হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা
জেবুন্নেছা জ্যোৎস্না
রাতে ঘুম থেকে উঠে কিচেনে লাইট জ্বালিয়ে পানি খেতে গিয়ে ঠোঁটে অনুভব করলাম তুলতুলে নরম কিছু, গ্লাসের ভেতর চাইতেই চোখ ছানাবড়া, আর গ্লাস ফেলে চিৎকার! সেই চিৎকারে কিচেনের কাভার্ড থেকে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে পালিয়ে গেল গোটা কতেক ইঁদুর। চুলার ওপর চোখ পড়তেই দেখি, ঢেকে রাখা প্লেটের ঢাকনা সরিয়ে টেনে আনা চিকেন উইংসটার ওপর সটান দাঁড়িয়ে একজন মহাবিরক্তিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকেই, যেন এই মধ্যরাতে আমার কী দরকার তাদের পার্টিতে এসে বাগড়া দেওয়ার!
মাথায় তখন খুন চেপে গেল। সেই মুহূর্ত হাতের কাছে কিছু না পেয়ে যখন ইঁদুর হত্যার প্রতিশোধে চাকু খুঁজতে ড্রয়ার খুলি, সেখান থেকেও গলগলিয়ে বের হয়ে গেল আরও অনেকে। ওদিকে টুপ করে গার্বেজ ক্যান থেকে লাফ দিল কজন, চালের ড্রামে চিঁহিঁ চিঁহিঁ শব্দ. . হঠাৎ পায়ের কাছ দিয়ে একটা আরেকটাকে তাড়িয়ে নির্ভয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ঘরময়. . আমিও অমনি চাকু হাতে ভয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলাম চেয়ারে…নাহ্! আমি ওদের সঙ্গে পারব না, ওরা সংখ্যায় অনেক।
চেয়ার থেকে মাথা বাড়িয়ে বাথরুমের দিকে চোখ দিয়ে দেখি, ওখানেও ওনাদের রাজত্ব। আমার এই মহাক্রান্তিকালে একজনের কথাই মনে পড়ল, বাঁশিওয়ালা! হ্যামিলনের বাঁশি…য়ালা বলে চিৎকার দিচ্ছি। কিন্তু শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, বাতাসের অভাবে শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি কমে যাচ্ছে। আমার কর্ণকুহর পর্যন্ত সে ডাক আসতে পারছে না, তবে আমার স্বরযন্ত্র দিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে গোঙানি বের হচ্ছে। আর সেটা শুনে এক হ্যাঁচকা টানে আমাকে কিচেনের চেয়ার হতে বিছানায় এনে ফেলল হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা টাইপ একজন।
রাতের অন্ধকারে থিতু হতে একটু সময় লাগল…চোখ খুলে বলি, পানি। সে পানি দিল। বললাম, লাইট জ্বেলে পানি খাব। সতর্কভাবে বসে পানি পান করতে করতে ভাবি, ভাগ্যিস হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা সময় মতো এসেছিল!