দেবাশিস ভট্টাচার্য-এর গল্পের ভুবন
দেবাশিস ভট্টাচার্য’র জন্ম ১ ডিসেম্বর ১৯৬২ সালে সীতাকুণ্ড উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে। পিতা মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন সাহিত্যানুরাগী ও সঙ্গীতজ্ঞ। দেবাশিস ভট্টাচার্য বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত উপ ডাককর্তা । কবিতা, ছড়া, নাটক সহ সাহিত্যের সব মাধ্যমে সমানভাবে লিখলেও তিনি গল্পকার হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত। আশি দশকের উল্লেখযোগ্য গল্পকার হিসাবে বাংলা একাডেমী ঢাকা, কলকাতা বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত নাসরিন জাহান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের গল্প আশির দশক’ গ্রন্থে তাঁর ‘পোকা জাতের মানুষ’ গল্পটি অন্তর্ভুক্ত হয়। তাছাড়া দুই বাঙলার শ্রেষ্ট গল্পে তাঁর লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখনও তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন।
ছায়াময় ও অন্যান্য গল্প
নারায়ণ আচার্য্য
দেবাশিস ভট্টাচার্য লিখছেন আশির দশক থেকে।বাংলাদেশের কথা সাহিত্যে তিনি এ সময়ের অন্যতম গল্পকার। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ” আনন্দ মৃত্যুর কাছে “। এরপর তিনি ধারাবাহিক ভাবে পোকাজাতের মানুষ, আলোকিত কফিন, পাখিঘর,মেঘপ্লাবন,জল জলেশ্বর এর মত গল্প পাঠককে উপহার দিয়েছেন। যা ইতিমধ্যে সুধিমহলে সমাদৃত হয়েছে। তাঁর গল্পভাবনা গল্পরীতি নিয়ে বহু বিদ্যজন আলোচনা করেছেন,যা বিভিন্ন কাগজের সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। আনন্দ মৃত্যুর কাছে মূলতঃ মানুষের যন্ত্রণা, দ্রোহের গল্প। কোন কোন ক্ষেত্রে জীবনের চেয়ে মৃত্যু অনেক সুন্দর। পোকা জাতের মানুষ মূলতঃ জীবন জটিলতার গল্প। মানুষের জটিল মনোবিশ্বের বয়ান এটি।মানুষের মনের ভালোমন্দের দুটি দিক প্রধান্য পেয়েছে প্রতিটি গল্পে। কোন মানুষ আসলে পরিপূর্ণভাবে সৎ কিংবা অসৎ নয়।পারিপার্শ্বিক ঘটনা প্রবাহ তাকে সৎ কিংবা অসৎ করে তুলে। আলোকিত কফিন এটি মূলতঃ লেখকের শৈশবের আখ্যান। শৈশব হচ্ছে মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়কাল। শিশু ও কৈশোরকাল সরলতায় ভরা। এ যেন এক মধুর জীবনের উপাখ্যান।পাখিঘর মূলতঃ মেটাফর। এটি প্রেমের গল্প। দুটি হৃদয়ের প্রেমের ভিতর দিয়ে আমাদের সমাজ রাষ্ট্র নিয়ে ধর্মীয় কুসংস্কার, রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ণ নিয়ে চরম প্রতিবাদী গল্প। এই গল্পে সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন একজন কবি। কে যেন দু’হাতে সমাজের সমস্ত জঞ্জাল সরাতপ চায়।