You are currently viewing ৩টি কবিতা > বদরুজ্জামান আলমগীর

৩টি কবিতা > বদরুজ্জামান আলমগীর

৩টি কবিতা

বদরুজ্জামান আলমগীর

 

যে নিজেকে নাই করে

 

পরমের শক্তি অমোঘ- সে সব করতে পারে

নিজেকে নাই করে দেবার শক্তিও আছে তার

সত্যি সত্যিই নাই করে দিলে ফিরে আসে কীভাবে?

 

যে মৃত যে নিখোঁজ সে ভোরের উশ হাতে ফেরে।

 

তাহলে তার সবই আছে কিন্তু নিজেকে নাই করে

ফেলার ক্ষমতাটুকু নাই।

ঈশ্বর তাই শৈশব, ঈশ্বর তাই ফেলে আসা পথ,

থাকা না থাকার মাঝখানে সাঁকো ও কেমোফ্লেজ।

 

যে চলে যায় দূরে কিন্তু আসলে ঘর বাঁধে হাতের রেখায়

তাই সে আর দেখে না, কেবল দেখায়।

 

যে নিজে পথ চিনে না- সে চলনদার বেশে পথ দেখায়

একে আমরা মৌলিক স্বচ্ছতা নাম দিই

লীলা বলে, কুদরতি নামে বারবার অগুনতি ডাকি তারে।

 

বন্দিশ

 

যা একবার চলে যায় তা দ্বিতীয়বার ফিরে আসে না।

আরও মায়াবী লেখার ভিড়ে টি এস এলিয়েট লেখেন,

জগৎ জানে হেরাক্লিটাসও তেমনই বলেন।

 

সময়কে কীভাবে পিছাবো, আগাবোই বা-

যে যায় তবে যায় না, আসে কিন্তু আসে না-

কেবল হয় ত্রিকোণমিতি, কিবা বৃত্তাকার বিন্যাস।

 

আমার চোখের সামনে একটি রাষ্ট্রীয় গেইজ

কেবল এবড়োখেবড়ো পাটের একটি জানালা,

অনড় জংধরা প্রাণের ধূলা,কেবল বহতা

তার নাম সন্ধ্যা-সকাল, কাল কৃষ্ণ অনন্ত সময় বন্দিশ।

 

তুমিও যে সময় হয়েছো- না যাও, না থামো, না বহো- স্তব্ধতার বৃষ্টি অবিরল, কেবলই পাথর, নীরবে রহো।

 

বিথিয়া

 

আমাদের প্যাট বিড়াল বিয়াত্রিচ

বাড়ির গিন্নি বলে বিথিয়া, বিবি বিথিয়া।

প্রায়ই ওকে খুঁজে পাওয়া যায় না

এই দেখিলাম সোনার ছবি এই দেখিলাম নাইরে

মাত্রই সিঁড়ির গোড়ায় ছিল, চোখের পলকে নাই।

 

মনে হলো বেইজমেন্টে একটি হাওয়াই বল

বুঝি লাফিয়ে গড়িয়ে কোণার দিকে যায়-

ও বিয়াত্রিচ, বিবি বিথিয়া, ইঁদুর পাবার নেশায়

নেশায় ঘোরে, বসে বসে হাতের ছোট মুঠি খোঁটে।

 

সে যেন আমাদের নিঃসঙ্গতার উপর

শিল্পী জয়নুল আবেদিনের খুবই আলতো একটি স্ট্রোক

বিলের নিরীহ জলের উপর পদ্মপাতার

মনভোলা মৃদু একখানি হাততালি।

 

জানলার বাইরে ইলেকট্রিকের তারের উপর

একবৈঠক রবিন পাখির ভৈরবী, কী পূরবী

বা কিচিরমিচির তাদের এপ্রিলি আড্ডার স্বরে

ঘর থেকে জেগে ওঠে বিয়াত্রিচ, কথা বলে বিথিয়া

ও যেন বেড়াল নয় আর, সে-ও একটি পাখি বুঝি

পাখা ঝাপটায় গৃহ পিঞ্জিরায় মাথা কুটে

ডেকে ওঠে আমাদের ফেলে আসা ঘুঘু- ডুফি পক্ষী।

 

যত দূর থেকে আসি, যত বেলা করে ফিরি আমরা

দরজা খুলতেই বিথিয়া মোতায়েন

একদিনের জন্যও এমন হয়নি যে, বিয়াত্রিচ ওখানে নেই

বসে আছে মাটির কলসে নড়ে ওঠা একবাটি জল

ধন্দে পড়ি- কে তুমি পায়ের আওয়াজের লাগি

কুপিবাতি হাতে রোজ বসে থাকো?

 

লোকশ্রুতি বলে- চুরাশি লক্ষবার পুনর্জন্মের পর

আবার ধরাধামে মানুষ রূপে আসে মানুষ

বিথিয়া কী জাহাঙ্গীর,  নাকি সেবু, না চন্দন, রঙমালা

দরজা আগলে বসে থাকো পাড়ভাঙা লেবুপাতার ঘ্রাণ!

==================