You are currently viewing হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার (কিস্তি: দশ)  খালেদ হামিদী

হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার (কিস্তি: দশ) খালেদ হামিদী

হেলিকপ্টার ও সোনার তলোয়ার

খালেদ হামিদী

কিস্তি: দশ

১৯

এক দেবরের সাথে পালিয়ে গেলেও আকলিমাকে যে খোকনের একেবারেই মনে পড়ে না তা নয়। দেশে প্রথম কয়েকবারের ছুটিতে খোকন যে টানবাজারের পল্লীতে যায়নি তাও নয়। কিন্তু আকলিমাকে বিয়ে করে সে এমনকি কনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধুকেও খুশিতে বলে ওঠে:

নারীর সঙ্গে সহবাস হয়েছে আমার। কিন্তু বসবাস এই প্রথম।

সেবার তিন মাসের ছুটির প্রথম মাসের তৃতীয় সপ্তাহেই ওদের বিয়ে হয়। খোদ পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখে পছন্দ হওয়ায় কাল ক্ষেপণ করে না খোকন। নিজের মা-বাবাকে চাপ দিয়ে ওই দেখার পরের দিনই কনে পক্ষের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের ধুমধাম। কিন্তু ওর ফুলশয্যা হয়েও হয় না। বেড রুমের ডীম লাইট যে জ¦লবে না কিংবা বাল্বটা যে ফিউজড্ হয়েই ছিলো আগে জানা থাকেনি খোকনের। টিউব লাইটের আলোয় মিলনে রাজি নয় আকলিমা। তাই, অষ্টাদশী ভীষণ ভয় পাওয়ায়, নাছোড় ত্রিশোর্ধ্ব পুরুষ অন্ধকারেই উদ্যত হয়েও স্তিমিত হয়ে পড়তে বাধ্য হয়। মেজাজ বিগড়ে যায় বরের। ফলে ঘুম ভাঙলেও, সকালে রতির সম্ভাবনা এড়িয়ে, শুয়ে থাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন সে। রীতি অনুসারে বিয়ের দিন সাথে আসা আকলিমার নানি সকাল না হতেই রুমের দরজায় টোকা দিয়ে ওকে জাগিয়ে তোলেন। কেননা শ্বশুর-শ্বাশুড়ী সেবা শুরু করতে হবে প্রথম ভোর থেকেই। সবই ঠিক। কিন্তু খোকনের আজ মনে হয়, স্বাভাবিক সুন্দর বাসর রাত না পাওয়ায় বিয়েটা আর টেকেনি।

 

প্রায় আড়াই মাসের বসবাসে আমার কী সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ে আকলিমার চোখে? নিজেকেই প্রশ্ন করে খোকন। মনে পড়ে সেই বৈবাহিক সঙ্গিনীর সঙ্গে তার মিলনের ঘটনাগুলো। সেসব স্মৃতিকে কল্পনায় সাজাতেও ভালো লাগে  ওর। সেগুলো ছিলো বাৎসায়নী আসন নাকি পর্নোগ্রাফি অনুসরণ আকলিমা বোঝেনি, বরের প্রত্যাশা পূরণেই সচেষ্ট থেকেছে শুধু। সঙ্গীর উল্লাসের অংশীদার কি হয়নি সে? তা অবশ্য সেভাবে লক্ষ করেনি খোকন। আজ বুঝতে পারে, সে একচেটিয়া মজা লুটেছে কেবল। তাই এখন নিজের মনকেই বলে:

নইলে আমার ছোট চাচার চার ছেলের চতুর্থ জনের সাথে পালায় কেন আকলিমা? আমি চলে আসায় মিলনে দীর্ঘ কালের ছেদ পড়ে বলে? আমার সাথে রতিক্রিয়ায় মজা না পেলে তো বিরহ সয়ে যেতো সে। আমারই বোন জবার তিন ননদই তো আবুধাবি-প্রবাসী স্বামীদের ছাড়াই, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে সংসারে এখনো থিতু। না, কথা শুধু সেটাই নয়। আমিও কি গোপনে নির্যাতন করিনি? কোনও কোনও দফায় পৌনে এক ঘণ্টা বা ততোধিক সময় ধরে থাকা এবং এক বিশেষ পোজে আমার তীব্রতম গতি আর আকলিমার স্থিতিকালে ওর নিতম্বে আমারই চড়-থাপ্পড়ই কি তাকে হারানোর কারণ? হতে পারে। কিন্তু সে তো অত্যাচার নয়, চরম উল্লাসের মুহূর্তে কঠোর আদর। যদিও, ওই মেয়াদজনিত চাপে আকলিমা কয়েকবার মেয়াদোত্তীর্ণের ধরনে ভেঙে পড়ে, কেঁদে ফেলে। সে কি তাহলে তার প্রিয় দেবরকে এসব জানায় কিংবা আমাকে নারী-নির্যাতন মামলার সম্ভাব্য আসামীরূপেই তুলে ধরে ওর কাছে? না, না। বাসা থেকে বেরুবার সময় প্রতিবার ওর কপালে আমার চুমু খাওয়াটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় আসলে। নাকি তার হাতে কোনও টাকা-পয়সা দেইনি বলে আড়াই মাসের একত্রবাস এভাবে ছারখার হয়?