এ গল্পে বিষাদ- চরম হতাশা আছে। আবার নতুন করে বেঁচে ওঠার তীব্র আকাংখাও আছে। মেঘপ্লাবন- মেঘ আসলে এক সাংবাদিকের দম্পতির পুত্র। রাজনৈতিক অস্থিরতা ফ্যাসীবাদী ষড়যন্ত্রে এর ভয়ংকর হত্যাকান্ডে সে তার মা- বাবাকে হারিয়ে ফেলে। সে রক্তাক্ত সময়ে ছোট্ট শিশু মেঘ সমস্ত ষড়যন্ত্র ফেলে এ শিশুটি একা যুদ্ধ করে। একা বড় হওয়ার গল্প। সামরিক শাসনের পরবর্তী সময় হতে বাংলাদেশের যে ম্যাসলম্যান সংস্কৃতির জন্ম হয় তারই শিকার হচ্ছে সাংবাদিক দম্পতি। চরম রক্তাক্ত সময়ের উপাখ্যান মেঘপ্লাবন।তবে লেখক আশাবাদী- একদিন এ অমানিশা কেটে যাবে। একটা সুষম সমাজ কায়েম হবে। সত্যিকার মনুষ্যত্বের চর্চা করবে। মেঘপ্লাবনে ভেসে যাবে সমস্ত অন্যায়।আসবে নতুন ভোর। আমার আজকের আলোচিত গ্রন্থ হচ্ছে ” ছায়াময়”। এটি প্রকাশিত হয়েছে ফেব্রুয়ারী /২০১৮ইং,ঢাকা বিদ্যাপ্রকাশ থেকে। প্রথম গল্প ” আজ বিকালে একটা গাছের ছায়ায় বসেছিলাম কিছু সময়।”” গাছে গাছে নতুন পাতা,নবকলেবর,,,,, ,, বসন্তের মোহময় পরিবেশ চারপাশে। এ বছর আম্রমুকুল গাছে গাছে।। বৃষ্টি হবে কিনা ভাবি। ঘাসের এতো সুন্দর মাথা তুলে দাঁড়ানোর শক্তি আসলে কি তাই ভাবলাম, আলগা মাটিতে সে এতো জোর পায় কি করে। পাখি ডাকে। বাদুর গাছে ঝুলে দোল খায়।সেদিকে আমার মন নেই। আমার মন তখন হরিনাথের সুরে পাগল পারা……. সে তীব্র বাঁশির সুর সমস্ত মনোযোগ কেড়ে নেয়।কি বাঁশি বাজাইলা বন্ধু মন যে কেমন করে….. ছায়াময় মূলতঃ জীবনেরই শিল্পিত প্রতিরূপ। আমি তুমি, সে যে কারো হতে পারে। সুন্দর অগ্নিময় আমার ছায়াময়… নিবিড় হোক তার পথ চলা।
বিশাখা একজন সুন্দরী,শিক্ষিতা ও ধনী পরিবারের মেয়ে। যে কোন কারণে পরাণের সাথে তার বিয়ে হয়।বিয়ে হবার পর ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু পরাণদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না।যদিও শিক্ষিত পরিবার। তার বিবাহ যোগ্য ছোট বোন ছিল। পরাণ সরকারি একটা টেলিগ্রাম অফিসে চাকুরি করে। তার কর্মস্থল বাড়ি থেকে অনেক দূরে এক সমুদ্র শহরে – বিভাগীয় অফিসে। বিয়ের পর সে বৌকে কর্মস্থলে নিয়ে যেতে পারে না।সেখানে নিয়ে রাখার মত আর্থিক সক্ষমতা ছিল না,ফলে যার কারণে সে বৌকে মা- বাবার তত্বাবধানে রেখে যায়। বিয়ের পরেই পরাণকে কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়।তিম- চার মাসের আগে কোন ছুটিও পায় না বলে সে আসতে পারে না বাড়িতে। এর ভিতরে শুরু হয় টানাপোড়ন।বিশাখার সাথে তার মা- বাবার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। এক সময় বিশাখা রাগে ক্ষোভে শ্বশুরকে গাল-মন্দ করে ভাইয়ের হাত ধরে বাড়িতে চলে যায়। আর কখনো ফিরে আসে না বিশাখা। এ সংবাদটুকু বাবা চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়।তখন পরাণের মধ্যে এক হাহাকার সৃষ্টি হয়।
