঠল। পকেটে হাত ঢুকিয়ে যা পেল তা মিঠুর দিকে ছুড়ে দিয়ে সে হনহন করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল।