You are currently viewing মরণকাঠি/  অনিন্দিতা গোস্বামী 

মরণকাঠি/ অনিন্দিতা গোস্বামী 

মরণকাঠি

অনিন্দিতা গোস্বামী 

ধড়মড় করে বিছানার উপর উঠে বসল নরেন। তার গলায়,  ঘাড়ে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সে হাঁপাচ্ছে অল্প অল্প। পাশ থেকে শ্যামলী বলল,  কী হল আবার? নরেন হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,  বাগানের পুব কোণে লাউডগায় পোকা লেগেছে,  দেখেছ? শ্যামলী বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে শুতে শুতে বলল,  কই কেমন ফনফনিয়ে উঠেছে লতা,  ফুল এসেছে মাচা ভরে। যত্তসব। ঘুমাও দেখিনি। সারাদিন খাটাখাটনির পরে একটু শুই তা তোমার এই স্বপন রোগে আমার ঘুমের বারোটা।

নরেন কিছু বলল না,  মশারি উঠিয়ে নিচে নামল, নতুন মাটির জালা থেকে মগ ডুবিয়ে জল তুলে খেলো ঢকঢক করে। খেতে গিয়ে থুতনি আর গলা বেয়ে জল গড়িয়ে নামল বুকে।  একটু ঠান্ডা হলো শরীর।

কী করবে নরেন,আজ কিছুদিন হলো এই রোগ তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। কাউকে সে বোঝাতে পারে না,  কাউকে সে বলতে পারে না। কাকে বলবে?  যাকে বলতে যাবে সেই মুখ টিপে হাসবে কিংবা বলবে তা বাপু অতই যখন ভয় তোমার,  করতে গেলে কেন অমন কাজ। এ কাজ কি সে নিজের ইচ্ছায় করেছে,  বাধ্য হয়ে করেছে।      নিজের দোষ ঢাকতে সব লোকই তাই বলে।  সেই তো, তার বউ, তার মা, তাদের কথা মানেই নরেনের কথা।

শ্যামলী বলেছিল ভয় কী, আমি তো আছি।

ও শ্যামলী,  কেউ দেখেনি তো?

-না বাবা না।

-কী করে বুঝলে?

-আমি তো চারপাশে চোখ রেখেছিলাম।

-ধড়ফড় করছিল?

-তোমার মাথাটাই গেছেধড়ফড় করতে পারে?

-কেন পারে না?

-জানি না যাও। তোমার যত সব আজুরে কথা।

শ্যামলী ঘুমিয়ে পড়ে।  কী সুন্দর ঘুমায় শ্যামলী। বুকদুটো ওঠে নামে। নরেন ঝুঁকে পড়ে শ্যামলীর মুখের ওপর। বালিশ উঠিয়ে নিয়ে চেপে ধরতে যায় নাকে মুখে। তারপর আবার কুলকুল করে ঘামতে থাকে,  নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখে সে ঘুমিয়ে আছে না জেগে আছে।

এক ছটাক জমি। কতদিন আগে চলে যাওয়া এক ছটাক জমির শোক আজও ভুলতে পারেনা মানুষগুলো। এখনও এত হিংসা মনে? ওই এক ছটাক জমি যদি বেশি থাকত নরেনদের নরেন কি তবে মোটর হাঁকিয়ে ঘুরত? আছে তো তাদের বারো- চোদ্দো বিঘে জমি। শীতের সবজিপাতি,ধান টুকটাক হতো তাতে। বাগানের ওই পুবকোণেই শ্যামলীর লাউমাচা তোলার শখ। নরেন বলেছিল বাড়ির বাগানে লোকে ফুলগাছ লাগায়,  তুমি লাউগাছ লাগাবে কি?

