You are currently viewing আদুনিসের কবিতা ‘জখম’, ভাষান্তর: রফিক জিবরান

আদুনিসের কবিতা ‘জখম’, ভাষান্তর: রফিক জিবরান

আদুনিসের কবিতা ‘জখম’

পুরো নাম আলি আহমেদ সৈয়দ ইসবার, জন্ম সিরিয়ার লাটাকিয়ার কাছে একটি কৃষক পরিবারে। ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে স্বদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে লেবানন এবং ফ্রান্সে বসবাস। তাঁর কবিতার সাথে মিশে আছে এক ধরণের সুক্ষ্ম সুফিবাদ এবং স্যুররিয়ালিজমের ধারা, যা আরব ভাষায় রচিত কবিতার ঐতিহ্য থেকে স্বতন্ত্র।  এখানে ভাষান্তরিত জখম (The Wound) কবিতাটি খালেদ মাত্তাওয়া কর্তৃক অনূদিত এবং ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত Adonis, Selected Poems’ থেকে নেয়া  হয়েছে।   

জখম

বাংলা ভাষান্তর: রফিক জিবরান

১.

বাতাসের পরশে ঘুমানো পাতারা—

আহত তরণীর জমানো বেদনা পুষে রাখে,

যখন একেঅপরের মাথায় যুগের গ্লানি ধসে পড়ে

ক্ষতের গৌরব নিয়ে।

আমাদের চোখের পাপড়ি থেকে গাছেরা বড় হয়

দিঘির জলে প্রস্ফুটিত বেদনার সাথে। 

 

সাঁকোগুলোতেও জখমের চিহ্ন দেখা যাবে

কবরের সীমানা যেখানে প্রসারিত।

আমাদের প্রেম ও মৃত্যুর সমুদ্রতীরে ছুটে চলে

সহ্যশীলতা নিরন্তর।

 

জখম একটি চিহ্ন, 

এই জখম আবার, পেরিয়ে যাবার মোড়ও।

 

২.

মৃত্যুর ভাষায় আমি মিশিয়ে দিই

জখমের কন্ঠস্বর।

দূর অতীত থেকে যে পাহাড় ছুটে আসে

শুকনো দুনিয়ার ধূলোর সাথে মিশে যেতে যেতে

সময় আছড়ে পড়ে রুক্ষ প্রান্তরে-

আমি সেখানেও জখমের দহন জ্বালাই। 

 

ইতিহাস পুড়তে থাকে আমার জামার ভেতরে

কিন্তু যখন দেখি, আমার বইগুলোর পাতারাও শুকিয়ে যাচ্ছে, 

আমি জোরে কেঁদে উঠি।

 

“কে তুমি? কে তোমাকে নিক্ষেপ করলো

এই সরলা ভূমিতে?”

আমার বইয়ের ভেতর থেকে, আমার সারল্যে দাঁড়িয়ে, 

ধূলির তৈরি একজোড়া চোখের দিকে তাকিয়ে শুনি, কেউ বলছে—

“আমি সেই জখম যার জন্ম হলো,

এটা বড় হতে থাকবে ইতিহাসের সাথে সাথেই।”

 

৩.

বিচ্ছেদ বেদনায় আহত কবুতর

আমি তোমার নাম দিলাম মেঘ,

আমি তোমার নাম দিলাম বই এবং কলম

আর, এখানেই শুরু করছি একটা সংলাপ

আমার সাথে আর সেই প্রাচীন জিহ্বার সাথে,

প্রাচীন পতনের দ্বীপমালায়—

এইসব মহান গ্রন্থের ভেতর।

এবং আমি এখানে বাতাস আর খেজুর গাছদের শেখাই সেই শব্দগুলো

হে আমার জখমি কবুতর!

 

৪.

আমার কাছে যদি থাকতো স্বপ্ন ও আর্শির

একটি বন্দর আর একটি জাহাজ

যদি থাকতো একটি শহরের অবশিষ্ট,

বা এমন শহর যেখানে শিশুরা আছে, কাঁদছে,

তবে আমি জখমের সম্মানে লিখে রাখবো

সবকিছু।

 

একটা গান হবে তীরের ফলা

ঢুকে যাবে জলের মতন অবারিত

গাছপালা, পাথর, আকাশ পেরিয়ে

শুরু হবে তার বিজয়কেতন।

 

৫.

হে মহাবিশ্ব,

স্বপ্ন ও আকাঙ্খায় আমাদের সাজিয়ে দাও, 

মরুভূমে ঝরুক বৃষ্টি৷

বৃষ্টির ধারা কাঁপিয়ে দিক আমাদের,

আমরা তো সকলেই খেজুরের জখমি হৃদয়।

 

ছিঁড়ে ফেলো গাছেদের সেই ডালপালা,

জখমের বেদনায় যারা নীরব থাকতেই ভালবাসে,

যারা জেগে থেকেও ঘুমায় আর তাকায় কেবল

তাদের নরম হাত আর চোখের পাপড়ির দিকে।

 

স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষার মনোহারি বিশ্ব,

ধসে পড়ে আমার ললাটে,

ক্ষত দেহের ‘পরে বেতের আঘাত যেমন।

আমার কাছে এসো না, জখমের খুব কাছে

প্রলোভিত কোরোনা আমায়,

জখমই বেশি সুন্দর।

 

তোমার চোখের জাদু তবু উড়েছিল

শেষ দুনিয়ার রাজত্বে,

জখমটি যখন পেরিয়ে গেছে,

রেখে যায়নি একটাও পাল,

রেখে যায়নি কোনো দ্বীপও

যা তোমাকে পারাপারে প্রলুব্ধ করতে পারে।

 

 

রফিক জিবরান এর জন্ম এবং বেড়েওঠা রাজশাহীতে। পদ্য, প্যারাবল ও গদ্য লেখেন, কখনো পরদেশী কবিতার অনুবাদ। প্যারাবল ও গদ্য সঙ্কলন ‘আধাসিকির মিহিদানা’, প্রথম খণ্ড, ‘এগারোসিন্দুর’ এবং তরুণদের জন্য পদ্যধর্মী ‘তিন ডানাওয়ালা পাখি’ লিখেছেন। ‘আধাসিকির মিহিদানা’, দ্বিতীয় খণ্ড এবং ‘আমার ভাগ্য ঝুলে আছে টিয়া পাখির ঠোঁটে’ কাব্যগ্রন্থের কাজ এগিয়ে চলেছে। হাতে আসবে এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে।