গুচ্ছকবিতা>দেবদাস রজক
রক্তের রং ধূসর
পাটাতন থেকে উঠে এসে সূর্যের কাছে এলাম।
নোঙর ফেলেছি জলে
জলেই শূন্য নোঙর
মাথার ওপর ধোঁয়াটে চিল জলের নীচে কাঁকর।
পাটাতন থেকে উঠে এসে স্রোতের মুখে এলাম।
নোঙর ফেলেছি জলে
জলে উল্লাসে হাঙর
নৌকার পালে জ্বলছে নিহান ভাঙে কিংশুক নগর
পোকাজল থেকে উঠে এসে ফিঙের কাছে এলাম।
নোঙর ফেলেছি জলে
জলেই ভাসছে জীবন
বাড়ির ফটকে আঁকছি জন্ম মৃত্যুর চেয়ে কৃপণ
গলি গলি রাত ঘুরে এক মেয়ের কাছে এলাম।
নোঙর ফেলেছি জলে
জলেই দেখছি পতন
আলোর ঘরে ইঁদুর ঢুকে পুড়িয়ে খেয়েছে স্তন
পাটাতন থেকে উঠে এসে নিজের কাছে এলাম।
নোঙর ফেলেছি জলে
জলেই শূন্য নোঙর
নোঙরের গায়ে লেখা ছিল রক্তের রং ধূসর।
এই কিঞ্চন
এই কিঞ্চনের ভিতর একা এসে একাই গেলাম
মাঝে কতকগুলি শরীরের দখল, ফুল।
কথারা ঝরে যায় বৃষ্টি বৃষ্টি কখনও ধোঁয়ায়
এসেই উড়ে গেল কাক।
সারারাত ডেকে যাও প্রভু! আমার যাওয়ার কথা
এত গোপনে পাথরের ভেতর লুকিয়ে রেখেছ?
আমাদের দেখা হল কই!
আকাশের দরজা খুলে চলে যাচ্ছি… খুব ভোর…
আমার পুরনো উদ্যান তার পাশ দিয়ে
আদিম বৃষ্টি
এ রাস্তা ভিজেছে
আদিম-বৃষ্টিতে কতবার
দোকানে ঝাঁপ নামল রাত ন’টায়
জ্বালা থামেনি পাথর, ইট,
ট্রাম চলে যায় যে লোহার শরীর
কয়লার মতো জ্বলল সারারাত
হাই তুলল ভোর। ভোরের দরজায়।
বৃষ্টি এলো সারাদিন
চায়ের দোকানে আগুন জ্বলল
নিভল না শীতল মেঘে, মেঘের হিরণ্যছোঁয়ায়
আদিম বৃষ্টি এলো আবার।
জ্বালা থামেনি এখনো। পাথর, ইট,
ট্রাম চলে যায় যে লোহার শরীর
কয়লার মতো জ্বলল সারারাত
কবি পরিচিতি
— — — — — — — —
কবি দেবদাস রজকের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি শহরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এবং কাব্যসাহিত্যে গবেষণা সম্পূর্ণ করে বর্তমানে তিনি শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি ছোটগল্প, প্রবন্ধ, এবং ছবিও এঁকে চলেছেন। ‘নতুন কবিসম্মেলন’, ‘পরম্পরা’, ‘লেখাজোকা’, ‘টার্মিনাস’, ‘শতাব্দীর বাংলা’, একাধিক পত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছেন। তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থগুলি হল- ‘এক বাতাসের ছবি’, ‘বেরঙা শূন্য ফাগুন’, ‘ভাড়াটে শহর’। তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘জননী যন্ত্রণার কবি মঙ্গলাচরণ’। ২০২১ সালে মুর্শিদাবাদ থেকে পেয়েছেন ‘পন্ডিত দাদাঠাকুর।