শ্যামলী বলেছিল, যে গাছ ফল দেয় না সে গাছ আবার গাছ না কি। ওসব কেয়ারি গাছে আমার শখ নেই কোনও। তারপর আরও বলেছিল,দেখো তোমাকে অনেকদিন বলছি কিছু করো, এরপরও তুমি যদি গা না করো তবে আমি যা হোক একটা ব্যবস্থা নেব।

নরেন ভয়ে ভয়ে বলে,  কী ব্যবস্থা নেবে?

-সে তোমাকে বলে নেব না।

নরেন আমতা আমতা করে বলে,  কী হবে ঝগড়াঝাঁটি করে,  তোমার ভয় করে না?

শ্যামলীর সদর্প উত্তর,  কীসের ভয়?

-এই ওদের হাট্টাগোট্টা তিন-তিনটে ছেলে, সেখানে আমার ছেলেটা তো দুবলা-পাতলা,পারবে ওদের সঙ্গে লড়তে?

শ্যামলী উত্তর করেছিল, তোমার ওই রকম বুদ্ধি দেখেই তো আজ আমাদের এই হাল। এখন তাকতে নয়,  শক্তি আসে মেশিনে। তোমার ছেলের বুদ্ধি থাকলে একাই একশো হবে দেখো।

-গুন্ডামি করতে শেখাবে?

-বুদ্ধি করে নিজের টা গুছিয়ে নেওয়ায় গুন্ডামি হবে কেন? তোমার বাবা  ঠিকই বলতেন,  তোমার মত হাবলা ছেলের জন্ম দিয়েছেন বলেই তিনি সব দিক দিয়ে হেরে গেলেন ঘোষদের কাছে।

নরেন দেখেছে মানুষের আর কিছু দেবার ক্ষমতা না থাকলেও হিংসাটা ঢুকিয়ে দিয়ে যায় বংশধরের মধ্যে। সেই কোনকালে পাশাপাশি দুই বাড়ির সীমানা প্রাচীর তোলার সময় নাকি ঘোষকাকারা কায়দা করে এক ছটাক জমি ঢুকিয়ে নিয়েছিল ওদের সীমানায়। আর সেই রাগে দু বাড়ির সম্পর্ক দাঁড়ায় আদায়-কাঁচকলায়। দেখ না দেখ এ ওকে শাপশাপান্ত, তিন চোদ্দোং বিয়াল্লিশ পুরুষ উদ্ধার। এক সময় যে দুই বাড়ির মধ্যে কচুর শাক আর মোচার ঘন্টর বাটি চালাচালি হত সে সব দুই পরিবারই ভুলে গেল পরিপাটি।

নরেনের ওইটুকু ছেলে, পড়ে মাত্র ক্লাস সিক্সে, সেও কিনা সুযোগ পেলেই খেলার মাঠে ঘোষকাকার নাতির সঙ্গে ঝাড়পিট করে আসে।আজ ও তার বল হারিয়েছে, কাল ও তাকে ধাক্কা মেরেছে। নরেনই শুধু আপ্রাণ চেষ্টা করে দু’বাড়ির রাগটাকে কমিয়ে আনার,রাস্তাঘাটে ঘোষবাড়ির কারওর সঙ্গে দেখা হলেই একমুখ হাসি হেসে জিজ্ঞাসা করে,ভালো আছ?ঘোষরা ঠোঁটটা একটু একপাশে ঝুলিয়ে দেয় মাত্র।

নরেন বোঝায়,শ্যামলী মিটিয়ে ফেলো,সেই পুরোনো কাসুন্দির জের আর ক’দিন টানবে?শ্যামলী কানই করে না। সঙ্গে নরেনের মা। এই একটা ব্যাপারে শাশুড়ি বউয়ের দারুণ মিল।বরং অন্য সব ব্যাপারের ঝামেলাও এই বিষয়কে কেন্দ্র করে মিটে যায়।নরেনকে কেউ পাত্তাই দেয় না।

