শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা: একটি নিবিড়পাঠ
পারমিতা ভৌমিক
আমাদের বিশ্বাস যে জীবনানন্দের পরে বাংলা ভাষায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় । শক্তির কবিপ্রকৃতি ও প্রাতিভতা ঠিক কোন পথে প্রবাহিত, এ প্রশ্ন সবসময় জাগে। মানুষ উত্তর খোঁজে কোন শক্তিতে শক্তি চট্টোপাধ্যায় হয়ে উঠেছেন কবিতা রাজ্যের স্বরাট!!?
শক্তির কবিতার প্রেক্ষাপটে কখনও ধরা পড়েছে গভীর প্রেম, কখনো উন্মুক্ত প্রকৃতি, কখনও মৃত্যু-ভাবনা কিংবা সমাজ মানুষের প্রসঙ্গ। সমস্ত জীবনকে আসন করে শক্তি যেন ব্যপৃত হয়েছিলেন বীরাচারী মহাকৌলের মতো শক্তিসাধনায়। তাঁর সমগ্র জীবনের বেশ অনেকটা জুড়েই ছিল মানুষ ও , প্রকৃতির যৌথসান্নিধ্যের আবেশ। ব্যক্তিজীবনে কবি শৈশব কাটিয়েছেন গ্রামে। গ্রাম্য জীবনের স্বাদ সেখানেই পেয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই শক্তির প্রকৃতি দেখার চোখ তৈরি হয়েছে সেখান থেকেই। বস্তুত শক্তির শিশুমনে প্রকৃতির এই প্রভাবই পরিণত শক্তিকে একদিন ঘরছাড়া করেছিল। ভাবলে আশ্চর্য লাগে যে মধ্যবিত্ত জীবনের একঘেয়েমিতে তাঁর কোনো জীবনঅনীহা জন্মায় নি। আবার নাগরিক জীবনের ক্লান্তিও কখনও।তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। একটা অলৌকিক transcendence. কাজ করতো তাঁর মধ্যে। তখন সেই শক্তিকে চিনতে খুব কষ্ট হতো। উদাসীন। অসঙ্গ।অনঙ্গ শক্তি। বাইরে থেকে যেমন দেখা যায় শক্তি ঠিক তেমনটি তো নয়!!!!
বলাবাহুল্য, কবি শক্তি তাঁর নিজস্ব জগৎ গড়েছেন নিজের মত করে। সেই জগতে কোনো বিষণ্ণতা নেই । আছে কেবল প্রসন্নতা। ঠিক সেখানেই যুক্ত হয়েছে, প্রাণিক-স্পন্দন, যেন, মুক্ত বিহঙ্গের পাখসাট থেকে ঝরে পড়ছে বিন্দু বিন্দু অক্ষরের আনন্দ। এর সঙ্গে আরও রয়েছে একটা বুকভরা নির্মোহ ভালোবাসা । জীবনকে তিনি উপভোগ করেছেন সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে, কখনও সামাজিক অথবা অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে। অথচ এসবে তিনি জড়িয়ে পড়েন নি। আমার মনে হয়, এই দূরত্বই তাঁকে আমাদের কাছে প্রিয় করে তুলেছে। এভাবেই একসময় সকলের মাঝে থেকেও শক্তি হয়ে উঠেছেন একেবারে নিজের মতো, স্বতন্ত্র। যাঁকে আলাদা করে পাঁচজনের মধ্যে থেকে চিনে নিতে কোনো অসুবিধা হয় না কারো।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কয়েকটি একক কবিতা পাঠ করব। এতে কিছুটা শক্তিবৈভব আমরা চিনতে পারব।
প্রথমে পড়ব–
“বুকের মধ্যে বৃষ্টি নামে, নৌকা টলোমলো
কূল ছেড়ে আজ অকূলে যাই এমনও সম্বল
নেই নিকটে – হয়তো ছিলো বৃষ্টি আসার আগে
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি,তাই কি মনে জাগে
পোড়োবাড়ির স্মৃতি? আমার স্বপ্নে-মেশা দিনও?
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, চলচ্ছক্তিহীন।
বৃষ্টি নামলো যখন আমি উঠোন-পানে একা
দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাবো দেখা
হয়তো মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছো আকাশ-ছেঁচা জলে
কিন্তু তুমি নেই বাহিরে- অন্তরে মেঘ করে
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!”
●শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে পড়া যায় ,ভালোবাসা যায়, অভিভূত হওয়া যায় তাঁর কবিতায়, কিন্তু কোনোভাবেই সম্পূর্ণ ছোঁয়া যায় না। কেবল পাঠক তার আপন ভাবটিকে প্রকাশ করতে পারে মাত্র।
শক্তির কবিতার অধিবাচন গুলো এক এক করে পড়তেই ভালোলাগে। অন্তত এভাবেই আমার সঙ্গে তাঁর কবিতার একটা bridging তবু সম্ভব বলে মনে হয়। তাই অধিবাচনগুলো পরপর সাজিয়ে নেব ——
“বুকের মধ্যে বৃষ্টি নামে, নৌকা টলোমলো”
—- বুকের মধ্যে বৃষ্টি ? এই কি অনুসন্ধিৎসার চূড়ান্ত আবেগ যা নৌকাকে টলিয়ে দেয়? নৌকা তো অন্তরাত্মার প্রতীক! Soul…. অবসিত যৌবনের প্রান্তলগ্নে আসে অভিসরণের অন্য ঋতু। নিসর্গ প্রকৃতির বর্ষা অন্তর প্রকৃতির final voyage এর সামনাসামনি এসে কি টাল খায়? Soul to soul reunion এর জন্য অভিসরণ পথে এসে দাঁড়ানো এই যে শুরু , একেই কি কবি Tennyson… “Bar” বলেছেন? যে ক্রশিং-এ ভীষণ লার্চিং জাহাজকে করেছে টলোমলো?
এই জার্নিতে অগ্রসর হতে গেলে দিক হারানো বাঁধন খসানো দুঃসাহস চাই।
এইটুকুই সম্বল।
তবুও কবির ভাবনায় তারই অন্য এক চমৎকারিত্ব প্রাণিক ভাষা পেয়েছে—-
“কূল ছেড়ে আজ অকূলে যাই এমনও সম্বল নেই নিকটে– “
মনে হয় একটা “হয়তো”শব্দ দিয়ে সমগ্ৰ যাপনের অসফলতাকে বিম্বিত করলেন কবি—
“হয়তো ছিলো বৃষ্টি আসার আগে”—-
কোন সে বৃষ্টি? যার আগে কবি প্রাণে যাত্রাকরার সম্বলটুকু ছিল? বৃষ্টি কি ধুয়ে দিল সেসব? বৃষ্টি কি এখানে অবসিত যৌবনের প্রতীক?
কবির ব্যক্তিজীবন অলৌকিকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গেছে সর্বজনের সঙ্গে। এ যেন একটা অলীক গণতান্ত্রিক সমঝোতা। কবি বলেছেন—
“চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি,তাই কি মনে জাগে
পোড়োবাড়ির স্মৃতি? আমার স্বপ্নে-মেশা দিনও?”—–
পরিণতির পার্থিব সিঁড়িতে পা দিয়ে চলচ্ছক্তিহীন কবি তাই বুঝি আজ স্তব্ধ। ভাবনাটুকুই মাত্র সম্বল তাঁর।—–
“চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, চলচ্ছক্তিহীন।”——– চলচ্ছক্তিহীন―
এই কমপাউণ্ড শব্দটি ধুয়ার মতো বেজেছে এ কবিতায়।
বুঝিয়ে দিয়েছে শেষের দিনের এই গতিস্তবদ্ধতাই জীবনের অনিবার্য পরিণতি।
যখন অপেক্ষমান ছিলেন কবি তখন বৃষ্টি নামেনি। বৃষ্টি নামেনি সব ধুয়েমুছে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে কবিরই আকাঙ্খিত অন্য কূলে।
অথচ যখন সেই প্রার্থিত সবহারানো কুলছাপানো বৃষ্টি নামল তখন কবি—- উঠোন-পানে একা—–
“বৃষ্টি নামলো যখন আমি উঠোন-পানে একা”
—— আশ্চর্য এই যে সেই অশক্তদিনেও কবি দৌড়নোর কথা ভেবেছেন—-
“দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাবো দেখা”—-
কার দেখা পেতে চাইছেন ,কবি? সে কোন্ নেয়ে? কোন কুলে আজ ভিড়বে কবির সেই তরীখানি? সে কোন সোনার গাঁ?? অনেকগুলো “হয়তো” জমিয়ে রেখেই—– “হয়তো মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছে কেউ আজোও !”—–
আজকের বৃষ্টিতে যে আকাশ-ছেঁচা জলের আশ্বাস এসেছে মনে ও মনান্তরে, কবির তাতেই খুশিএবং মুগ্ধতা জেগে থাকে।
শেষকথা এই যে যাকে খুঁজে ফিরেছেন কবি তা হবে এইরকম—–
“কিন্তু তুমি নেই বাহিরে-
অন্তরে মেঘ করে
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!”—-
আসলে এই পরম ও চরম লগ্নেই বাইরের হাতছানি নীরব হয়ে ওঠে। বৃষ্টিরগতি তাই এখন আনমুখে। বাইরের বৃষ্টির জলধারা এখন রূপান্তরিত হয়েছে অন্তরের অমিয় বর্ষণে।
প্রাণের কবি শক্তি কে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
এর পরে আর একটি কবিতা পড়ব। সেখানে কবির অবচেতনা ঠেলে উঠে এসেছে একটা আকাশ ছুঁই চূড়ান্ত বোধ।
কবিতাটির নাম―বাঘ
“মেঘলাদিনে দুপুরবেলা যেই পড়েছে মনে
চিরকালীন ভালোবাসার বাঘ বেরুলো বনে….
