You are currently viewing সাফায়াত খান: এক নান্দনিক মননের প্রস্থান

সাফায়াত খান: এক নান্দনিক মননের প্রস্থান

সাফায়াত খান: এক নান্দনিক মননের প্রস্থান

আমাদের যৌবনের প্রখর উত্তাপে বুকের বোতাম খুলে উদ্দাম ছুটে বেড়ানোদের মধ্যে শাহিদ আনোয়ারের পর চলে গেলো সাফায়াত খান। বহুমুখী প্রতিভার এক চমৎকার সমন্বয় ছিলো সাফায়াত- শিল্পী, অভিনেতা ও লেখকসত্ত্বায় সাফা ছিলো দুরন্ত। আমাদের আড্ডার দিনগুলো এতো এতো বছর পরও যেন জ্বলজ্বল করছে মুক্তোদানার মতো।

তার অনন্তযাত্রা নিরাপদ হোক।

আমাদের সময়কালের বন্ধুরা সাফায়াতের মৃত্যুতে যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে তা এখানে তুলে দিয়ে একটি স্মৃতিতর্পন রচনা করলাম।

আমাদের শৈশবের আনন্দের নাম সাফায়াত খান
ওমর কায়সার
একবার ভূমিকম্পের পর সাফা (শিল্পী, অভিনেতা, লেখক সাফায়াত খান) স্ট্যাটাস দিয়েছিল এরকম – ভূমিকম্পে দুনিয়া কাঁপছে। চারদিক থেকে আজান আর উলুধ্বনি ভেসে আসছে। প্রাণভয়ে ঘর থেকে সবাই বেরিয়ে গেছে। আমি শুয়ে আছি ঘরে। বেরুতে পারছি না। ‘
দীর্ঘদিনের অসুখে চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলা বন্ধুটিকে এ ছাড়া আর কোনোদিন কোনো আক্ষেপ করতে দেখিনি। অবশ হয়েছে শরীর, কিন্তু মুখের হাসি কখনো থামেনি। শরীর-মনের ওপর এসেছে একের পর এক ঝড়। কতো অস্ত্রোপচার, মাসের-পর-মাস কতবার হাসপাতালে থাকতে হয়েছে তাকে। তবুও সাফার মুখ মলিন দেখিনি। শরীরের কষ্টে, আর্থিক দৈনতায় কীভাবে হাসতে হয় সাফা শিখিয়ে দিয়েছে আমাদের। কোনো কিছুর কাছে মাথা নত করেনি সে।
সে আমাদের শৈশবের আনন্দের সঙ্গী। আমাদের যৌবনের হাসি আর আনন্দের নাম সাফায়াত খান। সেই হাসি মিলিয়ে গেল শূন্যে। আজ তার ঘরে ভিড় করেছিল কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, অভিনেতা, লেখক, নাট্যকর্মীরা। মনে হলো কৈশোরের একখণ্ড স্মৃতি ফিরে পেলাম উত্তর নালাপাড়ায়।
ইব্রাহিম আজাদ
আমুদে সাফা ভাই ( শিল্পী সাফায়াত খান)। চিত্রশিল্পী, অভিনয় শিল্পী, কথাশিল্পী, কবি- আরো কতকি! শিল্পের নানা ক্ষেত্রে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। সকালে গাড়িতে জহুরবারো থেকে কুয়ালালামপুর ফিরছিলাম। হঠাৎ ফেসবুকে সাফা ভাইয়ের মৃত্যূ সংবাদ দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না! মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। এইতো কিছুদিন আগে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলল অনেকক্ষণ। শারীরিক অসুস্থতার কথা বললেও আলাপচারিতা ছিল চিরাচরিত কৌতুকময়! মনেই হচ্ছিল না তিনি শয্যাশায়ী! সব সময় হাসি খুশি সাফা ভাই ঢাকায় অবস্থানরত অন্যান্য বন্ধুদের কুশলাদিও জানতে চাইলেন। এক সময় চট্টগ্রামের নানা আড্ডাচারিতায় সাফা ভাইয়ের উপস্থিতি ছিল আনন্দময়। যেন খোলা হাওয়া। তার প্রাণবন্ত সাহচর্যে আমরা যারা বয়েসে ছোট তারাও উৎফুল্ল হয়ে উঠতাম! সদা হাস্যময়, বন্ধুবৎসল, আমুদে সাফা ভাই চট্টগ্রামে গিয়ে আপনার সাথে আর দেখা হবে না-ভাবতে পারছি না! ওপারেও ভালো থাকবেন- হৃদয় ও চোখের হাহাকারে এই প্রার্থনা করি। নিচের ছবিতে : আশির দশকে ফুলকি’র পিকনিকে ডাব হাতে সাফা ভাই কি যেন বলছেন। আর আমরা (শাহিদ, বিশ্বজিৎ, সন্তোষ ও আমি) তার কথায় বিহ্বলিত!
