রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করো, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করো।
বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে সংঘটিত ঘটনারাজি পর্যবেক্ষণ করে মন-মানচিত্র পরিবার যার পর নাই উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি, সনাতন ধর্মালম্বী কোন পূজারী হনুমানের পায়ের নিচে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান শরীফ রেখেছে- এমন একটি অভিযোগ অসত্য- তা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান থেকেও বোঝা যায়। প্রকৃতপক্ষে এর পিছনে একটি বড় ধরনের চক্র ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে বলে আমাদের বিশ্বাস; এটি ক্ষমতার রাজনীতির একটি নির্বাচনী নীল নকশা হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। বরাবরের মতো এবারও উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশব্যাপী এই লোমহর্ষক তাণ্ডব চালিয়েছে। সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে- তারা এর সমাধানে আন্তরিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ঘটনা যেভাবেই ঘটুক- তা দুঃখজনক ও মর্মন্তুদ। কিন্তু এইধরনের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশজুড়ে যে তান্ডব চলছে- ইউটিউবে এবং সোস্যাল মিডিয়াতে যে হারে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে বিষোদগার করা হচ্ছে তা আরো বেশি মর্মান্তিক, লজ্জাজনক, মর্যাদাহানিকর, মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক অর্জনসমূহ ধূলায় লুন্ঠিত করার সামিল তেমনি এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে। এমন স্পর্শকাতর নাজুক সময়ে মন-মানচিত্র বাঙলাদেশের সকল নাগরিক ও রাষ্ট্র- এই দুইয়ের কাছেই তার আবেদন আর উৎকন্ঠা পেশ করছে : আমরা মনে করি, সকল ক্ষমতা ও নির্ধারনী বিবেচনা জনগণের হাতে।
১৯৭১এর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ভিতর দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন বাঙালি জাতি- শত সহস্র বছরের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ- ত্রিশলক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা অর্জনের মর্যাদা তারা বোঝেন। বাংলার জনগণই নির্ধারণ করেছেন- বাংলাদেশ সবার দেশ। সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতিকারী ও ক্ষমতালোভী শাসকগোষ্ঠীর লালসা চরিতার্থ করার জন্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মূল্যবোধ মিথ্যা হয়ে যেতে পারে না। রাষ্ট্রের কোন ধর্ম থাকতে পারেনা। রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করতে হবে-ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে-সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা রুখে দিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি- রাষ্ট্র যেন রাজনৈতিক দলের মত আচরন না করে। বাঙলা অনড়, বাঙলা বিনয়ী, বাঙলা মায়ের মত ভালোবাসা নিরঙ্কুশ। এ বাঙলা হারতে পারে না। স্বপ্নে, দুঃস্বপ্নে জাগর মন-মানচিত্র।