শাহেদ কায়েস-এর তিনটি কবিতা
প্রতিধ্বনি
গভীরে খুরের আওয়াজ, হ্রেষাধ্বনি, তারপর শুধু গতি
আর গতি… দিগভ্রান্ত পথ, পায়ে পায়ে হাওয়ার রাজ্য
যেভাবে একটি জীবন নিভৃতে শাসিত, কুঠারে সবুজেরা…
‘ বৃক্ষ বেজে ওঠে যার আঘাতে আঘাতে, সে কি প্রতিধ্বনি! ‘
প্রাচ্যের রহস্য নগরী, ইটের লবণ বিলাস― দোল পূর্ণিমার রাত
জোড়বাংলা স্থাপত্যের তীব্র হাস্নাহেনা, সংস্কারে রেখেছ হাত!
দুলে ওঠে তোমার প্রাচীন বন, মন্দিরে কি থাকে তখন?
হ্রেষাধ্বনি, গতি, এক ঝলক হাওয়া― অজন্তা-ইলোরা, আহা
নক্ষত্র-জোনাকপোকা-শস্যঢেউ, ফাল্গুনের মাতোয়ারা চাঁদ!
ভাষা দে, প্রভু
মদ্যপসারিণী যুবতীরা অরণ্য জোড়ায়
“আয় বাবু, আয় বাবু…” পাশেই মহুয়া
ছড়ানো-ছিটানো ছোলাসেদ্ধ, হাঁড়িয়ার
জালা… ভাত নেই, ঘর নেই, স্বপ্ন নেই
কোটি মানুষের মুখ আছে, ভাষা নেই;
এরা কথা শিখেছে পাহাড়, প্রকৃতি―
নদী-ফুল-পাখি, বসন্তের মাদল, ঝর্নার
জল, প্রাচীন ছিলা ও ধনুকের সংলাপ
ঝর্নার পতন, ডুংরি, টিলা, চষা মাঠ…
স্বপ্নভুক দিগন্ত, জঙ্গল, অন্ধকার থেকে।
কঠিন মাটির তলে ইউরেনিয়াম, তামা―
অফুরন্ত অভ্র, সোনা, লোহাপাথর― মাটির
উপরে অভাব, ক্ষুধা, শালবন, সাঁওতাল
বীরহোড়, মুণ্ডা, হো… অ-মানুষের উপস্থিতি!
হাওয়ায় ফের চড়াই, শালিখ, বনহারা ঘুঘু
ঢেউ-পাহাড়, শাল-মহুয়া, সোনাঝুরি―
অলচিকির জীবনভাঙ্গা নীরব ডাহার-ডিহি
ঘাসে রচিত হারানো ভুবনের ইস্তাহার…
ঊনত্রিশটি অদৃশ্য প্রাণ ঘুরে বেড়াচ্ছে
অরণ্য-পাহাড়ে… সিংবোঙ্গা, ভাষা দে প্রভু
ভাষা দে― কাটল ঘুমহীন সহস্র বছর
শেষে শংসাপত্র পাঠাল জঙ্গল, সুবর্ণরেখা!
সন্ধ্যা
সন্ধ্যায় প্রতিটি বৃক্ষ
শৈশবে ফিরে যায়―
তারা নীল ফ্রক পরে
ডাকনামে সাড়া দেয়।
প্রতিটি সন্ধ্যা আমাকে
কল্যাণ-ঠাটে গৃহাকুল করে
সন্ধ্যায় প্রতিটি ঘরই শূন্য…
তাঁর ফেলে যাওয়া নিঃশ্বাস
পায়চারি করছে সন্ধ্যায়…
ঘর না বাহির, জন না নির্জন
কোথায় মানুষ বেশি একা!