You are currently viewing রবীন বসু ৫টি কবিতা 

রবীন বসু ৫টি কবিতা 

রবীন বসু ৫টি কবিতা 

=============

কবিতার বিনির্মাণ 

 

নিঃসঙ্গ ব-দ্বীপ ঘিরে আমাদের চলাচল

বেআব্রু সময় যেন উচাটন অস্থির

যাত্রাপথ অনির্দেশ ভূমির আক্ষেপ

বুকে নেয় শূন্যপথ, বহুবিধ আগ্রহ

যেমন বেঁধেছে আষ্টেপৃষ্ঠে

দমচাপা শ্বাসকষ্ট উঠে আসে দিনশেষে

লড়াই জাগ্রত দেখি সামাজিক তোরণ

শ্রমক্লিষ্ট মানুষের ঐকান্তিক ঘাম

সভ্যতার ভিত গড়ে; আনুপূর্বিক নির্মাণ

স্তরবিশিষ্ট বিন্যাসে আলোকিত গুহাচিত্র

শিল্পের উন্নত দিশা, কবিতার বিনির্মাণ

আমাকে বিস্মিত করে; চেয়ে থাকি দূরে

অযূত আলোকবর্ষ আর মহাজাগতিক গান

বেঁচে ওঠে, বাঁক নেয় অন্যতর পুলকিত বিভা।

 

অক্ষয় নির্বাণ 

 

আমার যা-কিছু, জমা হয়ে আছে তোমার ঘরে।

 

নিঃস্ব ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি পথে

কোন চিহ্ন অবশিষ্ট রাখিনি একদা

নিরালম্ব হেঁটে গেছি প্রভূত প্রশস্ত পথ

বালি আর ধুলো নিয়ে স্বর্ণালী গোধূলি

আমাকে প্রস্তুত করে রাত্রির গভীরে

এত যে স্মৃতির জল, নিশি ডাক

আবহমান অস্থির হয় ত্রিমাত্রিক বৈভবে

গুপ্তশোক বুকে নিয়ে ভ্রামণিক নেশা

আদ্যন্ত খেয়েছে দেখি ক্ষুধার্ত ভক্ষক…

 

তবু আমি হেঁটে গেছি জঙ্গলসীমা পেরিয়ে

আরও ধূসর রুক্ষ টাঁড় মাটিতে

পেতেছি আসন, খাঁটাইনি তাঁবু

অবাধ আকাশ তলে জ্বলন্ত সূর্যের দিকে মুখ করি

নিশিজল গায়ে মাখি, শীতের প্রলেপ

সমিধ সংগ্রহ করে জ্বালিয়েছি হোমাগ্নি…

আহুতি দিয়েছি সেই ফেলে আসা স্মৃতিচিহ্ন

জমা করে রেখেছি যা ছেড়ে আসা তোমার ঘরে

এইবার পুণ্যস্নান, এইবার তপস্যার শেষ…

 

তবু চেয়ে দেখি, তুমি স্থির,

অক্ষয় নির্বাণ নিয়ে বসে আছো আজও…

শরীর থেকে জন্ম নেবে

 

শরীর ভেঙে ভেঙে জেগে উঠছে ঢেউ

ভিতর অন্ধকার, যাবতীয় সুড়ঙ্গ

নিশ্চুপ শুয়ে আছে মুদ্রার বিভঙ্গেই

এত যে সাঁতার শেখা, কলাকৌশল যত

ব্যর্থ মনস্তাপের আক্ষরিক বিন্যাস

ধারাবাহিকে আছে; যদিও উত্তাপের

ক্রমবর্ধ উষ্ণতা জ্বলনে আবর্তিত

তবু আকাঙ্ক্ষার উদ্বেল হাওয়ারা

কোথাও ঘাপটি মারে, বিমগ্ন আত্মস্মৃতি

আঁচড় কেটে গেলে দগ্ধ কৃষ্ণ দাগের

আর্ততা সমন্বিত হাহাকার ধ্বনিত;

শরীর থেকে জন্ম নেবে আর এক শরীর…

জীবনের মানে

 

প্রথা ভেঙে উড়ে যাই একলব্য ডানা

যদিও হব না কোন গুরুর ছানা।

আমার অদ্ভুত জেদ ধরে রাখে কাল

যা হবে তা দেখা যাবে পুড়ুক কপাল।

 

মন্দ ভালো এই জেনে কতটা সময়

ব্যয় করে ঘুরে ঘুরে হয়েছি অজয়।

বৃথা বাক্য বৃথা জেদ সব পড়ে থাক

নিজের আকাঙ্ক্ষা তবু সার্থকতা পাক।

 

দেশ এই কাল এই সময়ের ঘড়ি

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে দিনান্ত অবধি।

আঙুলের কাটা অংশ গুরুদেব দেখে

আরও বেশি একাগ্রতা শিষ্য শুধু শেখে।

 

এভাবেই গল্পকথা লড়াইকে টানে

আমরা বুঝেছি সব জীবনের মানে।

যোগিনী জিজ্ঞাসা 

 

একটা জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) বড় বিস্ময় উদ্রেগ করে

কত টান আবর্ত ঘূর্ণাবর্তে ঢুকে যেতে পারে

সমূহ কৌতূহল তির্যক প্রতিস্থাপন অনলে;

 

যাবতীয় ভস্মশেষ দেখে পুনরায় উঠে বসে

অলীক ফিনিক্স। আমি তার ডানার পালকে

গুঁজে রাখি নতুন জীবন, সম্ভোগরাত্রি

অনিঃশেষ ব্যর্থতার সজারুকাঁটা…

 

তবু, কমা (,) সেমিকোলন (;) পূর্ণচ্ছেদ (।) ঘেরা

এই যে বাসুকি ফণা, অনন্ত গরল

জীবন টানছে শুধু অনির্দেশ পথের বিস্তারে

হামাগুড়ি দেওয়া এক অন্ধ ভবিতব্যলিপি

কৌণিক ঝুলে আছে যোগিনী জিজ্ঞাসা নিয়ে…

=============