You are currently viewing ৩টি কবিতা >  ফোরুঘ ফারোখজাদ,  বাঙলা তরজমা ও ভুমিকা : বদরুজ্জামান আলমগীর

৩টি কবিতা > ফোরুঘ ফারোখজাদ, বাঙলা তরজমা ও ভুমিকা : বদরুজ্জামান আলমগীর

৩টি কবিতা
ফোরুঘ ফারোখজাদ

বাঙলা তরজমা ও ভুমিকা :

বদরুজ্জামান আলমগীর

আজকে মাশা আমিনির আত্মবলিদানকে কেন্দ্রে রেখে ইরানে, কী গোটা দুনিয়ায় নারীর মর্যাদা সমুন্নত করার যে সংগ্রাম শুরু হয়েছে- তা মোটেও একটি ভুঁইফোড় ঘটনা নয়; এই পর্যায়ে একটি আন্দোলনের গতিমুখ দেখতে চাইলে তার জন্য একটি পরম্পরা লাগে, ইচ্ছাশক্তি ও ব্যক্তিত্বের স্বাধীন অভিব্যক্তির ধারাক্রম লাগে- পার্লামেন্টে একটি নতুন পয়াভারী মন্ত্রীপরিষদ গঠন করার জন্য বড়জোর একটি চলনসই বা সম্পূর্ণ ভেজাল নির্বাচন লাগে, মুঠভর্তি টাকা লাগে, আর কিছু পোস্টার হলেই চলে, কিন্তু ইরানে বিদ্যমান নারী অধিকার ও নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার যে লড়াই চলছে- তাকে এই পর্যায়ে আসার জন্য মোটেও কিছু পোষ্টার, আর রাজনৈতিক দলগুলোর মুঠভর্তি টাকা হলেই চলে না- তারজন্য জীবন ঘষে জ্বলে ওঠা সাহিত্য লাগে, কবিতা লাগে। ইরানের ইতিহাসে এমনই এক অসামান্য নারী কবি ফোরুঘ ফারোখজাদ-কে আজ প্রতিক্ষণ মনে পড়ে; ফারোখজাদ ইরানের তেহরানে  জন্মেছিলেন ১৯৩৫-এ, আর গাড়ি দুর্ঘটনায় মাত্র ৩২বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬৭ সনে। ইরানের ১৯৭৯ বিপ্লবে বহু প্রগতিশীল সামাজিক শক্তি ও অগ্রসর বুদ্ধিজীবীর মোর্চা হয়েছিল, যদিও দিনশেষে ইসলামি শাসনের হেজিমোনিতে প্রায় সবাই মাটিচাপা পড়ে। কিন্তু আকাঙ্ক্ষা অমর- তা নির্বিনাশ ইকারুস- যাকে বারবার জানান দিতে দেখি। সেই অপ্রতিরোধ্য যাত্রার মোড়ে ও বাঁকে মানা আঘায়ী, গ্রানাজ মৌসাভি, মরিয়ম হুলেহ ও অপরাপর নারী কবিগণ আছেন। ইরানে এমন কবি ছিলেন বলেই আজ তার আঁচ দুনিয়ার সকল কোণায় ও প্রাঙ্গণে এসে লাগে।

 

লাল গোলাপ

লাল গোলাপ লাল গোলাপ লাল গোলাপ
সে আমাকে হাত ধরে নিয়ে যায় এক লাল গোলাপের বাগানে
আমার আলুথালু চুলের নিবিড় বনে লাল গোলাপ গুঁজে দেয়
অন্তিমে সে একটি লাল গোলাপের পাপড়ির উপর আমার সাথে মিলিত হয়।

আমার হৃদডাঙার তলায় জাগর
এক বিধ্বস্ত কবুতর, ও অক্ষত যোনী, ও ঋতুবন্ধ্যা গাছের সারি
ও টুলিপরা দিগন্ত রেখা
আমার গভীর একা জরায়ুর কোটরে গোলাপ কুঁড়ি মেলে
একটি লাল গোলাপ
রক্তিম
মহান পুনরুত্থান দিবসের তুরীয় আর্তির মুখে যেমন একটি পতাকা ওড়ে

দেখো গর্ভবতী, আমি গর্ভবতী, গর্ভবতী আমি।।

 

বাতাস আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাবে

আমার এই নাতিদীর্ঘ রজনীর পাড়ে
বাতাসের অভিসার আছে গাছের সনে
আমার ছোট রাত ডরে কাঁপে থরোথর
ছিন্নভিন্ন হবার ভয়।

এদিকে চাও, শুনতে কী পাও আঁধারের তোলপাড়?
আমি দূর থেকে দেখি নিজের ভাগ্যের আঁকাবাঁকা
শোন, একদলা অন্ধকার কীভাবে পাশ ফেরে, কাতরায়?

রাত্রির অন্তর চিরে কে ছোটে
চাঁদ দেখো কতোটা রক্তিম আর কতোটা বিচলিত
ছাদের উপরে এ কিসের ফিসফিস
উপরে মেঘ জমে ওই বুনো গণ্ডার বৃষ্টির ফোঁটায়
ভেঙে পড়বে বলে মেঘ থম থম করে।

একটি নিরঙ্কুশ মুহূর্ত
আর কিছু নেই, সব স্তব্ধ অতল
জানালার বাইরে কী এমন হাওয়া থরোথরো কাঁপে
মনে হয়, দুনিয়া অবশ হয়ে পড়ে আলগা হয়ে যায়
জানালার বাইরে ওপাশে অজানা শঙ্কায় কাঁপে
যেন কারা- কাঁপি তুমি আর আমি।

ও আমার আদিঅন্ত সবুজের বেলাভূমি
তুমি আমার উপর হাত রাখো- যা অমর অক্ষয়
আর আমাকে গভীর বিশ্বাসে চুম্বন করো
যার দ্যুতি জীবনাধিক জ্যোতির্ময়,

ভেবো না, দুর্বিপাকে পড়ো না
বাতাস আমাদের দুজনকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।।

 

দুনিয়ার উপর

আমি কোনদিন আকাশে একটি তারা হয়ে
জ্বলে থাকতে চাইনি
অথবা কোনদিন আপ্রাণ ইবাদত করে বলিনি
আমাকে একজন ফেরেশতার বন্ধু বানিয়ে দাও
কায়ক্লেশে এই দুনিয়াতেই আছি আমি
তার বাইরের কাউকে আত্মীয় ভাবিনি, চিনি না তাদের।

আমি দাঁড়িয়ে আছি এই পৃথিবীর উপর
আমার শরীর এই মাটিতে পুঁতে রাখা একটি তরু শাখা
জল বলো, হাওয়া বলো, কী বলো আলোকরশ্মি
সবই আমি গাছের স্বভাবে নিই।

আমি বাসনার বোন
দুঃখকে অন্তরে রোপন করে সুখী
আকাশের তারা বরং আমার বন্দনা করুক
দখিন হাওয়া আমাকে জড়িয়ে ধরুক, আমাকে।।

 

English version : Hasan Javadi / Susan Salle.

বদরুজ্জামান আলমগীর: নাট্যকার, কবি ও অনুবাদক