You are currently viewing কল্যাণী রমা’র একগুচ্ছ মুক্তগদ্য

কল্যাণী রমা’র একগুচ্ছ মুক্তগদ্য

কল্যাণী রমা’র  একগুচ্ছ মুক্তগদ্য

লেখা

একমাত্র যখন লিখি তখন জোনাকপোকার মত আলো জ্বলে ওঠে জীবনে। একথাটা বলেছিল এক কবি। বাকি সময় গাঢ় অন্ধকার।

কথাটা শুনে খুব কষ্ট হয়েছিল মেয়েটির। শুধু জোনাকপোকা নয়, কবির জীবনের ধ্রুবতারা হতে ইচ্ছে করেছিল ওর।

সব আলো জ্বলে না।

 

বৃষ্টিতে ভিজে

কাকটা সকাল থেকে ভিজছে। কুচকুচে কালো রঙ আরো তেলতেলে হয়ে উঠছে বৃষ্টির জলে। জানালা দিয়ে মেয়েটি কাকটা দেখছে বৃষ্টিতে অন্ধ হয়ে আর কিছু দেখবার না পেয়ে।

ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। মেয়েটিও বৃষ্টিতে ভিজত। বড়বেলায় ও কেবল চোখের জলে ভিজে।

হঠাৎদেখা

একই ঘরে ছেলেটি আর মেয়েটি।

ছেলেটি বলল,’তিরিশ বছর একসাথে আছি। কোনদিন তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি নি।’

মেয়েটি  বলল,’ কেন? ঘৃণায় না অবহেলায়?’

ছেলেটি বলল,’ইচ্ছে করেনি।’

তারপর ধীরেধীরে বলল,’তুমি বেশ সুন্দর দেখতে।’

বলল আজ ছেড়ে যাওয়ার সময়।

ডেট

ভোরবেলার স্বপ্ন ভেঙে মেয়েটি উঠেছে। বড় ক্লাশের একটি ছেলে ওকে বলছে,’আমার সাথে বেড়াতে যাবে? It’s a date. আমরা সমুদ্র পাড়ে বেড়াতে যাব। সাইকেল নিফসির সামনে পার্ক করে রাখব। একটা চাদর এনো তো। সমুদ্রে খুব হাওয়া। পাথরের উপর বসব। তারপর ক্যাটস এ খেতে যাব।’

মেয়েটি আনন্দে ডগমগ। কোনদিন কেউ ওকে ডেটে ডাকেনি।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে ও রাজি হয়ে গেল। It’s a date.

তারপর সব পরিকল্পনা শেষে ওর মনে হল ও তো আজকাল হাঁটতে পারে না।

ছেলেটিকে সে কথা বলতেই ছেলেটি বলল, ‘কোন চিন্তা নেই। একটা গাড়ি ভাড়া করব। সারা শহর গাড়িতে করে ঘুরব। ‘ ছাত্র মানুষ। But it’s a date.

 

শেষ বাগান

গাছের কষ্ট কিছু মানুষ বোঝে। সকলে বোঝে না।

মেয়েটির বাগানে এ বছর অনেক ফুল। জারবেরা গাছটা প্রতি বছর বরফের আগে টেনে টেনে ঘরে নিয়ে গেছে ও। বহু বছর পর গাছ ঝেঁপে ফুল এসেছে। সুইট পি প্রতি বছর লাগায় ও। কিন্তু জানিনা কেন গত তেইশ বছরে কোনদিন ফুল ফোটেনি ওর গাছে। এ বছর জাম রঙের সুইট পি ফুটেছে। কী আশ্চর্য সে রঙ! নেদারল্যান্ড থেকে ও ট্রি লিলির বালব এনেছিল। পাঁচ ফুট গাছে সাদা আর হলুদ মিশেলে লিলি ফুটে আছে। কোথা থেকে এক মধুমঞ্জরী জোগাড় করেছিল। বরফের দেশে সে গাছেও কলি এসেছে।

মেয়েটি হেঁটে চলে যাচ্ছে। ওর গাছে জল দেওয়ার কেউ নেই। প্রেতাত্মাদের নিয়ে চারপাশে মৃত গাছের কবর।

এ বাগানটি ছিল মেয়েটির শেষ বাগান।

সুধা

একটি মেয়ের নাম ছিল ‘সুধা।’ ‘সুধা’ মানে কী? ‘অমৃত।’ ‘সুধা’ মানে ‘জ্যোৎস্না।’ রক্ত নয়। তবু রক্তেই ভেসে গেছে মেয়েটির পুরোটা জীবন।

কেউ কেউ বলেছিল,’সবচেয়ে যারা ভালো মানুষ, তাদের জীবন রক্তধারাতেই ভেসে যায়। ঈশ্বর বলে যদি কেউ থেকে থাকেন, এ তাঁর পরীক্ষা।’

সুধা নামের মেয়েটির আর কোন পরীক্ষা দিতে ইচ্ছে করে না। ওর ইচ্ছে করে এক নদীপাড়ে গিয়ে বসে থাকতে। যার পাশে কাশবন, বুনো ফুল। এমন কী আকাশ থেকে যেন ঝরছে উইন্ডচাইমের টুংটাং শব্দ – অমৃতের গান। ঝরছে জ্যোৎস্না – ওর নামের অর্থ।

 

কল্যাণী রমা

জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।

প্রকাশিত বইঃ

আমার ঘরোয়া গল্প;

হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;

রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;

মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;

রেশমগুটি;

জলরঙ;

দমবন্ধ।