আমি দেখতে পেলাম , কাছে গেলাম , মুখে বললাম : খা
আঁখির আঠায় জড়িয়েছে বাঘ ,নড়ে বসছে না ।
আমার ভয় হলো তাই দারুণ কারণ চোখ দুটো কৌতুকে
উড়তে-পুড়তে আলোয়-কালোয় ভাসছিলো নীল সুখে
বাঘের গতর ভারি ,মুখটি হাঁড়ি, অভিমানের পাহাড়…
আমার ছোট্ট হাতের আঁচড় খেয়ে খোলে রূপের বাহার ।
মেঘলাদিনে দুপুরবেলা যেই পড়েছে মনে
চিরকালীন ভালোবাসার বাঘ বেরুলো বনে…
আমি দেখতে পেলাম, কাছে গেলাম, মুখে বললাম : খা
আঁখির আঠায় জড়িয়েছে বাঘ,নড়ে বসছে না ।।”
কবিতার মর্মে মর্মে একটি সত্য প্রকট হয়েছে যা কিছুটা ইঙ্গিতীত। “বাঘ” নামটিই ভাবায়। বাঘ বাঘিনীর মধ্যে নিরন্তর একটা আকর্ষণ বিকর্ষণের খেলা চলে। দুটো পৃথক সত্তার টানাপোড়েন। নইলে তো চাদরবোনা হয়না অসীমে সসীমে। বাঘ শব্দটি এসেছে ব্যাঘ্র শব্দ থেকে। ব্যাঘ্র কে বিশ্লেষ করলে পাবো—-বিশেষ রূপে ঘ্রাণ গ্রহন করতে পারে যে। এই ঘ্রাণ গ্রহনের ক্ষমতা নাসিকা ইন্দ্রিয়ের কাজ। সাধারণ জীবের চেয়ে ক্ষমতার মাত্রা এখানে বেশি। এখানে একটা ইন্দ্রিয়ঘনতার কথা আসে। এ একধরণের জৈব পারসেপশন। এতকথার অবতারণা এইজন্য যে এইটি কবিতার শিরোনাম আর এই শিরোনামের মধ্যেই কবি শক্তি সংরক্ষিত করেছেন কবিতার বিষয়মর্ম।
বাঘ কি শুধুই বনে থাকে নাকি মনেও? বাঘ গুহাহিত থাকে তা সে মনেই হোক আর বনেই হোক। কেবল ঘ্রাণের তীব্রতাতেই সে গুহা ছাড়ে।
যদি ধরে নিই এ কবিতার বাঘটি মনের মধ্যে থাকে তবে একটা হদিস পাব। স্থানকালপাত্র মানবপ্রকৃতি ও নিসর্গ প্রকৃতি তে কাজ করেই। স্থানিক ও কালিক পরিবর্তনে জীবের জৈব অজৈব প্রকৃতি সাড়া দেয়।
শক্তি যখন নির্দেশিত করেন――
“মেঘলাদিনে দুপুরবেলা”-র কথা হলে তখনই মনের বাঘটি সাড়া দেয়।ঐ সময়ে ” যেই পড়েছে মনে”—- প্রশ্ন জড়িয়ে ধরে বৌদ্ধিক-প্রজ্ঞাকে, কি মনে পড়ল?—এইখানে শক্তি প্রচুর স্পেস দিলেন পাঠকদের। যে যার মতো কল্পপট রচনা করুক। কবি অবশ্য নিজে একটা চিরন্তন দিক নির্দেশ দিলেন। বললেন,――
“চিরকালীন ভালোবাসার বাঘ বেরুলো বনে…”….
