You are currently viewing তিনটি অণুগল্প > রাজিয়া নাজমী

তিনটি অণুগল্প > রাজিয়া নাজমী

 
 
রাজিয়া নাজমী
 
শালিকের আত্মহত্যা
 
 
একজোড়া শালিকের জন্য রোজ সকালে অপেক্ষা করে চেয়ারম্যান হাকিম । ঘুম ভাঙলেই তার মাথায় হিসহিস করে বাজে, ‘এক শালিকে দুঃখ আসে, দুই শালিকে সুখ, তিন শালিকে পত্র আসে । তিন শালিকে হাকিমের কিচ্ছু আসে যায় না। তাকে কেউ পত্র লেখে না। শুধু এক শালিক দেখলেই সারাদিন সে ভয়ে ভয়ে থাকে। রোজ ভোরের আজানের সাথে হাকিম চেয়ারম্যান দোয়া করে দুই শালিকের আগমনের জন্য। আহ, তবু কেন যে জোড়া ভেঙে আসে অবুঝ শালিকটা! অসহায় হাকিম বউয়ের দিকে তাকায়। চেয়ারম্যানের বউ হওয়ার পর থেকে বউয়ের বুদ্ধি যেন স্বামীর আগে আগে চলে। দিনে দিনে বউয়ের পরামর্শ ছাড়া এক পা আগে বাড়াতেও তার সাহস হয় না। সে তাই বউয়ের বুদ্ধিতে একজোড়া শালিক খাঁচায় বন্দি করে বারান্দায় রেখে দেয়। রোজ সকালে উঠে প্রথমেই সে বারান্দায় যায়। আদর করে ডাকে ‘ সুখ-সুখ ‘। নিজ হাতেই দানাপানি খাওয়ায়। তবু শালিক দুটো হাকিমকে দেখলেই তারস্বরে চিৎকার করে খাঁচার আরেক পাশে চলে যায়। বউ তখন সান্ত্বনা দেয়- সময় মত ঠিক পোষ মানবে। একটু সবুর করো। মাস না যেতেই এক সকালে বউয়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙে হাকিমের। বউয়ের হাত ধরে সে বারান্দায় আসে। বোবা চোখে দেখে- তার সব ভালোবাসা উপেক্ষা করে জোড়াশালিক আত্মহত্যা করেছে। তার শখের সুখদ্বয় খাঁচার ভিতরে ডানা মেলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে পড়ে আছে – নিথর দেহ । হাকিম চেয়ারম্যান মড়া শালিকের ব্যথিত ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে ভাবে, এত বড় খাঁচা, নিশ্চিত জীবন তবু শালিকের স্বাধীন জীবন চাই, নয় মৃত্যুই ভালো ? আহ, এমন সাহস তার বুকে কেন জাগে না?
 
 
যে ব্যথায় আগুন জ্বলে
 
 
ছোট্ট নীল প্যান্টে ছোপ ছোপ রক্ত । দুই চোখে ব্যথার জল নিয়ে মেয়ে বললো, মা, জ্বলছে। পাঁচ বছরের মেয়েকে বুকের ভিতর জড়িয়ে ধরে মা বলে, আমার চোখেও আগুন জ্বলছে মা!
 
 
ওরা
 
 
জনপদে রক্তের দাগ মুছে না যেতেই নেমে এলো ওরা আবার। এবার পথে-ঘাটে নয় – নির্দিষ্ট ঠিকানায়। এবার ওদের কারো সাহায্য নিতে হয়নি আমাদের বাড়ি চিনতে। ওরা বলে ওরাই আমাদের স্বাধীন করেছে। ওরা বলে, এই বাংলা আজ ওদের। এই বাংলার মাটি ওদের, ফসল ওদের, নারীও ওদের। আমাদের বাড়ি তাই ওদের চিনতে অন্য কারো সাহায্য নিতে হয়নি। ওদের বন্দুকের নলে কয়েক ফোঁটাই মাত্র বাংলার রক্ত। এটুকু দাবি যে ওরা করতেই পারে। আমাদের সম্ভ্রম ওদের হাতের মুঠোয় রাখতে পারে – এইটুকু জোরও ওরা করতেই পারে। যেহেতু ওরা আমাদের স্বাধীন করেছে।