You are currently viewing সমরেশ মজুমদার সংখ্যা

সমরেশ মজুমদার সংখ্যা

সমরেশ মজুমদার সংখ্যা

সমরেশ মজুমদারের মৃত্যু সংবাদ অনেকের মতো আমাকেও খানিক বিমূঢ় করে দিয়েছিলো। অনেকের মতো আমারও যৌবনের বারুদজ্বলা প্রহরগুলো কালবেলা, উত্তরাধিকার, সাতকাহন, গর্ভধারিনীর চম্বুক স্পর্শে স্পন্দিত ছিলো। তাঁর কথকতা দীর্ঘকালব্যাপী আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো ব্যাপক যুবসমাজকে। উপমহাদেশের তরুণদের মধ্যে বৈপ্লবিক রোমান্টিকতা সৃষ্টি করেছিলো তাঁর লেখনী। দীর্ঘকাল পরে নিউইয়র্কের বইমেলায় দেখা হলে প্রচুর আলাপ হয়েছিলো দু’জনের। আমার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ হাতে নিয়ে বলেছিলেন, গদ্যটা ছেড়ো না। ছাড়িনি। তাই তাঁর মৃত্যুর পরপরই সমরেশ মজুমদার সংখ্যা করতে মনস্থির করি এবং সমকালীন গদ্য সাহিত্যের পরিচিত মুখগুলোর কাছে সমরেশের সাহিত্যসম্ভার নিয়ে লিখতে অনুরোধ করি।

আশ্চর্যজনকভাবে অধিকাংশ গদ্যলেখকই শৈথিল্য দেখালেন আর নাকসিঁটকালেন। ভাবখানা এমন যে, সমরেশ কোন সাহিত্যই রচনা করেন নি। এমন কি, হুমায়ুন আহমেদ বাঙালি মুসলমানদের জীবন বাস্তবতার যে  বৈপ্লবিক (?) রূপায়ন করেছেন, সমরেশ তার ধারেকাছেও যেতে পারেন নি। আবার কেউ কেউ রায় দিয়ে দিলেন যে, সমরেশ বিপ্লবের ভেতর প্রেমের রসায়ন ঢুকিয়ে অবাস্তব প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন যা সম্পূর্ণই ইউটোপিয়ান। বেশ অদ্ভূত লাগলো। এক অবিমিশ্র অভিজ্ঞতা হলো। যারা এসব কথা বলছে তারা যে বাংলা সাহিত্যের আঁটি বেঁধে টাল ফেলে দিয়েছে তা কিন্তু নয়। তারা যা লিখছে কিংবা তাদের আইকনরা যা লিখেছে তা যে বিশ্বসাহিত্যে শোর ফেলে দিয়েছে তাও কিন্তু নয়। তাদের আচরণে যে জিনিসটি নগ্নভাবে দেখা গেছে তাতে দুই ধরণের আচরণ প্রকাশ পেয়েছে, এক- সমরেশ মজুমদার হিন্দু হয়ে বাংলা সাহিত্যে একটি অনস্বীকার্য অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন, দুই- সমরেশ মজুমদার নকশাল আন্দোলনের মতো উগ্রবাম রাজনীতির যৌক্তিকতাকে সাহিত্যরূপ দিয়েছেন। প্রথম আক্রমণটি প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক অথচ যারা এই আক্রমণটি করছে তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ অসাম্প্রদায়িক বলে গলা ফুলিয়ে সুশীল সমাজের সুবিধা ভোগ করে থাকে। দ্বিতীয় যে আক্রমণটি করা হয় সেটি সমরেশ মজুমদারের প্রাপ্য কারণ তিনি সজ্ঞানেই নকশাল আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বেছে নিয়েছেন। যারা পুঁজিবাদী শোষণব্যবস্থার পক্ষে তাদের কাছ থেকে কোনো প্রশংসা সমরেশ মজুমদারের প্রাপ্য নয়।

যেহেতু উপরোক্ত দুইটি পক্ষই বাংলা সাহিত্যের ইজারা নিয়ে বসে আছে, অতএব সমরেশ মজুমদারের সাহিত্যকৃতি নিয়ে তারা লিখবে তেমন প্রত্যাশা করাই অবান্তর। এই অবসরে কিছু কিছু মুখোশের আড়ালের মুখ দেখা হয়ে গেলো। সেটাও বা কম প্রাপ্তি কিসের।

তথাপি কয়েকজন সাহিত্যিক তাঁদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমাদের আয়োজনকে আলোকিত করেছেন। তাঁদের অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।

এই সংখ্যায় লিখেছেনঃ

গৌতম গুহ রায়

রুখসানা কাজল

রোকসানা পারভীন সাথী

শিল্পী নাজনীন

শেখ সাইফুর রহমান ( পুনর্মুদ্রণ)

====================