চিরকে পরিব্যপ্ত করে যে ভালোবাসা আছে, from mundane to the divine… সেই বাঘটাই ঋতুবুঝে ভালোবাসার বাঘিনী খুঁজতে বেরুলো, বনে বনে মনে মনে।
এবাঘ কোথায়, কোন গুহায়, কার মধ্যেই বা মনোবাসে ছিল সে, সেটি দেখেছেন কবি শক্তি—–
“আমি দেখতে পেলাম , কাছে গেলাম , মুখে বললাম : খা
আঁখির আঠায় জড়িয়েছে বাঘ ,নড়ে বসছে না ।”— ঐবাঘকে কবির অন্তর্স্থিত প্রকৃতিসত্তা দেখল। সাড়াও দিল। বলল,খা। কিন্তু বাঘ তখন স্থিরচৈতন্যে গুটিয়ে নিয়েছে ঘ্রাণশক্তিকে। শুধু বাঘের রূপকৃৎ সত্তা রূপে জড়িয়ে অনড় এখন। স্থিতিগতি একহয়েছে অলৌকিক যুগনদ্ধতায়।
কবি বললেন,
“আমার ভয় হলো তাই দারুণ কারণ চোখ দুটো কৌতুকে
উড়তে-পুড়তে আলোয়-কালোয় ভাসছিলো নীল সুখে”—- সে রূপার্ত চোখের নীলসুখ যেন কিছু অন্যজগতের সুর শোনায়।
শক্তিস্পৃষ্ট না হলে বাঘের চলধর্ম ক্ষুণ্ণ হয় আর কবির ছবিতে দেখি সেই বাঘের রূপ—–
“বাঘের গতর ভারি ,মুখটি হাঁড়ি, অভিমানের পাহাড়…”
কবি শক্তিই স্বয়ং শক্তি? কবি শক্তিই কি ডাইনামিক এনার্জি , আইডেন্টিফায়েড???
তিনিই তবে ঐ উদ্দিষ্ট বাঘিনী প্রকৃতির যিনি সঙ্গমিত না হলে পুরুষ কেবল ক্লীব? তাই কি আরেক কবিও বললেন, ” আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হত যে মিছে”….আসলে ভালোবাসাই সেই শক্তি যা রূপে অরূপে জননে অজননে অযোনিজ প্রেমে বেঁধেছে পৃথিবী অপৃথিবীর গাঁটছড়া। তাই কবি আত্মপ্রত্যয়ে বলেছেন—-
‘আমার ছোট্ট হাতের আঁচড় খেয়ে খোলে রূপের বাহার ।”—- শক্তি স্বয়ং চংক্রমিত হলেই সৃষ্টি হয়ে ওঠে রূপকৃৎ।বাঘ হয়ে ওঠে সুন্দর। কবি তখন আরো একবার আত্মগত উচ্চারণে বলেন—–
“মেঘলাদিনে দুপুরবেলা যেই পড়েছে মনে
চিরকালীন ভালোবাসার বাঘ বেরুলো বনে…
আমি দেখতে পেলাম, কাছে গেলাম, মুখে বললাম : খা
আঁখির আঠায় জড়িয়েছে বাঘ,নড়ে বসছে না ।।”—–
এরপরের কবিতা তে মেঘের ডাক মুখ্য অনুষঙ্গ। কবিতাটি পড়ব—-
মেঘ ডেকেছে
“‘মেঘ ডাকছে, ডাকুক
আমার কাছেই থাকুক
ভালো থাকবো, সুখে থাকবো– এই বাসনা রাখুক।
কষ্ট হয়তো একটু হবে, এই তো ছিরির ঘর
আমার কাছে অল্প সময় বাইরে অতঃপর-
বৃষ্টি ভালো লাগছে যখন, পদ্মপাতায় রাখুক।
ওইটুকু তো মেয়ে
ছোট্ট আমার চেয়ে
এতই যদি লজ্জা তাহার, দু-হাতে মুখ ঢাকুক
আমার কাছে থাকুক, তবু আমার কাছে থাকুক।'”
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতাটিতে অধিবাচনিক বিভিন্নতাকে সম্পর্কসূত্রে বেঁধেছে তিনটি প্রোয়ারেটিক কোড।
১) মেঘ ডাকছে, ডাকুক
আমার কাছেই থাকুক
ভালো থাকবো, সুখে থাকবো– এই বাসনা রাখুক।