অনেক কষ্ট করে নরেন লেখাপড়া শিখেছিল। বিএ পাশ করেছিল।অনেক চাকরির পরীক্ষা দিয়েও একটা চাকরি পায়নি। অবশেষে সার্টিফিকেট জমা রেখে লোন তুলে বাজারে একটা দোকানঘর ভাড়া নিয়ে বইয়ের দোকান করেছে। লোন এখনও শোধ হয়নি।বাবার বারো- চোদ্দ বিঘে জমির আয় আর দোকানের আয়ে তার সংসার চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সে তুলনায় ঘোষেদের বাজারে ছিট কাপড়ের দোকান ফুলেফেঁপে উঠেছে। শ্যামলী আর মা’র রাগ নরেনের ওপরেও কম নয়।  নরেন তাই ধীরে ধীরে জোর হারিয়ে ফেলছে ওদের থামানোর।দু’বাড়ির মধ্যে হিংসা বাড়ছে লকলক করে।

অশান্তি চরমে উঠল একটা নারকেল গাছকে ঘিরে।পাতাগুলো অনেকদিন থেকেই একটু একটু করে হলুদ হয়ে আসছিল। নরেন ওষুধ এনে স্প্রে -ট্রে করে অনেক চেষ্টা করেছিল, কিন্তু গাছটা বাঁচল না।গোড়ায় উই লেগেছিল মনে হয়,ঘাড় মটকে মড়মড় করে ভেঙে পড়ল একদিন। নরেনের মা ডাকল,নরেন! পোলাডার যে গায়ে জ্বর, পেট নামছে দেখছস?

নরেন বলল,হ্যাঁ। ওষুধ এনেছি।যদি না সারে কাল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।

মা গম্ভীর হয়ে বলল,ও,এই বুঝছস!ডাক্তার দেখায়ে ওই জ্বর নামব না।কেন তর কি কিছুই চোখে পড়ে না?

-কেন? এতে আবার চোখে পড়ার কী আছে?নতুন গরম পড়েছে, বসন্তকাল। এ সময় এমনিই একটু জ্বরজারি হয়।

-ও,গাছডাও মরল আর পোলাডারও পেট নামল,হেইডাতেও তর কিছুই মনে আইল না? শোন,ঘোষেরা বাণ মারছে ওই গাছডায়। অমন তাগড়াই গাছ না হলে অমনি অমনি মইরা যায়?

নরেনের অনেক সাধ ছিল ইস্কুলে পড়ায়।পারেনি।তাই বইয়ের দোকান দিল।কি না অন্তত বইয়ের কাছাকাছি তো থাকা যাবে। তার বইয়ের দোকানে সন্ধেবেলায় আড্ডা দেন এলাকার জ্ঞানীগুণী মানী লোকেরা।কেউ কবি,কেউ মাস্টার, কেউ বা দূরের শহরে কলেজে পড়াতে যান।আসেন কুসংস্কার প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা,আসেন সর্বশিক্ষা,  সাক্ষরতা মিশনের লোকজন। নরেন মাসে একদিন কলকাতায় গিয়ে খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসে নানান ছোট বড় পত্রপত্রিকা। বিক্রিবাটা হয় হয়তো দু’চার টাকার,কিন্তু তৃপ্তি মেলে আকন্ঠ।

মায়ের কথা শুনে নরেন কানে আঙুল দিল,আঃ মা তোমাকে বলেছি না ওসব বুজরুকি গল্প আমার কাছে করবে না। মা ফণা তুলে উঠল,অ দুই পাতা পুঁথি পইড়া এক্কেবারে বিদ্যা দিগগজ হইছস।তাও যদি একডা সরকারি চাকরিবাকরি বা নিদেন একডা মাস্টারি জুটাইতে পারতস তো তর লেকচার শোনতাম।দিছিস তো একডা দুকান।তাও এহনও ধার শুধতে পারস নাই।তর কথা অত কেন শুনুম রে?

নরেন দমে যায়। সত্যি তার কথা শুনবে কেন লোকে?জোর কোথায় তার?

শ্যামলী এসে পিছনে দাঁড়িয়েছে,বলে মা যা বলছে শোন না।

নরেন বলে,তা কী বলতে চাইছ তোমরা?