এ দুঃখবোধ থেকে সৃষ্টি হয় নানান পরাবাস্তবতা- যেগুলো নিত্য সঙ্গী। এ সময় কাব্যময়ী আসে। তার সংগে বন্ধুত্ব হয়।ছায়াময় যেন তার বুকের ভিতর ঢুকে হো হো করে হেসে ওঠে। এভাবে অজস্র গল্প তৈরী হতে থাকে। তখন মাঝে মাঝে বিশাখার কথা তার মনে পড়ে। এটা কোন প্রমের সম্পর্ক নয়।স্নেহেরও নয়।ভালোবাসারও নয়। বরং তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বা অহংকারের।এরকম একটা মেয়েকে বিয়ে করে কখনো সংসার করা যায় না।কিছু ওলট- পালট ভাবনার কারণে মানুষের জীবনের পথ বদলে যেতে পারে বা বদলে যায়। সেরকম ঘটনাই ঘটেছে পরাণের জীবনে। যাহা পড়তে পড়তে যে কোন পাঠককে কাঁদায়।পরাণের বাবা বোনের ফরম ফিলাপ এর টাকা পাঠাতে বলে।
সে সাথে ঘর সংসারের খরচটুকুও,নিজের খরচাটাতো আছে। এগুলো বিদ্বান পাঠকের মন স্পর্শ করে। এখানে সব চেয়ে যে মেঠাফোর কাজ করে তা হচ্ছে কাব্যময়ীকে নিয়ে পরাণের স্বপ্নযাত্রা।যাকে নিয়ে সে স্বপ্নের ঘর বাঁধে। এভাবেই দিন পার হয়ে যায়। স্বপ্নগুলো এক সময় সমুদ্রের জলের মতো বা হাওয়ার বুদবুদের মতো মিলিয়ে যায়। মানুষ তো অমর নয়,স্বপ্নময়তা ভাব- বিহ্বলতা ভালোবাসা অনুরাগ বিচ্ছেদ – এসব পাশাপাশি মানুষের মনে এক গভীর অনুভবের জন্ম দেয়। এ বিষয়টি তুলে আনার চেষ্টা বিশেষভবে লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রতিটি চরিত্র আমাদের চেনা,যেন প্রতিদিন চারপাশে এ মুখগুলো আমরা দেখি।ওরা ঘুরে বেড়ায়। কথা বলে। সর্বোপরি সমস্ত চরিত্রগুলোকে বিশ্বাস যোগ্য মনে হয়। একটি মহৎ গল্পের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তার প্রকরণ,গল্পভাবনা, নির্মাণ এবং তার ভাষা। যা দিয়ে একজন শক্তিমান লেখককে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। দেবাশিস ভট্টাচার্যের গল্প “ছায়াময়” পড়তে পড়তে আমাকে বারবারই সেই অদ্ভুত বাড়িটির কাছে নিয়ে যায়। যে বাড়িটি ফুলে ফুলে ঢাকা, ছায়াভীতি আম্রকানন বাড়ির সামনে একটি লিচু গাছ।একটি দোতলা বাড়ি – টানা বারান্দা – অনেকগুলো কক্ষ। গাছে গাছে যেখানে সব সময় পাখিদের রাজত্ব। এখানে তাদের ডাকে সকাল হয়,আবার তাদের ডাকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। এ গল্প পড়তে পড়তে আমার যে উপলব্ধিতা হচ্ছে এক অদ্ভুত সুরময়তা,যেন ঘিরে রাখে তার পাঠকদের। যে সুর আত্মার সুর। যা গোপনে বেজে চলে নিরবধি।
২য় পর্ব
রিক্ত দোয়েলেও ছায়াময়ের স্বপ্নময়তা দেবুর ভিতরেও একই সমান্তরালে বিভিন্ন ঘটনার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়।দেবু ছায়াময়ের বিভিন্ন রূপ একই স্বপ্নময়তায় আচ্ছন্ন। নীলু কে? দেবুর ছোটবেলায় নীলুর সাথে ভাবের সম্পর্ক তৈরী হয়।পরবর্তীতে কিশোরী বেলায় ভুল যুবকের সাথে পালিয়ে যায়। সেখানে তাদের সংসার হয়।কিন্তু বিয়ে হয় নি।এর মধ্যে সন্তান আসে।