২) কষ্ট হয়তো একটু হবে,
বৃষ্টি ভালো লাগছে যখন, পদ্মপাতায় রাখুক।
৩) ওইটুকু তো মেয়ে
ছোট্ট আমার চেয়ে
এতই যদি লজ্জা তাহার, দু-হাতে মুখ ঢাকুক
আমার কাছে থাকুক, তবু আমার কাছে থাকুক।
এইরকম তিনটি সমধর্মীকোড রচনা করেছে এই কবিতাটির দেহ, যার মূল প্রতিপাদ্য — “আমার কাছেই থাকুক।” মনে হয় যেন শক্তি স্বয়ং কথা বলেছেন কবিতাটি জুড়ে। লেসিক্সভাঙা বৈপরীত্যে তৈরী হয়েছে ডায়াজেসিসের অনুপম ক্ষেত্র। এখানে আখ্যানের সঙ্গে শক্তি নিজেই জড়িয়ে গেছেন। তিনি যেন স্বয়ং intradiegetic একটি চরিত্র হয়ে উঠেছেন। বস্তুত কোনো স্রষ্টাই সম্পূর্ণ আখ্যান বহির্ভূত হতে পারেন না।
এ কবিতায় মেঘ ডাকা একটি প্রতীকী ভাবনা। মেঘ ঘরে ডাকে না। বাইরের আকাশে ডাকে। সে ডাক ঘরছাড়ানো প্রকৃতির। সে ডাক একসময় আসেই পরিণত প্রাণের কাছে। তাকে অস্বীকার করে ঘরের নিরাপত্তাই জীবনকে আগলায়। তাই শক্তির কথা —-
মেঘ ডাকছে, ডাকুক
আমার কাছেই থাকুক
ভালো থাকবো, সুখে থাকবো– এই বাসনা রাখুক।—– এই আমার কাছেই থাকা হতে পারে স্নেহধন্য কাউকে আগলে রাখা অথবা এমনও হতে পারে কবির নিজের আত্মমধ্যস্থ প্রকৃতিসত্তাকেই আগলে রাখার প্রচেষ্টা।
প্রকৃতির আকর্ষণ অমোঘ। তার বিপরীতে সাঁতারকাটা কষ্টকর। তাই কবি তাকেও স্মরণ করেছেন এবং বলেছেন—-
“কষ্ট হয়তো একটু হবে, এই তো ছিরির ঘর
আমার কাছে অল্প সময় বাইরে অতঃপর- “
— এইঘর দেহঘর। কবির কথায় বুঝি সেটি নড়বড়ে অতয়েব সম্পূর্ণ সুস্থ নয়। তবু আত্মাকে আগলে রাখার কাঁচা ঘর খাসা।
“আমার কাছে অল্প সময়”
—কে আমি? কবি স্বয়ং? তাঁর প্রকৃতিলীন সত্তাই রয়েছে বিপর্যস্ত দেহের মন্দিরে? হোক অল্প সময়, হোক স্বল্পায়ুর দেহঘর, হোক তারপর তো অনন্তের বাইরের ঘর। সে না হয় পরে হোক। আপাতত দেহঘর আগলে থাকাই গোপন গহন প্রকৃতিসত্তার কথা।
প্রকৃতি ঋতুতে ঋতুতে আকর্ষণের পসরা সাজায়। বর্ষা ডাকে অজানা অভিসরণে। ডাকুক না। সেও তো নিয়ম। আরেক নিয়ম। আকর্ষণে বিকর্ষণে হয়ে উঠুক তা টানটান। আর কবির কথায় —
“বৃষ্টি ভালো লাগছে যখন, পদ্মপাতায় রাখুক।”—- পদ্মপাতায় জল অতি ক্ষণস্থায়ী। সেখানেই ওটা থাক। কবিপ্রকৃতি থাকতে চান আপন দেহঘরে। হোক তা নড়বড়ে।
‘ওইটুকু তো মেয়ে
ছোট্ট আমার চেয়ে”—
ঐ মেয়েটা কবির আত্মনের থেকে কম জায়গা জুড়ে খেলে। ছোট্টমোট্ট ঐ প্রকৃতিচেতনা। পৃথিবীর ঘরে ঘরে খেলে। অপৃথিবীতে কবিই স্বরাট। ঐ মেয়েটা নয়। কবি-শক্তির শিবচৈতন্যে ঐ টুকু উমাই তো চঞ্চলা। আন্তরসাধনার যুগনদ্ধতায় ব্রীড়াময়ী উমা। তাই কবির প্রশ্ন—-