নরেনের মা বলে,অনেক দিন থাইক্যা ঘোষেদের বলতাছি কাঁঠাল গাছডা কাট,তা কেউ কানই করতাসে না। বাগানডার পুব কোণাডা কেমন আওতা পড়ছে দেখছস?

শ্যামলী যোগ দিল,শুধু বাগান কেন মা,আমাদের ঘরের জানলা দিয়ে একটু রোদ ঢোকে না,স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে ঘরটাও।

নরেন বলে,  তো?

নরেনের মা বলে,  তো আবার কী? ওই কাঁঠাল গাছডায় বাণ মার।

-বাণ মারতে গেলে কী করতে হবে?

-ওই একজন সাধু ডাইকা মন্ত্র পইড়া গাছডায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা কইরা একডা ডালে একখান সুতা বাঁইন্ধা দিতে হইব।

-তাতে কী হবে?

-ওই গাছডাও মরব,বাড়ির লুকের অমঙ্গলও হইব।

-ও,বিষ-মাখানো সুতা বাঁধতে হবে গাছে তাই তো? তা আমাদের নারকেল গাছে তো কোনও সুতা বাঁধা ছিল না।

-সুতা বাঁইন্ধাও হয়,  জলপইড়াও হয়, যে যেইডা করে।

-মোদ্দা কথা গাছটাকে মারতে হবে, এই তো?

-হ।

গাছটা নিয়ে ঘোষকাকাদের ওপর নরেনও যে বিরক্ত নয় তা নয়। বাড়ির পূব কোণাটা সত্যি আওতা করে রেখেছে গাছটা। গাছটা  ঘোষেদের বাড়ির একেবারে প্রাচীর ঘেঁষে। আর ওদিকে ঘোষেদের দোতলা দালান উঠেছে। গাছটা ওপাশে জায়গা না পেয়ে ঝুঁকে এসেছে নরেনদের বাড়ির দিকে। সে অনেকবার ঘোষকাকাকে ডেকে বলেছে গাছটা কেটে দিতে,  প্রতিবারই ঘোষকাকা বলেছেন,  তোমাদের অসুবিধা হলে ডালপালা ছেঁটে নাও। এমন ফলন্ত গাছ কেউ কাটে! নরেন ও বলতে পারে না কী আশ্চর্য ঘোষকাকা গাছ আপনার,  আমি প্রতিবার লোক ডেকে পয়সা দিয়ে ডালপালা ছাঁটাতে যাব কেন? আর গাছটায় সত্যি ফলও হয় তেমনি। একেবারে গোড়ার থেকে থরে থরে কাঁঠাল। আর কাঁঠালের সাইজ কী এই এত বড় বড়! আর‍ যত গাছে কাঁঠাল উপচে পড়ে তত পাল্লা দিয়ে বাড়ে মা’র আর শ্যামলীর রাগ। তা রাগের মাথায় নরেন বলল, গাছ মারতে চাও তো? তা অত কিছু করার দরকার কী? এক টিপ হিং এনে গাছের গায়ে গর্ত করে ঢুকিয়ে দাও গাছটা মরে যাবে।

শ্যামলী চোখ বড় বড় করে বলে, সত্যি! কী আশ্চর্য এত সহজ ব্যাপারটা তুমি আগে বলনি কেন?নরেনের মা বলে,তাইলে তো খুবই ভালো হয়,খরচপাতিও বাঁইচা যায়,তবে ওডার যা মাথামোটা ওডার কথায় বিশ্বাস নাই।

প্রমাদ গোণে নরেন। আর কিছুতেই রক্ষা করা যাবে না গাছটাকে।এত সহজ ব্যাপারটা জেনেও নরেন এতদিন বলেনি। কারণ সে যে চায়নি গাছকে মেরে দিতে।ঘোষকাকা ডালপালা ছেঁটে দিক তার ঘরে বাগানে একটু আলোবাতাস ঢুকুক এই টুকুই চেয়েছে।

সেদিন দোকান থেকে ফিরতেই শ্যামলী শাড়ির আঁচলে কপালের ঘাম মুছিয়ে দিলো নরেনের। নরেন বুঝল সময় হয়ে এসেছে। বলল,  কবে করতে হবে কাজটা?

