You are currently viewing ৫টি কবিতা > এমিলি ডিকিনসন। বাঙলা ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর

৫টি কবিতা > এমিলি ডিকিনসন। বাঙলা ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর

 

৫টি কবিতা

এমিলি ডিকিনসন

বাঙলা ভাষান্তর : বদরুজ্জামান আলমগীর

৫৬বছরের জীবন পেয়েছিলেন এমিলি ডিকিনসন। জন্মেছিলেন ১০ই ডিসেম্বর, ১৮৩০ সনে, মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৫ই মে, ১৮৮৬ সনে। মোটামুটি একই সময়ে দুই অসামান্য আমেরিকান কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান এবং এমিলি ডিকিনসন কবি হয়ে উঠেছিলেন, কিন্তু কখনও তাঁদের পরস্পর দেখা হয়নি, একজন আরেকজনের কবিতা পড়েছিলেন- এমন কোন সাক্ষ্যও মেলে না। তার কারণ,  মোটমাট ১৮০০ কবিতা লিখেছিলেন এমিলি ডিকিনসন,  কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল গোটা দুই কবিতা, মতান্তরে ১০টি। ডিকিনসন কবিতা লিখতেন সম্পূর্ণ আড়ালে, গোপনে; তাঁর এককাট্টা আগ্রহ ছিল খ্রিস্টান অধিবিদ্যায়। মৃত্যুর পর ছোটবোন লাভিনিয়া ডিকিনসন কবিতাগুলো প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জীবন-মৃত্যুর অলাতচক্র অন্বেষাই ডিকিনসনের নিরাভরণ বাসনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ বাক্যবন্ধে, ভাঙাভাঙা, দীর্ঘশ্বাসের মত অজস্র ড্যাশ যোগে কবিতা লিখেছেন তিনি, কিন্তু এগুলো বাইবেলের সুসমাচার হয়নি- সত্যিকার অনন্য কবিতা হয়ে উঠেছিল- এখানেই এমিলি ডিকিনসনের নিঃসঙ্গতার বিজয় তিলক সাব্যস্ত হয়- যে কবিতাগুচ্ছ পাথরের মত অক্ষয় ও জেদি হয়ে উঠেছিল।

 

মরণকালে আমি মাছির গুঞ্জন শুনেছিলাম

আমি যখন শেষবারের মত চোখ বুজি

শুনি চারদিকে মাছি ওড়ে, ঘোরে ভনভন।

ছোট ঘর নৈঃশব্দ্যে থমথম,বাইরের বাতাসে নীরাগ;

ঝড়ো তাণ্ডবের মাঝে এক ফোকর নীরবতা-

 

ঘরে ঠাসাঠাসি হৃদজনের চোখে নিরাশা-

বুকের ভিতর জমতে থাকে ভারী শ্বাস,

উদ্বেগে নিরাশ্রয় জোড়াজোড়া চোখ-

কখন এ-ছোট্ট ঘর থরথরিয়ে কেঁপে উঠবে

নিরঙ্কুশ রাজার পদভারে-

 

আমার যে সব দিতে হবে সে-তো আমি জানি

পথ চেয়ে নিজের সবটুকু অঞ্জলি করেছি সমর্পণ-

পসরা হাতে আমি একপায়ে খাড়া

কোত্থেকে এলো এক যাত্রাভঙ্গের মাছি!

 

আমি ও আমার মাঝখানে দ্বিধার পর্দা

অন্ধকারে ভেঙে পড়ে আলোর সাঁকো-

আমার সব দেখা অধিগ্রহণ করে

অদেখার পাষাণ!

 

Emily Dickinson : I heard a fly buzz when I died.

 

সত্য কহো রয়েসয়ে বলো

সবটুকু সত্য বলো-

কহো পরোক্ষে।

সত্য কাজ করে

যদি রয়েসয়ে বলো।

চাঁচাছোলা সত্য

আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।

বাচ্চারা ঝলসে দেওয়া বিজলি

সইতে পারে না।

বলা হোক, আসুক ক্রমশ-

এক দঙ্গলে সত্য নামলে

তার ঝাঁজে

মানুষ কানা হয়ে যাবে।

 

Emily Dickinson : Tell the truth but tell it slant.

 

আমি কেউ না- তুমি কে?

আমি কেউ না! তুমি কে?

তুমিও না- তুমিও কেউ না?

তাহলে তুমি আমি মিলে একজোড়া!

কাউকে কিছু বলো না- ওরা রাষ্ট্র করে ছাড়বে!

 

নিজের অন্যকেউ হয়ে ওঠা- বিচ্ছিরি ব্যাপার!

এ তো পাইকারি মাল- ব্যাঙ বুঝি একখান-

থিকথিকে কাদার উপর দাঁড়িয়ে

যে নিজের নাম চাউর করছে!

 

I am nobody- who are you?

 

আশা এমন কিছু যার পালক আছে

আশা এক পাখ লাগানো পাখি

প্রাণের আড়ায় বসে ঠাঁই

নিরালা নিঃশব্দে গান গায়

না মানে দিবারাত্রির ভেদ।

 

দমকা হাওয়ায় পাখি না খোয়ায় সুর

ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হলেও সংসার

ভাবে কত নেহায়েত সে-

প্রাণের উত্তাপ শত বাধায় না ছাড়ে।

 

আমি শুনেছি এ গান তীব্র শীতে

সংক্ষুব্ধ সাগরের উত্তাল বুকে

এমনতর অতি ক্ষুদ্র যে আমি

দাঁড়াই ফের বুক বেঁধে।।

 

Hope is the thing with feather.

 

কফিন-ছোট এক আবাস

একটি কফিন- এক ছোট আবাস ঘর

ছোট কুটিরখানি

তবু জায়গা অনেক বেশি

পাখা গুটিয়ে এখানে মুহ্যমান।

 

একটি কবর- পরিসর ছোট

সূর্যের অধিক দেদীপ্যমান

পরমের অধীন অথৈ সাগর

আর মৃত্তিকার স্থল।

 

অধীশ্বরের অতুল প্রশ্রয় বেড়ে

করুণাধারায় হয়ে সিঞ্চিত

মর্ত্য অমর্ত্য শোলক আবর্তনে

গৃহীত এক অভাজন।।

 

A coffin- is a small domai.

=====================

বদরুজ্জামান আলমগীর:

কবি, অনুবাদক ও নাট্যকার

=====================