“এতই যদি লজ্জা তাহার, দু-হাতে মুখ ঢাকুক
আমার কাছে থাকুক, তবু আমার কাছে থাকুক।”—
এই প্রাকৃত শক্তিকে আলিঙ্গন করে আছেন আমাদের মহাশক্তি মহারিক্ত শিবস্বভাব-কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। প্রকৃতির প্রবল আকর্ষণে আর বাইরে যেতে চাইছেন না শক্তিকবি। আন্তর শিবচৈতন্যেই স্থিতি চাইছেন।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আশ্চর্য সব কবিতায় ধরা দিয়েছে আশ্চর্য রকম নাবলা বাণীর ঘনযামিনী। পরের কবিতাটির নাম জরাসন্ধ।যন্ত্রণাময় মিথ ভেঙে কবিরই যেন একটা বেদনঘন জন্মের ইতিহাস এটি।
“জরাসন্ধ”পড়ছি।
“‘আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।
যে-মুখ অন্ধকারের মতো শীতল, চোখদুটি রিক্ত হ্রদের মতো কৃপণ করুণ, তাকে তোর মায়ের হাতে ছুঁয়ে ফিরিয়ে নিতে বলি। এ – মাঠ আর নয়, ধানের নাড়ায় বিঁধে কাতর হল পা। সেবন্নে শাকের শরীর মাড়িয়ে মাড়িয়ে আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।
পচা ধানের গন্ধ, শ্যাওলার গন্ধ, ডুবো জলে তেচোকো মাছের আঁশগন্ধ সব আমার অন্ধকার অনুভবের ঘরে সারি – সারি তোর ভাড়ারের নুনমশলার পাত্র
হ’লো , মা। আমি যখন অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, পা দেখি না, তখন তোর জরায় ভড় ক’রে এ আমার কোথায় নিয়ে এলি। আমি কখনো অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, পা দেখি না।
কোমল বাতাস এলে ভাবি, কাছেই সমুদ্র ! তুই তোর জরার হাতে কঠিন বাঁধন দিস। অর্থ হয়, আমার যা – কিছু আছে তার অন্ধকার নিয়ে নাইতে নামলে সমুদ্র স’রে যাবে শীতল স’রে যাবে মৃত্যু স’রে যাবে।
তবে হয়তো মৃত্যু প্রসব করেছিস জীবনের ভুলে। অন্ধকার আছি, অন্ধকার থাকবো, বা অন্ধকার হবো।
আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।”‘
(কাব্যগ্রন্থ –‘ হে প্রেম হে নৈঃশব্দ্য ‘)
প্রথমেই শিরোনামটির খোঁজ করতে হয় —“জরাসন্ধ”—এইখানেই কবিতাটির আসল বুনুনির খোঁজ পেতে পারি।। জরাসন্ধের মিথকে ডিমিথ করলেন শক্তি। কিন্তু তারপর??? জরাসন্ধ দুই মায়ের সন্তান। অদ্ভুত সে কাহিনী। দুই মা অর্ধেক অর্ধেক প্রসব করেছিলেন তাকে। স্বাভাবিক ভাবেই ভীত পিতা বৃহদ্রথ কর্তৃক তিনি পরিত্যক্ত ও নিক্ষিপ্ত হন জঙ্গলে। সেখানে জরা রাক্ষসী মন্ত্রবলে তার দেহ জুড়ে দিয়ে পুনর্জীবিত করেন।
এইটুকু মিথ আমাদের দরকার। একবিতায় কবিই স্বয়ং জরাসন্ধ। তিনি কি দুই মায়ের সন্তান?? একজন জগন্ময়ী জন্মদাত্রী যিনি ভাবদেহ দিয়েছেন আর অন্যজন গর্ভধারিনী, যিনি ক্ষিতি দেহ দিয়েছেন??
