টিপু সুলতান
সাংঘাতিক বোঝাপড়া
তোমাকে ভাগ করা যায় না।রীতিমতো-
সমার্থন করে গেলেও অনেকেই উদাসীন
কথাবার্তা ছড়ায়,সাংঘাতিক শ্রবণা সুর-
এত মাংসল হৃতিক পীড়া দেয় সময়-সময়
এসবের প্রসঙ্গ এলে অনেকটা বোঝাপড়া
আঙুরলতার মতো পেঁচিয়ে ওঠে-নগরে
অথচ যৌবন শিয়রে কত বনপাখি ডাকে
আশ্বিন কুয়াশায় ভিজে ওঠে একপ্রকার
দূরের কোনো স্থির সুর,অনাত্মীয়ের মতো
উঁচু-নিচু শরীর ছুঁইতে ফেরে প্রেমিকেরা-
মফস্বলি বাজার দরে ভিড় জমায় জন্মান্তর
দিন শেষে তাঁদেরকে চেনা যায়,যারা বসন্ত
কেটেছিঁড়ে পুরোনো চরিত্র মুখরিত করে-
বাদামের বিচি চিবুতে চিবুতে দেখা হয় তখন।
অমৃত আহবানে তুমি
চশমার ফাঁকে আফিমের স্রোত
উদ্বুদ্ধ হয়ে স্রেফ ডুবে যাচ্ছে
ডুমুর সন্ধ্যায় মধ্যাহ্ন চোখ,
চোখেরজুৎ ধরে কোনো একদিন
এসেছিল নীল কোমলের প্রেম
ফ্রকপরা কন্যা লুট হচ্ছো,প্রেমে-
বাদামি রং হরফের হেরেমে
সাজানো বারান্দায় বসে আছো’
এখনো অমৃত আহবানে,একফালি
মালটার মতো;শীতল গহিনে
এই ভেবে তাড়ায়ে যাচ্ছি দূরত্ব!
বাড়তিসুখ
অযথাই তোমাকে নিয়ে ভাবছি।এই ভেবে ওঠা
কবিতা লেখবার মতো;তন্ময় চোখ ভেঙেচুরে
খানিকটা পথ এগোনো সব স্বপ্ন জড়ো করে বসা-
কেবল এই মহানদিনে কিংশুক হাওয়া নিয়ে
গোলপাতার চরকায় কেটে যাচ্ছে দায়মাত্র সুখ
ঘাস কাতরানো দক্ষিণে ব্যস্ত সড়ক-বহু লোক
বাড়ি ফেরার পাল্লা দিয়ে দেখা হচ্ছে প্রতিদিন
অথচ তুমি কি হতে যেয়ে কি হয়ে গেছ
ওলানবদ্ধ সুন্দরবনে,নদ-নদী কিংবা যাই হোক…।
পুলক বড়ুয়া
দ্বৈত কবিতা
( ১ ) আজ কাল তরশু …
না-চাওয়ার দূরত্ব
তফাৎটা না-পাওয়ার ।
ফারাকটা পথের না
পার্থক্য পাত্রে ।
কালের ব্যবধান নয়,
অভেদ দেশ ।
দূরে কাছে নয়,
দীর্ঘ হ্রস্ব নয়,
গন্তব্য কথা কয় ।
অপেক্ষার পর প্রতীক্ষা জেগে রয়;
ছিল, আছে, থাকবে …
আজ কাল তরশু …
( ২ ) আয়
আয়, চোখে চোখ
আয়, বুকে বুক,
এস, সাহস
এস, মানস ।
এস, হাতে হাত
এস, আঙুলে আঙুল,
আয়, স্বপ্ন
আয়, শখ ।
এস, কন্ঠে কন্ঠ
এস, ঠোঁটে ঠোঁট,
এস, বাঁধন
এস, সাধন ।
এস, গলায় গলা
এস, কথায় কথা,
এস, জল্পনা
এস, কল্পনা ।
আয়, মিছিলে মিছিল
আয়, প্রাণে প্রাণ
আয়, শূন্যে মুঠি
আয়, মুখোমুখি ।
এস, তনুমন
এস, অনুক্ষণ,
আয়, শান্তি
আয়, সাধ ।
এস, দোঁহে দুই
স্বস্তিকে ছুঁই;
একতায় অই
একাত্ম হই ।
যুবক অনার্য
কবিতা লিখতে হলে
কবিতা লিখতে হলে
চুটিয়ে প্রেম করতে হয়
থাকতে হয় কখনও বা প্রেমহীন
কবিত লিখতে হলে
প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়।
মহুয়া মদের মতো শরীরী গন্ধে মাতাল – তুমুল বর্ষণে ভিজিয়ে দিতে হয়
অকর্ষিত ওলো জমি,
ডাকাতি করে বুঝে নিতে হয় সমূহ ভাঁজ জ্যামিতিক অনুবাদ উত্থান পতন
ধর্ম বর্ণ সাদা কালো তুচ্ছ ক’রে
নেমে যেতে হয় কর্ষনমুখী গাঙে
মিথ্যে অপবাদে অভিযুক্ত হয়ে
খোয়াতে হয় মানসম্মান বংশগৌরব।
তবু থেমে থাকতে নেই
প্রেম যেতেই হবে ক’রে,
প্রেম থেকে মুক্তি নেই প্রকৃত প্রেমিকের।
দিনের আলোতে রাতের আঁধারে প্রেম
রিক্সায় ট্রাকে ফুটপাতে
বাসের হাতল ধরে
ঝুলে যেতে যেতে প্রেম
ইশকুলে যতীন স্যারের ক্লাসে
কলেজের করিডোরে
ব্যালকনি থেকে কৌণিক দুরত্বে
অপর ব্যালকনি তাক ক’রে
মিছিলে বুলেটবিদ্ধ হতে হতে
শুনানি হুলিয়া গ্রেফতার
জেলঘরে যেতে যেতে
গুম ঘরে
আততায়ীর হাতে খুন হতে হতে
এবং খুন করতে করতেও প্রেম;
প্রেম থেকে মুক্তি নেই প্রকৃত প্রেমিকের।
কবিতা লিখতে হলে প্রেম করে
দেওলিয়া হতে হয়,
কবিতা লিখতে হলে প্রেম না করেও
প্রেমিক হতে হয়-
খুন না করেও খুনি’র মতন।