৩টি কবিতা
বদরুজ্জামান আলমগীর
পুনর্জন্মবাদী
তুমি তো জানো আমি আফসারুদ্দি
নিরীশ্বরবাদী টাইপ লোক,
গায়ে গতরে খাটি, জান বাজি রাখি।
নিজেকে, নিদারুণ সংসারের চাকাকে
এক ইঞ্চিও বদলাতে পারিনি।
কিন্তু বদলে গ্যাছে দিনকাল,
তাই নিজেকে আজকাল সংশয়বাদী বলি।
দুনিয়া বদলে যাওয়া অছিলা মাত্র
আসল কারণ এই দণ্ডিত আমি
ভিতরে ভিতরে বড় আশায় বুক বাঁধি-
তোমার সাথে আরেকবার দেখা হবে,
দেখা হতেই হবে যে আমাদের।
কিন্তু কীভাবে আমাদের দেখা হবে বলো?
ওই যে পুনর্জন্মে, পরকালে।
আমি কেবল তোমার সাথে একদিন
দেখা হবার লোভে এখন পুনর্জন্মে,
পরকালে বিশ্বাস করি।
তুমি জানো, এমন টানাটানির সংসার
কোনভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারিনি।
যৎকিঞ্চিত সাধ আহলাদও
পূরণ হয়নি তোমার।
বড় ইচ্ছা ছিল- তোমাকে নিয়ে একবার
পাটলির ঘাটে যাবো,
তোমার পরনে কুমারখালির সুতি শাড়ি
তোমাকে নিয়ে মনসব মিয়ার
ছৈতোলা নৌকায় এক বিকাল ঘুরে বেড়াবো,
আর নদীর পাড়ে বিনোদ কাকার
দোকানে চিড়ামুড়ি খাবো।
আমাদের গ্রাম থেকে
মাত্র সাত মাইল দূরে পাটলির ঘাট।
পারিনি, একদিনের জন্যও
আমরা ওখানে যেতে পারিনি।
সবকিছু ছেড়েছুড়ে এখন আমি
পরকালে, পরজন্মে বিশ্বাস করি-
নতুন করে জন্মাবো আমরা,
সুতির শাড়ি পরে তুমি যাবে
মাত্র সাত মাইল দূরে- পাটলির ঘাটে!
ঋতুবিদ্যা
শেষপর্যন্ত যা চেয়েছিলাম তা পেয়েছি আমি
দেখতে চেয়েছিলাম তুমি কথার ঝাড়বাতি হয়েছো,
নীরতার লেপামোছা মাঝঘর হয়ে রবো আমি,
আর শিকড় ছড়ানো গাছ এক- যুগ যুগ দাঁড়িয়ে থাকবো
পায়ের উপর, কেবল মাথার চুল করবে শনশন।
ঋতুবিদ্যার অছিলায় যা-ই ভাবি, বিধি লেখেন বাম-
আমি গৃহস্থ নিম্নমধ্যবিত্ত শাকপাতা ছেলে,
আমার কেন ঘোড়ারোগ- শিউরে উঠে কেন শুনবো
ট্রেনের চাকার নিচে চাবুকের হিসহিস-
ছলকে ওঠা আগুনের রবিনহুড, দস্যু ফুলন দেবী?
এভাবেই সব ফলিত বিদ্যা বিফলে যায় আমার
যখনই দেখি তোমার দেহ ভেঙে তোলা হলো
একশোটি এক্স-রের প্লেইট।
আর তুমি মোরগঝুঁটির মত কেঁপে কেঁপে মরণ কুটো
ধান ভানলে ছিটকে বেরোয় খয়েরি চালের নুড়ি
আগুন ভানলে শঙ্কিত মৃত্তিকায় মুখ তোলে জলের কুঁড়ি।
গুম
এভাবেই শব্দ, শব্দের মর্মার্থ আমূল বদলে যায়।
তোমার পালান বদল হবার পর থেকে
ইচ্ছায়, কী অনিচ্ছায় শব্দের ভার ও মহিমা
বদলে গ্যাছে আমূল, শব্দের দয়ামায়া
আত্মীয় অনাত্মীয়তা বেমালুম পালটে গ্যাছে।
মুক্ত হাওয়ায় ঘুরে বেড়ানোকেই এতোদিন
নিশিকল, স্বাধীনতার আকর বলে জেনে এসেছি-
গুম খুন, হাজতবাসকেই জেনেছি জীবনের নাল্লত।
কিন্তু তোমার বদলে যাওয়া আমাদের ভাষাকেই
কবন্ধ করে দিয়েছে, ভাষার সিঁথি থেকে
মুছে গ্যাছে সিঁদুর, হাত থেকে পড়ে গ্যাছে সোনার বালা
আর আমি হয়ে পড়েছি ভূমিহীন রাস্তার ছেলে।
ধরে নিচ্ছি- আমাকে ছুঁড়ে ফেলার ভেতর দিয়ে
আমাকে তোমার প্রত্যাখ্যানের গরিমায় তোমার
জিৎ হয়েছে, তুমি নাচের মুদ্রায় যে-ই নিজেকে
পরিপ্রেক্ষিতের কাছে আলোর তকমায় মেলে ধরছো,
তুমি যাকে আলোকবর্তিকার সমান্তরালে স্ফূরণ
আর গৌরব ভেবে কালের পাড়ঘাটায় বসে তালিয়া বাজাও,
মৌলে তুমি বিচ্ছুরণের নামে কাদা থিকথিকে হয়ে গ্যাছো
আসলে তুমি আলো ঝলকানির ভিতর গুম হয়ে গ্যাছো।
***********************************************