দুইটি কবিতা
রওনক আফরোজ
অভয়ারণ্য
প্রহরী চাঁদের কাছে রেখে গেলাম ঠিকানা,
অমাবস্যা কিংবা চন্দ্রগ্রহণের রাতে
যদি আমাকে মনে পড়ে
ইউক্যালিপটাসের মসৃণ শরীর ছুঁয়ে
অন্ধকারের সুগন্ধ অনুমান করে পৌঁছে যেও বনের মর্মরে।
সেখানে সারাক্ষণ অন্যরকম মায়াবী স্বচ্ছতা খেলে
মাছেরা কথা বলে জলআগাছার সাথে
বহুভাষী পাখিদের গানের আসরে
পাতার সেতারে ধুণ তোলে নির্মল বাতাস।
চিরযৌবনা ঝরণা নিতম্ব দুলিয়ে যেতে যেতে
থমকে দাঁড়ায় নদীর ডাকে;
ও বলে, তুই নেচে নেচে যাচ্ছিস কোথায়! গান শুনে যা আয়।
তখন নদীর বুকে ঢোল খরতাল বাজে
তীরে মৃদঙ্গ বুকে বনহরিণেরা নাচে, সে এক বিশাল বিস্ময়।
তবে তুমি এসব সাতকাহণের কিছু বুঝবে কি!
যাদুকরী এক নৈঃশব্দ্য আছড়ে পড়ে পাহাড়ে
আর প্রতিউত্তর নিয়ে ফিরে আসে কুহকী গভীরতা;
গা ছমছম স্তব্ধতার আওয়াজ,
শব্দদূষণে ক্ষয়ে যাওয়া শ্রবণে তুমি শুনবে কিনা জানিনা
এলসিডির আলোয় ঝলসানো চোখে
দেখতে পাবে কি সূর্য কী করে শতদল হয়ে ফোটে
কীভাবে মরুর বালুতে মাথা তোলে অনিন্দ্য ক্যাকটাস!
প্রতিরাতে জোনাকির জড়োয়া পরে তরুণীরাত সাজে
সমুদ্রের জলে ট্রাম্পেট বাজে
সবটাই আমার আপন অভয়ারণ্য; শাসন নেই কারো
চাইলে তুমি এখানে একবার আসতেও পারো।
মালা
উড়ুক্কু সময় উড়ে উড়ে যায়, কোথায় জানিনা
শুধু জানি দূরত্ব বাড়ে, ঘন ঘন সন্ধ্যা ঘনায়।
ট্রাফিকজ্যামে গাড়ির পাশে দাঁড়ানো
ফুলের মালা ফেরিওয়ালা কিশোরী
নির্দিষ্ট কেউ না, ওদেরই কেউ একজন।
মেয়েটির উইলোলতা বাহুতে ঝুলে থাকে
ফোটা আধফোটা ফুলের সফেদ মালাগুলো।
ওর পদ্মদীঘি চোখে কষ্টকাজল
রোদে পোড়া ত্বক, শুকনো ঠোঁট,
মুখমণ্ডলে ফ্রি প্রসাধন, ধূলোর ব্লাশঅন;
দুম করে অনেক মালা কিনি বেমক্কা দামে।
“এই মেয়ে, নাম কী, কোথায় থাকো”..
মেয়েটি চলে যায় অন্য জানালায়,
আমার বুকে বেদনার কালো মেঘ জমে।
ফুসফুস ভ’রে সুগন্ধী বাতাসে, চোখ জ্বলে জলে,
উবার থামলে গেটে, মালা রেখে নেমে যাই।
এই ঘনজনপদে ওই মেয়ে ছাড়া
এ মালার মূল্য বুঝবার কেউ নাই।
*************************