ওসব ভাবনার কোনও সুরাহা না মেলায়, সে, স্বদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের কারও কারও মুখে শোনা ভাষায় হঠাৎ একাই বলে ওঠে:

যাউক গা, নাজিমেরডা আমারডার চাইতে বড় মনে অয়। এর লাইগা মাগি হের লগে পলাইছে। হেরা পলানোর পরে চুদির ভাইডারে পাইলে কইতাম, তুই হেতিরে আরও লাগানর আগে, আয়, তোরে আমি লাগামু।

বলতেই ওর লাজুক ঘণ্টিটা বিরাট নির্লজ্জ খুঁটিতে পরিণত হয়। ফলে নিজেকে সাহায্য করতে বাধ্য হয় নিজেরই হাতে। মনে পড়ে, দেশে ওর বন্ধু, বয়সে দুই বছরের ছোট কা ন, বিয়ের আগে স্বমেহনের সময় বহুবার কন্ট্রাসেপ্টিভ ব্যবহার করে। আবার রিয়াদবাসী বন্ধু মন্টু, গার্ডেনার, গ্রামের বাড়ির গল্প বলার সময় একবার জানায়, কলাকুপা বান্দুরা এলাকায় এক লোক স্ত্রীর পরকীয়া মেনে নেয় বউয়ের প্রেমিককে করার শর্তে। ওই ছেলেটাও রাজি হয় শুনে খোকনের মাথায় প্রশ্ন জাগে: সে কি তাহলে সামনে পুরুষ, পেছনে নারী?

এসব ভাবার এক পর্যায়ে, সেলফ্ হেল্পের চরম মুহূর্তে, অদ্ভুতভাবে, নাজিমের ভেতরেই সে ঢেলে দেয় যেন তার শেষ জল। এটা তার ক্ষোভের অনেক দূরবর্তী নিষ্পত্তি হলেও এই স্ববিরোধিতায় সে নিজেই বিস্ময় মানে। কেননা স্বদেশে-প্রবাসে পরিচিত সবাই ওকে খুব ভদ্র-নম্র-শান্ত-ভীরু ব্যক্তি বলেই জানে। আরেক নিঝুম সন্ধ্যায় তার কানে বেজে ওঠে চাটগাঁর মুসা ভাইয়ের মুখে শোনা ফতেয়াবাদের এক নতুন বিবাহিত নারীর সংলাপ:

আঁই ইতের লগে ঘর গইত্যাম ন (আমি তার সাথে সংসার করবো না)। ইতে আঁরে হালি ফিছদি মাইত্য সা (সে আমাকে শুধু আমার পেছন দিকে মারতে চায়)।

খোকন ভেবে অবাক হয়, মারামারি নয়, দেশে থাকতে, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি পর্বে, কীভাবে নিছক পারস্পরিক আদর-সোহাগের গল্প শোনায় মিনহাজ, খসরু আর কা ন। সম ও অসম বয়সী বন্ধুর সাথে এদের প্রত্যেকে নাকি চুম্বন ও আলিঙ্গন ছাড়াও ¯েœহ উদযাপন করে পরস্পরের চোষ্য-লেহ্য হয়ে। একেক সময়ে খোকনকে ওসব সংক্ষেপে শুনিয়ে প্রত্যেকে শেষে বলে:

ব্যস, ওইটুকুই।

ব্যতিক্রমী তথ্য দেয় কেবল খসরু:

মিলনেরটা অনেক বড়। বিয়ে করলে সে তার বউকে মেরে ফেলবে। শালার পুতে সেদিন আমার হাত ব্যবহার করছে। তার হাত আমি পাই নাই।

 

২০

একদিন বিকেল চারটায় অফিস থেকে ফিরে, এসিচালিত রুমে কম্বল মুড়ে ঘুমিয়ে পড়ার আগে, স্বগত সংলাপে মাতে খোকন:

স্বমেহনকে যে আমরা হস্তশিল্প বলতাম ছাত্রজীবনে তারই গল্প হতো বন্ধুদের আড্ডায়। কিন্তু পরস্পরকে দেখার প্রশ্নই তখন আসেনি। তাদেরই একজন হয়ে আমি কীভাবে দেশী ছেলেপিলের সামনে লুঙ্গি তুলতে বা নামাতে পারি? তা কি এখানকার নারীসঙ্গহীনতার ফল? দেশেও তো বিয়ের আগ পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকে একাই ছিলাম! তাহলে এমন কীভাবে সম্ভব হয় এখানে? রাস্তাঘাটে নরগামী পুরুষদের ইশারা, বর্তমানে আরব নারীরা গাড়ি চালালেও তাদের সাথে মেশার সুযোগ না থাকা, এখানে বাসার বাইরে প্রবাসী দম্পতিদের ম্যারেজ কন্ট্রাক্ট সাথে রাখার বাধ্যবাধকতা ইত্যাদিই কি আমার এই পরিবর্তনের হেতু? নাকি আমি যেখানে রাইত সেখানে কাইত ধরনের লোক? না, কেন! দেশের অনেকেই তো অ্যামেরিকা-ইয়োরোপে গিয়ে বদলে যায় প্রায়। মন্টু মামা সপরিবার যুক্তরাষ্ট্রে বেড়িয়ে আসার পর মামী জানান, এখান থেকে যাওয়ার সময়, ফ্লাইট টেক অফ করার আগে, আরব যাত্রীরা দ্রুত তাদের পোশাক পাল্টে নেয়। পুরুষেরা তোপ (আপাদগ্রীবা দীর্ঘ সাদা জামা) আর নারীরা বোরকা খুলে ফেলে। তাদের বেশিরভাগেরই গায়ে তখন টি শার্ট, নিচে প্যান্ট। ফ্লোরিডার বীচে তাদের কয়েকজনকে আন্ডারওয়্যার, পেন্টি ও ব্রা পরিহিত অবস্থায় দেখতে পান মামা এবং মামীও। আমি উদ্যমী না বিধায়, সুযোগও না থাকায় পশ্চিমে পাড়ি জমানো হয়নি আমার, হবেও না আর।

 

খোকনের স্মৃতি আর ভাবনা পরস্পর ত্রিয়াশীল হয়ে ওঠে পরম্পরা না রেখেই। নিজেকে সে বলতে থাকে:

সবাই জানে, দেশের পশ্চিমমুখি শিক্ষিত ছেলেরা ইয়োরোপ-অ্যামেরিকায় অড জব করে। এ জন্যেই কি এখানকার ও থ্রি কম্পাউন্ডে, ইউএসএ-এর কোনও শহর মনে হয় অমন আবাসিক এলাকায়, হাউজ ক্লিনিংয়ের কাজ করতে পারি নির্দ্বিধায়? আহা, কেন যে তা করতে যাই! মাসে চারবার ডুপ্লেক্স ভিলার তিনটি ওয়াশ রুম সাফ করাসহ সব ফার্নিচার ও থাই গ্লাস মোছা আর ভেকুয়াম মেশিনে/হুবারে কার্পেট পরিষ্কার করা কীভাবে সম্ভব হয় আমার পক্ষে? কষ্ট পাই যখন মনে পড়ে, মিসেস ব্ল্যাক উড এবং স্যারা বীবর প্রত্যেকে এক মাস কাজ করিয়ে আমাকে বিদায় করে দেয়। একদিন ব্ল্যাক উডের কাছে অনেকটা চেয়েই ব্ল্যাক কফি খাই বলে? নাকি কাজে আমি শ্লো, তাই? আমার অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি থাকার কথা শুনে ফ্লুয়েন্টলি কথা বলা সত্তে¡ও তিনি কীভাবে ফিলিপিনো রেনেকে কাজ দেন আমাকে বের করে? খুব দ্রুত অথচ হিজড়াদের ধরনে হাঁটে বলে রেনেকে তার দেশের লোকেরাই ডাকে মিস রিনা। নাকি আমি মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত জেনে আমাকে আর রাখেননি ব্ল্যাক উড? কিন্তু আমি তো সাম্প্রদায়িক কোনও প্রথাই মানি না উৎসবগুলো ছাড়া! তাও উৎসব কোথায়? এখানে তো দুই ঈদের দিনকে শোক দিবসই মনে হয়। ঈদে মন্টু মামার বাসায় যাবার সময় রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা থাকে। ওদিকে স্যারা মাল্টি পারপাস রুমের কয়েকটা পার্টিতে আমার হাত ধরে নেচেছেন। অমায়িক মানুষ। আমার প্রতি খুব স্নেহশীল। কিন্তু তাঁর স্বামী আমাকে তেমন পছন্দ করেননি বলেই কি তিনিও আমাকে রাখতে পারেননি? তাঁর অফিসে, রিয়াদ এয়ার বেইসে, আমি চাকরি চাওয়ায় নিজের বাসায় ডেকে মিঃ বীব একবার আমার সাথে আলাপ করেন। পরে স্যারা জানান, সাক্ষাৎকার শেষে আমি ‘ক্যান আই গো’ বলায় বীবর খারাপ লাগে। তিনি নাকি স্যারাকে জিগ্যেস করেন: ‘আমি কি কঠোর? তাকে কি বসিয়ে রেখেছিলাম আমি?’ এমন মাইন্ড করেন যে পরের সপ্তাহে তাঁর সোফা সেটের সেটিং আমি বদলে দেয়ায় স্যারা খুশি হলেও তিনি অসন্তুষ্ট হন। অথচ এই বীবই পার্টিতে সেই নাচের সময়, প্রায় মাতাল অবস্থায় টলতে টলতে, একটা কাঠের তৈরি বাদামি রঙের চায়ের কাপ হাতে, আমাদের পাশে এসে বলেন:

খোকন, ইউ নো হোয়াট ইজ ইট? ইটস্ আ বার্মিজ কাপ, মেড অফ উড!

=======================