যা শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে। অনেকটা ধর্ষনই বলা যায়। মদমত্ত হয়ে নীলুর সাথে শারীরিক মিলন,দফায় দফায় গায়ে হাত তুলে নির্যাতন। যার কুফল সন্তান অনিরুদ্ধ জন্মগত অসুস্থতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। এভাবে বাড়তে থাকে অনিরুদ্ধ। ওখানে বাসা ভাড়া করে থাকে। একদিন গ্যাস সিলিন্ডারে নীলু ভয়ানক আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায় সে যুবক। যাকে নিয়ে নীলু স্বপ্ন দেখে পালিয়ে গিয়েছিল। ভর্তি করিয়ে সে পালিয়ে গিয়েছিল নীলুর কাজ থেকে চিরতরে। নীলু সুস্থ হবার পর বাসায় চলে আসে। এদিকে যে দেবু ছোটকালে নীলুকে নিয়ে স্বপ্নের বাসা বেঁধেছিল মনে মনে সে নীলুর দেখা পাবার আশায় প্রতিদিন রেল স্টেশনে বসে থাকে। যদি তার স্বপ্নের নায়িকা নীলু আসে এই ভরসায়।এই প্রতীক্ষা যেন শেষ নয়।কিন্তু একদিন সত্যি সত্যি নীলু ট্রেন থেকে নামার পর যখন তার মুখোমুখি হয় এবং কোলের বাচ্চাটিকে দেখে তখন তার মনে গভীর এক ভাবময়তার সৃষ্টি হয়,এখানেই এক স্বপ্নময়তার ভিতর দিয়ে দেবুর মনে এক পরাবাস্তব গল্পের জন্ম আখ্যান শুরু হয়,এবং ক্রমশ তার ডালপালা মেলতে থাকে। এভাবময়তা ও পরাবাস্তবতার আধার উন্মোচিত হয়।আস্তে আস্তে বিভিন্ন কাহিনির স্পর্শে ছত্রে ছত্রে এগিয়ে থাকে। একসময় নীলুর সাথে দেবুর বিয়ে হয় সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর ফুলশয্যার রাতে নীলু এক গভীর অপুর্ণতা নিয়ে পাশের রেল স্টেশনে রেল গাড়ির নীচে ঝাঁপ দেয়। এভাবে এক বেদনার ভিতর দিয়ে এ গল্পের সমাপ্তি ঘটে,যা পাঠকদের মনে ভীষণ রেখাপাত করে। অনেক অনুভব কিংবা উপলব্ধি না থাকলে কোন গল্পে এ রকম শেষ আখ্যান বা সমাপ্তি আমরা বলি- গল্পে তুলে আনা সম্ভব নয়।এখানে গল্পকারের দক্ষতাই মূখ্য। জীবন একটি প্রবাহিত নদীর মত সুরলা জলতরঙ্গে টুংটাং শব্দের মত বাজে। সে জল কখনো সহজ স্রোতে গড়ায়।আবার কখনো ভয়াল ধ্বংসে উম্মুখ জল স্রোতে পরিণত হয়।প্লাবিত করে এবং ধ্বংস করে দেয় চারপাশ। জীবনের এ সত্যটিকে দুটি মানব চরিত্রের ভিতর দিয়ে প্রকাশ করেছেন গল্পকার। এই রিক্তদোয়েলের গল্পে একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার বেদনা এতটা প্রকট হয় যা,যেকোন পাঠকের মনোভাবনাকে স্পর্শ করে। কিংবা তাকে ভাবায় যে শেষ পর্যন্ত দেবু নীলুর মৃত্যু দৃশ্য দেখে এবং পৃথিবীতে রিক্ত দোয়েলের মত একা হয়ে উঠে।
৩য় পর্ব
“সিঁথিদি আমার পরাবাস্তব নারী”- এটি একটি পরাবাস্তব গল্প। গল্পটি শুরু হয় এভাবে- মানুষের জীবনে এমন একটি সময় আসে- মনের অজান্তে যখন সূূূন। ছেলেগুলো হৈচৈ করে মাঠ পেরিয়ে ঘাটের নৌকায় তুলে দিল,বড় ভাল এই এই দুষ্টু ছেলের, সতত। চারদিকে কোলাহল জেগে ওঠে। লোকজন ওঠে বসলে নৌকা ছাড়ে মাঝি, স্যুটকেসটা হাত ধরে চুপচাপ বসে আছে সিঁথি। যেন বাপের বাড়ি আসছে, নদী শান্ত। এখন বর্ষার সে তীব্র স্রোত নেই। দু’একটা চোরা স্রোত পাক খেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ব থেকে পশ্চিমে, চিনবে তো ছায়াময়? ভাবে সিঁথি, মন বলে ওঠে যেন, চিনবে গো চিনবে। একটু হাসির রেখা মুখ থেকে মিলিয়ে যায়, সত্যি সে গ্রাম আর কতদূর…..। এভাবে গল্পটি এগুতে থাকে। এটা ছায়াময়ের বাড়ির পথ।