মহান বিজয় দিবস ২০২১ সংখ্যা
মন-মানচিত্রের সকল পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই ৫০তম বিজয় দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা। ত্রিশলক্ষ প্রাণ ও দুইলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা হলো বাঙালী জাতির যক্ষের ধন। বাঙালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো সর্বশ্রেষ্ঠ লড়াই ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের যুদ্ধ যা বাঙালী জাতিকে একটি স্বাধীন ভূখন্ড, একটি পতাকা, একটি জাতীয় সঙ্গীত তথা আত্মপরিচয় এনে দিয়েছে। তাই স্বাধীনতা, স্বাধীন দেশ, বাঙালী জাতিসত্তাই হলো বাঙালী জাতির অমূল্য সম্পদ।
স্বাধীনতা অর্জন যেমন কঠিন তেমনি স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা ততোধিক কঠিন। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাস তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। একাত্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বাধীনতাবিরোধী দেশদ্রোহী ধর্মান্ধ অপশক্তি বিজাতীয় শক্তির সহযোগিতায় বারে বারে শকুনের থাবা দিয়ে খামচে ধরার চেষ্টা করেছে স্বাধীন পতাকা। স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় পরিচালনার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছে কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের প্রতিরোধের মুখে। এখনো তাদের অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। ক্ষমতাসীন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির নৈতিক স্খলনের সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিগুলো মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক দলের ভেতর ঢুকে পড়ছে এবং জেলা-উপজেলা ও কেন্দ্রের নেতৃত্ব দখল করে নিচ্ছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কার্যক্রম উসকে দিচ্ছে ধর্মের লেবাসে। মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। ধর্মীয় আলখাল্লা দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ থেকে বাংলাদেশকে অনেক দূরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বাঙালীর মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে ধর্মীয় চেতনাবিরোধী বলে কূপমুন্ডকতাকে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে বাঙালী জাতিসত্তার বিকাশের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে আনতে হবে।
বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করে ধর্মনিরপেক্ষ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের পথরচনায় সকল মুক্তিকামী মানুষকে সোচ্চার হবার আহবান জানাই।