শ্যামলী বলল,  শুভ কাজে দেরি করা ঠিক না,  আজই করো না।

নরেন বললো কিন্তু আমি তো হিং আনতে ভুলে গেছি।

শ্যামলী বলল,  সে আমি জানতাম,  তুমি সাত তালে থাকো, তোমার কী অত মনে থাকে? আমি আনিয়ে রেখেছি।

নরেন চমকে উঠে বলে, পাড়ার দোকান থেকে আনলে,  কেউ সন্দেহ করবে না তো?

মুখে আঁচল চাপা দিয়ে শ্যামলী খুকখুক করে হাসে,  বলে বাব্বা তুমি এমন কচ্চ যেন মানুষ খুন কচ্চ।তাও আমি পাড়ার দোকান থেকে কিনিনি।  ছেলেকে সাইকেল দিয়ে পাঠিয়েছিলাম ওই রোডের ধারে দোকান থেকে এনেছে।

নরেন বলল,ছেলেটাকেও জানালে?

শ্যামলী এবার রেগে উঠে বলল,  দেখো বেশি ন্যাকামি আমার সহ্য হয় না,  কেন এটা কী এমন কাণ্ড হচ্ছে যে ছেলেকে জানানো যাবে না?

নরেন চুপ করে গেল।  আজকাল বেশি কথা বলতে গেলে হাঁপ ধরে তার।

কাজটা সারতে কোন অসুবিধা হয়নি।  শ্যামলী টর্চ নিয়ে পিছন পিছন গিয়েছিল, দা এগিয়ে দিয়েছিল হাতে। খুব সাবধানে গাছের গায়ে গর্ত করেছে নরেন।শব্দ হয়নি খুব একটা। হিং-টা পুরে দিয়ে চলে এসেছিল নিঃশব্দে। ঘরে ফিরতেই মা বলেছিল বাব্বা বউমা তুমি পারলা এই হ্যাবলাডারে দিয়া একডা কাজের কাজ করাইতে।

হ্যাঁ, গাছটা ধীরে ধীরে শুকিয়ে গেল।ফলগুলো কালো কালো হয়ে বোঁটা থেকে খসে পড়ল,পাতা হলুদ হয়ে ঝরে গেল। ঘোষ কাকিমা চিৎকার করে শাপ শাপান্ত করেন, ফলন্ত গাছডারে এইভাবে মারলি, অরে নিঃবংশ হবি, অরে নিঃবংশ হবি।

নরেন কানে আঙুল দিলে শ্যামলী বলে, রাখ তো,  শকুনের অভিশাপে গরু মরে না । নরেনের ঘুম আসে না, চোখ বুঝলেই সে স্বপ্ন দেখে গর্ভবতী শ্যামলীকে সে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। ধড়ফড় করে সে উঠে বসে বিছানায়। কাউকে কিছু বলতে পারে না।

শ্যামলী বলে, কী হল আবার?

নরেন কাঁপতে কাঁপতে বলে,  আমার ভয় করছে।

-কিসের ভয়?

-জগদীশ বোসের।

-সেটা আবার কে গা?

-জগদীশচন্দ্র বসুর নাম জানো না?একজন মহান বিজ্ঞানী। উনি তো আমাদের শিখিয়েছিলেন গাছেদেরও প্রাণ আছে।

এবার খিলখিল করে হেসে ওঠে শ্যামলী। আর নরেন মাথাটা পেট আর হাঁটুর মধ্যে গুঁজতে গুঁজতে বলে,আঃ চুপ কর, চুপ কর শ্যামলী, আমার তোমাকেও ভয় করছে।