জিললুর রহমান
একদা বোসব্রাদার্সে যে স্বনন আড্ডায় আমরা মেতেছিলাম আশির দশকের শেষ দিক থেকে নব্বই দশকের প্রথমাংশ পর্যন্ত, সে আড্ডায় সবার অগ্রজ ছিলেন সাফায়াত খান। কখনও কবিতা, কখনও গল্প নিয়ে এসে তিনি আমাদের শোনাতেন। আমাদের সমালোচনা শুনতেন, আমাদের লেখার তীর্যক সমালোচনায় মুখর থাকতেন। সবচেয়ে বেশি যা করতেন, তা হলো ঠাট্টা-মশকরা-হাসি-তামাশা-উইট-হিউমারে আড্ডার মধ্যমনি হয়ে আড্ডাটা জমিয়ে রাখা। পরবর্তীতে আমাদের এই আড্ডার পুনর্মিলনীতেও সাফা ভাই সমান উচ্ছ্বলতায় আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। বোসের আড্ডার পরে তাঁর কর্মক্ষেত্র সাফা’স স্টুডিওতে আমরা সময়কে ছুটি দিয়ে নিরন্তর আড্ডা দিয়েছিলাম। সাফা ভাই ছিলেন চিত্রশিল্পী-কবি-গল্পকার-সম্পাদক। তিনি মিলন চৌধুরীর নির্দেশনায় অঙ্গন থিয়েটার ইউনিটের বিভিন্ন নাটকেও অভিনয় করেছেন। জুতা আবিষ্কার নাটকে তাঁর যে অভিনয় আমি দেখেছিলাম তা আমার এখনও মনে আছে।
দীর্ঘদিনের অসুস্থতাও এই মানুষটির প্রাণশক্তিকে একটুও কাবু করতে পারেনি। তিনি তাঁর সৃজনকর্ম এবং সামাজিক মাধ্যমে আমাদের সাথে নিয়মিত যুক্ত ছিলেন। এই দীর্ঘ অসুস্থতার দিনে ভাবীর নিরলস সংগ্রাম, সেবা ও ত্যাগ সাফা ভাইকে ক্রমশ সুস্থতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো।
কিন্তু নিয়তি আজ সাফা ভাইয়ের সকল কর্মকাণ্ডের সমাপ্তির ঘন্টা বাজিয়ে দিলো বড় অবেলায়।
সন্তোষ বড়ুয়া
মেঘ ঝরে বৃষ্টি হলে
মুষড়ে পড়ে গান,
নালাপাড়া শোকে আছে
ফিরবে না সাফায়াত খান।
জমজমাট আড্ডাবাজ ছিলেন তিনি। সারাক্ষন আনন্দ দিতে পারতেন, মাতিয়ে রাখতে পারতেন।
চট্টগ্রামের শিল্প ও সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত নাম সাফায়াত খান। মুখের সামনে বলে দিতে পারতেন সোজাসাপ্টা অপ্রিয় সত্য কথাটি। সাফা ভাইয়ের অনেক মজার গল্পই মনে পড়ছে আজ তিনি পরপারে চলে গেলেন বলে। শাহিদ ভাই, খালিদ ভাই, শামু দা’, সাফা ভাই সবাই গত হচ্ছেন একে একে, দেখা হচ্ছে না কারো সাথেই আর! আহারে জীবন!!
