You are currently viewing জেবুন্নেছা জ্যোৎস্না’র গুচ্ছকবিতা

জেবুন্নেছা জ্যোৎস্না’র গুচ্ছকবিতা

 

জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না’র গুচ্ছ কবিতা

 

আকাংখা

 

যদি আর একটা জীবন পাই,

তো শৃঙ্খলাপরায়ণ পিঁপড়া হবো।

নিজ সাম্রাজ্যে রাণী বনে

উৎসুক সব প্রজা প্রেমিকে

কঠোর পরিশ্রমে চাষাবাদে

ভবিষ্যতের মজুত গড়বো;

আর নিঃসঙ্গ আমি পদবজ্রে

সাম্রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে

শুধু তোমায় খুঁজবো।

 

যদি আর একটু সময় পাই,

পৃথিবীর ইচ্ছা নদীর অনিচ্ছা তটে

সাদা কালো ক্যানভাসে রঙে মাতবো।

ভুল সব শুধরে দিয়ে

ফের আর একবার নতুন হবো।

দুঃখ-সুখের বেচা-কেনার হাটে

কষ্ট- কড়ির বিনিময়ে তখন

শুধু তোমাকেই চাইবো।

 

যদি আর একবার পিছনে ফিরে চাই,

পালা-বদলের খেলায়

হেরে যাওয়া মন’কে বুঝবো।

সবটুকু’ই কি হারিয়ে যায় ?

নাকি থেকে যায় সেখানেই, যেভাবে ছিল?

 

শুস্ক বালুর তাপে যে ফুল ফোটে

আছে, তার প্রাণ আছে,

কোথাও না কোথাও লুকিয়ে ।

 

অসুখ

 

পদ্য বিক্রির বাহানায় কবি জীবিকার সন্ধানে-

রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতার দাঁত;

পুড়ছে পৃথিবীর ফুসফুস অ্যামাজনের আগুনে—

লুন্ঠিত মানবিকতায় দ্রোহের অভিসম্প্রাত।

 

প্রজননে ছড়ায় পালিত রোহিঙ্গা,

রক্ত ঘ্রাণের অভিকর্ষে ক্ষমতার তাজ,

সভ্যতার ধ্বংস প্রয়াণে বাজে কেয়ামতের শিঙ্গা-

কি করুণ! কি কষ্ট! নাগরিকতার আজ!

 

আজ আমার অসুখ করেছে!

বিতৃষ্ণা ভরে জিহ্বা’র লালা-গ্রন্হি’তে

কে যেন করেছে চিরতা’র আবাদ—

সংকুচিত ধমনীর বাঁকে লুকানো কি অসুখ,

জানে না স্বয়ং কবিরাজ।

 

পিঁপড়ে খাওয়া ত্বকের জীবনী-রসে

আজরাইলের দূর্ভিসন্ধির আভাস!

কে তুই? কোন অণুজীব, হয়েছিস বিজয়ী?

ব্যাকটেরিয়া, নাকি ছোঁয়াচে করোনা ভাইরাস?

 

শেষ থেকে শুরু

 

প্রস্থানেই তো শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল!

কিন্তু না! তোর থেকে সরে আসার পরই

সাঁ সাঁ শুন্যতায় কৃষ্ণ গহব্বর সম ছুঁয়ে যায় বেদনা।

সন্মুখে অকৃষিত জমি—

আর তোর অভিশাপ ছুঁয়েছিল বলেই

আজ আমি খরায় বৃষ্টিহীন— ভালবাসা শুন্য।

 

ধুলোবতী রুক্ষ পথ ঢেকে দিয়েছে তোর শেষ চিহ্ন!

পথ হারিয়েছে পথিকের খোঁজে-

দূর্বা কোমল, আকন্দের টানে—

কেউ থাকেনি পথের বাঁকে, তোরই ঢঙে অপেক্ষা’তে!

 

নিটোল চোখের ঝড়ের সাঁঝে, কেউ আসেনি!

ছমকে যাওয়া ছলাৎ হিমে, বরফ নদীর ঘুম ভাঙ্গেনি।

কেউ বলেনি চুপটি করে, আগুন- ফাগুন- শ্রাবণ রাতে

‘তুমিই আমার শ্রেষ্ঠ চাওয়া’ !

 

কেউ থাকেনি কষ্ট নিতে! হঠাৎ শুধু মাঝরাতে—

ঘুম ভাঙ্গিয়ে পৃথিবী’কে বলি: ভালবাসো আমায়?

নিস্ফল আক্রোশে শুন্যতার চিৎকারে ভরি দশদিক,

আর বলি যা হয়নি কখনও বলা —

“ভালবাসি তোকে বড়, আজ এ অবেলা”!

