বইমেলার খোলাচত্বর: কথোপকথন/ ইশরাত তানিয়া
অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে মন-মানচিত্র সাহিত্যকর্মের বার্তা সাহিত্যের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য কবিসাহিত্যিকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে। আজ আমরা কথা বলেছি কথাসাহিত্যিক ইশরাত তানিয়ার সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ধ্রুব সাদিক।
মন-মানচিত্র: গ্রন্থ মূলত দীর্ঘ একটা সময়ের সাধনার ফসল। অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে আপনার প্রকাশিত গ্রন্থের ব্যাপারে জানতে চাই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ায় আপনার অনুভূতিও যদি শেয়ার করতেন।
ইশরাত তানিয়া: আমার ৩য় গল্পবই ‘মেলো ইয়েলো, শিউলিগাছ আর বারান্দা হচ্ছে’ বইটি জলধি থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বই প্রকাশের অনুভূতি অবশ্যই আনন্দের। বিশেষ করে বই প্রকাশের আগে গল্প নির্বাচন, প্রচ্ছদ নির্বাচন, দফায় দফায় প্রুফ দেখাসহ কিছু কাজ নিজেই করি। সেই পরিশ্রমের ফল বই হয়ে হাতে এলে মন ভালো না হয়ে উপায় নেই।
মন-মানচিত্র: আপনার পূর্বে প্রকাশিত সাহিত্যকর্মও কি পাঠকরা গ্রন্থমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন?
ইশরাত তানিয়া: আগের দুটো গল্পবই পাঠক বইমেলা থেকে সংগ্রহ করতে পারবে। ‘বীজপুরুষ’ দেশ পাবলিকেশান্সের স্টলে, ‘মদ এক স্বর্ণাভ শিশির’সহ ‘মেলো ইয়েলো, শিউলিগাছ আর বারান্দা হচ্ছে’ জলধির স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। জলধির স্টল নাম্বার ৪৬। লিটলম্যাগ চত্বরেও আছে জলধি। ৭০ নাম্বার স্টলে।
মন-মানচিত্র: অমর একুশে গ্রন্থমেলা লেখক-পাঠকদের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনের কাজটিই যে করে তাই নয়, এইসময় গ্রন্থপ্রেমিকদের মধ্যে খুশির আমেজও পরিলক্ষিত হয়। গ্রন্থমেলাটিকে প্রাণবন্ত করার ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।
ইশরাত তানিয়া: সে তো বটেই। বইমেলা যেহেতু বইকে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠিত হয় তাই লেখক-পাঠক সরাসরি যুক্ত হওয়া, ভাবনা বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। বইমেলাকে প্রাণবন্ত করতে হলে প্রতিদিন প্রকাশকরা বইমেলায় নিজেদের স্টলের সামনে তাৎক্ষণিকভাবে বই-আলোচনার ব্যবস্থা করতে পারে। এতে পাঠকরা বিশেষ কোনো বইটি সম্পর্কে আগ্রহী হবে। বেসরকারি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো লেখক ও পাঠক নিয়ে আলোচনার আয়োজন করতে পারে। পাঠকও যখন আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে অর্থাৎ পঠিত বই নিয়ে মতামত প্রকাশ করবে বইমেলা একই সাথে সার্থক ও সুন্দর হবে বলেই মনে করি।
মন-মানচিত্র: গ্রন্থমেলার সাথে প্রকাশনায় জড়িত মানুষের রুটিরুজির সংস্থানের ব্যাপারটিও জড়িত। এই ব্যাপারে আপনি যদি আপনার মতামত শেয়ার করতেন।
ইশরাত তানিয়া: যেকোনো বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রকাশক শুধু বইয়ের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করছেন শুধু তা না, বইমেলার স্টল নির্মাণ, বইয়ের বিজ্ঞাপন, খণ্ডকালীন বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগসহ অন্যান্য খাতেও খরচ করতে হয়। সেই বিনিয়োগের লাভজনক রিটার্ন না এলে প্রকাশক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এটা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এটা তো সত্য যে দু’বছরের কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা হবে কি হবে না, হলেও বা কতদিন মেলা চলবে এসব অনিশ্চয়তায় প্রকাশকদের আর্থিক ঝুঁকি বেড়েছে।
মন-মানচিত্র: বইমেলার পর প্রকাশিত বইয়ের আর খোঁজ বিশেষ থাকে না। আমাদের দেশে বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।
ইশরাত তানিয়া: এটা দুঃখজনক হলেও সত্য বইমেলার পর প্রকাশিত অনেক বইয়ের খোঁজ থাকে না। আশার কথা এই যে, অনলাইনে এখন সারা বছরই বই কেনা যায়। প্রকাশনা সংগঠন থেকেও অনলাইনে বই বিক্রি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আমি মনে করি প্রকাশনাগুলো যদি দেশের স্থানীয় পর্যায়ের দোকানগুলোকে পরিবেশক হিসেবে বই সরবরাহ করে তাহলে বইয়ের দোকান কম হলেও বছরজুড়েই পাঠক বই পাবে।
মন-মানচিত্র: কোভিড পরিস্থিতিতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, পাঠকদের প্রতি আপনার বার্তা যদি শেয়ার করতেন।
ইশরাত তানিয়া: কোভিড পরিস্থিতিতে পাঠকের উদ্দেশ্যে শুধু একটা কথাই বলবো- বইমেলায় যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। পছন্দের বইটি সংগ্রহ করতে গিয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়া কাম্য নয়।
মন-মানচিত্রকে অনেক ধন্যবাদ।
মন-মানচিত্র: আপনাকেও ধন্যবাদ।