যা সিঁথি অতিক্রম করছে। একসময় সে ছায়াময়ের বাড়িয়ে এসে পৌঁছায়। বাড়িয়ে এসে সিঁথির প্রশ্ন? “এটা ছায়াময়ের বাড়ি না?” ছায়াময়কেই প্রশ্ন করে সে।হ্যাঁ– বলে হোহো করে হেসে ওঠে। ছায়াময়ের বাড়িটা শান্ত। পূজোর বাজনা থেমে গেছে। এখন আর কোলাহল নেই। তার পুরোনো বইপত্র গুলো নিয়ে শুকাতে দেয় সিঁথি। ছায়াময়ের বাগানে ফুল আর ফুল। ভালো লাগে সিঁথির। এভাবে ছায়াময়কে নিয়ে গল্পটি এগুতে থাকে। তারা সকাল- সন্ধ্যা এ গ্রামটি ঘুরে বিভিন্ন সময়ে কাছাকাছি আসে। ছায়াময়ের বাড়ির বর্ণনা এবং তাদের দুটি হৃদয় একাত্ব হয়েছে। এভাবে তারা পরস্পর একাত্ব হয়। কিছু বর্ণনা অপূর্ব নৈসর্গিক। যেমন ভোরের আলো ফুটছে ডিমের কুসুমের মত।ময়না মাসির জীবনের ঘটনা প্রবাহ,সে দ্বীপের জীবন। একটি গ্রাম, একটি বাড়ি এবং ছায়াময়কে ঘিরে এ গল্পের আখ্যান গড়ে ওঠে। তাদের দুআত্মার বন্ধনে গল্পের পরিণতি পাঠকের মনকে স্পর্শ করে। এটি সচরাচর ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নয়। এটি অনেক ভাবনা,পরিবেশ পরিস্থিতি নানান প্রশ্ন নিয়ে দুটি হৃদয়ের একাত্ব হয়ে ওঠে যা পাঠকের মনকে স্পর্শ করে। প্রতিটি গল্পে দুঃখ – বেদনা আনন্দ প্রাপ্তি ও কম নয়। যে সময় এর যে পরিবেশ পরিস্থিতি ছায়াময় উপন্যাসে তুলে আনা হয়েছে তা অনেকটা ছবির মত।যা আমাদের ছিল অনেক দিন আগে পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে তিনটি গল্পই একই সূত্রে গাঁথা। স্বপ্নে দেখে সে বাড়িটির মত অপূর্ব কিছু মূল্যবোধ ছায়াময় ধারণ করেছে তার প্রতিটি পর্বে আশির দশকে যে কজন গল্পকার নিজস্ব গল্পভাসা ও নিজস্ব গল্পধারা তৈরি করতে পেরেছিলেন তাদের মধ্যে দেবাশিস ভট্টাচার্য অন্যতম। তিনি ছবির মত প্রতিটি দৃশ্য শব্দের বুননে প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যার সংযুক্ত তার সৃষ্ট চরিত্রটা তার রক্তমাংশে মানুষ হয়েছে। অনুভব সৃষ্টি করে কাঁদায় হাসায়।প্রতিটি উপন্যাসে কিছু মূল্যবোধ থাকে। ছায়াময় মূলতঃ আমাদের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির গল্প। কিছু ঘটনার ভিতর দিয়ে আমাদের লোক সংস্কৃতি, কিছু পূজা পার্বণ এবং সে সময়ের একটি সুগভীর চিত্র উপন্যাসে বর্ণনা করেছেন তিনি এজন্যেই তাঁর দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। গল্প অনেকে লিখেন,গল্পে দার্শনিক ভাবনা না থাকলে সে গল্প পাঠককে স্পর্শ করে না এবং চরিত্র বিষয়ানুগ নাহলে তার কাঠামোকে গল্পের গভীরে টেনে নিয়ে যেতে পারেনা, একারণে বর্তমান সময়ের গল্প শুধু কাহিনী নির্ভর হলে চলে না। আত্মবিশ্লেষণ কিংবা মনোবিশ্লেষণও জরুরি। যা কিনা গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায় অনেক খানি।