 

কাঠ গোলাপী আকাশ—

 

কিছু অপূর্ণতার প্রয়োজন আছে পূর্ণতার আস্বাদনে ।

বিশ্বাসের তরঙ্গ যখন নিঃশ্বাসে কাছে টানে,

অবিশ্বাসের সুক্ষরেখা আঁচ কাঁটে মনের কোণে।

হেম বলেছিল, মেঘ ছুঁয়ে যাবে!

 

আজও তাই পাতাল রেলের অন্ধকারে

এক চিলতে কাঠ গোলাপী আকাশ খুঁজি—

দু-বাহু’র পেশীর ঘনত্বে যে অষ্টাদশী মেঘ

নেয় না জমিনের উষ্ণ উত্তাপ;

যে অঙ্কুর স্ফুরণ থেকেই আজন্ম বয়

ভালবাসার বিস্ফোরিত অভিশাপ—

কোন এক চেরী ফোঁটা ওমে, সে অলক্ষ্যে যায় ঝরে!

 

অতঃপর: নিজেকে বিশ্লেষিত করে বিস্মৃত হই হেমে।

আসলেই কি গিয়েছি ভুলে? তবে ছায়ার অনুকরণে

থাকে কে প্রতিক্ষণে? তার চা’য়ের কাপের চুমুকে ভঙ্গিকে

কেন লালন করে এ মন? তার তামাটে বর্ণের

ঋজু চলনে কেন আমার এ দ্বৈত পথ চলন?

 

কতো প্রেম এলো গেল, ভালবাসা’তো হয়নি !

যে হেম মেঘের ভাঁজে জমেছে ভালবাসা—

আজও তার সন্ধি কোণে মিলিনি!

 

মানুষ – বনসাই

 

এক রাতে মানুষ হওয়ার গ্লানি গুলি যখন ক্রমান্বয়ে

গ্রাস করে নিচ্ছিল; চিন্তারা হয়ে যাচ্ছিল স্থবির!

কারণ নিউরোট্রান্সমিটার সিগন্যাল দিতে

নিউরনের ট্রাফিক বেড়ে যায়। আর আমি তখন

ধীরে ধীরে কাফকা’র গল্পে’র ন্যায় সমস্ত অবয়ব জুড়ে

রুপান্তরিত হয়ে যাই অন্যকিছুতে। তবে, তফাত’টা এই যে,

আমি পোকা না হয়ে,  ধূসর কাষ্ঠল গাছ হয়ে যাই—

খুব বেশী উদ্ভিদ প্রেমী বলেই হয়তো!

 

অতঃপর, কালের বিবর্তনে, গ্র্যাভিটির টানে

শেকড়-বৃন্ত ছড়িয়ে আজ অব্দি আমি অনবরত

শুষে চলেছি তোমাদের দূষিত বায়ু- মূত্র- জল!

আর বিনিময়ে দিয়েছি সজীবতর বিশুদ্ধ অক্সিজেন,

পূর্বপুরুষের নির্যাসিত জীবাশ্মের জৈবপ্রাণ-শক্তিবল!

 

আমার বাকলের নীচে, জাইলেম স্তরে

সঞ্চিত সভ্যতার যতো গৌরব- ঘৃণার ইতিহাস- ।

আমি ফ্ল্যাজেলা’য় ভরে সমাজের সুক্ষ দেহপথে ঢুকে

দেখেছি বিকৃত, অর্ধঃ পতিত মনুষ্য উপনিবাস।

মানুষের বহুরুপী আ্যমিবায়িক চলনে

উওরাধিকারীদের বিষাক্ত এ নাগরিক জীবন;

অসম বন্টনে অস্তিত্বের চরম সংকটে ক্রমশঃ

নিঃশেষিত বেঁচে থাকার কতো উপকরণ!

 

অস্বাভাবিকত্বের স্বাভাবিকতার দ্বারে

ক্রমাগত কর্তনে নতজানু আমার মাথা ।

আর তাই শীর্ষ আর নিম্ন অভিযানে,

অক্সিন হীনে আমি বড়ো অসহায়!

সময়ের সাক্ষী হয়ে কেবল বেড়ে চলে বয়সের রিং-

আধুনিকতা’য় তাই নাম নিলাম, মানুষ বনসাই ।

 

জেবুন্নেছা জোৎস্না

বেড়ে ওঠা যশোর, স্থায়ী নিবাস: মোহম্মদপুর, ঢাকা।

শিক্ষা: নিউইর্য়ক লং আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডায়াগনষ্টিক মেডিক্যাল সনোগ্রামে ব্যাচেলর।

নিউইর্য়ক সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে সাইন্সে অ্যাসোসিয়েট।

এবং বাংলাদেশ থেকে মাইক্রোবায়োলজীতে মাষ্টার্স!

পেশা: একো-কার্ডিওগ্রাফী স্পেশালিষ্ট।

ইমেইল: ZJOTSNA@GMAIL.COM