You are currently viewing সাজ্জাদ সাঈফ >  পাণ্ডুলিপির কবিতা

সাজ্জাদ সাঈফ >  পাণ্ডুলিপির কবিতা

সাজ্জাদ সাঈফ 
পাণ্ডুলিপির কবিতা
*
দ্রাঘিমালণ্ঠন-০৪
সামনে ভূগোল জুড়ে মানুষের হট্টগোল। 
ফাইফরমাশ। মহুয়া পালার ধারা। তোমাকে রক্তকরবী ডাকি। 
ধানখেতে মুনিয়াডানারা, দিগন্তের কুয়াশাতুলারা ওড়ে। ঘুরেফিরে চেনা হয়, জানা হয় অবাধ বসন্ত!
আমাদের বিকল্প নাই একসাথে পায়চারি বাদে। 
সামনে প্রমত্ত ফুল, শিশুকান্না, কাছেপিঠে এম্বুলেন্স;
মহাসড়কে অবাধ ঝাঁকুনি মেলে দিনরাত। 
আমাদের বিকল্প নাই, একসাথে সফরে এগোনো ছাড়া। এখানে একই গল্পে এসে বাস করে তামাশার ধারে গান। জনপদ ঝড়বন্দী লেন। ঝড়ের ওপর এসে, বাতাসের ঘূর্ণী ভেসে নগরীকে তাওয়াফ করে। আয়ুষ্কাল জুড়ে কাতরতা ভারী মানুষের, সংশয়ে রক্তিম মুখ! 
জীবনে সংযুক্ত ছায়াময় সব পঙক্তিকে রাষ্ট্রের অধীনস্থ লাগে, ধোঁকা, ফাঁদ আর প্রবঞ্চনায় ভরপুর!
*
০৫.
আমাদের সেলফি দেখতে হয়, সুখ্যাতি আর হাস্যোজ্জ্বল ফটো দেখতে হয় মানুষের। যেন গ্লানি নাই আর, কারোরই নাই হা-হুতাশ কোনো।
এইদিকে শ্বাসকষ্টে বুকের হাপর ছুঁড়ে দেয় খোয়া ভাঙানো দিনমজুর। নিরাময়-অযোগ্য এসব দৃশ্যব্যাধীর দরুন, শ্রমবৈষম্যের দরুন নদীরা হারাচ্ছে গতিপথ, রাষ্ট্র নির্বিকার, এত যে টিসিবিপণ্যের পিছে হাহাকার-ভীড় তবু দেখো ভরপেট খেয়ে ঢেকুর তুলছে জাতীয় সংসদ।
এ সময় নির্লিপ্তিকে বুকে নিয়ে নিরুত্তর বসে থাকা যায়? বরঞ্চ নিরালা বসে পতাকার বিক্ষতদাগ কোথায় গিয়ে, কোন পথে গিয়ে, কোন মরুকান্নায় স্নাতক আজ, লিখে রাখা যায় স্নায়ুপত্রে!
এতসব দৃশ্যব্যাধী পার হয়ে আমাকে নিশ্চল হতে হয় নিজের সামনে এসে। যেন মুখ নাই, চোখ নাই, নাক-কান কিছু নাই, ডান হাতে রয়ে গেছে একটা কলম শুধু, টেবিলে কাগজ বাদে সবকিছু উধাও কোথাও!
*
০৬.
একদিন উপড়ে পড়বে গাছ, মহীরুহ, পিন পতন 
আবহাওয়া আকাশে ওড়াবে মেঘ, ডাঙাফুল মাটিতে
নোয়াবে কাঁটা-
একদিনে চূর্ণ হবে অহেতুক ইগোর দেয়াল, আর উপেক্ষার অধিক গ্যাম্বলিং তুমি শেখো নাই বলে উজান অব্দি হাওয়ায় ধরে যাবে নির্জনতার আগুন, সে আগুনে ভস্ম হবে সুরক্ষাবর্ম সবই, একদিন সমস্ত কচুরিপানা সাফ হবে আর পুশকুনি ভরে যাবে শোল পোনাদের রক্তাভ সাঁতারে-
আমি এই যে সাঈফ, চুপচাপ মাথা নীচু করে চেয়ার ছেড়ে উঠে যাচ্ছি তোমাদের সামনে থেকে, প্রচন্ড ঘাম আর বুক ধড়ফড় নিয়ে, অদৃশ্য মেঘের বল ড্রপ খাওয়া হৃদয় নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি পথে, এইদিকে লতাকলমির ঝোপ, উড়ে আসে ঝড়ে তাড়া খাওয়া পাখিরা, কেন জানি আপন দেখায় এদের; যেভাবে সন্ধ্যা যেভাবে ঘনিয়ে এলে, পাতার পড়শি স্বয়ং গোধূলি গং!
সেইদিন কোনো কিছু এরূপ রবে না দেখো।
শেষ যেবার ভ্রমণে যাব, সাথে যাবে কাকতাড়ুয়ারা, সাথে যাবে ভাগ্যরেখা, সাথে যাবে ধ্যানের ভঙ্গিমা হেসে। পথে পড়বে নরখাদক নদী, মিষ্টি হাসির ঢেউয়ে পথ ভোলানো গানের মুখোমুখি সারারাত্রি, জানো নাকি সে কে? মৃত্যু, কবির অমর মৃত্যু!
নক্ষত্রের ব্যালকনি থেকে কত আলো পৃথিবীর দিকে এসে হবে প্রেম; নদীপথে কত ফুল, ভেসে এসে ভেলা হবে সেইদিন!
=================