You are currently viewing ৫টি বাছাই কবিতা > উৎপল দাস

৫টি বাছাই কবিতা > উৎপল দাস

৫টি বাছাই কবিতা

উৎপল দাস

 

গোলটেবিল 

 
বাতাসের বিপরীতে একটা আস্ত আকাশ,
জন্ম নিয়েছে বেওয়ারিশ লাশে পোকা, 
এখন ট্রেনে বসে লিখছি 
ভাবনা ও লেখার মাঝে ঘন ঘন হর্ণ বাজছে
সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সময় এগিয়ে গেছে
এগিয়ে যাওয়ায় কোনো বাধা নেই ধরে নিলে
থামতে ভুলে যাই, থামতে শিখে নিলে অলসতা আসে 
এমন সহজ যুক্তি সপাটে কষিয়ে দিতে পারলেই
‘না’ গ্রহণ করতে খুব বেশি সময় নষ্ট হতো না 
এখানে মূল্যবোধ প্রযোজ্য কিন্তু আক্ষেপের 
নির্যাসটুকু গান-পয়েন্টে রাখলে এমন কোনো
স্বীকারোক্তি কল্পনাতীত 
 
 
সংরক্ষণ: 
 
 
ঠোঁটের উপর গোঁফের আস্তরণ 
ফুঁ দিলেই এলোমেলো হয়
ঠিক যেমন ক্লিভেজে ছায়া পড়লে 
জুম করে দেখতে ইচ্ছে করে 
 
এমন কিছু স্তর বিন্যাসে
আঁকা ছবি, লেখা গল্প ও নানান শিল্পকর্মের
অনাবিল যাপনে অভ্যস্ত কিন্তু সঙ্গম বা পবিত্রতার 
স্তরীভূত উপায় থাকতেই পারে
 
এ এক আশ্চর্য সংলাপ 
যেখানে ঠোঁট উঁচিয়ে কিংবা বুক ফুলিয়ে 
চুমু ও গর্ববোধ নিয়ম ভেঙে করার চেষ্টা 
ধীরে ধীরে উন্মুক্ত করে হৃদয় 
এখানে ‘শরীর’ কোনোভাবেই প্রযোজ্য নয় 
 
 
কলম:
 
লিখতে লিখতে ধুয়ে ফেলতে হয়
প্রতিটি মানসিকতাকে; মনস্তত্ত্বের এই পর্যায়ে
দাঁড়িয়ে নিজেকে বারবার ধুয়ে ফেললেই 
শান্তিতে দু-দণ্ড বসতে পারি 
প্রতিটি কবিতার আঁকে-বাঁকে নিজেকে বসিয়ে
মুছে ফেলতে পারি না চরিত্রের দাগ—
এমনই নিষ্কলঙ্ক লেখন লিখে চলে
আমার এক একটি চরিত্রহীনতা 
 
 
খোলা মনে: 
 
প্রেমিকা ও প্রকাশক দুজনের সাথে 
‘স্বত্ব’ শব্দটি যায়, ‘যায়’ শব্দটি বিশেষ্য অর্থে
এবং উৎসর্গকৃত জীবনের জুড়ি মেলা ভার 
কিন্তু আমরা কেউ একে অপরের 
প্রতিযোগী নই, পরিপূরকও নই
একটা আবেগ— জড়িয়ে যাই সম্পর্কে 
 
পাণ্ডুলিপি থেকে রাইটারের কনসেন্ট ছাড়াই
ভুল বানান ঠিক করে ছেপে দেওয়া 
কিংবা একটি বিরামচিহ্নের বিসর্জন দিয়ে
লেখায় পরিপূর্ণতা দিতে চাওয়ার মনোভাব 
 
যুক্তি ও ব্যাকরণের বাইরের যে বিশ্ব 
তার বিপরীতে যেতে চায় না 
এটুকু বুঝতে দেরি হয়েছিল বলে 
প্রেমিকা সৌজন্যতার খাতিরে ছেড়ে যেতে 
চায়; এই অকাট্য পিছুটান বারবার 
আমাদের টেনে নিচে নামিয়ে দিয়েছে 
 
ওপরের দিকে তাকালে 
আকাশ কিংবা বিজ্ঞাপন-ধারী
নানান শর্তসাপেক্ষ ধোঁয়াশার জঞ্জাল 
 
 
আমার চিন্তা- ভাবনা:
 
 
সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছি। এক এক করে চিন্তাগুলো রাস্তার গর্তে লুকিয়ে যাচ্ছে, কয়েকটা ঘেমো জামা আর স্যান্ডো গেঞ্জির সাথে চিটিয়ে আছে। আমি ঘরে ঢুকে জামা-প্যান্ট কেচে দিই। ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হয় ময়লাগুলো, তাদের সাথে ভেসে যায় সমস্ত চিন্তা-ভাবনা। নর্দমার জলে কুলকিনারা খুঁজে পায় না। পচা মাছ এড়িয়ে সাঁতার কাটে আবার। শেষমেশ গঙ্গার জলে এসে ডুব দেয় রাতে। সূর্য প্রণামের আক্ষেপ থেকে যায়।
 
আমি রাতের বেলা লিখতে বসলে কিচ্ছু আসে না। মনে পড়ে না কে কোথায় তলিয়ে গেছে। ঘুম ছুটে আসে চোখে, এলিয়ে পড়ি বিছানায়। সকালে উঠে আবার একই রাস্তায় যেতে হয়। দেখি, নতুন নতুন গর্ত থেকে চিন্তাগুলো সমালোচনা করছে, কেউ বা কটাক্ষ করছে। 
 
সেসব গায়ে না মেখে এগিয়ে যাই। বুঝতে পারি, আবার কিছু নতুন চিন্তা তাদের দলে যোগ দিয়েছে! রাস্তায় তিক্ততা জমতে জমতে দুর্ঘটনা ঘটে পথ চলতি মানুষের। অঘটনের নামে ভুলতে পারি না কাউকেই…
 
 
পরিচিতি
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দা এবং বর্তমানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গণিত বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করছেন। বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চা ও লেখালেখিকে শখ হিসেবে নিয়েছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন এবং পরীক্ষামূলক কবিতা লেখায় ঝোঁক রয়েছে। 
==============