সনেটগুচ্ছ/ ঋজু রেজওয়ান
ডুমুরের শোক
পূর্বমেঘ চলে গেছে উত্তরখণ্ডের দিক
তবু, রামগিরি ভূমি শুকনো কাঠের স্তুপ,
উজান বাঁশির সুর কেন জানি তা নিশ্চুপ
ঘুঘুর বাসার মতো। কার জন্য এত্ত ঋক!
আমার ফসল কেটে যেটুকু নিয়েছ প্রাণে
সেখানে ফসিল ওড়ে যেন নন্দের আঁধার,
জিপসি পালক পোড়ে সেই সমস্ত রাজার
যারা নিয়তির চুলে কাঁটা রাখে সাবধানে।
শিরিষের ডালপালা, ছড়ানো অলীক চাঁদ
সেটুকু মায়ার ছায়া রেখো চালতার ফুলে,
বিরান এ শূন্য ভূমি পেঁপের ডানায় দোলে
আনোখার চরাচরে ডালিমের ফোটা সাধ।
পাখির শিসের মতো নরম হাওয়ার ঝড়ে
ভেঙে পড়ে সরোবর, মৃত সঞ্জীবনী, দূরে…
ইতিকথা
বসন্ত বৃষ্টির শিশ্নে…অদিপাউস-আন্তিগোনের
হাঁটার মগ্নতা লিখো, মরপৃথিবীর যত সাধ___
কৌশিক রৌদ্দুর ছুঁয়ে জানালার কাঁধে বাঁকা চাঁদ
আয়ূধ ভোরের শীষ—নগ্নতার হিরন্ময় ক্ষণে।
সাকি-সুরার ছোঁয়ায় কাপালি-ক্লিভেজ গিলে চিল
নরোত্তম! কী সুন্দর! ফিনফিন দুপুর-সন্ধ্যায়___
সাঁড়াশি মাতাল জ্বরে দুই জঙ্ঘার পুলক, হায়!
নিয়ন আলোর দূরে এটুকু…না হোক, ঝিলমিল।
সুদূরে পালক খসে…দেবতার ইতিকা। যদিও
বিতৃষ্ণার ধূমজালে স্বর্গীক গন্ধম প্রাণ খুলে___
হেঁটে আসে লীলাধামে; এবং প্রেম প্রেম বোতলে
ফিনিক্স ফিনিক্স উড়া। এটুকু…থাক সুখ তবুও।
এখনও বৃষ্টিতে ভিজে আদম-ইব মিলে মৌবনে,
বসন্তের ছাল খুলে—উচ্ছ্বল প্রেম ছিলা যৌবনে।
শঙ্খলাগা
এ কুয়াশা আঁচলের ভিতর গীত্গোবিন্দের আলাপ
বিষাদী গোধূলী সান্ধ্য-শাঁখ, বাজছে তন্ত্রীর তলায়,
বিদুষী হাজারো বৎসরের শোক যাপন ক্ষার, কলায়!
বিরহ পদাবলীর বুকেই তুক-তাকের দাও জোলাপ।
কথারা আজও উপন্যাসের গল্পে মশগুল, কারণ
কবি রবিঠাকুরের কলম, চায় শোভনলাল বালক;
নিজেকে দেখে লাবণ্য-দুখ, গাঁথছে গল্পের পালক
তবু চলে বুড়ুচণ্ডী দাস…শ্যাম-রাধার প্রেম, হনন।
মানে না কোনো বাঁধার প্রাচীর…উচ্চ পর্বত-সাগর,
ভালোবাসা বুঝে সুপ্ত মন___মর্ত্য সুখ বিশ্বাসের…
কাননে গাঁথে ফুটন্ত ফুল, সব সময় আশ্বাসের___।
চোখে-মনে-হৃদয়ের কলুষ! ছাড়্ অবিশ্বাসের নগর।
নিরহ-বোকা কুলুঙ্গিতেই___ইচ্ছে হত্যায় কী রাজ?
পৃথিবী বাকলে শঙ্খচূর…ধরছি হাত, ছাড়ব ন’য়াজ।
মেনোপোজকাল
আসি- বৃদ্ধকালের জরাগ্রস্ত শাখায়…
‘বাসি’ গুপ্ত দিনের ইথারীয় অবকাশ
‘নাশি’ ক্ষুব্ধ পথের তারা মগ্ন সকাশ
হাসি- দুঃখ লয়ের বেদনার জলসায়।
যত ভ্রষ্ট প্রেমিক অধিকাল লুটে নেয়…
তত কষ্ট ভুলের, যে রাধায় করে বাস
শত দুঃখ প্রহার প্রিয় নাম রাখে শ্বাস
গত যৌবনার পাথারেই শুষে ব্যয়।
ভুলি- নষ্ট-সময় রাধা-কৃষ্ণ লীলার…
ধুলি অন্ধকারের নীলাময় চবুতর
তুলি, পান্থজনের আলো ’তুর’ সোনাঘর
খুলি- পুষ্ট ফলের আবরণ কেবা আর।
বিষাদের ব্যথাযোগ, বিরহীর বুকে ঝড়
অবিমিশ্র বেদন…পোড়ে সব বাতি ঘর।
মে ‘be
তেজকটালে শ্রমিকঘাম গড়ছে পদ্মার ব্রিজের বেইজ
ভরা জোয়ারে সুবোধ-চাঁদ শান্ত সুস্থির কতক কাল?
অনাদায়ী যাপনের ঘর মাগফিরাত চায় চাষের হাল
উপবাসি কত চাঁদ-রাত। ক্ষুব্ধ…ঊর্মির মাভৈঃ তেজ।
চারিদিকে হতাশার ম্যাপ, নিত্য পাল্টায় ক্যালেন্ডার
অচেনা গলি কাজের পর পিত্ত-রাস্তায় পাঠায় রাজ
অথচ খাঁটুনি, নির্মম। পয়সা নয়ছয় সোনার খাঁজ?
ছেঁড়া রুটি ছিঁড়ে হরদম, কারখানার সব মেশিন তার।
তামাটে ঘরে চালের খুদ একদশীর চাঁদ খনার ভোজ
তবু কোনো মতে দিন যায় কেউ তো পুষ্টির স্মারক নয়?
দিনে দিনে হাহাকার সুর…ভাঙবে ইস্পাত কঠিন লয়
অনাচারী পৃথিবীর বাঁধ, আসছে উত্তাল সময় রোজ।
রোগে-শোকে বাঁচে সুখ-দুখ, ধিনতাধিনধিন বাজুক স্বর
খেয়ে, না খেয়ে যে, ‘দেয় ফল’, ন্যায্য হিস্যার লড়াই ধর।