ভীষণ শোকাহত আজ।
শুক্লা ইফতেখার
লেখক ও চিত্রকর সাফায়েত খান ( সাফা), তোমার অন্তিম যাত্রাপথে ঝরছে আমার শোকভারাক্রান্ত অশ্রুবিন্দু।সরকারি চারুকলা কলেজে তুমি ছিলে আমার পরম স্নেহের ছাত্র। পরে হলে আমার প্রিয় লেখক। কবিতার বই প্রকাশ করতে তোমার যতো কুন্ঠা দেখেছি। অথচ তোমার লেখায় একজন মেধাবী কবি হয়েছিল মূর্ত । কথা সাহিত্যেও তোমার চিন্তার গভীরতা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা যায়। তোমার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। তোমার শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য রইলো গভীর সমবেদনা।
ইউসুফ মুহম্মদ
খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী, কবি ও গল্পকার সাফায়ত খান আর নেই, নদীর ও’পারে গেছেন। আমরাও অপেক্ষা করছি ওপারে যাওয়ার। তার সাথে আর দেখা হবে না আড্ডা ও গল্গ হবে না ফোন করে বলবে না, “কি রে, তোর দ্যাহা ক্যাআ নাই”। সেসব ভাবতেই হৃদপিণ্ড দলা পাকিয়ে যায়।
 
খালেদ হামিদী
কবির অন্তরে তুমি কবি
কে বলে আপনি নেই? আপনার সদা হাসিমুখ আমাদের মানসপট থেকে কখনও হারিয়ে যাবার নয়। আপনার রসিকতা, আশির দশকে দেখা সেই প্রাণপ্রাচুর্য, নাট্যাভিনয়, নিজের ধরনে আঁকাআঁকি, লেখালেখি, সম্পাদনা এবং সর্বোপরি আমার এবং আমার বন্ধুদের প্রতিও আপনার স্নেহশীলতা সহজে ভুলবার নয়। নব্বইয়ের দশকে আমার আরবপ্রবাসকালে একবার ৫০ দিনের ছুটিতে এলে আমি সবান্ধব আপনার নালাপাড়ার বাড়িতে গিয়ে আড্ডা দিই। সম্ভবত আমি বাইরে থাকতেই আপনি ‘প্রাচী’তে আমার কবিতা ছাপেন এবং আরবে এর কপি পাঠান। আমি দেশে থিতু হবার পরে আপনার শেষ অভিনয় দেখি মিলনদার, মিলন চৌধুরীর মর্মস্পর্শী দেশপ্রেমের নাটক ‘নিবারণের স্বপ্ন স্বদেশ’-এ। এর আগে থেকেই আপনি অসুস্থ। শেষ দেখা হয় মহামারির আগে, জেলা শিল্পকলা প্রাংগণে, আপনি তখন হুইল চেয়ারে। আপনি সেই চিরঅমলিন হাসি সারা মুখে ফুটিয়ে আমাকে বলেন: ‘তুমি ফোন করো না কেন!’ একপ্রকার দায়িত্বহীন বিধায় ভুলেই বসেছিলাম যে আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থখানার মুদ্রণ ও বাঁধাই সম্পন্ন হয় সাফা’স স্টুডিওতে, ২০০৪ সালে। প্রচ্ছদের রঙ নির্বাচন করেন আপনিই। এতে ব্যবহৃত আমার বাবার কৈশোরে আঁকা পেন্সিলের দুটি কাজ প্রসংগে, চারুকলার মানুষ হয়েও, আপনি প্রশংসা করেন। বলেন: ‘দারুণ ক্রাফটসম্যানশিপ!’ এরপরও আমাদের দেখা হয় আলকরণস্থ অঙগন থিয়েটার ইউনিটের সেই মহড়ালয়ে, অনেকবার। আজ মনে পড়ছে, আমার কবিসত্তার প্রতি আপনার, এবং মিলনদারও, আস্থাশীলতা ও দায়বদ্ধতার স্মৃতি। অঙগনের এক অনিয়মিত ছিঁচকে স্বেচ্ছাসেবক ধরনের অখ্যাত অথচ উদ্ধত যুবকের আকস্মিক আক্রমণ থেকে আপনারা দুজনই আমাকে রক্ষা করেছিলেন। ছদ্মবেশী প্রতিক্রিয়াশীল লেখক যশোপ্রার্থী এক দলের সমালোচনায় আমি মুখর হওয়ায় ওই নিরস্ত্র সন্ত্রাসী মারমুখো