শক্তির আকুল শব্দচয়নে বোঝা যাচ্ছে শক্তিই স্বয়ং জরাসন্ধ। বাইরের দেহ নয়, ছিন্নভিন্ন আত্মার দ্বিধাচলনেই শক্তি জরাসন্ধ হয়েছেন। অলৌকিক পুরুষ আমাদের এই প্রিয় কবি। সেকথা অস্বীকার করার স্পর্ধা নেই।
মহাশক্তির সঙ্গে সর্বদা সংযুক্তি তাঁর। তিনি যন্ত্রমাত্র। লেখেন ঐ মহাশক্তি । ঐ তাঁর এক মা। সম্মোহ কাজ করে রচনাকালে। এই মোহ,এই মাদক, মাদকতা, তা সে যাইই হোক না কেন, শক্তিকে আটকে রেখে দিত মহাজাগতিক চংক্রমণে। সৃষ্টির পশ্যন্তীস্তরের ছবি ভাষা হয়ে নামত তাঁর কবিতায়। মহাশক্তির নেচারটি ডিসক্রিট, এলোমেলো, বিজ্ঞান তা জানে। শক্তি মায়ের কাছ থেকে সেটি ইনহেরিট করেছেন।তাই খুব স্বাভাবিক যে মানডেন পরম্পরা, তা কি করে পাবো আমরা শক্তির কবিতায়, যতক্ষণ না তাঁর সালোক্যে যেতে পারি!!? এই কারণেই শক্তি কখনও কখনও দুর্বোধ্য।
এই দুর্বোধ্যতার আবরণ সরিয়ে শক্তিকে, শক্তির এই প্রাণনাকে খুঁজে পেতে হলে আমরা প্রথমে তাঁর কবিতার ডিসকোর্স গুলো স্বতন্ত্রভাবে সাজিয়ে নেব। তারপর এক এক করে ভাবতে বসবো সে কোন্ কথা যা আর্তি হয়ে বেরিয়ে এসেছে কবির বিক্ষত অবচেতনা থেকে!!?
অবচেতন খুঁড়তে খুঁড়তে আত্মিক সংকটে শক্তি কি তখন খুঁজছিলেন আদি অনাদি এক জরায়ুর আশ্রয়? …. রিটার্ন টু মাদার্স উম্ব? এইখানে এসে একটা বৈনাশিক তাড়নায় কবি চাইছেন চেতনাপ্রত্যুষের
লগ্নে ঐ ভ্রূণের আশ্রয় অথবা মাটির শেষ তিনপা ভূমি! দুইই যেন সমার্থক হয়ে গেছে এ কবিতাতে। কেবল একটা আর্তি ভেঙে ভেঙে ভেসে ভেসে চলেছে এ কবিতার তরঙ্গে—
“আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।”—– এইটি কি শুধুমাত্র ব্যক্তিকবির ব্যক্তিগত ক্রন্দন আর্তি? বাল্মীকির ক্রৌঞ্চীর কান্না মাত্র?
না। এ বিশ্বশোক। তাবৎ মানুষের ক্রন্দনরোল, হাহারব! একটা ভঙ্গুর নৈরাশ্যময় সময়ের সংকট থেকে বেরিয়ে একটি অবলুপ্তির চাওয়া, একটি সর্বৈব লয়।
কবি একটি মুখের কথা বলেছেন—- কার মুখ, কোন্ মুখ?——
” যে-মুখ অন্ধকারের মতো শীতল, চোখদুটি রিক্ত হ্রদের মতো কৃপণ করুণ, তাকে তোর মায়ের হাতে ছুঁয়ে ফিরিয়ে নিতে বলি।”—-
কী অসাধারণ উপমাকল্পে উঠে এল একটা মুখের বিমূর্ত ছবি। কী ভয়ানক করুণ, আর্ত! এ কার মুখ? যুগসংকটের বলি সবকটা মানুষের মুখের আদল জড়িয়ে মড়িয়ে তৈরী হয়েছে এ ছবি——-
এ মুখ অন্ধকারের মতো শীতল,
এ মুখের মধ্যে চোখদুটি রিক্ত হ্রদের মতো কৃপণ করুণ,
—এ আমাদের সকলের অনস্তিত্ববোধের মুখচ্ছবি। তাই এর এত আবেদন? কেউ সরে থাকতেই পারবেন না এই কবিতাভূমি থেকে। এ ছবি যে প্রত্যেকের।আমাদের সকলের। কী নিদারুণ কারুণ্য দিয়ে আঁকা!!!
