২টি কবিতা/ নিগার সুলতানা
তুমি
সহস্র যোজন পার হয়ে যেদিন তুমি দাঁড়িয়েছিলে আমার প্রতীক্ষায় – একটু অদ্ভুত ভাবেই
সম্মুখে প্রসারিত দৃষ্টি; অনেকখানি নিমগ্নতা; ঠোঁটে বিষন্নতা,
কাছাকাছি আসতেই আমার জীর্ণ ক্লান্ত দিনটি এক লহমায় বদলে যায়
বদলে যায় আমার চোখের দ্যুতি, গলার স্বর
বদলে যাই আমি, বাদামি দুচোখ বদলে দেয় আমার ভিতর।
পরক্ষণে চোখে চোখ পড়তেই উন্মুক্ত দুহাত আর একগুচ্ছ দুধসাদা দোলনচাঁপা হাতে দিয়ে
বললে, এই ফুল মনে করিয়ে দেয় আমার কথা; বললে, দোলনচাঁপা তুমি বড় ভালোবাসো
ভালোবাসো তার সহজ সরলতা আর উন্মাদ ঘ্রাণ !
তুমি কিন্তু বরাবর ঘ্রাণ এর পাগল ছিলে; ছেলেমানুষি যতসব !
মনে আছে, সেই ঘুম ভাঙা সকালে প্রণব স্যার এর ক্লাস শেষে
সমরেশের সদ্য প্রকাশিত বইতে নাক ডুবিয়ে বলেছিলে
“নতুন বই মানেই তুমি; নতুন বই মানেই তোমার ঘ্রাণ!”
কত অদ্ভুত উপমায় আমার বর্ণনা তোমার কাছে
সন্ধ্যে বেলায় ছাদের আলসেতে দু’কাপ চায়ে মুখোমুখি আমরা দুজন;
নীহারিকার ছুটে আসা দেখতে দেখতে পার হয় অযুত সময়
দুটো হাত জড়িয়ে থাকে একদিন সূর্যোদয় দেখবে বলে!
শান্তিনিকেতন, আর কিছু স্মৃতি
উত্তরায়ণের সেই সকালের ছাতিম তলায়, বছর শেষের ক্লাস;
একটু দূরেই শালবন; পেছন থেকে সব্যসাচীর দৌড়ে ছুটে আসা ;
বুকভরে নিঃশ্বাসে একগুচ্ছ কেশ: পিউ, ছেড়ে যাসনা, পাশে যদি না হয় থাকা ;
কিইবা ধর্ম, কিইবা দেশ, কিইবা নাম ঠিকানা,
সোনাঝুরি বন, মহুয়ার পাতা; একা পড়ে থাকবে ভীষণ, তোকে ছাড়া।
গৈরিকের অদূরেই নতমুখে নখ খুটে চলা সুমন;
কন্যাদায়গ্রস্থ রুগ্ন বাবা আর সংসার বয়ে চলার টানাপোড়েনে
বড় চুপচাপ আজীবন;
যার কাছে বছরের বারোমাস শুধুই বন্ধ্যা ফাগুন!
মৌমিতা আর তার দলবল, আসছে শীতে ইউরোপ ভ্রমণে যাবে;
ঝকঝকে শাড়ি, টাকা কাড়িকাড়ি,
কত জল্পনা, হয়তো অধিকাংশই বাহুল্য!
শ্যামলীর পাশ ঘেঁষে, একরাশ প্রশ্নের ঝাঁপি নিয়ে বসে, মালতীদি – মনমরা, আলুথালু,
মহৎ একটি গানের আশায়; ধারণ করেছে চির-বৈধব্য অমূল্য।
আনকোরা গানের অন্তরা নিয়ে চলছে বেজায় তর্ক;
রেহনুমা আর অর্ক: দেখিস সুবিখ্যাত, কিংবদন্তি হবে এই গান,
ভারী বর্ষায় ফুটবে শিমুল ফুল, ভরদুপুরে মন্থর বাতাস গাইবে সেই গান,
উপচে পড়া ভিড় হবে; ডিসেম্বরে! ভুবনডাঙ্গার সেই পৌষমেলায়।
পেরিয়ে যায় সময়, বাড়ে দূরত্ব,
কাছের মানুষগুলো নিমিষে হারায়, হারায় ভালোবাসা, পড়ে রয় মায়া
এতো দিনের খুনসুটি, অলস দুপুর; আচ্ছন্ন মায়াবী রাত,
পাগলামির স্লোগান, আগুনঝরা দুটো কবিতার লাইন,
সবই স্মৃতির করতলে, শুধুই স্মৃতিচারণের পর্দায়।