হয়ে উঠলে আপনারা দুজন তাকে ঠেকান, একেক ধমকে দমিয়ে দেন। এ জন্যে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাইনি আপনাকে। সম্ভবত সেই ঘটনার পরে একবার শুধু আপনাকে নিয়েই বিশেষ আড্ডায় বসি। এসবও ২০০৫-০৬ সালের দিকের কথা। পরে আপনি আরও অসুস্থ হলেন। আমিও পেরুলাম অনেক চড়াই-উতরাই। আর খোঁজই নিলাম না আপনার! আজ বুঝতে পারছি আপনি ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন আমার অন্তরে, রাতের তারারা যেভাবে লুকিয়ে থাকে দিনের আলোর গভীরে।
রঞ্জনা ব্যানার্জি
বিশ্বাস হচ্ছে না এখনও।
আপনার স্নেহ আমার জীবনে স্রষ্টার আশিস।
সাফা ভাই কত কথা আমাদের! কত পরিকল্পনা!
মার্চ ১৪ শেষ কথা!
বিষণ্ন ছিলেন সেইদিন। ফোন রাখার সময় বললেন অনেক মন ভালো লাগছে বোন। আপনি আমাকে নাম ধরে ডাকতেন না বোন ডাকতেন।
কেন আমি টের পেলাম না এই আমাদের শেষ কথা সাফা ভাই!
অনন্তযাত্রা শুভ হোক…
সঞ্জীব বড়ুয়া

অঙ্গন থিয়েটার ইউনিটের অন্যতম প্রাণপুরুষ চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, লেখক , অঙ্গনের প্রাক্তন সভাপতি সাফায়াত খান আর নেই। দীর্ঘদিন দুঃসহ জীবনের সাথে লড়াই করে অবশেষে আজ সকাল ন’টায় হার মেনেছে। খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন সাফায়াতের অনুরাগী শিল্পী, সাহিত্যিক, নাট্যজন।
আজ আসরের নামাজের পর উত্তর নালাপাড়াস্থ সিটি গার্লস স্কুলের মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে গরীবুল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সাফায়াত খানের অকাল প্রয়াণে আমরা গভীর শোকাহত। তাঁর স্মৃতির প্রতি নিবেদন করি শ্রদ্ধা ও
 ভালোবাসা। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকলের প্রতি জানাই সমবেদনা।
অজিত নন্দী
শিল্পী, অভিনেতা ও লেখক বন্ধু সাফায়াত খানের অনন্তলোক যাত্রা।
সাফায়াতের অনন্তলোক যাত্রা সুগম হোক।
প্রান খুলে কথা বলা, আড্ডা দেয়া, জমিয়ে চা-সিগারেট খেতে খেতে আন্দরকিল্লাস্থ সাফাস স্টুডিওতে মাসিক
পত্রিকা, পোস্টার আর বের করা যাবে না, কারনে অকারনে ফোনে আর আড্ডা দেয়া যাবে না।
হারালাম একজন সুন্দর মনের মানুষ যে সমাজ নিয়ে দেশ নিয়ে কথা বলতো, ছবি আঁকতো।
একজন ভালো মানুষের নাম যদি বলতে হয় তার মধ্যে সাফায়াত খান অন্যতম।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ লেখক -শিল্পী সাফায়াত খানের
স্বপ্ন ছিল দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর এক স্বদেশ 
দেবব্রত সেন 
