You are currently viewing শিল্পী নাজনীনের কবিতা

শিল্পী নাজনীনের কবিতা

শিল্পী নাজনীন

 

ঘড়ি

পেণ্ডুলামটা দারুণ ছন্দে দোলে

অষ্টপ্রহর জপ করে যায় সময়-তসবি

বৃত্তাবর্তে অবিরাম ঘোরে

এক থেকে বারো, বারো থেকে এক…

 

হৃৎপিণ্ড চুঁইয়ে টিকটক টিকটক শব্দ ঝরে

বুকে নিয়ে বয়ে যায় নৈঃশব্দ্য নদী

তীব্র স্রোতে ভেসে যায় অনন্ত প্রেমে…

 

এক বিন্দু জল আমি, মাটি

হাওয়ার বুদ্বুদ

সময়-শরীরে পড়া বিন্দুসম ছায়া

বুকের ভেতর অবিরাম টিকটক শব্দ শুনি

ঘুরি দাসত্ব-বলয়ে

ঘড়ি থামলেই অনন্ত ছুটি

শুরু নৈঃশব্দ্য নদীর সাথে প্রেম…

 

তৃষ্ণা

অনুগামী মেঘের মত ঝরেছি তোমার দিকে

সহস্র বৃষ্টি-ফোঁটায় ফুটিয়েছি প্রণয়কুসুম

অবিরাম গোপন কঙ্কনে বেজেছি

গেয়ে গেছি শিউলি সুর

নিমিলিত চোখের তারায় এঁকে গেছি শরৎ-কান্তি অগণন

 

তুমি চৈতি খরা

জলটুকু নিঃশেষে লহমায় টেনে নিয়ে

পুনরায় জ্বলেছ দাউদাউ

তুমুল তৃষ্ণা বুকে চলে গেছ

উজ্জ্বল নক্ষত্রের দিকে

মুহূর্তে ভুলে গেছ অনুগামী মেঘ, বৃষ্টি…

 

মৃত্তিকা

 

মৃত্তিকা বিছিয়ে দিয়েছে হৃৎপিণ্ডের ভিটে

বপন করেছে তাতে আলোক-বীজ

অঝোরে দিয়েছে ঢেলে তৃষ্ণার জল

আকণ্ঠ তৃষ্ণায় শুষে নিয়ে বেড়ে উঠেছ পলকে

তরতরিয়ে উঠে গেছ মহীরুহ চিনে

আলোক-ফুল ফুটিয়েছ অগণন…

 

এখন তোমার আকাশ-প্রীতি ঢের

তারায় তারায় গোপন অভিসার

এখন তোমার সুজন সুহৃদ বহু

আলোর মেলায় আনন্দ সংসার…

 

ভুলে গেছ সোঁদা-গন্ধা মাটি

ভুলে গেছ মাটির নোনা প্রেম

মাটির তাতে কি-ই-বা এসে যায়!

শুধু জেনো, ‘নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’…

অনিবার্য অভিসারে

তাকেও ফিরতে হয় একদিন মৃত্তিকা চিনে

সময় আগুনে পুড়ে ছাই হতে হয়

কোনো একদিন…

 

 প্রার্থনা

ঘন কুয়াশা মোড়া আকাশ

তার বুক ফুঁড়ে কী আশ্চর্য ফুটে আছে পোয়াতি চাঁদ!

ফ্যাকাসে জোছনা-জলে ভিজিয়ে দিচ্ছে পৃথিবীর চোখ

ঢেলে দিচ্ছে শীতকাঁপা বুকে…

 

নিচে

পৃথিবী শীতে কাঁপছে থরথর

আকাশে চোখ রেখে কায়মনে প্রার্থনা করছে

ঈশ্বর!

 

কুয়াশা-চাদর সরিয়ে কখন সে উঁকি দেবে

ভালোবেসে ঝরাবে হেসে ঝলমলে রোদ্দুর!

ফ্যাকাসে চাঁদের প্রেমমোহ উপেক্ষায় ছুড়ে

সূর্যকে ঈশ্বর জেনে জপছে প্রার্থনায়

মাগছে জীবনের উত্তাপ…

 

যেন জীবন ভালোবেসে ডাকছে সুন্দর

আর

উপেক্ষায় সরিয়ে দিচ্ছে পাণ্ডুর মৃত্যুর মুখ …

 

ঈশ্বর তোমাকে আমন্ত্রণ

তোমাকে আমন্ত্রণ, হে ঈশ্বর!

এই শীতে, এই উত্তুঙ্গ হাওয়ার জনপদে

এই নিরন্ন, বিষণ্ণ জনতার ভিড়ে

নিদেনপক্ষে এই নগরের নিয়ন আলোয় ঘেরা ফুটপাতে

একবার এসো, ঈশ্বর…

 

বৈভবের শীতনিদ্রা ছেড়ে এসো

দেখ, কী দারুণ সাম্যে এই শীতের রাতে

সাঁজাল জ্বেলে উষ্ণতা ভাগ করে নিচ্ছি আমরা

কতিপয় উলঙ্গপ্রায় তুচ্ছ মানুষ

বাঁচার কী দুর্মর প্রতিজ্ঞা আমাদের, দেখ…

দেখ খোলা আকাশের নিচে

কীভাবে কুণ্ডলী পাকিয়ে আমরা কুকুরের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি উষ্ণতা…

 

এসো, হে ঈশ্বর!

তোমাকেও ভাগ দেব কিছু

অতঃপর

একসঙ্গে প্রার্থনায় বসব সূর্যের…

*****************************