উপলব্ধি ও অনুভবের ইনটেনসিটি শক্তিকে একেবারে একটি গ্রস্তস্থিতিতে এনে ফেলেছে। জাগ্রতে এসে মিশেছে কবিশক্তির স্বপ্ন ও সুষুপ্তি পেরোনো , তূরীয়ের ছায়া।
ঐ বৈশ্বিক মহাশক্তিই আদি জননী। প্রথম মা।আমরা সকলেই অর্ধেক ভাবদেহ পাই তাঁর কাছ থেকে আর বাকি অর্ধেক দেহ পাই গর্ভধারিনীর জঠরে। এই সত্যই নেমে এসেছে শক্তির কাব্য আধারে। কাজেই জরাসন্ধ সকলেই আমরা। শক্তি তো বটেই। শেষমেশ সকলেই আমরা, মা মা বলে কাঁদি যখন পার্থিব মা থাকেন না। কেবলমাত্র, জেগে থাকেন জগজ্জননী মা। মহাশক্তি। আলটিমেটলি কায়া আর ছায়া মিলে ঐ এক অখণ্ড মাতৃতৃষ্ণা জাগে জীবের অন্তরে। জাগে শেষ আশ্রয়ের আকুলতা!—-
তখনই মনে হয় বিলাসের শয্যায় বৈরাগ্যের বিরাগ রাগিনী স্বতোই বেজে চলে।
মনে হয়, হয় এ – মাঠ আর নয়, ধানের নাড়ায় বিঁধে কাতর হল পা। পার্থিব আকাঙ্ক্ষা জুড়ে যে খুদের গন্ধ ছিল ধানকাটা মাঠে, এখন শুধুই কেটে যাচ্ছে পা। নাড়ার শুষ্কতায় তাথৈ নাচছে তাবৎ যাদবদের শেষ প্রভাসবিনষ্টি। তাই কবির আকুল কান্না—–
“সেবন্নে শাকের শরীর মাড়িয়ে মাড়িয়ে আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।”
এই “ফিরিয়ে নে”— ই রিটার্ন টু মাদার্স উম্বের প্রার্থনা যা মানুষের এক অদ্ভুত বিপন্নবিস্ময়, যা তার অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে, যা তার উত্তরাধিকার। সব আকাঙ্ক্ষা অবসিত হলে, “পচা ধানের গন্ধ, শ্যাওলার গন্ধ, ডুবো জলে তেচোকো মাছের আঁশগন্ধ” সব যেন কবি শক্তির মনে অন্ধকার অনুভবের ঘরে সারি – সারি ফলন হয়ে জমেছে।আর মায়ের ভাঁড়ারের নুনমশলার পাত্র হয়েছে তা। । এক অদ্ভুত বেপথুবেদন কবি তাই বারবার বলেছেন আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে। মাতৃগর্ভের শুশ্রূষা চাই, চাই নিরাপদ নিশ্চিন্ত আশ্রয়।
মাতৃভ্রূণের প্রত্যুষে ….”আমি যখন অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, পা দেখি না, তখন তোর জরায় ভর ক’রে এ আমার কোথায় নিয়ে এলি। “—- এই তো গর্ভধারিনী পার্থিব জননী। দ্বিতীয় মা। প্রাণ কোথা থেকে এসে জুড়ে বসল মায়ের জঠরে—-কবির অবস্থা তখন –“কখনো অনঙ্গ অন্ধকারের হাত দেখি না, পা দেখি না।” মায়ের নাড়ীর বন্ধনে কেবল চলে শ্বাসপ্রশ্বাসটুকু । আর
কোমল বাতাস এলে —“ভাবি, কাছেই সমুদ্র ! “
এ ভববন্ধন বড় কঠিন—-
“তুই তোর জরার হাতে কঠিন বাঁধন দিস। “
কবির মনে হয়, “আমার যা – কিছু আছে তার অন্ধকার নিয়ে নাইতে নামলে সমুদ্র স’রে যাবে শীতল স’রে যাবে মৃত্যু স’রে যাবে।সে বড় ভয়াবহ অন্ধকার সঞ্চয়। আর কবির মনে হয়,
“তবে হয়তো মৃত্যু প্রসব করেছিস জীবনের ভুলে। ‘
মৃত্যু প্রসব কেন? আসলে কবিমনের গহনেই তো আত্মিক সংকটেই কখনও কখনও সবকিছু হয়ে ওঠে মৃত্যুময়, বিস্বাদ, বিষণ্ণ।
কবির হৃদয় মথিত করে উদ্গীত হয় চিরন্তন স্তোত্র, নৈরাত্মিক আর্তি নিয়ে—–
“অন্ধকার আছি, অন্ধকার থাকবো, বা অন্ধকার হবো।
আমাকে তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে।”—-
চারপাশের অবক্ষয়ী অন্ধকারের নেতিবাচক বেঁচে থাকা হয়তো মূল্যহীন মনে হয় কবির,আর তখনই সামনে এসে দাঁড়ায় মহারিক্ত-মৃত্যুময়তা মায়ের চূড়ান্ত আলিঙ্গনের রূপ ধরে!!!!
এভাবেই সমস্ত কাব্যসম্ভার জুড়ে ছড়িয়ে আছে যে বিস্ময় তার নাম শক্তি।শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
একটি প্রবন্ধে সমগ্ৰ শক্তিকে কি ছোঁয়া যায়????
বাকি কথা বাকি উন্মোচন বারান্তরে।
*****************************
পারমিতা ভৌমিক
প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক
******************************
*