দীর্ঘদিন স্পন্ডালাইটিসসহ নানা রোগে এবং শোকে ভুগতে ভুগতে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন প্রচন্ড সাহসী, প্রাণবন্ত, আড্ডাবাজ, বন্ধুবৎসল এ মানুষটি। একটা লিটল ম্যাগাজিন প্রিন্টিংয়ের সূত্র ধরে ১৯৯৭ সালে তাঁর সাথে আমার দেখা হয় এবং তখন থেকেই তাঁকে কুঁজো হয়ে হাঁটতে দেখেছি স্বাভাবিকভাবে তিন দাঁড়াতে পারতেন না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রায় পুরো সময়টাই উত্তর    নালাপাড়ায় তাঁর প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে এবং আমার স্বজনরা তাঁর পরিচিত হওয়ার কারণে আমি তাঁর বিশেষ স্নেহভাজন হয়ে উঠেছিলাম খুব অল্প সময়ে। আমার বন্ধুরাসহ তাঁর সাফা’স স্টুডিওতে বসে কত চা খেয়েছি তার কোনও হিসেব নেই, একটাকা বিল কখনও দিতে দেননি। লিটল ম্যাগাজিনের জন্যে তাঁর মধ্যে একটা ভালোবাসা সবসময়ই প্রত্যক্ষ করেছি।  মাঝেমাঝেই ব্যাথাটা অনেক বেড়ে যেতো, তখন অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতেই পারতেন না। এমনও হয়েছে অনেক দিন তাঁকে টেক্সিতে করে তাঁর প্রিয় কাজের জায়গা সাফা’স স্টুডিওতে নিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। তখন দেখেছি তাঁকে তাঁর সহধর্মিণী কী অসীম যত্নে আগলে রেখেছিলেন। নিজের স্কুল, সংসার -সন্তান সামলিয়ে সীমাহীন ধৈর্য্যের সাথে দিনের পর দিন স্বামীর সেবাশুশ্রূষা করেই কাটিয়ে দিয়েছেন তাঁর সুন্দরতম সময়।
দীর্ঘরোগ, শোক-ব্যাথা তাঁর প্রাণশক্তিকে দমাতে পারেনি এতটুকু। তিনি শিল্প সংস্কৃতি এবং সৃজনশীল কাজের সাথে নিয়মিত যুক্ত ছিলেন। তাঁকে কখনও আক্ষেপ করতে দেখিনি। অন্যের সুখে তিনি আনন্দ পেতেন এবং অন্যের দুঃখ তাঁকেও কষ্ট দিত।
ঠাট্টা-তামাশা করেই তিনি জীবনটাকে উপভোগ করতে চাইতেন। এইতো ঈদের দিন তিনি স্ট্যাটাস দিলেন,” বিদায় চানা পেঁয়াজু। “
সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সবসময় সোচ্চার। তাঁর সাহসী উচ্চারণ আমাকে মুগ্ধ করতো সবসময়ই। অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দিতে দেখিনি তাঁকে, রেগে গেলে মুখে যা আসে তাই বলতেন। তাঁর মুখের সেই গালি তখন খারাপ লাগতোনা। দুর্নীতি আর শোষণমুক্ত স্বদেশ দেখতে চেয়েছিলেন সব সময়।
দীর্ঘদিন আমার বিদেশে থাকার কারণে যোগাযোগ ছিলোনা। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবার যোগাযোগ তৈরি হলে খুব আনন্দিত হয়েছিলেন এবং আমি যখন আবার দেশে ফিরে এসে দেখা করতে যাই খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন এই জন্যেই যে মা এবং মাটির টানে বিদেশের নানা প্রলোভন তাঁকেও আটকাতে পারেনি। অর্থের প্রতি প্রলুব্ধ হতে তাঁকে দেখিনি কখনওই। ভাইদেরকে তিনি ভালোবাসতেন প্রচন্ড। সম্প্রতি বিমানের বড়পদে কর্মরত ছোটভাইয়ের মৃত্যুতে তিনি প্রচন্ড মুষড়ে পড়েছিলেন।
সাফায়াত খান শুধু শিল্পীই ছিলেন না, সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তিনি নিজের ঢাক নিজে পেটাতে শেখননি কখনও আর শেখেননি বলেই হয়তো জীবদ্দশায় তাঁর যথাযথ মূল্যায়ন আমরা করতে পারিনি। এ ব্যর্থতার দায় আমার, আমাদের। প্রার্থনা করি, তিনি ভালো থাকুন অনন্তলোকে।
আরো পোস্ট পেলে আমরা তা এখানে যুক্ত করে দেবার চেষ্টা করবো।